borno-1
Study (পড়াশোনা)

বর্ণ – সহজে ব্যাকরণ

সহজে ব্যাকরণ সিরিজ (তৃতীয় পর্ব) – বর্ণ


বন্ধুরা ধ্বনি পর্বের আলোচনার সময় আমরা বলেছিলাম, মানুষের বাগযন্ত্র থেকে নিঃসৃত যে অর্থবোধক বা অর্থহীন আওয়াজকেই ধ্বনি বলা হয়। এখন এই ধ্বনির যে লিখিত রূপ তাকেই বর্ণ বলে।

ভাষার যে রূপ মুখে উচ্চারিত হয় বা কানে শোনা যায় (শ্রাব্য) তা হল ধ্বনি আর যে রূপ লিখিত হয় বা চোখে দেখা যায় (দৃশ্য) তা হল বর্ণ।

তাহলে সহজ করে বললে এরকম দাঁড়ায় বিষয়টি –

শ্রাব্য বা উচ্চারিত রূপ – ধ্বনি

ভাষা

দৃশ্য বা লিখিত রূপ – বর্ণ

ধ্বনিকে স্থায়ীভাবে প্রকাশ করার জন্য যে চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করা হয় তা বর্ণ। হ্যাঁ বন্ধুরা বর্ণ আসলে একপ্রকার প্রতীক (symbol) মাত্র। ভাবপ্রকাশের সুবিধার্থে মানুষ যখন থেকে লিখতে শিখলো তখনই তার প্রয়োজন হল এই প্রতীকগুলির। যেকোনো ভাষার বর্ণগুলিকে একত্রে আমরা বলি বর্ণমালা। বাংলা বর্ণমালায় মোট ৫০টি বর্ণ রয়েছে যাদের মূলত দুটি ভাগ –  স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ।

jump-magazine-subscription

স্বরধ্বনি আর স্বরবর্ণের মধ্যে প্রাথমিক ফারাক আছে কিছুটা।

দুটি পুরো এক নয়। ভালো করে বুঝে নাও নয়তো তোমাদেরও ভুল হয়ে যেতে পারে। স্বরধ্বনি ৭টি। যেমন – অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।

আর স্বরবর্ণ হল ১১টি। যেমন – অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও ঔ। আগে ‘ঌ’ কার ছিল বর্ণমালায় কিন্তু ব্যবহার না হওয়ায় তা বাদ পড়েছে। আসলে বাংলা বর্ণমালা তৈরি হয়েছে অনেকটাই সংস্কৃত ভাষার বর্ণমালার অনুকরণে। কিন্তু দুটো ভাষা আলাদা হওয়ার কারণে একই বর্ণ দুই স্থানে ব্যবহার হয় না।

আবার ব্যঞ্জনধ্বনিতে য়, ৎ, ং, ঃ, ঁ এগুলি না থাকলেও বর্ণমালাতে রয়েছে। মোট ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ৩৯টি। দেখে নিই বর্ণগুলি –

বর্ণগুলি তো আমরা সকলেই জানি, লিখিও। কিন্তু এত সবের পরেও লেখার সময় অনেকেরই কিছু কিছু ভুল হয়। আসলে এই তুচ্ছ ভুলগুলি আমরা কেউ খেয়াল করে দেখি না।

প্রধানত ভুল হয় মাত্রায়।

সব বর্ণে মাত্রা থাকে না, আবার থাকলেও পুরোটা থাকে না। ছোটোবেলায় মনে পড়ে আমাদের সকলকেই রুলটানা খাতায় লেখা শেখানো হত মাত্রা ঠিক করার জন্য। এখন আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক বন্ধুরা কোন বর্ণে মাত্রা থাকে, কোনটায় থাকে না।

মাত্রার ভিত্তিতে বর্ণগুলিকে তিনভাগে ভাগ করা হয় –

১. পূর্ণমাত্রাযুক্ত বর্ণ – ৩১টি [স্বরবর্ণ : ৬টি (অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ), ব্যঞ্জনবর্ণ : ২৫টি (ক, ঘ, চ, ছ, জ, ট, ঠ, ড, ঢ, ত, দ, ন, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, ব, ষ, স, হ, ড়, ঢ়, য়)]

২. অর্ধমাত্রাযুক্ত বর্ণ – ৭টি [সবকটিই ব্যঞ্জনবর্ণ / খ, গ, ঝ, থ, ধ, প, শ]

৩. মাত্রাহীন বর্ণ – ১১টি [স্বরবর্ণ : ৫টি (ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ), ব্যঞ্জনবর্ণ : ৬টি (ঙ, ঞ, ৎ, ং, ঃ, ঁ)]

আরেকটি বিষয় একটু খেয়াল রেখো বন্ধুরা। প্রতিটি স্বরবর্ণ আর কিছু কিছু ব্যঞ্জনবর্ণ দুটি রূপে শব্দে প্রযুক্ত হয়।

ক. পূর্ণরূপে – অর্থাৎ স্বাধীনভাবে যখন বর্ণটি শব্দে বসে। যেমন – অনেক, আকাশ ইত্যাদি শব্দে দেখো অ, আ, ক, শ বর্ণগুলি স্বাধীনভাবে বসেছে। এটি বর্ণগুলির পূর্ণরূপ।

খ . সংক্ষিপ্ত রূপে – এই রূপে অন্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বসে। যুক্ত হয় মূলত দুভাবে – ‘কার’ হিসেবে আর ‘ফলা’ হিসেবে।

দেখা যাক কার আর ফলা-র ধরন।

স্বরবর্ণে কার চিহ্ন রয়েছে মোট ১০টি।

আর ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে র, ব, য এগুলি ফলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং অন্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বসে। যেমন

 

 

 

 

 

 

 

বর্ণের প্রাথমিক আলোচনার এখানেই ইতি।

এবারে বর্ণের যে নানাভাগ রয়েছে তা বন্ধুরা হুবহু ধ্বনির মতন। সংবৃত, বিবৃত, অল্পপ্রাণ, মহাপ্রাণ, স্পর্শধ্বনি, ওষ্ঠ্যধ্বনির মতোই একেবারে হুবহু ভাগগুলি রয়েছে বর্ণের ক্ষেত্রেও। তাই এখানে পুনরায় তা উল্লেখ করছি না। তোমরা যারা ধ্বনির আলোচনা পড়েছ তারা খুব সহজেই ব্যাপারটি বুঝে নিতে পারবে।

আর যারা আগের পর্বটি পড়োনি, তারা এই লিঙ্ক থেকে পড়ে নিতে পারো – ধ্বনির আলোচনা। দেখে মিলিয়ে পড়লেই বুঝতে পারবে বিষয়টি। বর্ণ তো ধ্বনিরই লিখিত রূপ। তাই অসুবিধের কথা নয়।

ফলে আজকের পর্ব আপাতত এখানে এখানেই শেষ। আবার  আসবো নতুন কিছু জানার বিষয় নিয়ে আমাদের এই সহজে ব্যাকরণের ক্লাসে।

তৃতীয় পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখাটি, অডিও, ভিডিও বা অন্য  কোন ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখক পরিচিতিঃ

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সিমন রায়। সাহিত্যচর্চা ও লেখা-লিখির পাশাপাশি নাট্যচর্চাতেও সমান উৎসাহী সিমন।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



এছাড়া,পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহন করতে যুক্ত হতে পারেন ‘লেখা-পড়া-শোনা’ ফেসবুক গ্রূপে। এই গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন এখানে।