dhatu-niskason
Madhyamik

ধাতু নিষ্কাশনের নীতি ও নিষ্কাশন পদ্ধতি |ধাতুবিদ্যা

শ্রেণি- দশম | বিষয় – ভৌতবিজ্ঞান | অধ্যায় – ধাতুবিদ্যা

আগের পর্বে আমরা বিভিন্ন ধাতু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, এই পর্বে আমরা ধাতু নিষ্কাশনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়ে এগোতে গেলে, প্রথমেই জানতে হবে ধাতুর রাসায়নিক সক্রিয়তা বলতে কি বোঝানো হয়।

ধাতুর রাসায়নিক সক্রিয়তা কি?

ধাতুর রাসায়নিক সক্রিয়তা বলতে বোঝায় কোনো ধাতু জল, অক্সিজেন, অ্যাসিড ইত্যাদির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে কতটা সক্রিয়।

ধাতুর রাসায়নিক সক্রিয়তা শ্রেণি

ধাতুগুলিকে যদি রাসায়নিক সক্রিয়তা ক্রম অনুযায়ী উপর থেকে নীচে পরপর সাজানো হয়, তাহলে যে সারণী পাওয়া যায়, তাকে ধাতুর রাসায়নিক সক্রিয়তা শ্রেণি বলা হয়|

এই ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণিকে আমরা তিনভাগে ভাগ করতে পারি, যথা –

ক) অধিক সক্রিয়

খ) মাঝারি সক্রিয়

গ) একবারে কম সক্রিয়।

অধিক সক্রিয় ধাতুর নিষ্কাশন পদ্ধতি

অধিক সক্রিয় ধাতুর অক্সিজেনের প্রতি তীব্র আসক্তি থাকায়, এই ধাতুগুলিকে কার্বন বিজারণ পদ্ধতি দ্বারা নিষ্কাশন করা যায় না।

তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই ধাতুগুলিকে নিষ্কাশন করতে হয়। এই তড়িৎ বিশ্লেষণকে আমরা ধাতব আয়ন (M+)-এর তড়িৎ বিজারণ বলতে পারি।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান |

এই পদ্ধতিতে গলিত হ্যালাইড যৌগকে তড়িৎ-বিশ্লেষণ করলে যৌগটি আয়নে পরিণত হয় এবং ক্যাথোডে ধাতুর মুক্তি ঘটে। এই পদ্ধতিতে যেহেতু ধাতুকে গলিত অবস্থায় নেওয়া হয়, তাই সম্পাদন করতে উচ্চ উষ্ণতা প্রয়োজন হয়।

মাঝারি সক্রিয় ধাতুর নিষ্কাশন পদ্ধতি

মাঝারি সক্রিয় ধাতুর আকরিক সাধারণত ধাতব সালফাইড বা ধাতব কার্বনেট যৌগ হিসাবে প্রকৃতিতে থাকে। এই সমস্ত ধাতব সালফাইড বা ধাতব কার্বনেট যৌগকে আগে অক্সাইডে পরিণত করতে হয়। এদের অক্সাইডগুলি কম স্থায়ী হওয়ার কারণে কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয়।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

ধাতব কার্বনেটের ক্ষেত্রে অক্সিজেন শূন্য স্থানে উচ্চতাপ প্রয়োগ করে ধাতব অক্সাইড উৎপন্ন করা হয়। এই পদ্ধতিকে ভস্মীকরণ বলে। এরপর কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে কার্বনের উপস্থিতিতে উচ্চতাপে ধাতব অক্সাইড থেকে ধাতু নিষ্কাশিত হয় এবং কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়।

যেমন – প্রথম ধাপে জিঙ্ক কার্বনেট থেকে ভস্মীকরণ পদ্ধতিতে জিঙ্ক অক্সাইড ও  কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। দ্বিতীয় ধাপে জিঙ্ক অক্সাইড থেকে কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে জিঙ্ক এবং কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়।

থার্মিট ওয়েল্ডিং কাকে বলে?

থার্মিট পদ্ধতিতে আয়রন অক্সাইড অ্যালুমিনিয়াম চূর্ণ দ্বারা উত্তপ্ত করলে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ও গলিত তপ্ত আয়রন উৎপন্ন হয়। এই গলিত আয়রন রেললাইনের ফাটল ও যন্ত্রপাতি নিরাময় করতে ব্যবহার করা হয়। একেই থার্মিট ওয়েল্ডিং বলা হয়।

থার্মিট ওয়েল্ডিং পদ্ধতি

তিনভাগ ফেরিক অক্সাইড (Fe2O3) ও একভাগ অ্যালুমিনিয়ামের চূর্ণের মিশ্রণকে বলা হয় থার্মিট মিশ্রণ। এই থার্মিট মিশ্রণ একটি সিলিকনের কুসেবেলের (মুচি) মধ্যে নিয়ে তার উপরে ম্যাগনেসিয়াম গুঁড়ো ও বেরিয়াম অক্সাইডের মিশ্রণ রেখে, ম্যাগনেসিয়াম ফিতার দ্বারা অগ্নি সংযোগ করা হয়। ফলে উচ্চতাপের সৃষ্টি হয়। অ্যালুমিনিয়াম জারিত হয় এবং আয়রন অক্সাইড বিজারিত হয়। গলিত আয়রন নির্গম-নল দিয়ে বেরিয়ে আসে।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ধাতুর ক্ষয় ও ক্ষয় নিবারণ

 


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

X-PSc-8.5-b