arts-in-higher-secondary
পরীক্ষা প্রস্তুতি

মাধ্যমিকের পর কলা বিভাগ (Humanities)

মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিকে কি নিয়ে পড়া যায় ভাবতে বসলে, নিঃসন্দেহে কলা (Humanities) অথবা চলতি কথায় আর্টস গ্রূপ বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের তালিকায় থাকে না।

অনেকেই মনে করেন উচ্চ মাধ্যমিকে যারা আর্টস নিয়ে পড়ে তারা ভালো ছাত্রছাত্রী নয় অথবা তারা সায়েন্স পায়নি তাই আর্টস পড়ছে। এই ধারণা সঠিক নয়।

উচ্চ মাধ্যমিকে আর্টস পড়ে ভবিষ্যতে দুর্ধর্ষ কেরিয়ার তৈরী করা যায়। এই বিশেষ প্রবন্ধে আমরা দেখবো উচ্চ মাধ্যমিকে আর্টস পড়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

[আরো পড়ুন – উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান]

কলা সময়ের দর্পণ যা দেশ কাল পাত্রের সীমানা ভেদ করে মানুষের  সাথে মানুষের সংযোগ গড়ে তোলে। যুক্তি ও বিশ্লেষণী শক্তির সাথে কলার পরিচয় আদিকাল থেকে,  কলা বিভাগ সম্বন্ধে আমাদের আজ যা ধারণা রয়েছে, সেটি একালের নিরিখে ভ্রান্ত না হলেও, এর মূল অর্থ হারিয়ে ফেলার সম্পূর্ণ দোষ আমাদের। এটি না থাকলে আমরা আমাদের অতীত, মানুষের ভাবাবেগ ও মানবসম্পদের চাহিদা কোনোকিছুই আন্দাজ করতে পারতাম না। ফলে সজীব পৃথিবী কিভাবে চলছে সে সম্বন্ধে কোনো ধারণাও তৈরী হতো না।

বিজ্ঞান আমাদের প্রকৃতির নিয়মকানুন, প্রকৃতির পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারে। কলা আমাদের মানুষের নিয়মকানুন, মানুষের সমাজ ও প্রকৃতির বাইরে সংস্কৃতির পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করে ।

Popular-arts-option-in-HS
উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগের বিভিন্ন জনপ্রিয় কম্বিনেশন [কৃতজ্ঞতা – EDULEARN EDUCATION]

কলা পড়ে কি হবে?

আমাদের দেশের সবথেকে অবহেলিত দিক হচ্ছে কলা বিভাগ। কিন্তু কোনো দেশ অতীতে তার এই বিভাগে উন্নতি না করে বড়ো হতে পারেনি। মানুষের মন এক বিচিত্র জগৎ। তার অন্তর্দৃষ্টি যেখান থেকে আত্মস্বরূপ প্রকাশ করে সেটি কলা। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুরবস্থা এই বিভাগের প্রতি অবহেলাতেই বোঝা যায়। সাধারণ একটি ট্রেন্ড আমাদের, বিশেষতঃ নাগরিক সমাজে যারা মাধ্যমিকে ৭৫% এর ওপর নম্বর পায় তাদেরকে বিজ্ঞান নিতে বলা হয়। কিন্তু মেধাবী ছাত্রদের প্রয়োজন সকল বিভাগেরই আছে, একটি যুক্তি খাড়া করা হয় যে অংকে কাঁচা তাই কলা বিভাগ নির্বাচন করো। কিন্তু পাঠক কি এই ব্যাপারে অবহিত আছেন যে অঙ্ক বিজ্ঞান নয় এবং অংকের জন্য BA ডিগ্রী দেওয়া হতো?

মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে ভাষা। ভাষা বিশ্লেষণ করেই অতীতের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া যায়। ভাষায় আমাদের স্বাতন্ত্র্য প্রকাশ পায় আবার ভাষাই আমাদের প্রতিবেশীর সাথে জুড়তে সাহায্য করে। ইতিহাস বর্তমানকে চিনতে শেখায়, দর্শন দেয় অন্তর্দৃষ্টি। ভূগোলকে “mother of all subject” বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ভাস্কর্য্য ভবিষ্যতের জন্য রেখে যাওয়া বর্তমানের পদচিহ্ন। সাহিত্য কালের বয়ান, সমাজের চালচিত্র। আজকাল কর্পোরেটগুলিও তা  অনুভব করছে। মানুষের সাথে চলতে গেলে মানুষের মনের অব্যক্ত ধারণা করা দরকার। কলার প্রয়োজনীয়তা সেইখানেই।

কলা বিভাগে কি কি আছে?

কলা বিভাগের বৈচিত্র্য সম্ভবত সর্বাপেক্ষা বেশি। প্রধানত কলাবিভাগের বিষয়গুলিকে ৫টি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. Performance art

২. Creative বা Visual art

৩. ব্যবহারিক

৪. সাংস্কৃতিক

৫. বৈশ্লেষণিক

Performance art

এই ভাগে সংগীত (Vocal ও instrumental), নৃত্য (dance), অভিনয় (Acting), নির্দেশনা (Direction), সম্পাদনা (editing) ইত্যাদি আছে।

Creative বা visual Art

এর সাথে জড়িত রয়েছে চিত্রকলা (Painting), ভাস্কর্য্য (Sculpture), চিত্রায়ন (Photography),  চলচ্চিত্রায়ণ (Videography), অ্যানিমেশন (Animation), গ্রাফিক্স নক্সা (Graphics Design), বাণিজ্যিক চিত্রকলা (Commercial Art) ইত্যাদি দিক।

ব্যবহারিক কলাবিভাগ

এটিই আজকের সবথেকে বড়ো কর্মক্ষেত্র হতে চলেছে। এর মধ্যে performance art এবং visual artএর সাথে সাথে সাংবাদিকতা (Journalism), Hotel management, hospitality management, hospital management, রন্ধন (Chef), সামাজিক প্রকৌশলী (Social Engineering), চিত্রসাংবাদিকতা (Photojournalism), fashion design, interior decoration, tourism ইত্যাদি।

সাংস্কৃতিক কলাক্ষেত্রে

সাহিত্য (Literature), ভাষার ইতিহাস (History of Literature), দেশীয় ভাষা (Indian Language), বৈদেশিক ভাষা (Foreign Language), অনুবাদ (Translation), বৈদেশিক সম্পর্ক (Foreign Relation), নৃবিদ্যা (anthropology) ইত্যাদি পঠনপাঠনের সুবিধা থাকে।

বৈশ্লেষণিক কলাবিভাগ

সম্মৃদ্ধ হয়েছে দর্শন (Philosophy), ইতিহাস (History), ভূগোল (Geography), সমাজতত্ত্ব (Sociology or social studies), রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science), আইন (Law), ব্যাকরণ (Grammer), ধ্বনিবিজ্ঞান (Phonetics), ভাষাবিদ্যা (Lingustics), তর্কবিদ্যা (Logic) প্রভৃতি। এর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই মেধাবী ছাত্রীছাত্রদের দরকার আছে।

কলা পড়তে কি লাগে?

কলাবিভাগের বিষয়গুলিতে দক্ষতা অর্জন করতে গেলে যা লাগে তা হলো কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা, রুচিবোধ, আন্তর্বৈষয়িক বিষয়ে দখল, যুক্তিবোধ ও মনন। মানুষের বিষয়ে চিন্তা করতে গেলে তাকে বুঝতে গেলে লাগে সহমর্মিতা (Empathy)। কলাবিভাগের কাজ মানুষ নিয়ে, তাই যা যা মানুষের সহমর্মিতাকে জাগ্রত করে তাই কলাবিভাগের বিষয়গুলির প্রয়োজন।

কল্পনাশক্তি ছাড়া অতীতের বর্তমানে বিস্তার ও বর্তমানের দ্বারা কৃতকর্মের ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব বোঝা সম্ভব নয়। দেশের বা সমাজের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তের কি প্রভাব পর্বে বা কোন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সেই নীতি নির্ধারিত হবে সেটি জানা বা বোঝার সাথে সাথে কল্পনাশক্তিরও প্রয়োজন। কারণ বিজ্ঞানের মতো এখানে সমস্ত তথ্য অপ্রতুল।

সৃজনশীলতা মানুষের মনকে নাড়া দেয়। যখন  performance art বা visual art এর সাথে জড়িত কোনো শিল্পী, নিজের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে মঞ্চ, ক্যামেরা, মাটি বা ক্যানভাসকে বেছে নেয়, সৃজনশীলতা ছাড়া সেটি জনমানসের উপযুক্ত করে তোলা সম্ভব নয়।

কলা কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গড়ে ওঠে না।

প্রত্যেকটি বিষয় অন্য বিষয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ইতিহাসের গতিবিধিতে ভৌগোলিক কারণগুলির প্রভাব লক্ষণীয়। মানুষের আলাপচারিতায়, পরিযানে মানুষের মনস্তত্ত্ব, অর্থনীতি, দর্শন, রাজনীতি সকল বিষয় জড়িত ।


[আরো পড়ুন – Science, Arts নাকি Commerce; উচ্চ মাধ্যমিকে কিভাবে বিষয় নির্বাচন করবে?]


কলা কিভাবে পড়বো?

এই বিষয় গুলির প্রধান সমস্যা হচ্ছে নম্বরের দাবী ও আমাদের এর প্রতি ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি। নোটস মুখস্থ করে বিষয়গুলি পাশ করে গেলেও সম্যক ধারণা তৈরী না হওয়ার ফলে বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও দূরদর্শিতা তৈরী হয় না।

শিল্পের ব্যাপারে পঠনপাঠন না থাকার কারণে সময়ভিত্তিক পরিবর্তনের গতিবিধি অলক্ষিত থেকে যায়। তার ফলে মডার্ন আর্ট জনবিচ্ছিন্ন হয়ে, পরে abstract হয়ে ভুতের মতো বিচরণ করে। সুতরাং পড়ার সময় নিরবিচ্ছিন্ন চিন্তা দ্বারা অভ্যাস করতে হবে। নিজের কৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে প্রশ্নোত্তর লেখা, ব্যাখ্যাকে যুক্তিপূর্ণ করে তোলা ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সাথে এর যোগাযোগ রেখে চলাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।

পয়েন্ট করে প্রথম থেকে পড়লে বিষয়গুলি মনে থাকবে। নিজের কল্পনা দিয়ে পয়েন্টগুলির বিস্তার সাধিত করে সেটিকে মিলিয়ে দেখে নিতে পারলে পড়া দ্রুত তৈরী হয় এবং মুখস্থ করারও প্রয়োজন পড়ে না।

পরবর্তী লেখায় থাকবে বাণিজ্য বিভাগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –