Madhyamik

ক্রোমোজোম | জীবনের প্রবহমানতা

জীবনবিজ্ঞানদশম শ্রেণি – ক্রোমোজম

আমরা প্রত্যেকেই আত্মীয় স্বজন বা চেনা পরিচিতদের মুখে কমবেশি শুনে থাকি যে, আমাদের মুখের গড়ন বা গায়ের রং কিংবা উচ্চতা অনেকটা আমাদের মা, বাবা বা পরিবারের অন্য কারোর মতো। আবার এও শুনে থাকি যে, আমাদের স্বভাব বা কিছু কিছু বিশেষ গুণ আমরা আমাদের মা বাবার থেকে পেয়েছি। কিন্তু কীভাবে ওই বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের মধ্যে আসে তা জানতে গেলে আগে আমাদের জিন, DNA, ক্রোমাটিন, ক্রোমোজোম ইত্যাদি বিষয়গুলির সাথে পরিচিত হতে হবে।

ক্রোমোজোম কাকে বলে?

ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ ক্রোমাটিন সূত্রের জালক থেকে সৃষ্ট, নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত, যে ক্ষুদ্র দণ্ডাকার গঠন জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যকে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে বহন করে এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি, প্রকরণ ও বিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, তাকে ক্রোমোজোম বলে।


jump magazine smart note book


ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ

দেহগঠন ও লিঙ্গ নির্ধারণের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ক্রোমোজোম দুই প্রকার। যথা – সেক্স ক্রোমোজোম ও অটোজোম।

সেক্স ক্রোমোজোম

যে সব ক্রোমোজোম জীবের যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন বহন করে, জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে সাহায্য করে, তাদের সেক্স ক্রোমোজোম বলে। সেক্স ক্রোমোজোমকে অ্যালোজোম বা হেটারোক্রোমোজোমও বলে। মানুষের মোট 46 টি ক্রোমোজোমের মধ্যে দুটি ক্রোমোজোম হল সেক্স ক্রোমোজোম। মহিলাদের ক্ষেত্রে দুটি ক্রোমোজোমের দুটিই X ক্রোমোজোম এবং পুরুষের দুটি সেক্স ক্রোমোজোমের একটি হল X এবং অপরটি হল Y.

অটোজোম

যে সব ক্রোমোজোম জীবের দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন বহন করে, তাকে অটোজোম বলে। আমাদের গায়ের রং, চুলের রং, উচ্চতা, মুখমণ্ডলের গড়ন এইসব বৈশিষ্ট্যগুলি অটোজোম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আমাদের 46টি ক্রোমোজোমের মধ্যে 44টি ক্রোমোজোম হল অটোজোম যার মধ্যে উপরিক্ত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী জিনগুলি থাকে।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

ক্রোমোজোমের সংখ্যা

পৃথিবীতে অজস্র জীব প্রজাতি রয়েছে। প্রত্যেক প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা আলাদা হয়। যেমন – মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা 46, অ্যাসকারিসের 2, আবার একই প্রজাতির সব জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা একই হয়। যেমন – সব মানুষেরই ক্রোমোজোম সংখ্যা 46 কারোর 40 বা কারোর 50 এরকম হয় না (ব্যতিক্রম ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতাজনিত রোগ যেমন – ডাউন সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে 47টি)।

হ্যাপ্লয়েড সেট

একটি কোশে প্রতিটি ক্রোমোজোম যদি একক সংখ্যক সেটে থাকে, তাকে হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম সেট বলে। এটিকে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন – গ্যামেট বা জনন কোশ হল হ্যাপ্লয়েড। মানুষের গ্যামেটে n = 23 অর্থাৎ স্বাভাবিক দেহকোশে যে সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে তার অর্ধেক।

ডিপ্লয়েড সেট

একটি কোশে ক্রোমোজোম যদি দুটি হ্যাপ্লয়েড সেটে থাকে, তাকে ডিপ্লয়েড সেট বলে। এটিকে 2n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে হ্যাপ্লয়েড কোশের দ্বিগুণ সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। যেমন – দেহকোশে।

ক্রোমোজোমের ভৌতগঠন

চলো এবার ক্রোমোজোমের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে এক এক করে জেনে নিই।

ক্রোমোজোম

ক্রোমাটিড

ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর কুণ্ডলীকৃত সূত্রাকার, লম্বা দুটি অংশ থাকে, এদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে। একই ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিডকে সিস্টার ক্রোমাটিড বলে। দুটি আলাদা ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডকে পরস্পরের নন-সিস্টার ক্রোমাটিড বলে।

প্রাথমিক খাঁজ বা সেন্ট্রোমিয়ার

ক্রোমোজোমের মাঝখানে যে খাঁজযুক্ত অংশে সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে।


jump magazine smart note book


গৌণ খাঁজ

ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার বা মুখ্য খাঁজ ছাড়া অপর কোনো খাঁজ থাকলে, সেটিকে গৌণ খাঁজ বলে। ক্রোমোজোমের এই গৌণ খাঁজ অংশ থেকেই নিউক্লিয়াসে যে নিক্লিওলাস থাকে, তার সংশ্লেষ হয়। তাই গৌণ খাঁজকে নিউক্লিওলাস গঠনকারী অঞ্চল বা Nucleolar Organizer Region বা সংক্ষেপে NOR বলা হয়।


দশম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলি পড়ুন –ভৌতবিজ্ঞান | গণিত | জীবনবিজ্ঞান

স্যাটালাইট

গৌণ খাঁজ যুক্ত ক্রোমোজোমের গৌণ খাঁজের পরবর্তী অংশ বা দুটি গৌণ খাঁজের মধ্যবর্তী অংশ, ক্ষুদ্র ফোলা বাল্বের মতো এই অংশকে স্যাটালাইট বলে। স্যাটালাইট যুক্ত ক্রোমোজোমকে SAT (Sine Acido Thymonucleonico) ক্রোমোজোম বলে।

টেলোমিয়ার

ক্রোমোজোমের দুটি শেষ প্রান্তকে টেলোমিয়ার বলে।

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন

ক্রোমোজোম হল একপ্রকার সূত্রাকার পদার্থের ঘনভাবে প্যাঁচানো একটি গঠন। ক্রোমোজোমের এই প্যাঁচ ধীরে ধীরে খুললে প্রথমে পাওয়া যাবে ক্রোমাটিন সূত্র। ক্রোমাটিন সূত্র তৈরি হয় হিস্টোন প্রোটিন ও তাকে বেষ্টন করে থাকা দ্বিতন্ত্রী DNA দিয়ে। DNA তে থাকে জিন যা বিভিন্ন বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলি ধারণ করে।

এবার বিষয়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যাক।

DNA

DNA (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) হল ডিঅক্সিরাইবোজ নামক পেন্টোজ শর্করা দ্বারা গঠিত স্বপ্রজননশীল, পরিব্যাক্তিক্ষম একপ্রকার নিউক্লিক অ্যাসিড, যা জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে।

জিন (Gene)

DNA-এর যেসব কার্যকরী অংশ নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষের সংকেত বহন করে, যার মধ্যে জীবের বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, গুণ ইত্যাদি বিভিন্ন বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলি নিহিত থাকে এবং এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে প্রবাহিত হয়, তাকে জিন বলে।

RNA

রাইবোজ শর্করা দ্বারা গঠিত একতন্ত্রী যে নিউক্লিক অ্যাসিড কোশে প্রোটিন সংশ্লেষ করে, তাকে RNA বলে।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → কোশ বিভাজন ও কোশচক্র


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-Lsc-2a