Class-11

উৎসেচকের শ্রেণীবিভাগ

Biologyএকাদশ শ্রেনি – সজীব কোশের রাসায়নিক গঠন


উৎসেচকের শ্রেণীবিভাগের আগে আমরা জেনে নিই উৎসেচক কি এবং কবে আবিষ্কৃত হয়েছিল?

উৎসেচক একটি জৈব অনুঘটক। অনুঘটক যেমন রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত বা মন্দীভূত করে, তেমনই উৎসেচক নামক জৈব অণু আমাদের দেহের বিপাকীয় হারকে  (metabolic rate) ত্বরান্বিত বা মন্দীভূত করে এবং ক্রিয়া শেষে নিজে অপরিবর্তিত থাকে।

উৎসেচক প্রথম আবিষ্কৃত 1833 সালে। Anselime Payen দ্বারা আবিষ্কৃত এই উৎসেচকটি হল ডায়াস্টেজ।

বিজ্ঞানের যে শাখায় এনজাইম নিয়ে পড়াশোনা (study) করা হয় তাকে এনজাইমোলজি (Enzymology)  বলে।

এজজাইম কিন্তু আরও বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন – জৈব অণুঘটক, কোশ সন্ধান (cell ferments), জৈব নিয়ন্ত্রক (Bio-regulators), জীবনের অনুঘটক (Catalysts of life or agents of life) ইত্যাদি।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry  | Biology | Computer

উৎসেচক কি দিয়ে তৈরী?

উৎসেচক সাধারণত প্রোটিন দিয়ে তৈরী। প্রোটিনের সাঙ্গে যে অপ্রোটিন অংশ থাকে তাকে কো ফ্যাক্টর বলে। উৎসেচকে উপস্থিত প্রোটিন সরল বা সংযুক্ত অবস্থায় থাকতে পারে। প্রোটিন অংশকে অ্যাপো-এনজাইম বলে।  অ্যাপো-এনজাইম এবং কো ফ্যাক্টরকে একত্রে হলো এনজাইম বলে।

কো ফ্যাক্টর আবার তিন প্রকার হয়- 1) কো-এনজাইম 2) প্রস্থেটিক গ্রুপ আর 3) অজৈব আয়ন।

এবার আমরা জানবো যে সাবস্ট্রেট  কি?

উৎসেচক যে বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তাকে সাবস্ট্রেট বলে। যেমন সুক্রেজ এনজাইম সুক্রোজকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করে গ্লুকোজ আর ফ্রুক্টোজে পরিণত করে। এক্ষেত্রে সুক্রেজ এনজাইমের সাবস্ট্রেট হল সুক্রোজ।

উৎসেচকের ক্রিয়া

উৎসেচক বা এনজাইম(E), সাবস্ট্রেটের( S) সঙ্গে বিক্রিয়া করে এনজাইম- সাবস্ট্রেট কমপ্লেক্স( E-S) গঠন করে। বিক্রিয়াশেষে বিক্রিয়ালব্ধ পদার্থ বা প্রোডাক্ট(P) উৎপন্ন হয় এবং এনজাইমও মুক্ত হয়ে যায়।

E + S = E-S complex= P+E

এনজাইম কি ভাবে কাজ করে তার অনেক মতবাদ আছে তা আমরা পরে জানব।


একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

উৎসেচক বা এনজাইমের বৈশিষ্ট্য

1) উৎসেচকের সাবস্ট্রেট নির্দিষ্টতা – উৎসেচক বা এনজাইম নির্দিষ্ট সাবস্ট্রেটের উপর কাজ করে । যেমন এনজাইম পেপসিন শুধুমাত্র প্রোটিনের উপর কাজ করে।

2)  উৎসেচক জৈব অণুঘটক হিসাবে কাজ করে। উৎসেচক নিজে কোন বিক্রিয়া শুরু করতে পারে না। কেবল মাত্র বিক্রিয়ার হারকে প্রভাবিত করতে পারে। বিক্রিয়া শেষে উৎসেচক নিজে অপরিবর্তিত থাকে।

3) পরম তাপমাত্রাঃ উৎসেচক প্রোটিন হওয়ায় বেশী তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায়। উৎসেচক 30-35 ডিগ্রী সেন্ট্রগ্রেড তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো কাজ করে।

৪) নির্দিষ্ট pH – প্রতিটি  উৎসেচক একটি নির্দিষ্ট pH এ সক্রিয় হয়। যেমন পেপসিন আম্লিক মধ্যমে (pH 2),  আবার ট্রিপসিন ক্ষারীয় মধ্যমে (pH 8)সক্রিয় হয়।

উৎসেচকের শ্রেণীবিভাগ

International Union of Biochemistry and Molecular Biology (IUBMB) এর কমিটি বিভিন্ন প্রকার উৎসেচকের প্রকৃতি ও ক্রিয়াপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে উৎসেচককে  ছয়টি শ্রেণীতে ভাগ করেন। সেগুলি হল – অক্সিডো রিডাকটেজ, ট্রান্সফারেজ, হাইড্রোলেজ, লাইয়েজ, আইসোমারেজ ও লাইগেজ (2018 সালে ট্রান্সলোকেসেজ নামে আরও এক প্রকার উৎসেচক আবিষ্কৃত হয়)।

এবার এক এক করে প্রতিটি শ্রেণীর উৎসেচক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

অক্সিডোরিডাকটেজ

এই শ্রেণীর উৎসেচকগুলি একটি  যৌগের জারণ ও অপর যৌগের বিজারণের মাধ্যমে অনুঘটন ক্রিয়া সম্পন্ন করে।

অক্সিডেজ জারণ ক্রিয়ায় সাহায্য করে অর্থাৎ একটি যৌগ থেকে অপর যৌগে ইলেক্ট্রন বা H+ আয়ন  স্থানান্তরিত করে ও রিডাকটেজ  অপর যৌগ থেকে বর্জিত ইলেক্ট্রন বা H+ গ্রহণ করে বিজারণ ক্রিয়ায় সাহায্য করে। উদাহরণ – ল্যাকটিক ডিহাইড্রোজিনেজ

পাইরুভিক অ্যাসিড + NADH++ H+ ——–→  ল্যাকটিক অ্যাসিড + NAD+

এক্ষেত্রে ল্যাকটিক ডিহাইড্রোজিনেজ পাইরুভিক অ্যাসিডকে বিজারিত করে ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত করে ও NADH+ H++কে জারিত করে NAD+ এ পরিণত করে।

ট্রান্সফারেজ

এই শ্রেণীর উৎসেচকগুলি একটি বিক্রিয়ক বা সাবস্ট্রেট থেকে একটি নির্দিষ্ট গ্রূপ বা মূলককে (যেমন – অ্যামিন, কিটো, কার্বক্সিল, মিথাইল ইত্যদি) অপর একটি বিক্রিয়কে স্থানান্তরিত করে বিক্রিয়াজাত পদার্থে পরিণত করে। উদাহরণ – অ্যালানিন ট্রান্সফারেজ।

অ্যালানিন + আলফা-কিটোগ্লূটারেট —–→ পাইরুভেট + গ্লূটামেট

এক্ষেত্রে অ্যালানিন ট্রান্সফারেজ উৎসেচক, অ্যালানিন থেকে একটি অ্যামাইনো গ্রূপকে আলফা-কিটোগ্লূটারেটে স্থানান্তরিত করে আলফা-কিটোগ্লূটারেটকে গ্লূটামেটে পরিণত করে।

হাইড্রোলেজ

এই শ্রেণীর উৎসেচকগুলি জলের উপস্থিতিতে সাবস্ট্রেটের রাসায়নিক বন্ধনকে ভেঙে জটিল  সাবস্ট্রেটকে সরল প্রোডাক্ট বা বিক্রিয়াজাত পদার্থে পরিণত করে।

উদাহরণ – প্রোটিওলাইটিক উৎসেচক যেমন- পেপসিনোজেন প্রোটিন অণুকে ভেঙে পেপসিনে পরিণত করে , অ্যামাইলোলাইটিক  উৎসেচক যেমন – অ্যামাইলেজ,কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইকোসাইডিক বন্ধনকে ভেঙে সরলীকৃত করে, লাইপোলাইটিক উৎসেচক যেমন – লাইপেজ লিপিড অণুকে  বিশ্লেষিত করে।

লাইয়েজ

এই প্রকার উৎসেচকগুলি হাইড্রোলাইসিস বা আর্দ্রবিশ্লেষণ ছাড়া বিক্রিয়কের মধ্যে থাকা C-C, C-N, C- O, C-S বন্ধন ভেঙে বিক্রিয়ক থেকে বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন করে।  কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিক্রিয়ক থেকে অণু (যেমনCO2, H2O ) বা পরমাণু অপসারণ করে দ্বি বন্ধন গঠনের মাধ্যমেও বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন করে।

উদাহরণ – অ্যালডোলেজ

ফ্রূক্টোজ 1,6 বিসফসফেট ——→ 3-ফসফোগ্লিসারালডিহাইড + 1,3-ডাইহাইড্রক্সি অ্যাসিটোন ফসফেট

এক্ষেত্রে অ্যালডোলেজ উৎসেচকের উপস্থিতিতে ফ্রূক্টোজ 1,6 বিসফসফেট বিশ্লিষ্ট হয়ে উপরোক্ত দুটি বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন করে।

আইসোমারেজ

এই শ্রেণীর উৎসেচকগুলি মৌলের আইসোমারের পরমাণুর বিন্যাসের পরিবর্তন করে, এর ফলে বিক্রিয়কের আন্তরাণবিক গঠন পরিবর্তিত হওয়ায় কিছু বন্ধন ভেঙে যায় ও কিছু নতুন বন্ধন গঠিত হয়ে বিক্রিয়ক থেকে বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন হয়।

উদাহরণ – ফসফোহেক্সোআইসোমারেজ

গ্লূকোজ 6 –ফসফেট———→ ফ্রূক্টোজ 6 –ফসফেট

লাইগেজ

এই প্রকার উৎসেচকগুলি ATP জাতীয় যৌগ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে দুটি অণুর মধ্যে বন্ধন গঠন করে একটি নতুন যৌগ গঠন করে।

উদাহরণ – সাকসিনিক থায়োকাইনেজ

সাকসিনিক অ্যাসিড + GTP + Co-A——-→ সাকসিনিল Co-A + GDP + Pi

এছাড়া DNA লাইগেজ DNA প্রতিলিপিকরণএর সময় ওকাজাকি খণ্ডকে যুক্ত করে DNA এর একটি তন্ত্রী গঠনে সাহায্য করে।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → উৎসেচকের কার্যপদ্ধতি


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –