tapmondol-taper-bonton
Madhyamik

তাপমন্ডল ও তাপের বন্টন

ভূগোলদশম শ্রেণি – বায়ুমণ্ডল (পঞ্চম পর্ব)

আগের পর্বে আমরা বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজকের পর্বে আমরা তাপমন্ডল ও তাপের আনুভূমিক বন্টন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

তাপমন্ডল তাপমাত্রার বন্টনের তারতম্যের অনুযায়ী অক্ষাংশের ভিত্তিতে পৃথিবীতে তিনটি তাপবলয় ভাগ করা যায় এগুলো হল – উষ্ণমন্ডল, নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল এবং হিমমন্ডল।

উষ্ণমন্ডল

উত্তরে পৃথিবীর উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখা (22°30′ উ:) এবং দক্ষিণ মকরক্রান্তি রেখার (22°30′ দ:) মাঝখানে অবস্থিত বিস্তৃত অঞ্চলটিকে উষ্ণমন্ডল বলা হয়।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

উষ্ণমন্ডলের বৈশিষ্ট্য

• এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারা বছরই লম্বভাবে পড়ে এবং এই অঞ্চলের সৌর বিকিরণের তীব্রতা সবথেকে বেশি দেখা যায়।
• এই অঞ্চলের গড় উষ্ণতা সারাবছরই বেশি থাকে, যেমন 25°C থেকে 30°C।
এই অঞ্চলে উষ্ণতার তারতম্য সবথেকে কম হয় অর্থাৎ দিনের বেলা ও রাতের বেলা এমনকি ঋতুভেদেও উষ্ণতার প্রসর সবথেকে কম।
• এই অঞ্চলে তাপের বিকিরণ অপেক্ষা সঞ্চয় বেশি হয়।

নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল

উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখা (22°30′ উ:) ও সুমেরু বৃত্তের (66° 30′ উ:) মধ্যবর্তী অংশ এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখা (22°30′ দ:) কুমেরু বৃত্তের (66° 30′ দ:) মধ্যবর্তী অংশ এই হল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের অন্তর্গত।

নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের বৈশিষ্ট্য

• এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সবসময় তীর্যকভাবে পতিত হয়।
• এই অঞ্চলের সৌর বিকিরণের তীব্রতা মাঝারি হয় ফলে গড় তাপমাত্রা মাঝারি হয়ে থাকে তাই এই অঞ্চলে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে।
• এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা উপক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে বেশি ও উপমেরু অঞ্চলের থেকে কম হয়।
উভয় গোলার্ধে 23°30′ থেকে 45° ও 45° থেকে 66°30′ অঞ্চলকে যথাক্রমে উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল ও শীতল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলা হয়।
• নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে দিন ও রাতের উষ্ণতার যথেষ্ট তারতম্য বর্তমান।

হিমমন্ডল

উত্তর গোলার্ধে সুমেরু বৃত্ত (66° 30′ উ:) থেকে সুমেরু বিন্দু (90° উ:) এবং কোনো গোলার্ধে কুমেরু বৃত্ত (66° 30′ দ:) থেকে কুমেরু বিন্দু (90° দ:) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে হিমমন্ডল বলা হয়।

হিমমন্ডলের বৈশিষ্ট্য

• এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সবথেকে বেশি তীর্যকভাবে পরে (টানা ছয় মাস দিনের সময়) এবং সর্বোচ্চ পতনকোণ 23°30′ হয়।
• এই অঞ্চলে অ্যালবেডোর পরিমাণ সবথেকে বেশি 70% থেকে 90% হয় ফলে কার্যকরী সৌর বিকিরণের পরিমাণ অত্যন্ত কম হয়।
• আগত সৌর বিকিরণের অপেক্ষা পার্থিব বিকিরণ বেশি ঘটে ফলে এই অঞ্চলে তাপের ঘাটতি দেখা যায়। এই কারণে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হতে পারে না।
এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা সবসময় শূন্যের নিচে অবস্থান করে।

তাপমণ্ডল

তাপমন্ডলের গুরুত্ব

• পৃথিবীর তাপমন্ডল গুলোর উপর ভিত্তি করে ভূপৃষ্ঠের স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলগুলি গড়ে উঠেছে।
এই তাপমন্ডলগুলির অবস্থান বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং বৃষ্টিপাতের বন্টনকে প্রভাবিত করে।
• বিশ্বব্যাপী তাপের এবং জলবায়ুর বন্টন তাপমন্ডলগুলির উপর নির্ভর করে।

সমোষ্ণ রেখা কাকে বলে?

ভূপৃষ্ঠের উপরে সমান উষ্ণতা বিশিষ্ট স্থানগুলিকে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয় তাকেই সমোষ্ণ রেখা বলা হয়। পৃথিবীর সব স্থানে উষ্ণতাকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতায় পরিবর্তন করলে সমোষ্ণ রেখা মানচিত্র তৈরি করা যায়।

সমোষ্ণ রেখার গুরুত্ব

সমোষ্ণ রেখা কোনো অঞ্চলে উষ্ণতার স্থানগত চরিত্র ও তাপীয় ঢাল বা Thermal Gradient এর প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করে।

• সমোষ্ণ রেখা উষ্ণতার দৈশিক বন্টন ও বিস্তৃতি জানতে সাহায্য করে।
• পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চলগুলির সীমা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

পৃথিবীর তাপের অনুভূমিক বন্টন

• নিম্ন অক্ষাংশে গড় বার্ষিক উষ্ণতা সবথেকে বেশি এবং মেরু অঞ্চলের গড় বার্ষিক উষ্ণতা সবথেকে কম থাকে।
• নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে যতই যাওয়া হয় ততই বার্ষিক উষ্ণতার ধীরে কমতে থাকে।
জানুয়ারি মাসে পৃথিবীর শীতলতম স্থান হল উত্তর-পূর্ব সাইবেরিয়া গ্রীনল্যান্ড এবং উষ্ণতম স্থান হল মহাদেশ গুলির পশ্চিম অংশের উপকূল অঞ্চল।
• জুলাই মাসে পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যুক্ত অঞ্চল হল উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া থেকে ভারত উপমহাদেশের পশ্চিমাংশে পর্যন্ত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পশ্চিম অংশ।
জুলাই মাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখা যায় কুমেরু মহাদেশে।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → বিশ্ব উষ্ণায়ন ও গ্রিনহাউস গ্যাস


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-geo-2-e