eye-class-10
Madhyamik

চোখ | প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়

জীবনবিজ্ঞানদশম শ্রেণি – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় (চোখ)|

আমাদের পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ হল অন্যতম। চোখ আমদের দেখতে সাহায্য করে। যেমন এই মুহূর্তে তুমি তোমার মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে লেখাটি দেখছো এবং পড়ছো। এক্ষেত্রে স্ক্রিনের লেখাগুলি থেকে আলোকরশ্মি তোমার চোখের তারারন্ধ্রের মধ্য দিয়ে লেন্সের ওপর পড়ছে এবং সেখান থেকে রেটিনায় গিয়ে উদ্দীপনার সৃষ্টি করছে। সেই উদ্দীপনা স্নায়ুর মাধ্যমে তোমার মস্তিস্কের দর্শন অঞ্চলে পৌঁছলে তুমি তোমার চোখ দিয়ে লেখাগুলি দেখছো।


jump magazine smart note book


চোখের গঠন ও বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে জানা যাক –

মানব চোখ প্রধানত অক্ষিগোলক, রক্ষামূলক অংশ যেমন- কনজাংটিভা, অশ্রুগ্রন্থি ইত্যাদি এবং চক্ষু পেশী দ্বারা গঠিত। আমরা এবার এক এক করে চোখের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে জানবো।

i) অক্ষিগোলক

অবস্থানঃ করোটির অক্ষি কোটরে।

অক্ষিগোলক 3টি আবরক কলা দ্বারা আবৃত।

মানুষের চোখ ছবি

তন্তুময় বহিস্তর

অক্ষিগোলকের সর্বাপেক্ষা বাইরের স্তর। তন্তুময় সংযোজক কলা দ্বারা আবৃত। এর আবার দুটি অংশ

ক) শ্বেতমণ্ডল (Sclera)

খ) অচ্ছোদপটোল বা কর্নিয়া

রক্ত জালক সমৃদ্ধ মধ্যস্তর

এটি অক্ষিগোলকের মধ্য স্তর এবং স্ক্লেরার ভিতরের অংশ। এর তিনটি অংশ আছে-

ক) কৃষ্ণমন্ডল বা কোরয়েড

খ) সিলিয়ারী বডি ও সাসপেনসারী লিগামেন্ট

গ) আইরিশ বা কনীনিকা।

স্নায়বিক অন্তঃস্তর বা রেটিনা

এটি হল অক্ষিগোলকের সবচেয়ে ভিতরের অংশ। এই অংশে দুই প্রকার কোশ থাকে। রোডপসিন রঞ্জক যুক্ত দন্ডাকার রড কোশ এবং সায়ানপসিন বা আয়োডপসিন রঞ্জক যুক্ত শঙ্কু আকৃতির কোণ কোশ।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

ii) লেন্স

আইরিশের পিছনে উত্তলাকৃতির স্থিতিস্থাপক লেন্স থাকে। এটি সাসপেনসারি লিগামেন্টের সাহায্যে অক্ষিগোলকে আটকে থাকে। লেন্স বস্তু থেকে আসা আলোর প্রতিসরণ ঘটিয়ে রেটিনার ওপর ফোকাস করে। এছাড়া লেন্স উপযোজনে সাহায্য করে।

iii) প্রকোষ্ঠ

চোখে দুটি প্রকোষ্ঠ থাকে। প্রথম প্রকোষ্ঠটি কর্নিয়া ও লেন্সের মাঝে। দ্বিতীয়টি লেন্স ও রেটিনার মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠ। প্রথম প্রকোষ্ঠটি অ্যাকুয়াস হিউমরে ও দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠটি ভিট্রিয়াস হিউমরে পূর্ণ থাকে।

iv) কনজাংটিভা

কর্নিয়া ও অক্ষিপল্লবের মাঝে থাকা একটি পাতলা স্বচ্ছ স্তর, যা কর্নিয়াকে রক্ষা  করে।

v) অশ্রুগ্রন্থি

চোখের ঊর্ধ্বপল্লবের নীচে নালীযুক্ত বাদামের মতো আকার বিশিষ্ট অংশ। এখান থেকে অশ্রু বের হয়।

উপযোজন

সংজ্ঞা – স্থান পরিবর্তন না করে অক্ষিগোলকের পেশি ও লেন্সের সাহায্যে যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন দূরত্বে থাকা বস্তুকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, তাকে উপযোজন বা Accomodation বলে।

দূর উপযোজন

দূরের (6 মিটারের অধিক) কোনো বস্তু দেখার সময়, চোখের লেন্সের দুপাশে থাকা সিলিয়ারি পেশি প্রসারিত হয় ও লেন্স সরু হয়ে যায় এবং ফোকাস দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়। বস্তু থেকে আসা সমান্তরাল আলোক রশ্মি, লেন্স দ্বারা প্রতিসৃত হয়ে রেটিনায় প্রতিবিম্ব গঠন করে। ফলে দূরে থাকা বস্তুটিকে আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাই।

নিকট অভিযোজন

কাছের (৬ মিটারের কম) কোনো বস্তু দেখার সময় সিলিয়ারি পেশি সংকুচিত হয়, তার ফলে লেন্সটি বক্র হয়ে যায় এবং ফোকাস দৈর্ঘ্য কমে যায়। এক্ষেত্রে বস্তু থেকে আসা অপসৃত আলোক রশ্মি লেন্স দ্বারা প্রতিসৃত হয়ে রেটিনায় প্রতিবিম্ব গঠন করে। ফলে আমরা কাছে থাকা বস্তুটিকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাই।

উপযোজনের ভূমিকা

গাড়িচালকেরা গাড়ি চালানোর সময় চোখের উপযোজন ঘটিয়ে দূর থেকে আসা গাড়ি ও তার গাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারী উভয়কেই লক্ষ্য করে নিরাপদভাবে গাড়ি চালাতে পারে।

পথচারীরা দূরের ট্রাফিক সিগন্যাল দেখে সাবধানে রাস্তা পারাপার করে চোখের উপযোজন ঘটিয়েই।

দৃষ্টি সংক্রান্ত কিছু ত্রুটি

মায়োপিয়া

চোখের লেন্সের বক্রতা বেড়ে গেলে অথবা অক্ষিগোলকের ব্যাস স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গেলে বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনার কিছুটা সামনে গঠিত হয়। এই অস্বাভাবিকতার ফলে দূরের বস্তু সঠিকভাবে দেখা যায় না, তবে কাছের বস্তু স্পষ্টভাবে দেখা যায়। একে মায়োপিয়া বলে।

সংশোধনঃ অবতল লেন্স যুক্ত চশমা পরলে এই সমস্যা দূর হয়।

হাইপেরোপিয়া

অক্ষিগোলকের ব্যাস স্বাভাবিকের থেকে কমে গেলে বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয় রেটিনার পিছনে। এর ফলে দূরে থাকা বস্তু ঠিকভাবে দেখা গেলেও কাছে থাকা বস্তু দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এই অস্বাভাবিকতাকে হাইপেরোপিয়া বা হাইপারমেট্রোপিয়া বলে।

সংশোধনঃ উত্তল লেন্স যুক্ত চশমা পরলে এই ত্রুটি দূর হয়।


দশম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলি পড়ুন –ভৌতবিজ্ঞান | গণিত | জীবনবিজ্ঞান

প্রেসবায়োপিয়া

বয়সজনিত কারণে লেন্সের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে উপযোজনে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে মূলত কাছের বস্তু দেখতে অসুবিধা হয়।

সংশোধনঃ বাইফোকাল বা প্রোগ্রেসিভ লেন্স যুক্ত চশমা পড়লে এই সমস্যা দূর হয়।


jump magazine smart note book


ক্যাটারাক্ট বা ছানি পড়া

বয়স্কলোকদের লেন্সের ওপর প্রোটিন জাতীয় পদার্থ জমতে থাকার কারণে লেন্স ক্রমশ অস্বচ্ছ হয়ে যায়। ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, এমনকী অন্ধ হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। এই ঘটনাকে চোখে ছানিপড়া বা ক্যাটারাক্ট বলে।

সংশোধনঃ এক্ষেত্রে অপারেশন করে অস্বচ্ছ লেন্সটিকে সরিয়ে কৃত্রিম লেন্স লাগানো হয়।

চোখ সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-Lsc-1Da