dhoni-byakrn
Study (পড়াশোনা)

ধ্বনি (প্রথম পর্ব) – সহজে ব্যাকরণ

সহজে ব্যাকরণ সিরিজ – ধ্বনি (প্রথম পর্ব)


‘সহজে ব্যাকরণ’ এর প্রথম পাঠের শুরুতেই মনে প্রশ্ন আসতে পারে ব্যাকরণ আসলে কি?

আর সেই ব্যাকরণ কি আদতে খুবই জটিল? এর উত্তর খোঁজার জন্যেই এই সহজে ব্যাকরণের প্রয়াস। ব্যাকরণ রহস্যের ধীরে ধীরে উন্মোচন করতে করতেই আমরা মূল পরিসরে ঢুকবো।

আসলে মানুষ পরস্পরের মধ্যে মনের ভাব বিনিময় করে যে মাধ্যমে তাকে আমরা ভাষা বলে থাকি।

আর এই মাধ্যমটিকে একটি পরিপূর্ণ ভাষায় পরিণত করতে গেলে কিছু বিধিনিষেধ মানতে হয়। ভাষা তো আসলে একটা চিহ্ন। ট্র্যাফিক সিগনালে যেমন হলুদ আলো মানে ধীরে গাড়ি চালান, লাল আলো মানে থামুন এইসবের মতোই বিশেষ বিশেষ চিহ্ন না থাকলে ভাষাটা ঠিকমতো গড়ে ওঠে না। আর এই চিহ্ন প্রয়োগের নিয়ম-নীতিই হল ব্যাকরণ, ভাষার ব্যাকরণ। ব্যাকরণ কথার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল বিশেষরূপে বিশ্লেষণ। ইংরেজিতে একে grammar বলে থাকি আমরা। ব্যাকরণ আসলে ভাষাকে পড়তে, লিখতে, শুদ্ধভাবে প্রয়োগ করতে শেখায় এবং এইভাবে ভাষাকে সৌন্দর্যপূর্ণ করে তোলে। প্রত্যেক ভাষার ব্যাকরণেরই জটিলতা থাকে অল্পবিস্তর।

তবে যেহেতু ভাষাশিক্ষার প্রথম ধাপ ব্যাকরণ শেখা তাই আমাদের এই প্রয়াসের মধ্য দিয়ে যথাসম্ভব সহজে বাংলা ভাষার ব্যাকরণের মূল দিকগুলি আলোচনা করা হবে। ব্যাকরণের দুনিয়ায় আমাদের যাত্রা আজ থেকে শুরু হল।

ধ্বনি

প্রত্যেক ভাষারই চারটি মৌলিক অংশ থাকে – ধ্বনি, শব্দ, বাক্য এবং অর্থ।

প্রথমে আমরা ধ্বনি বিষয়ে খানিকটা জেনে নিই।

ধ্বনির ইংরেজি শব্দ sound হলেও তা আসলে আওয়াজকে বোঝায় না ব্যাকরণে। ধরা যাক, রেডিওটি বাজছে। তার থেকে গানের আওয়াজ আসছে না বলে যদি বলি গানের ধ্বনি আসছে তা ঠিক নয়। তাই দুই প্রকার ধ্বনি আলাদা।

ব্যাকরণের ভাষায় আমরা আমাদের বাগযন্ত্র দিয়ে যা উচ্চারণ করি তাই ধ্বনি।

ধ্বনি দিয়েই আমাদের ভাষা তৈরি হয়। আমরা যা লিখি তাকে বলি বর্ণ। ধ্বনির লিখিত রূপ হল বর্ণ বা বলা যায় আমাদের উচ্চারিত ধ্বনি যে চিহ্নের মাধ্যমে লিখে প্রকাশ করি তাকে বর্ণ বলি। যেমন ‘ফুটবল’ এই শব্দে কি কি ধ্বনি আছে আমরা দেখে নিই।

ফুটবল = ফ্‌+উ+ট্‌+ব্‌+অ+ল্‌ 

এখানে মোট ছয়টি ধ্বনির সমাহারে এই ‘ফুটবল’ শব্দটি গড়ে উঠেছে দেখা গেল।

সেইরকমভাবেই আমরা প্রতিদিন যা যা কথা বলি, লিখি প্রত্যেক কিছুর মধ্যে অজস্র ধ্বনি থাকে। আসলে ধ্বনি হল ইঁটের মতো। বাড়ি তৈরি করতে যেমন ইঁট হল একেবারে প্রাথমিক উপাদান যা ছাড়া হবেই না বাড়ি, তেমনই ধ্বনি ছাড়াও ভাষা গড়ে ওঠে না।

jump-magazine-subscription

তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, যে কোনো ধ্বনি থাকলেই কি ভাষা তৈরি হবে?

যদি বলা হয় – ‘অ প দ গ ভ ব ন র ত’, কিচ্ছুটি বোঝা যায় না, এমনকি এ যে বাংলা ভাষা তাই ঠাহর করা মুশকিল হয়ে পড়ে। আসলে এখানে বুঝতে হবে ধ্বনি একজায়গায় জড়ো হলেই ভাষা গড়ে ওঠে না, তার মধ্যে অর্থ তৈরি হলে তবেই তা ভাষার রূপ নেয়। ‘খেলছি’র সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে বলে এটি ভাষার অন্তর্গত।

কিন্তু এটিকেই যদি উলটে পালটে ‘লছিখে’ করা হয় কোনো অর্থই থাকে না। অথচ একই ধ্বনি দিয়ে দুটি শব্দ গঠিত, কিন্তু শুধুমাত্র অর্থ নেই বলে দ্বিতীয়টি ভাষার পর্যায়ে পড়ে না। তাই সহজে বললে ধ্বনির সঙ্গে অর্থ যুক্ত তা হলে ভাষার রূপ নেয়।

এই সমস্ত ধ্বনিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে আমরা তার মধ্যে দেখবো দুই রকমের ধ্বনি রয়েছে।

অঙ্কে আমরা শিখেছি যে সংখ্যাকে আর ভাঙা যায় না তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে আর যে সংখ্যাকে ভাঙা যায় তাকে বলে যৌগিক সংখ্যা। তেমনই বাংলায় ব্যাকরণের ক্ষেত্রেও দুই রকম ধ্বনি রয়েছে – মৌলিক ধ্বনি এবং যৌগিক ধ্বনি।

এই মৌলিক ধ্বনিও আবার দুইভাগে বিভক্ত – স্বরধ্বনি আর ব্যঞ্জনধ্বনি। আমরা যে বর্ণমালা শিখেছিলাম ছোটবেলায় সেগুলি এই ধ্বনিরই লিখিত রূপ।

আমরা যখন ধ্বনি উচ্চারণ করি তখন তখন মুখ দিয়ে বাতাস বের হয়, বায়ুর সাহায্য ছাড়া আমরা কথা বলতেই পারবো না। এখন এই বাতাস কতটা বেরোচ্ছে বা কিভাবে বেরোচ্ছে, কোথাও বাধা পাচ্ছে কিনা তার উপর নির্ভর করেই ধ্বনির ভাগ করা হয়েছে।

কি অদ্ভুত মেলবন্ধন দেখো বন্ধুরা! মুখ দিয়ে যে শব্দ উচ্চারণ করি তার সঙ্গে ফুসফুসেরও যোগ রয়েছে। এখন যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস কোনো বাধা ছাড়াই মুখ দিয়ে বেরোতে পারে এবং একটানা তাদের আমরা উচ্চারণ করে যেতে পারি তাদের আমরা স্বরধ্বনি বলবো। যেমন – অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।

বাংলায় এই সাতটি স্বরধ্বনি রয়েছে। শেষ ধ্বনিটি দেখে নিশ্চয় অবাক হচ্ছো? এই ধ্বনিটি বাংলায় কোথা থেকে এলো তাই মনে হচ্ছে?

তাহলে উচ্চারণ করো তো আগে ‘দেখে’ বা ‘খেলে’ বা ওপার বাংলার লোক হলে তারা যখন বলে ‘দ্যাশ’, ‘শ্যাষ’ এখানে কোন ধ্বনি আসছে? আমরা কি ‘দেখে’ বলি ঠিকঠাক নাকি ‘এ’-র বদলে ‘অ্যা’ উচ্চারণ করে বলি ‘দ্যাখে’ বা ‘খ্যালে’? তাহলে নিশ্চয় বোঝা গেল যে বাংলায় ‘অ্যা’ ধ্বনিটির পরোক্ষ অস্তিত্ব আছে। আবার যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস বেরোনোর সময় মুখের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বাধা পায় এবং আমরা একটানা উচ্চারণ করতে পারি না তাদের ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন – ক থেকে ব পর্যন্ত সবই ব্যঞ্জনধ্বনি। মনে রাখতে হবে উচ্চারণের সময় আমরা এই ধ্বনিগুলির সঙ্গে ‘অ’ স্বরধ্বনিটি যুক্ত করে থাকি।

প্রথম পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ধ্বনির উচ্চারণ


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখাটি, অডিও, ভিডিও বা অন্য  কোন ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখক পরিচিতিঃ

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সিমন রায়। সাহিত্যচর্চা ও লেখা-লিখির পাশাপাশি নাট্যচর্চাতেও সমান উৎসাহী সিমন।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



এছাড়া,পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহন করতে যুক্ত হতে পারেন ‘লেখা-পড়া-শোনা’ ফেসবুক গ্রূপে। এই গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন এখানে।