bayumondoler-dharona
Madhyamik

বায়ুমণ্ডলের ধারণা

ভূগোলদশম শ্রেণি – বায়ুমণ্ডল (প্রথম পর্ব)

মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত উল্লম্ব ভাবে বিস্তৃত যে গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে এবং পৃথিবীর সাথে সাথেই আবর্তন করছে, তাকেই বায়ুমণ্ডল বলা হয়।


বায়ুমণ্ডলের ধারণা বুঝে নাও এই ভিডিও থেকে ↓


বায়ুমণ্ডলের প্রকৃতি

    • ভূপৃষ্ঠ থেকে উলম্ব ভাবে 10000 কিমি পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল বিস্তৃত।
    • বায়ুমণ্ডলের ওজন আছে তাই এর চাপ বর্তমান।
    • বায়ুমণ্ডল সংকোচন ও প্রসারণশীল।
    • বায়ুমণ্ডল স্বচ্ছ হওয়ায় বিভিন্ন পদার্থ ও রশ্মি শোষণ ও বিকিরণ করতে সক্ষম।
    • বায়ুমণ্ডলের প্রায় 99% ভূপৃষ্ঠ থেকে 30 কিমি মধ্যে অবস্থান করে।
    • জল, স্থল, বায়ু ও জীবের মধ্যে পরস্পর ক্রিয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের সবসময় নবীকরণ হতে থাকে।

      বায়ুমণ্ডলের উৎপত্তি

      অন্যান্য গ্রহের বায়ুমন্ডলের উপর বহুদিনের পর্যালোচনার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে গ্রহের সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে সূর্যকিরণ ও মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে কিছু কিছু গ্যাসের অন্তর্ভুক্তি ঘটে। এটি হল বায়ুমণ্ডল সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়।

      এরপর সময়ের সাথে সাথে অগ্ন্যুদগম, পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়া, উষ্ণ প্রস্রবণ জীবমণ্ডলের উপস্থিতি ইত্যাদি কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বর্তমান রূপ নিয়েছে।

      বায়ুমণ্ডলের উপাদান

      বায়ুমন্ডল মূলত বিভিন্ন গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়া বায়ুমণ্ডলে কিছু জলীয়বাষ্প ও কিছু কঠিন উপাদান ও বর্তমান।

      গ্যাসীয় উপাদান

      বায়ুমন্ডল মূলত গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা তৈরি। বায়ুমণ্ডল যে গ্যাসটি সর্বাধিক পরিমাণে রয়েছে সেটি হল নাইট্রোজেন (79.08%)। এরপরের স্থান দখল করে রেখেছে অক্সিজেন (20.94%)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে আর্গন (0.93%) এবং চতুর্থ হল কার্বন-ডাই-অক্সাইড (0.033%)। এগুলি হল স্থির গ্যাস।

      নাইট্রোজেন

      নাইট্রোজেন হল একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এটি সরাসরি অন্য কোনো গ্যাসের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হতে পারে না।


      দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

      অক্সিজেন

      যে কোনো বস্তুর ধরনের সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। প্রাণী ও উদ্ভিদের শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহে শক্তি তৈরিতে অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়।

      আর্গন

      আর্গন একটি গন্ধহীন বর্ণহীন নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এটি কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া অংশগ্রহণ করে না।

      কার্বন ডাই অক্সাইড

      কার্বন ডাই-অক্সাইড মূলত বিভিন্ন দহন প্রক্রিয়া, যানবাহনের ধোঁয়া, জীবের শ্বসন প্রক্রিয়া, অগ্নুৎপাত দাবানল থেকে উৎপন্ন হয়। বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড অন্যতম।

      পরিবর্তনশীল গ্যাস

      বায়ুমন্ডলের পরিবর্তনশীল গ্যাস গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ওজোন, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড। ভূপৃষ্ঠ থেকে 20 থেকে 35 কিলোমিটার উচ্চতায় ওজোন স্তরে অবস্থান করে।

      নিষ্ক্রিয় গ্যাস

      বায়ুমণ্ডলের নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি হল হিলিয়াম, নিয়ন, ক্রিপটন ও জেনন।

      জলীয় বাষ্প

      বায়ুমণ্ডলের সমস্ত উপাদানের মধ্যে 0.5 থেকে 4 শতাংশ জলীয় বাষ্প গঠন করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে 5 থেকে 6 কিলোমিটারের মধ্যে (90%) সর্বাধিক জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। উচ্চতা, উষ্ণতা, অক্ষাংশ ও ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ পরিবর্তন ঘটে। বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্পের উৎস হল বাষ্পীভবন ও উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়া।

      বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্বগুলি হল –

    • জলীয় বাষ্পই বায়ুমণ্ডলের মেঘ-বৃষ্টি, তুষার, কুয়াশার কারণ।
    • জলীয় বাষ্প সূর্যের তাপ শোষণ করে উত্তাপের তীব্রতা কমিয়ে থাকে।
    • জলীয় বাষ্প পরিবেশের উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
    • জলীয় বাষ্পের ঘনীভবনের ফলে উৎপন্ন লীনতাপ ঘূর্ণিঝড়কে সক্রিয় রাখে।

      কঠিন উপাদান

      বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত ধূলিকণা, লবণ কণা ও কার্বন কণাই হলো বায়ুমণ্ডলের কঠিন উপাদান। বায়ুমণ্ডলের এই কঠিন কণাগুলোকে আশ্রয় করে জলীয় বাষ্প ভেসে বেড়ায় এবং পরবর্তীকালে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।

      কঠিন উপাদানের গুরুত্ব

      বায়ুমণ্ডলের কঠিন কণাগুলোকে আশ্রয় করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণা ও বরফ কণায় পরিণত হয়।
      বায়ুমণ্ডলের কঠিন কণাগুলি আকাশে ঊষা ও গোধূলির আভা সৃষ্টি করে।
      এই কঠিন কণাগুলি আকাশের রং নির্ধারণের সাহায্য করে।
      এই কঠিন বস্তু কণাগুলি তাপ শোষণ করে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

      বায়ুমন্ডলে প্রধানত দুইভাবে স্তরবিন্যাস করা যায়।
      a. রাসায়নিক উপাদানের তারতম্য হিসেবে স্তরবিন্যাস
      b. তাপমাত্রার উলম্ব বন্টনের পার্থক্য অনুসারে স্তরবিন্যাস

      রাসায়নিক উপাদানের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস

      আমরা এই পর্বে রাসায়নিক উপাদানের তারতম্য স্তরবিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করব।

      রাসায়নিক গঠনের তারতম্যর ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে দুটি স্তরে ভাগ করা যায়।
      সেগুলি হল:

      ক. হোমোস্ফিয়ার বা সমমন্ডল

      বায়ুমণ্ডলের এই স্তরের উপাদানগুলোর অনুপাতের রাসায়নিক গঠন প্রায় একই রকম থাকায়, একে হোমোস্ফিয়ার বলা হয়। ভূপৃষ্ঠের উপর উলম্বভাবে 80 থেকে 90 কিলোমিটার পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।

      হোমোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য

      এই স্তরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত স্তরগুলি হল ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ারের কিছু অংশ।
      এই স্তরে বায়ুমন্ডলের সমস্ত উপাদান যেমন বিভিন্ন গ্যাস, কঠিন পদার্থ ও জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি দেখা যায়।
      মূলত ঝড়ো বাতাসের ফলে এই স্তরে বায়ুর মিশ্রণ ঘটে, তাই এদের অনুপাতের খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায় না।


      দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

      খ. হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমন্ডল

      হোমোস্ফিয়ার শেষ সীমা থেকে থেকে বায়ুমন্ডলের শেষ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশকে হেটেরোস্ফিয়ারের বলে (80-90 থেকে 10000 কিমি)। এই স্তরে গ্যাসগুলির অনুপাত সমান হয় না; এবার এক একটি স্তরে এক একটি গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়। এই কারণেই এই স্তরকে বিষমমন্ডল বলা হয়।

      রাসায়নিক গঠন অনুসারে স্তরকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
      আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (90-200 কিমি)
      পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর ( 200 – 1100 কিমি)
      হিলিয়াম স্তর ( 1100- 3500 কিমি)
      হাইড্রোজেন স্তর ( 3500- 10000 কিমি)

      হেটেরোস্ফিয়ারের গ্যাসের স্তরবিন্যাসটি কণাগুলির আণবিক ওজনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। ভারী হওয়ার জন্যই নাইট্রোজেন গ্যাসের স্তর সবথেকে নিচে ও হাইড্রোজেন গ্যাসের স্তর সবথেকে উপরে অবস্থান করে।

সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-geo-2-a