Madhyamik Study (পড়াশোনা)

কোশ বিভাজন ও কোশচক্র | জীবনের প্রবাহমানতা

জীবনবিজ্ঞানদশম শ্রেণি –জীবনের প্রবাহমানতা (কোশ বিভাজন)

তোমাদের ছোটবেলার ছবি তোমরা সকলেই নিশ্চয়ই দেখেছ?

এখনকার চেহারার সাথে তার কত তফাৎ, তাই না?

সেই ছোটবেলার তুলনায় এখন তোমরা অনেক বড় হয়ে গেছো। এই বড় হবার অর্থ হল তোমার হাত – পা, তোমার দেহের উচ্চতা, এই সবই তোমার বয়সের সাথে বেড়েছে। এটা কি ভাবে হল, কখনও এটা ভেবে দেখেছো?

আমাদের দেহের এই সামগ্রিক বৃদ্ধি হয় কোশ বিভাজনের দ্বারা। জীবদেহের গঠনগত ও কার্যগত একক হল কোশ। বাড়ী যেমন এক একটা ইঁট দিয়ে তৈরি হয়, তেমনি আমাদের দেহও অসংখ্য কোশ দিয়ে তৈরি হয়। মাত্র একটি কোশ থেকে প্রাণের সৃষ্টি হয়ে, কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যামে অসংখ্য কোশের সৃষ্টি হয়।

কোশ বিভাজন কি?

যে পদ্ধতিতে মাতৃ কোশ থেকে দুই বা অধিক কোশ সৃষ্টি হয় তাকে কোশ বিভাজন বলে।


jump magazine smart note book


কোশ বিভাজনের প্রয়োজনীয়তা কি?

জীবদেহে কোশ বিভাজন এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এর কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন দিকগুলি হলো।

  1. জনন – এক কোশী প্রাণীর জনন সম্পাদিত হয় কোশ বিভাজন দ্বারা। যেমন এক কোশী প্রাণী অ্যামিবা দ্বি বিভাজন পদ্ধতিতে জনন সম্পন্ন করে।
  2. বহু কোশী প্রাণী দেহ গঠন – জীবনের শুরু হয় একটি মাত্র কোশ  জাইগোট (নিষিক্ত ডিম্বাণু) দ্বারা। এই একটি মাত্র কোশই বহু বার বিভাজিত হয়ে পরিস্ফুরণের মাধ্যমে জীবদেহ সৃষ্টি হয় ।
  3. বৃদ্ধি – জীবদেহের কোশ সমূহ ক্রমাগত বিভাজিত হবার ফলেই জীবদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে।
  4. কোশের নবীকরণ –  আমাদের দেহের কিছু কিছু কোশের নবীকরণ (renewal) ঘটে। যেমন আমাদের ত্বকের কোশ, রক্তের বিভিন্ন কোশ (জানো কি – , প্রতি ১২০দিন অন্তর নতুন লোহিত কণিকা সৃষ্টি হয় এবং রক্তের পুরানো  লোহিত কণিকা ধ্বংস হয় )
  5. ক্ষত নিরাময় –  আমাদের শরীরের কোন অংশে ক্ষত সৃষ্টি হলে সেই স্থানে নতুন কোশ সৃষ্টি দ্বারা ক্ষত নিরাময় হয়।

তাহলে বোঝা গেল কোশ বিভাজন জীব দেহের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই কোশ বিভাজন, কোশচক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

কোশচক্র কাকে বলে?

একটি কোশ বিভাজন শেষ হওয়া এবং অপরএকটি কোশ বিভাজন শুরু পর্যন্ত সমগ্র ঘটনাবলীকে একত্রে কোশচক্র বলে।

কোশ চক্রের দুটি প্রধান দশা – ইন্টারফেজ ও মাইটোসিস।

ইন্টারফেজ দশাটি আবার তিনটি উপদশায় বিভক্ত। Gap1 বা G1 দশা, S দশা ও Gap2 বা G2 দশা।

ইন্টারফেজকে Resting phase  বা বিশ্রাম দশাও বলা হয়।

কোশ বিভাজনের আগে, সত্যিই কি কোশ এই সময় বিশ্রাম নেয়?

এর উত্তর হল না। এই সময় কোশ খুবই সক্রিয় থাকে। কারণ কোশ বিভাজনের অর্থ হল কোশের অঙ্গাণুর দ্বিগুণ হওয়া, কোশের নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকা DNA (যা ক্রোমোজোমে অবস্থিত জেনেটিক মেটেরিয়াল) এর দ্বিগুণ হওয়া। DNA দ্বিগুণ হতে গেলে বিভিন্ন প্রকার উৎসেচক, যারা DNA  তৈরি করে তাদেরউৎপন্ন হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার অঙ্গাণু তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রকার জৈব অণু যেমন, কার্বোহাইড্রেড, প্রোটিন ইত্যাদি তৈরি হওয়া প্রয়োজন।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

এই সবকিছুর প্রস্তুতি চলে এই ইন্টারফেজ দশায়। এত কিছু প্রক্রিয়া চলার সময় কোশটি তার আকৃতিতেও বৃদ্ধি পায়।

কোশ চক্রটি শুরু হয় ইন্টারফেজের G1দশা থেকে এবং শেষ হয় M দশার সাইটোকাইনেসিসে। সাইটোকাইনেসিস শেষ হবার পর, কোশ  বিভাজিত হবার জন্যে পুনরায় G1 দশায় প্রবেশ করে।

কোশচক্র (সৌজন্যে - উইকিপিডিয়া)
কোশচক্র (সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া)

G1 দশা

M দশার শেষ ও S দশার আরম্ভের মাঝের সময়কালকে G1 দশা বলে। যদি সমগ্র কোশ চক্রের সময় ২৪ ঘণ্টা হয়, তবে G1 দশার সময় হল ছয় থেকে বারো ঘণ্টা। এই সময় বিভিন্ন কোশ অঙ্গাণু যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরোপ্লাস্ট, গলগি বস্তু, DNA সংশ্লেষের বিভিন্ন প্রকার উৎসেচক, বিভিন্ন প্রকার RNA, প্রোটিন ও শর্করা ইত্যাদি তৈরি হয়।

S দশা

G1 ও G2 দশার মধ্যবর্তী সময়কালকে S দশা বলে। এই দশায় DNAএর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়। যদি G1 দশায় DNAএর পরিমাণ 2C হয়, তাহলে S দশায় তা 4C হয়। এই দশায় হিস্টোন প্রোটিনও সংশ্লেষিত হয়। কারণ আমরা জানি ইউক্যারিওটিক কোশের আটটি হিস্টোন প্রোটিন, নিউক্লিওজোমের কোর অঞ্চল গঠন করে, যা চারদিকে DNA ফিতে জড়ানো থাকে। এই নিউক্লিওজোমই হল ক্রোমোজমের একক।


jump magazine smart note book


G2 দশা

S ফেজ ও M ফেজের মধ্যবর্তী দশা হল G2 দশা। এই দশায় জীবের মাইটোকন্ড্রিয়া এবং উদ্ভিদ কোশের ক্লোরোপ্লাস্টিড বিভক্ত হয়।

কোশ বিভাজন প্রক্রিয়া। সবুজ রং- S/G2/M দশা ও লাল রং G0/G1 দশা

G0 দশা

কোন কোন কোশের ক্ষেত্রে আর একটি দশা দেখা যায়, একে G0 দশা বলে। এই দশার মাধ্যমে, কোশ নিজেকে কোশ চক্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। এই দশায়, কোশের জীবিত থাকার জন্যে যতটুকু প্রয়োজন RNA, প্রোটিন ততটাই সংশ্লেষিত হয়।

G0 দশার কারণ কি?

যদি দেখা যায়, G1 দশায় যে সমস্ত উৎসেচকগুলি DNA সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজন, সেগুলির প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি, ততক্ষণ কোশ এই G0 দশায় প্রবেশ করে থাকে। যখন আবার G1 দশা, S দশায় প্রবেশের জন্যে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়, তখন কোশ  পুনরায় G0 দশা থেকে G1 দশায় প্রবেশ করে। আবার, কিছু কিছু কোশ সব সময়ই G0 দশায় প্রবেশ করেই থাকে, যারা কখনও বিভাজিত হয় না। উদাহরণ হিসাবে আমরা স্নায়ুকোশের কথা ভাবতে পারি। আমাদের জন্মের পর স্নায়ুকোশের সংখ্যা আর বাড়ে না, শুধু দৈর্ঘ্য বাড়ে।

Interphase দশা সম্পূর্ণ হবার পর M দশা আরম্ভ হয়। M দশা আবার ক্যারিওকাইনেসিস (Karyon = নিউক্লিয়াস)। অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন এবং সাইটোকাইনেসিস অর্থাৎ সাইটোপ্লাজমের বিভাজন, এই দুই দশায় বিভক্ত হয়।

ক্যারিওকাইনেসিস আবার কয়েকটি উপদশায় বিভক্ত। যথা – প্রফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ। ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াসের বিভাজন সম্পূর্ণ হলে তারপরে সাইটোকাইনেসিস বা সাইটোপ্লাজমের বিভাজনের মাধ্যমে মাতৃকোশ থেকে অপত্য সৃষ্টি হয়।

kosh bivajon
সমগ্র মাইটোসিস প্রক্রিয়া (সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া)

কোশবিভাজন পদ্ধতি আবার দুপ্রকার

মাইটোসিস ও মেয়োসিস, দেহকোশ বিভাজিত হয় মাইটোসিস প্রক্রিয়ায়, জনন মাতৃকোশ বিভাজিত হয়  মেয়োসিস প্রক্রিয়ায়।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

এবার এই প্রশ্নগুলি বলতে পারো কিনা দেখ?

  • জীবদেহের একক কি?
  • কোশ বিভাজন কাকে বলে?
  • কোশ বিভাজনের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব কি?
  • কোশ চক্র কাকে বলে? কোশ চক্রের দশা গুলি কি কি?
  • ইন্টারফেজকে কি বিশ্রাম দশা বলা যায়?
  • ইন্টারফেজের গুরুত্ব কি।
পরবর্তী পর্ব → জনন


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-LSc-2b