varoter-prosasonik-bivag
Madhyamik

ভারতবর্ষের অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ

ভূগোলদশম শ্রেণি – আঞ্চলিক ভূগোল (প্রথম পর্ব)

বিশ্ব মানচিত্রে ভারতবর্ষ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। পুরাণ মতে ভরত রাজার নাম অনুসারে এই দেশের নাম হয়েছে ভারত। প্রাচীনকালে গ্রিকরা এই দেশের নাম দিয়েছিল ইন্ডিয়া। INDUS বা সিন্ধু থেকেই এই নামের উৎপত্তি হয়েছে।

ভারতবর্ষের INDIA এবং BHARATএই দুটো নাম সরকারিভাবে স্বীকৃত হয়েছে।


jump magazine smart note book


ভারতবর্ষের ভৌগলিক অবস্থান বিস্তৃতি ও সীমা

ভারতবর্ষের ভৌগলিক অবস্থান

ভারতীয় ভূখণ্ড দক্ষিণে 8°4′ উত্তর অক্ষাংশে কন্যা কুমারিকা অন্তরীপ থেকে উত্তরে 37°6′ উত্তর অক্ষাংশ কাশ্মীরের উর্ধ্বসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিমে 68°7′ পূর্ব দ্রাঘিমা গুজরাটের পশ্চিম সীমা থেকে পূর্বে 97°25′ পূর্ব দ্রাঘিমা অর্থাৎ অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

মানচিত্র: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ সীমায় অবস্থিত ইন্দিরা পয়েন্ট বা পিগম্যালিয়ন পয়েন্ট 6°45′ উত্তর অক্ষাংশকে ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ব দক্ষিণ বিন্দু হিসেবে ধরা হয়।



জেনে রাখো, 2004 সালে ভয়াবহ সুনামিতে ইন্দিরা পয়েন্টের বাতিস্তম্ভটি (light house) ডুবে যায়। পরবর্তী সময়ে বাতিস্তম্ভটি মেরামত করা হয়েছে এবং ইন্দিরা পয়েন্ট এখন সুরক্ষিত আছে।


ভারতবর্ষের বিস্তৃতি

ভারতের মূল ভূখণ্ডটি উত্তরে কাশ্মীরের ইন্দিরা কল থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত 3,214 কিমি বিস্তৃত। আবার পশ্চিমে গুজরাটের কচ্ছের রান থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সীমা পর্যন্ত 2,933 কিমি বিস্তৃত। ভারতীয় ভূখণ্ডের সীমানা উপকূল অঞ্চল থেকে সমুদ্রের দিকে প্রায় 22.2 কিলোমিটার বা 12 নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত ভারতের মোট ক্ষেত্রফল হল 32,87,263 বর্গ কিলোমিটার।

ভারত পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম দেশ!

ভারতবর্ষের সীমা

ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত চীন নেপাল ও ভুটান উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান।

চীন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান যথাক্রমে ম্যাকমোহন লাইন, রাডক্লিফ লাইন এবং ডুরান্ড লাইন দ্বারা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

ভারতের পূর্বে মায়ানমার বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগর এবং ভারতের দক্ষিণের তিন দিক জুড়ে রয়েছে ভারত মহাসাগর আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর।
শ্রীলঙ্কা ভারতের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত।


jump magazine smart note book


স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

1947 থেকে 1950 সাল পর্যন্ত রাজ্য পুনর্গঠন

• 1947 সালের 15ই আগস্টের পর ভারতের অন্তর্গত রাজ্যগুলির মধ্যে 5টি চীফ কমিশনার শাসিত প্রদেশ, 9টি রাজ্যপাল শাসিত প্রদেশ, 550টিরও বেশী দেশীয় রাজ্য ছিল।

1949 সালের 26শে নভেম্বর ভারতীয় গণপরিষদ কর্তৃক এ দেশের সংবিধান গৃহীত হয়। সেই সময় এই দেশে 28টি অঙ্গরাজ্যের এবং একটি রাষ্ট্র ক্ষেত্র তৈরি হয়।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

• 1951 সালের আসাম রাজ্যের কিছু অংশ ভুটানকে ছেড়ে দিয়ে ভারতের সীমানা পুনর্গঠন করা হয়। এই সময় পশ্চিমবঙ্গে কোচবিহার অন্তর্ভুক্ত হয়।

• 1953 সালে মাদ্রাজের উত্তরের কিছু অংশ নিয়ে নতুন একটি রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয়।

স্বাধীনোত্তর ভারতের সর্বপ্রথম ভাষার ভিত্তিতে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয়েছিল।

• 1954 সালে হিমাচল প্রদেশ এবং বিলাসপুরকে একত্রিত করে একটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিমাচল প্রদেশের সৃষ্টি করা হয়।

1956 সাল থেকে বর্তমান সময়ে রাজ্য পুনর্গঠন

• রাজ্যের পুনর্বিন্যাস আইন অনুসারে ভাষার উপর ভিত্তি করে 1956 সালের 1 নভেম্বর বিভিন্ন রাজ্যগুলির পুনর্গঠন করা হয়। এরফলে আগের 29টি রাজ্যের জায়গায় 14টি রাজ্যপাল শাসিত রাজ্য এবং 6টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সৃষ্টি হয়।

এই আইনের ফলে 3টি নতুন রাজ্য তৈরি হয়। যেমন – কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং রাজস্থান।

• 1960 সালে বোম্বাই রাজ্যকে দুই ভাগে বিভক্ত করে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট তৈরি হয়।

• 1971 সালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিমাচল প্রদেশকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়।

• 1975 সালে সিকিমকে ভারতের 22 তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।

• 1987 সালের মিজোরাম অরুণাচল প্রদেশ এবং গোয়া যথাক্রমে 23 তম, 24 তম ,25 তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে মর্যাদা লাভ করে।

• 1993 সালে দিল্লিকে ভারতের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।

• 2000 সালে মধ্যপ্রদেশ ভেঙে ছত্রিশগড় (26 তম), উত্তর প্রদেশ থেকে উত্তরাখণ্ড (27 তম) এবং বিহার থেকে ঝাড়খন্ড (28 তম) পৃথক রাজ্যের সৃষ্টি হয়।

2014 সালে অন্ধ্র প্রদেশ বিভক্ত হয়ে তেলেঙ্গানা ভারতের 29 তম রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আপাতত দশ বছরের জন্য হায়দ্রাবাদকে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের যৌথ রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে আমরাবতী শহরটিকে তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী করার প্রস্তাব পাস হয়েছে।

ভারতের বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ

ভারতবর্ষের মানচিত্র [চিত্র সৌজন্য – Survey of India]

রাজ্য শাসিত অঞ্চল ও তার রাজধানী

1. রাজস্থান – জয়পুর
2. মধ্যপ্রদেশ – ভোপাল
3. মহারাষ্ট্র – মুম্বাই
4. অন্ধ্রপ্রদেশ – হায়দ্রাবাদ


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

5. উত্তরপ্রদেশ – লখনউ
6. গুজরাট – গান্ধীনগর
7. কর্ণাটক – বেঙ্গালুরু
8. উড়িষ্যা – ভুবনেশ্বর
9. ছত্রিশগড় – রায়পুর
10. তামিলনাড়ু – চেন্নাই
11. বিহার – পাটনা
12. পশ্চিমবঙ্গ – কলকাতা
13. অরুণাচল প্রদেশ – ইটানগর
14. ঝাড়খন্ড – রাঁচি
15. আসাম – দিসপুর
16. উত্তরাখণ্ড – দেরাদুন
17. হিমাচল প্রদেশ – সিমলা
18. পাঞ্জাব – চন্ডিগড়
19. হরিয়ানা – চন্ডিগড়
20. কেরালা – তিরুবন্তপুরম
21. মেঘালয় – শিলং
22. মনিপুর – ইম্ফল
23. মিজোরাম – আইজল
24. নাগাল্যান্ড – কোহিমা
25. ত্রিপুরা – আগরতলা
26. সিকিম – গ্যাংটক
27. গোয়া – পানাজি
28. তেলেঙ্গানা – অমরাবতী

ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও তার রাজধানী

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রাজধানী

1. আন্দামান ও নিকোবর – পোর্ট ব্লেয়ার
2. দিল্লি – দিল্লি
3. পুদুচেরি – পুদুচেরি
4. দাদরা ও নগর হাভেলি – সিলভাসা
5. চন্ডিগড় – চন্ডিগড়
6. দমন ও দিউ – দমন
7. লাক্ষাদ্বীপ – কাভারাত্তি
8. জম্মু ও কাশ্মীর – শ্রীনগর (গ্রীষ্মকাল), জম্মু (শীতকাল)
9. লাদাখ – লেহ (গ্রীষ্মকাল), কার্গিল (শীতকাল)


জেনে রাখো, *2019 সাল থেকে 370 ধারা এবং 35A বাতিল হয়েছে, বর্তমানে জম্মু কাশ্মীর রাজ্যটির কোনো অস্ত্বিত্ব নেই, এখন তা বিভাজিত হয়ে জন্মু কাশ্মীর ও লাদাখ নামক দুটি স্বতন্ত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।


পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ভারতের ভূপ্রকৃতি


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –