plant-hormone
Madhyamik

উদ্ভিদ হরমোন

জীবনবিজ্ঞানদশম শ্রেণি – জীবজগতের নিয়ন্ত্রন ও সমন্বয় (উদ্ভিদ হরমোন)|

আমরা জানি যে প্রাণীদেহে ইন্দ্রিয় এবং স্নায়ুতন্ত্র আছে। এই স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা প্রাণীরা উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে থাকি।

উদ্ভিদ দেহে প্রাণীদেহের অনুরূপ কোন স্নায়ুতন্ত্র নেই, অথচ উদ্ভিদের চলন পর্বে আমরা দেখেছি যে উদ্ভিদ বহিঃস্থ উদ্দীপনায় সাড়া দিতে সক্ষম!

এই কাজটি উদ্ভিদ করতে পারে কিছু বিশেষ রাসায়নিক জৈব যৌগের সাহায্যে, বিজ্ঞনের ভাষায় আমরা এই রাসায়নিক জৈব যৌগ গুলিকে হরমোন বলি।

আজকের পর্বে আমরা বিশেষ কয়েকটি উদ্ভিদ হরমোন নিয়ে আলোচনা করবো।


jump magazine smart note book


উদ্ভিদ হরমোন কাকে বলে?

উদ্ভিদ হরমোনের সংজ্ঞা হিসাবে বলা যায় – যেসকল জৈব যৌগ উদ্ভিদদেহের নির্দিষ্ট কলাকোশে সংশ্লেষিত হয় এবং দেহ তরলে নিঃসৃত হয়ে সংবহনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে বাহিত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু কলাকোশের কার্যকে প্রভাবিত করে তাকে উদ্ভিদ হরমোন বলে।

উদ্ভিদদেহে হরমোনের কাজ কি?

প্রাণীদেহের তুলনায় উদ্ভিদদেহের জটিলতা অনেকটাই কম; তাই উদ্ভিদদেহে হরমোন মূলত বৃদ্ধি, চলন, মুকুলোদ্গমের কাজে ব্যবহার হয়।

বৃদ্ধি –  উদ্ভিদ হরমোনের প্রধান কাজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা। মনে রাখতে হবে ‘নিয়ন্ত্রণ’ শব্দটা ব্যবহার করার কারণ হল একাধারে অক্সিনের মতো হরমোন যেমন উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে আবার অপরদিকে সোডিয়াম ডাইকিগুলেক (Sodium Dikegulac)-এর মতো হরমোন উদ্ভিদের বৃদ্ধি  বিলম্বিত করে।

চলন –  উদ্দীপকের দিকে উদ্ভিদের চলন নিয়ন্ত্রিত হয় হরমোনের দ্বারা।

বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম – উদ্ভিদের বীজমধ্যস্থ ভ্রূণের অঙ্কুরোদগম একটি জটিল প্রক্রিয়া। অনুকূল পরিবেশ ও পর্যাপ্ত জল পেলে সুপ্ত বীজ ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হয়। হরমোন এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

পুস্পমুকুলের পরিস্ফুটন – ফুল ফোটার বা পরিস্ফুটনের কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করে হরমোন।

বার্ধক্য – উদ্ভিদের বার্ধক্য বিলম্বিত করা এবং পর্ণমোচনেও উদ্ভিদ হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।

উদ্ভিদ হরমোনের উৎস

আমরা জানি যে প্রাণী দেহে অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরিত হয়। কিন্তু প্রাণীদেহের মত উদ্ভিদ দেহে কোন গ্রন্থি থাকে না, উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন বর্ধনশীল অংশ যেমন মূল ও কাণ্ডের অগ্রস্থ ভাজক কলা, পত্রকোশ, পুস্পমঞ্জরী ইত্যাদিতে উদ্ভিদ হরমোনের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়।

উদ্ভিদ হরমোনের শ্রেণীবিভাগ

উৎস অনুযায়ী উদ্ভিদ হরমোনকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। নীচের ছকে শ্রেণীবিভাগটি দেখানো হল।

bengali_hormore

এবার আমরা কয়েকটি উদ্ভিদ হরমোন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

অক্সিন (Auxin)

উদ্ভিদ হরমোনগুলির মধ্যে প্রথম অক্সিন হরমোন আবিষ্কার হয়েছিল। অক্সিন হল উদ্ভিদের প্রধান বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন।

আমাদের বাঙ্গালীদের কাছে অক্সিন নামটি meaningless হলেও, কাজের সাথে সাদৃশ্যতা মেনেই এই হরমোনের নামকরণ করা হয়েছে। একটি অক্সিন নামটি এসেছে গ্রীক শব্দ ‘অক্সেইন’ থেকে; অক্সেইন শব্দের অর্থ বৃদ্ধি। এই নামকরণটি করেছিলেন এর আবিষ্কর্তা বিজ্ঞানী ওয়েন্ট (Went)।

অক্সিনের সংজ্ঞা হিসাবে আমরা বলতে পারি –

নাইট্রোজেন ঘটিত যে জৈব যৌগ উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের অগ্রভাগে উপস্থিত থাকে এবং যা উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, তাকে অক্সিন হরমোন বলা হয়।

রাসায়নিক উপাদান

অক্সিন কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত হয়।

উৎস

আমরা অক্সিনের সংজ্ঞাতে জেনেছি যে এই হরমোন উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়, যেমন – মূল ও কাণ্ডের অগ্রস্থ ভাজক কলা, অপরিণত পাতা বা কচি পাতা, ভ্রুণমুকুলাবরণী ইত্যাদি।

auxin_in_bengali
একনজরে অক্সিন

অক্সিন হরমোনের বৈশিষ্ট্য

  • অক্সিন ভীষণভাবে আলো সংবেদনশীল, ফলে এই হরমোন সর্বদা আলোর বিপরীতে সংশ্লেষিত হয়।
  • এই হরমোন সর্বদা নীচের দিকে পরিবাহিত হয়।
  • অক্সিনের সংশ্লেষ – ট্রিপটোফ্যান → ইন্ডোল পাইরুভিক অ্যাসিড → অক্সিন

jump magazine smart note book

অক্সিন হরমোনের কাজ

অগ্রস্থ প্রকটতা

আমরা জেনেছি যে, উদ্ভিদের প্রধান বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন অক্সিন উদ্ভিদের অগ্রস্থ অংশে সংশ্লেষিত হয়।

উদ্ভিদের অগ্রস্থ ভাগে অধিক মাত্রায় অক্সিন থাকার জন্য, উদ্ভিদের কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং উদ্ভিদ পার্শ্বীয় দিকে না বেড়ে, অগ্রস্থ দিকে বেড়ে ওঠে (উদ্ভিদ শাখা প্রশাখার পরিবর্তে লম্বালম্বি ভাবে বেড়ে ওঠে)। একে অগ্রস্থ প্রকটতা (apical dominance) বলা হয়।

যদি কোনো কারণে উদ্ভিদের অগ্রস্থ ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেক্ষেত্রে পার্শ্বীস্থ মুকুল বৃদ্ধি পায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় চা গাছের ক্ষেত্রে পার্শ্বীস্থ মুকুল বাড়িয়ে তোলার জন্য নিয়মিত অগ্রস্থ ভাগ ছেটে ফেলা হয়।

udvider-upor-auxin-er-provab
অক্সিনের প্রভাবে অগ্রস্থ ভাগের বৃদ্ধি

কোশ বিভাজন ও কোশের আকার বৃদ্ধি

অক্সিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলে কোশ বিভাজন ত্বরান্বিত করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটানো। এছাড়া অক্সিন সেলুলোজ জাতীয় উৎসেচকের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোশপ্রাচীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে ফলে কোশ আয়তনে বৃদ্ধি পায়।

মূলের সৃষ্টি ও বৃদ্ধি

অক্সিন স্বল্প ঘনত্বে মূলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আলোর দিকে থাকা কোশগুলি অক্সিনের প্রভাবে বিপরীত দিকে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এখানে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন অধিক মাত্রায় অক্সিন বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

ফলের বৃদ্ধি

নিষেকের পরে ডিম্বাশয়ে অক্সিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ফলে নিষিক্ত ডিম্বাশয় ফলে পরিণত হয়। শুধু তাই নয় অক্সিনের প্রভাবে ফলের আয়তন বৃদ্ধি হয় এবং পতন বিলম্বিত হয়।

ট্রপিক চলন

উদ্ভিদের ফটোট্রপিক চলন এবং জিওট্রপিক চলনে অক্সিন বিশেষ ভুমিকা পালন করে। আমরা আগেই জেনেছি যে অক্সিন অতিমাত্রায় আলোক সংবেদনশীল। উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের কোন একটি ভাগে আলো পড়লে অক্সিন বিপরীত দিকে সঞ্চিত হয় ঐ অঞ্চলের কোশ বিভাজন তরান্বিত করে। এর ফলে কাণ্ডের শীর্ষভাগ আলোর দিকে বেঁকে যায় (ফটোট্রপিক চলন) ।

Phototropism-Diagram
অক্সিনের প্রভাবে উদ্ভিদ কাণ্ড আলোর অভিমুকে বেঁকে যাচ্ছে। সবুজ কাণ্ডে গোলাপি অংশ গুলি অক্সিন বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। [চিত্র সৌজন্য – biologydictionary]
আবার জিওট্রপিক চলনের ক্ষেত্রেও অক্সিনের ভুমিকা লক্ষ্য করা যায়। উদ্ভিদ মূলের ক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে মূলাগ্রের কাছে অধিক পরিমাণে অক্সিন জমা হয়। যেহেতু অধিক মাত্রায় অক্সিন উদ্ভিদের বৃদ্ধি রোধ করে তাই মুলাগ্রের অগ্রভাগ যেখানে অক্সিনের মাত্রা তুলনামূলক ভাবে কম সেই স্থানের অধিক বৃদ্ধি ঘটে এবং মূল নীচের দিকে বেঁকে যায়।

Effect of Auxin in roots

জিব্বেরেলিন (Gibberellin)

1925 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী কুরোসোয়া (Kurosawa) প্রমাণ করেন যে ধানগাছের অতিকায় বৃদ্ধির জন্য জিব্বেরেলা ফুজিকুরোই নামক একপ্রকার ছত্রাক নিঃসৃত একটি বিশেষ ধরনের জৈব রাসায়ন দায়ী।  কুরোসোয়া এর নামকরণ করেন জিব্বেরেলিন।

অক্সিনের মতো জিব্বেরেলিন কিন্তু একটি হরমোন নয়, জিব্বেরেলিনের প্রকারভেদ আছে। এখনো পর্যন্ত জিব্বেরেলিনের 130 প্রকারভেদ আবিষ্কৃত হয়েছে; এদের GA (রাসায়নিক নাম) নামে চিহ্নিত করা হয়, যেমন GA1, GA2, GA3 ইত্যাদি।

জিব্বেরেলিনের সংজ্ঞা হিসাবে বলা যায় –

উদ্ভিদের পরিণত বীজপত্রে টারপিনয়েড বর্গযুক্ত নাইট্রোজেন বিহীন যে জৈব অম্ল নিঃসৃত হয়ে উদ্ভিদ কাণ্ডের বৃদ্ধি এন অঙ্কুরোদগমে সহায়তা করে তাকে জিব্বেরেলিন বলে।

রাসায়নিক উপাদান

জিব্বেরেলিন, কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত টারপিনইয়েড জাতীয় লঘু অ্যাসিড।

উৎস

জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের পরিণত বীজে ও বীজপত্রে, পাতার ভাজক কলায়, পুস্পাগ্রে ইত্যাদি অংশে পাওয়া যায়।

জিব্বেরেলিনের বৈশিষ্ট্য –

  • এটি জাইলেম ও ফ্লোয়েমের সাহায্যে উদ্ভিদ দেহের উপর ও নীচে, সারা উদ্ভিদদেহে পরিবাহিত হয়।
  • জিব্বেরেলিনের সংশ্লেষ – অ্যাসিটাইল  CoA → আইসো পেনটাইল পাইরোফসফেট  →জিব্বেরেলিন
gibberellin_in_bengali
একনজরে জিব্বেরেলিন

জিব্বেরেলিনের কাজ

এই হরমোন প্রধানত তিনটি কাজ করে

মুকুল ও বীজের অঙ্কুরোদগম

বীজ ও মুকুলের সুপ্তদশা কাটিয়ে ওঠার জন্য GA3 এর সক্রিয়তার ফলে বীজ মধ্যস্থ আলফা অ্যামাইলেজ সক্রিয় হয় ও বীজপত্রের শ্বেতসারকে দ্রবনীয় শর্করায় পরিণত করে। এর সাহায্যে সুপ্ত ভ্রূন জাগরিত হয়ে অঙ্কুরোদগম ঘটে।

gibberellin

পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি

কোশ বিভাজন এবং কোশের আয়তন বৃদ্ধির মাধ্যমে জিব্বেরেলিন পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে।

ফলের বৃদ্ধি

বিভিন্ন জিব্বেরেলিনের মধ্যমে ফলের আকার বৃদ্ধি পায়। যেমন G3 আঙুরের আকারের বৃদ্ধি ঘটায়।

সাইটোকাইনিন (Cytokinin)

‘সাইটোকাইনেসিস’ কথার অর্থ হল সাইটোপ্লাজমের বিভাজন, যা কোশ বিভাজনের সময়  নিউক্লিয়াস বিভাজনের পর সংঘটিত হয় । সাইটোকাইনিন নামক উদ্ভিদ হরমোনের নামের উৎপত্তি এই সাইটোকাইনেসিস শব্দ থেকে।

1956 খিস্টাব্দে বিজ্ঞানী মিলার এবং ওকুমুরা ইস্টের DNA থেকে একটি বিশেষ প্রকারের হরমোনকে পৃথক করলেন। তারা এর নামকরণ করেছিলেন কাইনেটিন। যেহেতু এই হরমোনটি উদ্ভিদের কোশ বিভাজনে সহায়তা করে বলে তাই পরবর্তী সময়ে বৈজ্ঞানিকরা একে সাইটোকাইনিন নামকরণ করেন। এই হরমোনকে কাইনিন নামেও চিহ্নিত করা হয়।

সংজ্ঞা হিসাবে বলা যায় যে –

মূলত উদ্ভিদের ফল ও শস্যে সংশ্লেষিত অ্যাডিনিন নামক একপ্রকার নাইট্রোজেন যুক্ত ক্ষারীয় হরমোন যা কোশ বিভাজনে সয়হতা করে তাকে সাইটোকাইনিন বলা হয়।

উৎস

উদ্ভিদের অপরিণত সস্য, অঙ্কুরিত বীজ এবং যে সমস্ত উদ্ভিদ অঙ্গ দ্রুত বিশ্লেষিত হয় সেই সব অংশে সাইটোকাইনিন লক্ষ্য করা যায়। ডাবের জল, কলা আপেল, ভুট্টা সস্য ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ সাইটোকাইনিন লক্ষ্য করা যায়।

cytokine_in_bengali

সাইটোকাইনিনের বৈশিষ্ট্য

  • এটি পিউরিন বর্গভুক্ত নাইট্রোজেনধর্মী ক্ষারীয় হরমোন।
  • এটি জলে দ্রবণীয়।
  • জিব্বেরেলিনের মতো এটিও উদ্ভিদের সর্ব অংশে প্রবাহিত হতে পারে।
  • সংশ্লেষ – অ্যাডিনিন → রাইবোজ মনোফসফেট ইনোসিনিক অ্যাসিড → সাইটোকাইনিন

দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

সাইটোকাইননিনের কাজ

কোশ বিভাজন

সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের কোশ চক্রের S দশায় DNA এর সংশ্লেষ ঘটায়  মাইটোসিস কোশ বিভাজনে এবং সাইটোকাইনেসিস প্রক্রিয়াতে সয়হতা করে।

পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি

এটি অগ্রস্থ প্রকটতা রোধ করে পার্শ্বীয় মুকুলের অগ্রগতি বৃদ্ধি করে। এর ফলে উদ্ভিদের শাখা প্রশাখা বৃদ্ধি পায় এবং উদ্ভিদ ঝোপ – ঝাড়ের মতো আকৃতি পায়।

tea plant
চা গাছ।

পত্রমোচন বিলম্বন

এটি উদ্ভিদের পাতায় অবস্থিত ক্লোরোফিলকে নষ্ট হতে বাধা দেয় ফলে পত্র মোচন দেরিতে হয়। এক কথায় সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের জরা বিলম্বিত করে।


JUMP ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখাগুলির বিনামূল্যে WhatsApp আপডেট পান।?


 কৃত্রিম হরমোন

হরমোনের উৎস জীবদেহ হলেও বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নতির সাহায্যে কৃত্রিমভাবে আমরা হরমোন ল্যাবে প্রস্তুত করতে পারি। এই কৃত্রিম হরমোন কৃষি এবং উদ্যানবিদ্যায় ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিম হরমোনের আর একটি নাম হল প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটারস। অক্সিন, জিব্বেরেলিন এবং সাইটোকাইনিন এই তিনটি হরমোনকেই কৃত্রিমভাবে ল্যাবে প্রস্তুত করা হয়।

কৃত্রিম হরমোনের কাজ

শাখাকলম থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টিতে

কোন উদ্ভিদ থেকে কৃত্রিম ভাবে আরো একটি উদ্ভিদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে কলম বলা হয়। উদ্যানবিদ্যায় এই পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ হয়ে থাকে। উদ্ভিদের কাটা ডাল বা সজীব শাখাকান্ড অক্সিনের দ্রবণের মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে তা থেকে কিছুদিনের মধ্যেই মূল সৃষ্টি হয় এবং এই ডাল মাটিতে রোপণ করা হলে তা থেকে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়।

auxin-cutting

আম, পেয়ারা, লেবু ইত্যাদি জাতীয় ফলের গাছ এবং ডালিয়া, গোলাপ, জবা ইত্যাদি ফুলের গাছের ক্ষেত্রে এই কলম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

 অপরিণত ফলের মোচন রোধে

ফল চাষের ক্ষেত্রে অপরিণত ফলের মোচন একটি ব্যপক সমস্যা। যেমন আম, কলা, আঙ্গুর জাতীয় ফল গাছের ক্ষেত্রে অপরিণত ফলের মোচনে প্রতিবছর প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি হয়। আমরা জানি যে অক্সিন অপরিণত ফলের মোচন রোধ করে, তাই এই অপরিণত মোচন রোধ করার জন্য ফলের বোঁটায় কৃত্রিম অক্সিন স্প্রে করা হয়।

আগাছা দমনে

কৃষিজমিতে আগাছার জন্ম হলে তা মাটির উর্বরতা বিনষ্ট করে কৃষিকাজের ক্ষতি করে। আবার কৃষিক্ষেত্রে আগাছা দমনের আধুনিক প্রক্রিয়াগুলি যথেষ্ট ব্যায়বহূল। তাই বর্তমান আগাছা দূর করার জন্যে আগাছার উপরে কৃত্রিম অক্সিন স্প্রে করা হয়, এটি সস্যের কোনরূপ ক্ষতি না করে শুধুমাত্র আগাছা বিনষ্ট করে। অক্সিনের এই ধর্মের জন্য একে উইডিসাইড হরমোন বলা হয়। [উইড কথার অর্থ আগাছা]

বীজহীন ফল সৃষ্টিতে

নিষিক্ত ডিম্বাশয় ফলে রূপান্তরিত হয় কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ নিষেক ছাড়াও ফল প্রস্তুত করা যায়। কৃত্রিম জিব্বেরেলিনের প্রভাবে বীজবিহীন ফল উৎপাদন করা যায়, এই পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলা হয়। পেঁপে, আঙ্গুর, আপেল প্রভৃতি ক্ষেত্রে পার্থেনোকার্পি পদ্ধতি ব্যপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

parthenocarpy_begnlai
বীজহীন পেঁপে

সাধারণত এই ধরনের ফল আকারে বড় এবং মিষ্টি হয়।

উদ্ভিদ হরমোন সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → প্রাণী হরমোন


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-LSc-1b