bayumondoler-storbinyas
Madhyamik

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস | মাধ্যমিক ভুগোল | অধ্যায় বায়ুমণ্ডল

ভূগোলদশম শ্রেণি – বায়ুমণ্ডল (দ্বিতীয় পর্ব)

আগের পর্বে আমরা বায়ুমণ্ডলের ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজকের পর্বে আমরা বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


jump magazine smart note book


তাপমাত্রার উলম্ব বন্টন হিসেবে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস

তাপমাত্রার পার্থক্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

ট্রপোস্ফিয়ার

এই স্তরটি হল বায়ুমন্ডলের সবথেকে নিচের স্তর। এই স্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে উপর দিকে 12 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরটি মেরু অঞ্চলে 8 কিলোমিটার এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে 18 কিলোমিটার অবধি বিস্তৃত। বায়ুমন্ডলের সমস্ত গ্যাসীয় উপাদানের প্রায় 80% এই স্তরে উপস্থিত রয়েছে।

ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য

  • এই স্তরে স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের বিধি পরিলক্ষিত হয়।
  • এই স্তরে উপরের দিকে প্রতি কিলোমিটারে 6.4°C হারে উষ্ণতা কমতে থাকে।
  • এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের যাবতীয় দুর্যোগ সংগঠিত হয় বলে এই স্তরকে ক্ষুব্ধ মন্ডল বলা হয়।
  • ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ বলা হয়।
  • বায়ুমন্ডলের সমস্ত স্তরের মধ্যে এই স্তরের ঘনত্ব সবথেকে বেশি।
  • এই স্তরটি মূলত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত।
    বায়ুমন্ডলের স্তরবিন্যাস

    স্ট্রাটোস্ফিয়ার

    ট্রপোপজ-এর উপর থেকে 50 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার বলা হয়। এই স্তরের উপরের দিকে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হতে থাকে।

    এই স্তর ঝড়ঝঞ্জা বৃষ্টিপাত থেকে মুক্ত থাকে বলে, এই স্তরকে শান্ত মন্ডল বলা হয়। জেট বিমান এই স্তরে চলাচল করতে পারে। এই স্তরের উর্ধ্বসীমাকে স্ট্রাটোপজ বলে।



    স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য

  • এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
  • এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব কম হয়, তাই অল্প তাপ শোষণের ফলেও এই স্তর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
  • এই স্তরে 15 থেকে 35 কিলোমিটার উচ্চতায় ওজোন স্তর অবস্থান করে। এই ওজোনস্তর এই স্তরের তাপ শোষণ করে।
  • এই স্তর থেকে বায়ুমন্ডলের বায়ুস্তর ক্রমশ হালকা হতে থাকে। মেরু অঞ্চলে এই স্তরে শীতকালে যে সামান্য মেঘ দেখা যায়, একে মৌক্তিক বা শক্তি মেঘ বলে।

    মেসোস্ফিয়ার

    স্ট্রাটোপজের উপর থেকে 80 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে মেসোস্ফিয়ার বলা হয়। মেসোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে মেসোপজ বলে।

    মেসোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য

  • এই স্তরের উপরের দিকে তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে ও 80 কিলোমিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা -85°C হয়।
  • মহাকাশ থেকে আগত উল্কাপিণ্ড এই স্তরে পুড়ে শেষ হয়ে যায়।
  • অনেক সময় মেসোপজে সামান্য জলীয়বাষ্প ঢুকে গিয়ে নৈশদ্যুতি মেঘ (Noctilucent cloud) সৃষ্টি করে।

    থার্মোস্ফিয়ার

    মেসোপজের উপর থেকে প্রায় 80 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলের স্তরকে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়। এটি বায়ুমন্ডলের চতুর্থ স্তর। এই স্তরে উচ্চতার সাথে উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং এই স্তরের শেষ সীমায় উষ্ণতা 12000°C থেকে 15000°C পৌঁছায়। এই স্তরের নিচের দিকের গ্যাসের কণাগুলো আয়নিত অবস্থায় থাকে, একে আয়নোস্ফিয়ার বলা হয়। সূর্যের ক্ষুদ্র রশ্মির প্রভাবে (যেমন – এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি) নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের পরমাণু থেকে ঋণাত্মক ইলেকট্রন কণা মুক্তি ও ধনাত্মক ইলেকট্রন কণা সঞ্চয়ের ফলে আয়োনোস্ফিয়ার তৈরি হয়েছে।


    খুব সহজে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস বুঝে নাও এই ক্লাস থেকে↓


    থার্মোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য

  • এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা বৃদ্ধি হয় এবং এই স্তরে গ্যাসের কণাগুলো আয়নিত অবস্থায় থাকে।
  • মেরু অঞ্চলে শীতকালে রাত্রে বেলায় এই স্তরের সূর্যালোকের বিচ্ছুরণের ফলে সূর্যালোকের দৃশ্যমান রংগুলি পৃথকভাবে প্রতিফলিত হয়, তাকে মেরুপ্রভা মেরুজ্যোতি বলে। সুমেরু অঞ্চলে এই আলোর বিচ্ছুরণকে অরোরা বোরিয়ালিস ও কুমেরু অঞ্চলে অরোরা অস্ট্রালিস বলা হয়।
  • বেতার তরঙ্গ এই স্তরে প্রতিফলিত হয়ে আবার ভূপৃষ্ঠের ফিরে আসে।

    এক্সোস্ফিয়ার

    থার্মোস্ফিয়ার আয়নোস্ফিয়ার থেকে উপর দিকে প্রায় 1500 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে এক্সোস্ফিয়ার বলা হয়। এই স্তরের ঘনত্ব অত্যন্ত কম এবং বায়ুর কোনো অস্তিত্ব এই স্তরে অনুভব করা যায় না।

    এক্সোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য

  • এই স্তরটি অত্যন্ত কম ঘনত্বের গ্যাসীয় উপাদান যেমন হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা গঠিত।
  • এই স্তরের গ্যাসীয় উপাদানগুলি মহাশূন্যে অবাধে বিচরণ ও বিলীন হতে পারে।
  • এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা সামান্য বৃদ্ধি পায়।

    ম্যাগনেটোস্ফিয়ার

    এক্সোস্ফিয়ারের পরে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 10 হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমন্ডলের সর্বশেষ স্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলা হয়। এই স্তরে ইলেকট্রন ও প্রোটন কণা দ্বারা গঠিত চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়, তাই এই স্তরের নাম ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বা চৌম্বক মন্ডল।

    ম্যাগনেটোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য

  • এই স্তরে স্থায়ী চুম্বক ক্ষেত্রের উপস্থিতি দেখা যায়।
  • এই স্তরের উর্ধ্বসীমায় যে অংশে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের শেষ সীমা অবস্থান করে, তাকে ম্যাগনেটোপজ বলে।
  • সূর্য থেকে আগত সৌর বায়ু এই স্তরে আবদ্ধ হয়।
  • নিরক্ষীয় অঞ্চলে 3000 কিমি ও 16000 কিমি উচ্চতায় যে দুটি ম্যাগনেটোপজ বলয় অবস্থিত তাদের ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বলয় বলা হয়।

    ওজোন স্তর

    ওজোন হলো বায়ুমন্ডলের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিবর্তনশীল গ্যাস। ওজোন শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ozo’ শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে যার অর্থ ‘smell’ বা গন্ধ। এই গ্যাসটি হালকা নীল বর্ণের উগ্র গন্ধ বিশিষ্ট হয়ে থাকে। তিনটি অক্সিজেন পরমাণু (O) যুক্ত হয়ে একটি ওজন অণুর (O3) তৈরি করে। বায়ুমন্ডলে গ্যাসের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য (0.00006%) হল এই গ্যাস এর কার্যকারিতা সবথেকে বেশি। স্ট্রাটোস্ফিয়ার এর 20 থেকে 35 কিলোমিটার উচ্চতায় ওজোন গ্যাস গ্যাসের যে আস্তরণ তৈরি হচ্ছে তাকে ওজোন স্তর বলা হয়। এই স্তরে ওজোন স্তরের ঘনত্ব 300-350 DU.


    দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

    ওজোন স্তরের ঘনত্ব 200 DU বা ডবসন ইউনিট নিচে থাকলে তাকে ওজোন গহ্বর বলা হয়। এক ডবসন একক বলতে বোঝায় 1 বায়ুমন্ডলীয় চাপে 0.001 মিলিমিটার পুরু O3 ঘনত্ব কে। একটি CFC কণা প্রায় 1 লক্ষ ওজন কণাতে ধ্বংস করতে পারে।

    ওজোন স্তরের গুরুত্ব

    ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে গোটা পৃথিবীর জীবমন্ডল সুরক্ষিত রাখে। ওজোন স্তর হলো একটি প্রাকৃতিক সৌর পর্দা।
    এই ওজোন স্তর পৃথিবীর নিচের দিকের বায়ুমন্ডলকে বেশি উত্তপ্ত হওয়ার থেকে রক্ষা করে।

    ওজোন স্তরের বিনাশ

    ওজোন স্তর ধ্বংসের দুটি কারণ বর্তমান একটি হলো প্রাকৃতিক ও অন্যটি মনুষ্যসৃষ্ট।

    ওজোন স্তর বিনাশের প্রাকৃতিক কারণ

    স্ট্রাটোস্ফিয়ার এর প্রাকৃতিক কারণে যেমন ওজোন গ্যাস তৈরি হয় তেমন প্রাকৃতিক উপায়ে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ওজোন স্তরের বিনাশে ঘটে। এই ভাবেই ভারসাম্য রক্ষা হয়।
    যেমন – O3 + UV (অতিবেগুনি রশ্মি) —> O2+O , O3+O —> 2O2 বা O2 + O2

    ওজোন স্তর বিনাশের মনুষ্যসৃষ্ট কারণ

    মানুষের সৃষ্টি ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, ক্লোরোফ্লুরো মিথেন, হ্যালন প্রভৃতি গ্যাস ওজোন স্তর বিনাশের জন্য দায়ী। অতিবেগুনি রশ্মির কারণে CFC ক্লোরিন পরমাণুকে Cl এ পরিণত করে এবং এই Cl সাথে বিক্রিয়া করে ওজন স্তর ধ্বংস করে।
    Cl2 + UV —–> 2Cl, Cl + O2 —-> ClO + O2


    দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

    শিল্পাঞ্চলে কারখানা থেকে নির্গত সালফেট এরোসল ওজোনকে বিয়োজিত করে, অক্সিজেনে রূপান্তরিত করে যার ফলে ওজোন স্তর বিনষ্ট হয়।
    স্ট্রাটোস্ফিয়ারের সুপারসনিক জেট বিমান থেকে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প ওজোন গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে ওজোন স্তর বিনাশ করে।


    jump magazine smart note book


    ওজোন স্তর বিনাশের প্রভাব

    ওজোন স্তরের ঘনত্ব কমার ফলে কুমেরু অঞ্চলে ওজোন গহবর সৃষ্টি হয়েছে। ওজোন স্তরের বিনষ্ট হওয়ার কারণে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে সহজেই প্রবেশ করছে। এর ফলে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হলে জীবজগৎ নষ্ট হচ্ছে এবং মানুষের ত্বকের ক্যান্সার বাড়ছে। সর্বোপরি বাস্তুতন্ত্রের ওপর ওজোন স্তর বিনাশের ক্ষতিকারক প্রভাব অনস্বীকার্য।

সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ইনসোলেশনের ধারণা


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-geo-2-b