ouponibeshik-shikkhabybosthar-prokriti-somalocona
Madhyamik

ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা |বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ | মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়

ইতিহাসদশম শ্রেণি – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পর্ব – ৪)
ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে↓

গত পর্বে আমরা ঔপনিবেশিক বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রকৃতি, সীমাবদ্ধতা ও সমালোচনা সম্পর্কে জানবো।

ঔপনিবেশিক শাসনের ক্ষতিকর দিকগুলোর পাশাপাশি এই আমলেই যে ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল তা আর এখন তোমাদের অজানা নয়। এই পরিবর্তিত প্রেক্ষিত কিভাবে এক মুষ্টিমেয় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্ষমতায়নে সাহায্য করেছিল এবং তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার করেছিল আগের দুটি আলোচনা থেকে সে সম্পর্কেও তোমাদের খানিকটা ধারণা হয়েছে। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান কিন্তু ভারতে ঔপনিবেশিক শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।


UPDATE: পড়া মনে রাখার সেরা উপায়↓

to the point ebook


ঔপনিবেশিক শিক্ষার প্রকৃতি

বিজ্ঞানশিক্ষা সম্পর্কিত আলোচনাটি থেকে তোমরা জেনেছ যে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়েই ভারতবাসীর মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানচেতনার আলো প্রবেশ করে। তার আগে অষ্টাদশ শতকের বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঠশালা-মক্তব ও উচ্চশিক্ষার জন্য টোল-মাদ্রাসার অস্তিত্ব ছিল। ঔপনিবেশিক আমলের গোড়ার থেকেই একশ্রেণীর ব্রিটিশ কর্মচারী ক্রমাগত এই প্রাচ্যবিদ্যা চর্চার ঐতিহ্যকে আক্রমণ করে আসছিলেন।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দে চার্লস গ্রান্ট নামে কোম্পানির এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী একটি পুস্তিকায় ভারতের ধর্ম ও ঐতিহ্যের নিন্দা করেন। এদের দোসর হয়েছিলেন খ্রিস্টান মিশনারিরা।এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে এক সনদ আইন পাশ করে কোম্পানি ভারতে জনশিক্ষা বিস্তারের জন্য বছরপ্রতি এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করার ঘোষণা করে। এই ঘোষণার ফলে একটি সুসংবদ্ধ ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির প্রয়োজন দেখা দেয়।

[এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথম পর্বে ব্রিটিশদের মধ্যেও ওয়ারেন হেস্টিংস, উইলিয়াম জোনস প্রমুখ কিছু প্রাচ্যবাদী ছিলেন; যাঁরা ভারতের সনাতন ঐতিহ্য সম্পর্কে রীতিমত উঁচু ধারণা পোষণ করতেন।]

তাঁদের উদ্যোগেই কলকাতা মাদ্রাসা, এশিয়াটিক সোসাইটি, বারাণসী সংস্কৃত কলেজ প্রভৃতি প্রাচ্যবিদ্যা চর্চার একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। যাই হোক, সনদ আইন পাশের পর ভবিষ্যত ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির অভিমুখ নিয়ে দেশীয় ও বিলিতি পণ্ডিতমহলে বিতর্কের ঝড় ওঠে। উইলসন ও প্রিন্সেপের মত সাহেবরা সনাতনী বিদ্যাচর্চার পক্ষ নিলেও রামমোহন রায়ের মত অনেক শিক্ষিত ভারতীয় পাশ্চাত্য রীতিতে বিজ্ঞানসম্মত জনশিক্ষার পক্ষে সওয়াল করেন।

অবশেষে তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আইনসচিব টমাস ব্যবিংটন মেকলে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি তাঁর বিখ্যাত প্রস্তাব বা ‘মিনিট’ পেশ করে ইংরেজি ভাষায় পাশ্চাত্য শিক্ষার সুপারিশ করেন এবং তা গৃহীতও হয়।

মেকলে তাঁর সুপারিশে প্রাচ্য শিক্ষার অসারতা ও অবৈজ্ঞানিকতাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। মনে রাখা উচিত, ভারতে জনশিক্ষা বিস্তারে অন্যতম উদ্যোগী ভূমিকা ছিল খ্রিস্টান মিশনারীদের।

রাজা রামমোহন রায়, রাধাকান্ত দেব, দ্বারকানাথ ঠাকুরের মত শিক্ষিত ভারতীয়রা এই সৎ উদ্যোগের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন। ফলস্বরূপ গড়ে উঠেছিল ‘হিন্দু কলেজ’, ‘শিবপুর বিশপস কলেজ’, ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশনে’র মত একাধিক কুলীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

কিন্তু খ্রিস্টান মিশনারীদের উদ্যোগ অনেক ক্ষেত্রেই ছিল সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পরবর্তীকালে রাধাকান্ত দেব, ভবানিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকরাই মিশনারীদের শিক্ষাবিস্তারের আড়ালে ধর্মান্তরকরণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।


UPDATE: পড়া মনে রাখার সেরা উপায়↓

to the point ebook


পাশ্চাত্য শিক্ষা/ ঔপনিবেশিক শিক্ষার সীমাবদ্ধতা

আসলে মেকলে প্রবর্তিত শিক্ষানীতির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামো কায়েম রাখার জন্য এক অনুগত আমলাতন্ত্র গড়ে তোলা। ফলে অচিরেই এই শিক্ষানীতির অভিমুখ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঘুরে যায় ও জনশিক্ষা অবহেলিত হতে থাকে। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন ‘বোর্ড অফ কন্ট্রোলে’র সভাপতি চার্লস উড তাঁর সুপারিশ বা ডেসপ্যাচে ব্রিটিশ ভারতের তিন প্রদেশে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে পরীক্ষাব্যবস্থাযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কথা বলেন।

এই সুপারিশ মেনে ঔপনিবেশিক সরকার ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’ পাশ করে কলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে।

১৯০৪ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার শাসনাধীন ভারতে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয় যার মাধ্যমে তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড কার্জন উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমের উপরেও সরকারি নিয়ন্ত্রণ মজবুত করেন। এইভাবে ভারতে ধাপে ধাপে শিক্ষার পরিকাঠামো ও বিষয়বস্তু ইউরোপীয় ধাঁচে গড়ে তোলা হয়। বলাই বাহুল্য, দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্করহিত এই শিক্ষাব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত ছিল না।


jump magazine smart note book


এর প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলি ছিল নিম্নরূপ

ক) ব্রিটিশ কর্মচারীদের সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারা

মেকলের মন্তব্যটি থেকে অন্তত একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, যে ঔপনিবেশিক কর্মচারীদের অহমিকা ঔপনিবেশিক শিক্ষার চরিত্রের জন্য অনেকাংশে দায়ী ছিল। অন্যদিকে প্রধানত নগরকেন্দ্রিক এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে এক বৃহৎ অংশের জনসাধারণ বঞ্চিত ছিল। কাজেই ভারতে বিজ্ঞানসম্মত লোকশিক্ষার প্রসারের জন্য মহানুভব ব্রিটিশরাজ তাঁদের শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলেন এই যুক্তিও ধোপে টেকে না।

আসলে মেকলে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে আদতে এমন একটি ভারতীয় গোষ্ঠী তৈরী করতে চেয়েছিলেন যারা রক্তে ও বর্ণে ভারতীয় হলেও রুচি, মত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ। ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামোর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য এইরকমই কিছু ভারতীয়ের প্রয়োজন ছিল।

খ) ভাষার বেড়াজাল

জাতপাতনির্ভর ভারতীয় সমাজে স্বাক্ষরতার হার এমনিতেই ছিল শোচনীয়। উপরন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজির মত একটি বিদেশী ভাষার ওপর দখল অত্যাবশ্যকীয় হওয়ায় সমাজের এক বিরাট অংশের মানুষ এই শিক্ষার আওতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঔপনিবেশিক শিক্ষা বাস্তবিক অর্থে উচ্চবর্ণীয় ও জমিদারশ্রেণীর এক সুবিধাভোগী অংশের মৌরসীপাট্টায় পর্যবসিত হয়।

গ) প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি অবহেলা

প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগের পাঠশালাগুলিতে শ্রমজীবী দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাও জীবনধারণের জন্য উপযুক্ত শিক্ষালাভ করার সুযোগ পেত। কিন্তু ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির ফলে পাঠশালা ও মক্তবগুলি তাদের গুরুত্ব হারায়। ফলস্বরূপ সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে নিরক্ষরতা বৃদ্ধি পায়। এইভাবে ঔপনিবেশিক নাগরিক সমাজে এক আড়াআড়ি বিভাজনের সূত্রপাত ঘটে।

ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক স্বার্থে কেবল উচ্চশিক্ষিত ভদ্রলোকদেরই প্রয়োজন ছিল। কাজেই তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ ছিল কলেজ ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার ওপর। অন্যদিকে ভদ্রলোকদের কাছে উচ্চশিক্ষা ছিল সামাজিক কৌলীন্যের সূচক। অর্থাৎ, ঔপনিবেশিক শিক্ষার ফলে শ্রমজীবী মানুষদের কোনো ক্ষমতায়ন তো ঘটলোই না উল্টে নিরক্ষর বলে কপালে জুটল অপমান!


ঘ) মুসলিম সমাজের প্রতি উদাসীনতা

ঔপনিবেশিক আমলের প্রথম পর্বে মুসলিম সমাজকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। ফলে সামাজিক উন্নতির সূচকে তারা ক্রমশঃ পিছিয়ে পড়তে থাকে।
বুঝতেই পারছ, সঙ্গত কারণেই ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধ ও বিংশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে কিছু উচ্চশিক্ষিত বাঙালি তথা ভারতীয় দেশীয় রীতিতে জনশিক্ষার প্রসারে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন।


UPDATE: পড়া মনে রাখার সেরা উপায়↓

to the point ebook


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাভাবনা

শিক্ষায় স্বনির্ভর হওয়ার তাগিদ থেকে সেআমলের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অনেকেই ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিকল্প পথের সন্ধান করলেও এই ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রকৃত দিশারী। শুধু শিক্ষা নয়, ঔপনিবেশিক আমলে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এক প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিকতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠছিল তার বিপরীতে যেন ছিল রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার অবস্থান।

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে বিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানের চার দেওয়ালের মধ্যে কঠোর অনুশাসনের মধ্যে না রেখেই শিশুর বিকাশ সম্ভব। ছোটবেলায় বিদ্যালয় সম্পর্কে তাঁর মনে যে বিতৃষ্ণা তৈরী হয়েছিল তা তিনি কোনোদিন ভুলতে পারেননি। তাঁর লেখায় তাই বারংবার খাঁচার পাখির সুদূরের প্রতি আকুতি ঘুরেফিরে এসেছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থায় যান্ত্রিকভাবে একটি বিদেশী ভাষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার কোন সারবত্তা রবীন্দ্রনাথ খুঁজে পাননি।

‘তোতাকাহিনী’ বা ‘অচলায়তন’ রচনায় তাই এই ব্যবস্থার প্রতি কবি ব্যঙ্গের তীব্র কষাঘাত হেনেছেন।

রবীন্দ্রনাথের মতে, যে-কোনো দেশেই শিক্ষার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য থাকে। একটি ছোট উদ্দেশ্য যেটি জীবনধারণের জন্য উপার্জনটুকু জোগাড় করার শিক্ষা দেয়। অন্য বড় উদ্দেশ্যটি হল মানবজীবনের সর্বাঙ্গীন পূর্ণতাসাধন।

 

রবীন্দ্রনাথ মনে করেছিলেন যে ঔপনিবেশিক শিক্ষায় ছোট উদ্দেশ্যটি মোটের ওপর পূরণ হলেও বড় উদ্দেশ্যটি পূরণের কোন দিশা পাওয়া যায় না। এই সর্বাঙ্গীন শিক্ষার সাধনাকল্পে ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’। এর নামকরণও বুঝিয়ে দেয়, প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে তপোবন ও গুরুগৃহকেন্দ্রিক যে শিক্ষাব্যবস্থার উল্লেখ পাওয়া যায় তারই একটি প্রতিরূপ তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথ অন্যত্র বলেছেন যে, ধনী দরিদ্র সকল ছাত্রকে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষিত করে তোলাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচর্চা দাঁড়িয়ে আছে মানুষ ও বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে এক কাল্পনিক বিচ্ছিন্নতার ধারণার ওপরে। এই জ্ঞান তাই খণ্ডিত। যে রবীন্দ্রসংগীত বাঙালি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তাতেও আমরা পাই বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে এক সজীব চেতনার অনুরণন। আধুনিক পরিবেশবিজ্ঞানও মানুষ ও প্রকৃতির এই অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা তাই আজ আরো বেশি প্রাসঙ্গিক।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

প্রকৃতির মাঝে মানবমুক্তির এই স্বপ্নই রবীন্দ্রনাথকে শান্তিনিকেতন ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল তাঁর শিক্ষাভাবনার প্রয়োগের জন্য কলকাতা শহরের বদলে বীরভূমের এক নির্জন প্রান্তরকে বেছে নিতে। এই প্রচেষ্টায় নিজের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী ছাড়াও তিনি পাশে পেয়েছিলেন লিওনার্ড আর্মহার্স্টের মত কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে। এছাড়াও চার্লস এন্ড্রুজ, ক্ষিতিমোহন সেন, প্রমথ চৌধুরী, নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেজ প্রমুখ স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বরা এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন।


jump magazine smart note book


প্রাথমিক পর্বে একটি আশ্রমিক বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ঔপনিবেশিক চিন্তার মধ্যে একটি স্বতন্ত্র দ্বীপের মত অবস্থান বজায় রাখা শান্তিনিকেতনের পক্ষে দীর্ঘকাল সম্ভব ছিল না। একসময় অভিভাবকদের চাপেই রবীন্দ্রনাথকে শান্তিনিকেতনে ঔপনিবেশিক শিক্ষাকাঠামোর আদলে পরীক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রম চালু করতে হয়।

১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথের ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’, ‘বিশ্বভারতী’ নামে এক পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় রূপে আত্মপ্রকাশ করে।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিভেদদীর্ন পৃথিবীতে ভারতের নিজস্ব জ্ঞানভাণ্ডার ও বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করবে বিশ্বভারতী – এমনটাই ছিল রবীন্দ্রনাথের আশা। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর বিশ্বভারতীর নিয়ন্ত্রণ ভারত সরকারের হাতে চলে যায়। স্বাধীনতার পর ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে স্বাধীন ভারতের একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্বভারতী তার যোগ্য মর্যাদার আসন লাভ করে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামজাদা প্রাক্তনীদের মধ্যে সৈয়দ মুজতবা আলী, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, ইন্দিরা গান্ধী, সুচিত্রা মিত্র, মহাশ্বেতা দেবী, অমর্ত্য সেন উল্লেখযোগ্য।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী অধ্যায় → বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন

লেখক পরিচিতি

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এম ফিল পাঠরত রাতুল বিশ্বাস। ইতিহাসচর্চার পাশাপাশি লেখা-লিখিতেও সমান উৎসাহী রাতুল।



এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X_hist_5d