gotishokti
Class-11

গতিশক্তি

পদার্থবিদ্যা একাদশ শ্রেণি – সৃতিবিজ্ঞান (Kinematics)


আগের পর্বে আমরা দ্রুতি ও বেগ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই পর্বে গতিশক্তি সম্পর্কে জেনে নেব।

গতিশক্তি কি ঋণাত্মক হতে পারে?

না। গতিশক্তি কখনো ঋণাত্মক হতে পারে না। কোনো বস্তু বা কণার ভর m ও বেগ v হলে তার গতিশক্তি \frac{1}{2} mv^2। বস্তুর ভর এবং বেগের বর্গ সর্বদাই ধনাত্মক হয়, তাই এই রাশিদ্বয়ের দ্বারা সৃষ্ট গতিশক্তি সর্বদাই একটি ধনাত্মক রাশি হয়।

শক্তি কি?

সাধারণত যে যত বেশি কাজ করতে পারে তাকে তত শক্তিমান হিসাবে বলে থাকি। শক্তির মাপকাঠি হিসেবেই কাজকে ধরে নেওয়া হয়। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে বস্তুর মধ্যে শক্তির সঞ্চার ঘটলেই বস্তুটি কাজ করতে সক্ষম হয়।

শক্তির সংজ্ঞা

কোনো বস্তুর কার্য করার সামর্থ্যকে সেই বস্তুটির শক্তি বলা হয়।

বস্তুর শক্তির পরিমাপ সে কতখানি কাজ করতে পারে তার পরিমাপের উপর নির্ভর করে। শক্তি ও কার্য মূলই একই ধরনের রাশি। এই দুটি রাশির মাত্রা একই এবং একই একক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

কার্য ও শক্তি উভয়ই স্কেলার রাশি।

শক্তি আছে বলেই জগৎ চলছে। যেমন, বিদ্যুৎ শক্তির সাহায্যে বিভিন্ন কলকারখানা, আমাদের বাড়িতে টিভি, আলো, পাখা সব কিছু চলছে, আবার পেট্রোল ও বিভিন্ন তেল দ্বারা রাসায়নিক শক্তির সাহায্যে মোটরগাড়ি, বাস, যানবাহন চলছে।

এরকমই বহু জায়গায় শক্তির ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চোখে পড়ে। মানুষ বা জীবজন্তু কাজ করতে সক্ষম, অর্থাৎ তাদের শক্তি আছে। মোটরগাড়ির ক্ষেত্রে পেট্রোল বাষ্প মোটরগাড়ির পিস্টনকে চলাচল করায়, কাজেই এর শক্তি আছে।

আবার কোনো বস্তুকে মাটি থেকে কিছুটা উঁচুতে তুললে তার মধ্যে কাজ করার একটি ক্ষমতা জন্মায় যার ফলে বলটিকে ঐ অবস্থায় ছেড়ে দিলে বলটা ঠিক নীচের দিকে পড়ে যায়। অর্থাৎ তখন বলটির মধ্যে কিছুটা শক্তি সঞ্চিত ছিল। এরকমভাবেই শক্তির বহু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

বিভিন্ন প্রকার শক্তি

শক্তিকে প্রধানত আট ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

1)যান্ত্রিক শক্তি
2) তাপশক্তি
3) আলোকশক্তি
4) চুম্বকশক্তি
5) শব্দশক্তি
6) তড়িৎশক্তি
7) পারমাণবিক শক্তি
8) রাসায়নিক শক্তি

এখন যান্ত্রিক শক্তি নিয়ে একই বিশদভাবে কথা বলব। কোনো বস্তু তার গতি, অবস্থান বা আকৃতির জন্য বা এই তিনটি কারণের জন্যই কাজ করার যে সামর্থ্য অর্জন করে তাকে বস্তুটির যান্ত্রিক শক্তি বলা হয়।

এই পর্বে আমরা শুধু গতিশক্তি নিয়ে আলোচনা করবো।

গতিশক্তি কাকে বলে?

কোনো গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য অর্জন করে, তাকে তার গতিশক্তি বলা হয়।
কোনো গতিশীল বস্তুকে থামাতে গেলে বাইরের থেকে বল প্রয়োগ করতে হয়।

বস্তু গতিশীল হলে তার মধ্যে শক্তির সঞ্চার হয়, বস্তুকে বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে থামানোর আগে পর্যন্ত বস্তুটি প্রযুক্ত বলের বিরুদ্ধে কার্য করে, এই কার্যের পরিমাণই হল বস্তুর গতিশক্তির পরিমাপ।

গতিশক্তির ব্যবহার

দৈনন্দিন জীবনে গতিশক্তির আরও কয়েকটি ব্যবহার দেখে নেওয়া যাক–

1) তীব্র স্রোতযুক্ত পাহাড়ি নদীতে জলের সাথে বড় বড় পাথরের টুকরোও গড়িয়ে পড়ে। পাথরের টুকরোগুলি গড়িয়ে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় গতিশক্তি জলের গতি থেকে সঞ্চয় করে।

2) পালতোলা নৌকা বায়ুপ্রবাহের দ্বারা জলের স্রোতের বাধাকে অতিক্রম করে এগিয়ে চলে।
এক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহ তার কাজ করে কিন্তু প্রশ্ন হল বায়ু এই কাজ করার শক্তি পায় কোথা থেকে, বায়ু এই শক্তি সঞ্চয় করে তার প্রবাহ বা গতি থেকে।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer

3) যদি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লাফানো হয় তবে বেশি দূর লাফানো যায় না, সেই জন্য লং জাম্প দেবার সময় এক জায়াগায় না দাঁড়িয়ে কিছু দূর থেকে দৌড়ে এসে লাফ দেওয়া হয়, তাহলে অনেকটা বেশি দূর লাফানো যায়। এক্ষেত্রে বেশি দূর লাফানোর শক্তি আসে তার গতি থেকে।

4) বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়লে গুলিটি কাঁচের জানলা ভেদ করে যেতে পারে। আবার গুলিটি বন্দুক থেকে না ছুড়ে শুধু যদি কাচের জানলার গায়ে লাগানো থাকে, তখন গুলিটি কাঁচ ভেদ করে যেতে পারে না। সুতরাং বন্দুক থেকে ছুঁড়লে গুলিটি যে গতিশক্তি অর্জন করে তার জন্যই কাঁচের জানলাটি ভাঙতে পারে, স্থির অবস্থায় সেই গতিশক্তি থাকে না বলে কাঁচটি ভেদ করতে পারে না।

5) আগের উদাহরণের মতোই পেরেক দেওয়ালে পুঁততে গেলে হাতুড়ি শুধু পেরেকের মাথার উপরে ঠেকিয়ে রাখলেই হয় না। কিছুটা দূর থেকে এনে পেরেকের মাথায় আঘাত করলে সেটি দেয়ালে ঢুকে যায়। অর্থাৎ গতিশীল অবস্থায় হাতুড়িটি তার কার্য করার সামর্থ্য অর্জন করে।

জলপ্রপাত বা জলশক্তি এবং বায়ুশক্তির সাহায্যে তাদের গতিকে কাজে লাগিয়ে ডায়নামো চালিয়ে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা হয়। এরকমই মানব কল্যাণে গতিশক্তি ব্যবহারের বহু উল্লেখ পাওয়া যায়।

চলন বা রৈখিক গতিশক্তির পরিমাণ

ধরি, m ভরের একটি বস্তু u বেগে সরলরেখা বরাবর চলছে। আমরা এই বস্তুটিরই গতিশক্তি নির্ণয় করতে চাই। বস্তুটিকে থামাবার জন্য বস্তুর গতির বিপরীত দিক থেকে একটি বল প্রয়োগ করতে হয়। ধরা যাক F বল প্রয়োগ করা হল।

\vec{F} বল প্রয়োগে \vec{a} মন্দন সৃষ্টি হল, যা বস্তুটিকে d দূরত্ব চলবার পর থামিয়ে দিল।
\vec{F} = m \vec{a} বল দ্বারা কৃতকার্য =\vec{F}.\vec{d} = Fd = mad

বস্তুটি d দূরত্ব চলবার পর থেমে যায় অর্থাৎ তার অন্তিম বেগ হয় শূন্য।
O^2 = u^2 - 2ad
ad = \frac {u^2}{2}
আমরা জানি, বস্তুটি থামাবার আগে পর্যন্ত বলের বিরুদ্ধে কার্য করেছে। এই কৃতকার্যের পরিমাপই বস্তুটির গতিশক্তি।
∴ বস্তুর গতিশক্তি = mad
=m. \frac {u^2}{2}
= \frac{1}{2} mu^2
∴ বস্তুর রৈখিক গতিশক্তি =\frac{1}{2} × বস্তুর ভর × (রৈখিক বেগ)2
বস্তুর ভরবেগ = mu = p
বস্তুর রৈখিক গতিশক্তি = \frac{1}{2} mu^2 = \frac{1}{2}.\frac{m^2u^2}{m} = \frac{p^2}{2m}
বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল (\vec{F}) স্থির মানের বা পরিবর্তনশীল মানেরও হতে পারে।


একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

স্থির মানের বল

ধরি, u বেগে সরলরেখা বরাবর চলছে এরকম m ভরের একটি বস্তুর উপর স্থির মানের বল F প্রয়োগ করা হয়। S দূরত্ব অতিক্রম করার পর বস্তুটির বেগ হয় v।
\therefore v^2 = u^2 + 2aS
S = \frac{v^2 - u^2}{2a}
কৃতকার্য (\vec{F} বলের দ্বারা)
= \bar{F} \bar{S} = \frac {1}{2}m (v^2 - u^2) = \frac {1}{2}mv^2 - \frac {1}{2}mu^2
= গতিশক্তির পরিবর্তন
= অন্তিম গতিশক্তি – প্রাথমিক গতিশক্তি
পরিবর্তনশীল বলের ক্ষেত্রে– পরিবর্তনশীল \vec{F} বলের প্রভাবে m ভরের বস্তু A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে স্থানান্তরিত হল।
\vec{F} বলের দ্বারা কৃতকার্য = W = \int_{A}^{B} \vec{F}.d \bar{r}
= \int_{A}^{B} ma. Dr = \int_{A}^{B} m\frac{dv}{dt}. dr = \int_{v_1}^{v_2} m\frac{dr}{dt}. dv
v_1, v_2 হল A ও B বিন্দুতে m ভরের বস্তুর গতিবেগ
\therefore W = m\int_{V_1}^{V_2}vdv
= \frac{1}{2} 3 (v_2 ^2 - v_1 ^2) = বস্তুর গতিশক্তির পরিবর্তন


একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

সকল গতিই আপেক্ষিক

গতি সর্বদাই আপেক্ষিক। কোনো বস্তুর স্থিতি বা গতির পর্যালোচনা কোনো না কোনো নির্দেশতন্ত্রের উপর নির্ভর করে হয়।

কোনো একটি বস্তু কোনো একটি নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে স্থির হলেও অন্য নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে গতিশীল হতে পারে।

যেমন, প্ল্যাটফর্মে বসে থাকা ব্যক্তি সামনের চলমান ট্রেনের যাত্রীকে গতিশীল মনে করে, আবার পাশাপাশি সমবেগে চলা ট্রেনের যাত্রীরা পরস্পরকে স্থির মনে করে।

এভাবে বিশ্লেষণ করে বলা হয় যে, মহাবিশ্বে চরম স্থিতি বা গতি বলে কিছুই নেই। সব স্থিতি বা গতি সর্বদাই আপেক্ষিক হয়।

সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয় এবং IIT খড়গপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বধীতি মাঝি। পদার্থবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়া এবং বই পড়ায় সমান উৎসাহী স্বধীতি।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



এছাড়া,পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহন করতে যুক্ত হতে পারেন ‘লেখা-পড়া-শোনা’ ফেসবুক গ্রূপে। এই গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন এখানে।