business-cycle
Class-11

বাণিজ্য চক্র | Business cycle

Economicsএকাদশ শ্রেণি – বাণিজ্য চক্রের বিশ্লেষণ


কোন দেশের জাতীয় আয় এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপের পিছনে সাধারনত সামগ্রিক চাহিদা ও সামগ্রিক জোগানেরই ভুমিকা থাকে।

সামগ্রিক চাহিদা (Aggregate Demand) কাকে বলে?

একটি নির্দিষ্ট দেশের সকল মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময়ে মোট যে পরিমাণ দ্রব্য ও সেবা ক্রয় করতে আগ্রহী থাকে এবং ক্রয় করে, তার মোট পরিমাণকেই কোন দেশের সামগ্রিক চাহিদা বলা হয়। দেশের সামগ্রিক চাহিদা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

দেশের সামগ্রিক চাহিদা সামগ্রিক ভোগব্যয় (private consumption) (C), সামগ্রিক বিনিয়োগ ব্যয় (private investment) (I), সরকারি ব্যয় (government expenditure) (G) এবং দেশের নিট রপ্তানি আয়ের (net export income) ( নিট রপ্তানি আয় = রপ্তানি আয় – আমদানি ব্যয় = X-M) উপর নির্ভর করে। সুতরাং, নির্দিষ্ট সময়ে যে কোন দেশের অর্থনীতিতে সামগ্রিক চাহিদা বা সামগ্রিক ব্যয় (AE) = C+I+G+(X-M)

চিত্রের সাহায্যে সামগ্রিক চাহিদার ব্যখ্যা

চাহিদার পরিবর্তন সাধারণত দুটি কারনে হয়- বেসরকারি ভোগ ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যয়ের পরিবর্তনের ওপর এবং সরকারের বিভিন্ন নীতি যেমন ফিসক্যাল নীতি, আর্থিক নীতি।


একাদশ শ্রেণি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

এখানে আমরা সামগ্রিক চাহিদা এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করব। দেশে বিভিন্ন দ্রব্যের গড় দাম বৃদ্ধি পেলে, দেশের বেসরকারি ক্ষেত্রে ব্যাক্তিদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলে ব্যয় করার ক্ষমতাও হ্রাস পাবে ফলে বিভিন্ন দ্রব্যের সামগ্রিক চাহিদাও হ্রাস পাবে। চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় দেশের জাতীয় উৎপাদনও কমে যাবে।

সামগ্রিক চাহিদা রেখা

চিত্র অনুযায়ী, দামস্তর যখন P2 তখন দেশে জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ ধরা যাক OY2 ।পরিমাণ দ্রব্যের চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। এবার দাম বৃদ্ধি পেয়ে P2 হলে দ্রব্যের সামগ্রিক ব্যয় এবং সামগ্রিক চাহিদাও হ্রাস পাবে OY2 থেকে OY1 হয়েছে। একইভাবে, দাম আরও বৃদ্ধি পেয়ে P0 হলে সামগ্রিক চাহিদার পরিমাণ হবে OY0. এইভাবে আমরা সংমিশ্রণ বিন্দুগুলিকে A, B, C যুক্ত করলে আমরা সামগ্রিক চাহিদা রেখা নির্ধারণ করতে পারি।

দেশে যদি সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পায় অথবা বেসরকারি ভোগ ব্যয় অথবা দেশের নিট রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায় তাহলে দেশের চাহিদা রেখার পরিবর্তন ঘটে। সামগ্রিক চাহিদা রেখা ডানদিকে স্থান পরিবর্তন করে। আবার এগুলো হ্রাস পেলে সামগ্রিক চাহিদা রেখা বামদিকে স্থান পরিবর্তন করে।

চিত্রের সাহায্যে সামগ্রিক জোগান ব্যখ্যা

কোন দেশের মোট জোগান বলতে আমরা বুঝি কোনো এক নির্দিষ্ট দামে উৎপাদকরা যে পরিমাণ দ্রব্য ও সেবার উৎপাদন দিতে রাজি থাকবে তার পরিমাণকেই বলা হয় দেশের সামগ্রিক জোগান।

স্বল্পকালীন জোগান রেখা

স্বল্পকালীন সময়ে দেশের সামগ্রিক দামস্তরের সাথে সামগ্রিক জোগানের মধ্যে ধনাত্মক সম্পর্ক দেখা যায়। অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন দ্রব্যের দামস্তর বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যগুলির সামগ্রিক জোগান বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের দামস্তর হ্রাস পেলে দ্রব্যগুলির সামগ্রিক জোগান হ্রাস পাবে।

স্বল্পকালীন জোগান রেখা

চিত্র অনুসারে, এখানে SS1 রেখাটি হল দেশের স্বল্পকালীন সামগ্রিক জোগানরেখা। দেশের বিভিন্ন দ্রব্যের দামস্তর OP0 হলে ধরা যাক, সামগ্রিক জোগান বা সামগ্রিক উৎপাদনের পরিমাণ OY0। আবার দ্রব্যের দাম OP0 থেকে কমে OP1 হলে দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বা সামগ্রিক জোগানও হ্রাস পাবে। হ্রাস পেয়ে OY0 থেকে OY1 হয়ে যাবে।

উপাদানের দাম অথবা উপাদানগুলির উৎপাদিকা শক্তি হ্রাস পেলে দেশের সামগ্রিক জোগান রেখা ডানদিকে স্থান পরিবর্তন করবে এবং এগুলো বৃদ্ধি পেলে দেশের সামগ্রিক জোগান রেখা বামদিকে স্থান পরিবর্তন করে।

দীর্ঘকালীন জোগান রেখা

দীর্ঘকালীন জোগান বলতে আমরা এমন পরিমাণ জোগান বুঝি যেখানে দেশের সকল উপাদানের পূর্ণ নিয়োগের মাধ্যমে সর্বোচ্চ উৎপাদন ও জোগান করা সম্ভব।

দীর্ঘকালীন জোগান রেখা

চিত্রে LS রেখাটি হল দেশের দীর্ঘকালীন জোগানরেখা। এখানে পূর্ণ নিয়োগের স্তরে সর্বোচ্চ সম্ভব উৎপাদন হল OY*। যদি উৎপাদন পরিমাণ OY* এর বামদিকে অবস্থান করে, অনেক উৎপাদনের উপাদান অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। ফলে উৎপাদকরা বেশি জোগান দিতে রাজি থাকবে এবং জোগান আবার OY* স্তরে পৌছাবে।

আবার যদি, উৎপাদনের পরিমাণ OY* স্তরের ডানদিকে অবস্থান করে তখন দেশে দ্রব্যগুলির অতিরিক্ত চাহিদার সৃষ্টি হয় এবং দেশে অবস্থিত উপাদানগুলির দাম বৃদ্ধি পাবে সুতরাং, উৎপাদকরা দ্রব্যের জোগান কমাতে বাধ্য হবে এবং জোগান আবার OY* পৌছাবে।

দেশের জনসংখ্যা বা উন্নত প্রকৌশলের আবিষ্কার হলে দেশের দীর্ঘকালীন জোগান রেখা ডানদিকে স্থান পরিবর্তন করে।

চাহিদা ও জোগানের ধাক্কার ভিত্তিতে বাণিজ্যচক্রের ব্যখ্যা

চিত্রে দেশে পূর্ণ নিয়োগের স্তরে উৎপাদনের পরিমাণ OY* এটি দীর্ঘকালীন জোগান রেখা LS0

চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে বাণিজ্য চক্র

চিত্রানুসারে, ধরি, দেশের স্বল্পকালীন জোগান রেখা SS0 এবং প্রাথমিক অবস্থায় মোট চাহিদা রেখা AD0। SS0 এবং AD0 যেখানে পরস্পরকে ছেদ করেছে OY1, এটিই হল ভারসাম্য জাতীয় উৎপাদন বা পূর্ণ নিয়োগের স্তর। এবার ধরা যাক সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে তাহলে মোট চাহিদা রেখা ডানদিকে সরে AD1 হল এবং ভারসাম্য জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে OY*।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer

এখানে OY* হল পূর্ণ নিয়োগের স্তরে মোট উৎপাদন। এবার সামগ্রিক চাহিদা যদি আরও বৃদ্ধি পায় তবে ভারসাম্য উৎপাদনের পরিমাণ আর বৃদ্ধি পেয়ে হবে OY2, যেটি পূর্ণ নিয়োগের স্তরের তুলনায় বেশি। ফলে দেশে উপাদানগুলির জন্য অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টি হবে এবং উপাদানগুলির দাম বৃদ্ধি পাবে।

দেশে সর্বোচ্চ সম্ভব উৎপাদনের (OY*) স্তরে অতিরিক্ত চাহিদা (Y2-Y*) সৃষ্টি হলে তাকে মুদ্রাস্ফীতিজনিত ফাঁক বলা হয়। এই অবস্থায় উৎপাদকরা সমপরিমাণ জোগানের জন্য বেশি দ্রব্য মূল্য আশা করবে সুতরাং দেশে দ্রব্যের জোগান কমে যাবে ফলে জোগান রেখা বামদিকে সরে গিয়ে SS1 জোগান রেখা হবে, এবং আবার মোট উৎপাদন পূর্ণ নিয়োগের স্তরে ফিরে আসবে।

অনুরুপভাবে দেখান যায়, দেশে পূর্ণ নিয়োগের স্তরে যদি সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পায়, তখন সামগ্রিক চাহিদা রেখা বামদিকে AD1 থেকে সরে AD0 হল। এর ফলে ভারসাম্য জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ পূর্ণ নিয়োগের স্তরের উৎপাদনের চেয়ে কম। এই অবস্থায় উৎপাদনকে যে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল সেটি সম্ভব হবে না চাহিদার অভাবে।

উৎপাদনের এই ফাঁকটিকে (Y*-Y1) মন্দাজনিত ফাঁক বলা হয়।

এখানে দেশের অনেক উপাদান অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে এবং উপাদানের গড় দাম কমতে থাকে। ফলে উৎপাদকরা একই পরিমাণ দ্রব্য কম দামে জোগান দিতে রাজি থাকে। ফলে জোগান বৃদ্ধি পাবে এবং জোগান রেখা ডানদিকে SS0 থেকে SS2 তে সরে যাবে। আবার জাতীয় উৎপাদন পূর্ণ নিয়োগের স্তরে ফিরে আসবে।

অর্থনীতিতে সামগ্রিক চাহিদা ও জোগানের নানান পরিবর্তনের কারণে জাতীয় উৎপাদনেরও উত্থান পতন ঘটে। এইভাবেই আমরা বাণিজ্য চক্রের কারণ ব্যখ্যা করতে পারি।


একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

বাণিজ্য চক্রের পর্যায়

বাণিজ্য চক্রের মূলত চারটি পর্যায়। এগুলি হল-

1. মন্দা (Depression)
এই অবস্থায় জাতীয় উৎপাদন, বিনিয়োগ, নিয়োগ ইত্যাদি সব অত্যন্ত নিম্নস্তরে নেমে যায়।

2. পুনরুত্থান (Recovery)
এই পর্যায়ে জাতীয় উৎপাদন, বিনিয়োগ, নিয়োগ ইত্যাদি নিম্নস্তর থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

3. সমৃদ্ধি (Boom)
এই পর্যায়ে জাতীয় উৎপাদন, বিনিয়োগ, নিয়োগ ইত্যাদি একটি উচ্চস্তরে এসে পৌছায়।

4. অধগতি (Recession)
এই পর্যায়ে জাতীয় উৎপাদন, বিনিয়োগ, নিয়োগ ইত্যাদি উচ্চস্তর থেকে আবার ধীরে ধীরে কমতে থাকে বা অধগতির সৃষ্টি হয়।
পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

শ্রীরামপুর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তনী শুভ্রা পাল। স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি গান শুনতে এবং বাগান পরিচর্যা করতে ভালবাসেন শুভ্রা।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

XI_eco_7a