Class-11

কর্তার ভূত গল্পের আলোচনা

বাংলাএকাদশ শ্রেনি – কর্তার ভূত (দ্বিতীয় পর্ব)


আমরা আগের পর্বে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘কর্তার ভূত’ গল্পের সারসংক্ষেপ আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা গল্পের বিস্তারিত আলোচনা করবো।

কর্তার ভূত গল্পের বিশদে আলোচনা

‘কর্তার ভূত’ কোনো ভূতের গল্প নয়।

কিন্তু এখানে ‘ভূত’ রয়েছে, ভূতের দেশ রয়েছে, রয়েছে ভূত-শাসনতন্ত্রের ছবিও। তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে এই রচনায় ভূতের তাৎপর্যটি ঠিক কীরকম?

‘ভূত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল অতীত অর্থাৎ যা পূর্বে ছিল। ‘ভূ’ ধাতুর সঙ্গে ‘র্তৃ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে তৈরি হয় ভূত শব্দ। ফলে বাস্তবিক ভূতের সঙ্গে যে রহস্য বা ভীতি বা অলৌকিকতা জুড়ে থাকে তার পিছনে একটি মনোবৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। কিন্তু এই গল্পের ভূত কোনো অলৌকিকতা-জড়িত নয়। ভূত হল অতীত। বিখ্যাত সাহিত্য-সমালোচক পণ্ডিত সুকুমার সেন বলেছেন যে ভূত তদ্‌ভব অর্থে হল যা ফুরিয়ে গেছে কিন্তু যার আদল এখনও লুপ্ত হয়নি। এবং এই ভূতের সঙ্গে জড়িত ভীতি আসলে আমাদের ব্যক্তিগত অসহায়তা ও একাকিত্বের প্রতিফলন। এই ব্যক্তিগত অসহায়তার কথাই রবীন্দ্রনাথ এই রচনায় বলতে চেয়েছেন রূপকের আড়ালে।

‘কর্তার ভূত’ আসলে একটি কথিকা।

ভূতের কথা থাকলেও এটি ভৌতিক গল্প নয়, রূপকের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ এখানে মানুষের মনের চিরকালীন অন্ধ অনুশাসন-কুসংস্কার আর অতীতচারিতাকে বিদ্রুপ করেছেন। অতীতকাল থেকেই আদিম মানুষ তাদের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনে সমস্ত চিন্তা-ভাবনা সঁপে দিয়েছিল গোষ্ঠীনেতার উপর। সভ্যতা এগোলেও মানুষ আজও নিজের সমস্ত চিন্তা-ভাবনা অতীতের ঘাড়ে ফেলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে চায়। সেই অতীতই এখানে ভূত। কর্তার ভূত কথিকাটি তাই একটি Allegorical Satire অর্থাৎ রূপকার্থক ব্যঙ্গ-রচনা।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry  | Biology | Computer

গল্পটি যে সময় লেখা হচ্ছে তখন ভারত পরাধীন।

স্বরাজের দাবিতে জাতীয় কংগ্রেসের আন্দোলন চলেছে। মন্টেগু-চেমস্‌ফোর্ড রিপোর্টে সেই স্বরাজ স্বীকৃত হলেও পরে ১৯১৯ সালে রাওলাট বিল তাকে নাকচ করে। দেশে শুরু হয়ে যায় সন্ত্রাসের রাজত্ব। কিন্তু মানুষের ঘুম যেন তখনো ভাঙেনি। ভারতের মর্মমূলে আটকে থাকা ভ্রান্ত ধর্মের বেড়াজালে মোহাবিষ্ট মানুষের মন থেকে চলে গিয়েছিল নিজস্ব চিন্তাশক্তি। দেশের শাসক সেই নতুন চিন্তা, অন্যরকম কথা স্বীকার করতে চান না। সে সময়ের ভারতের সমাজ-রাজনৈতিক ছবি এই কথিকায় স্পষ্ট। ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘য়ুরোপযাত্রীর ডায়ারি’ গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছিলেন

‘আমাদের সেই সর্বাঙ্গসম্পন্ন প্রাচীন সভ্যতা বহুদিন হল পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হয়েছে, আমাদের বর্তমান সভ্যতা তারই প্রেতযোনি মাত্র।’

এই পঞ্চত্বপ্রাপ্ত প্রাচীন সভ্যতাই আসলে এই কথিকার বুড়ো কর্তা আর ভূত হল মৃত সভ্যতার প্রাচীন ও রক্ষণশীল ধর্মতন্ত্র। যখন সেই প্রাচীন সভ্যতার মৃত্যু আসন্ন, আত্মবিশ্বাসহীন ভারতবাসী অসহায় হয়ে পড়লো। তারা ছিল পরনির্ভর, আত্মশক্তির অভাব ছিল তাদের। তাই সেই অসহায়তা দেখে প্রাচীন সভ্যতার ধ্বজাধারীরা ভারতবাসীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কিন্তু সভ্যতা লুপ্ত হলেও, তার প্রাচীনপন্থী ধর্মতন্ত্র মানুষের পিছু ছাড়ে না। যুগ তো প্রাচীনত্বে সীমায়িত নেই, ক্রমশ আধুনিকতার আলো এসে পড়ছে ভারতের বুকে। এই আধুনিক যুগ নবজাগরণের যুগ, যুক্তিবাদের যুগ, বিজ্ঞানের যুগ। অন্ধবিশ্বাস আর অন্ধ সংস্কারের আঁধারে ঢাকা ভারতীয় সভ্যতা প্রকৃত সভ্য হতে পারেনি। আধুনিকতার আলোয় নতুন চিন্তার জন্ম হল না। সেই প্রাচীন ধর্মতন্ত্রকেই আঁকড়ে থাকলো ভারতবাসী।

আধুনিকতাকে মানতে গেলে সমস্ত কিছুকে যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে হয়। কিন্তু ভূত-বেশী অন্ধ ধর্মতন্ত্রকে মানলে সেই ভাবনা থাকে না। তখন অজ্ঞ মানুষ অদৃষ্টের উপর, ভাগ্যের উপর সব ভাবনা ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকে। অগ্রগতি নিয়ে তাঁর ভাবনা নেই, আর সেই ভূতেরও ভাবনা নেই। ভারতীয় সমাজের স্থবিরতা, ধর্মান্ধতা, মানসিক ক্লৈব্য, অযৌক্তিক অন্ধকারে নতুন চেতনার উজ্জ্বল আলো পৌঁছতে পারে না। বদ্ধ, নিষ্প্রাণ, চিন্তাহীন একটা সমাজ কখনোই উন্নতি করতে পারে না। কিন্তু তবু এই সমাজেই বুড়ো কর্তার ভূতের অভিভাবকত্ব পেয়ে ‘দেশের লোক ভারি নিশ্চিন্ত হল’। আসলে মেরুদণ্ডহীন ভারতবাসীর কাছে, মানসিকভাবে দূর্বল ভারতবাসীর কাছে অসহায়ের অবলম্বন ছিল ভূতরূপী এই ধর্মের বেড়াজাল।

দেশবাসীও তাই নিজস্ব বিচারবোধ বিসর্জন দিয়ে ভূতগ্রস্ত হয়ে চোখ বুজে চলে। এই চলাই নাকি সৃষ্টির আদিম চলা। ধর্মই যখন প্রাচীন সভ্যতার নির্ণায়ক ছিল, মানুষের বিশ্বাসের মূল অবলম্বন ছিল, সেসময় ভাগ্যের কাছে অদৃষ্টের কাছে মানুষ আত্মসমর্পণ করতো। এটা তাদের এক আদিম আভিজাত্য। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ প্রবন্ধে লিখছেন, ‘আজ য়ুরোপের ছোটো বড়ো যে কোনো দেশেই জনসাধারণ মাথা তুলিতে পারিয়াছে, সর্বত্রই ধর্মতন্ত্রের অন্ধ কর্তৃত্ব আলগা হইয়া মানুষ নিজেকে শ্রদ্ধা করিতে শিখিয়াছে।’ কিন্তু তৎকালীন ভারত জুড়ে বিস্তৃত ছিল ভ্রান্ত ধর্মাচারের অন্ধকার।


একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

এই শাস্ত্র আর ধর্মতন্ত্রের বেড়াজালকেই রবীন্দ্রনাথ এই কথিকায় বলেছেন ‘ভূতুড়ে জেলখানা’ আর ব্রাহ্মণ-পুরোহিতগণ এই জেলখানার দারোগা যাদের লেখক বলেছেন ‘ভূতের নায়েব’। আচার-অনুষ্ঠান আর সংস্কারের বেড়াজালেই মানবজীবন বদ্ধ হয়ে থাকে। ধর্মের অন্ধ কারার প্রাচীরে বজ্র হেনে অভাগা দেশে জ্ঞানের আলো জ্বলেনি। ফলে সমগ্র দেশ জুড়ে যেন এক অচলায়তন তৈরি হয়েছিল।

এই কথিকায় তাকেই লেখক বিদ্রুপবাণে বিদ্ধ করেছেন রূপকের আশ্রয়ে।

অচলায়তন নাটকে আমরা দেখি ধর্মীয় আচার-সংস্কার এবং প্রাচীনপন্থী ধ্যান-ধারণায় বদ্ধ এক প্রতিষ্ঠানের ছবি যেখানে বাইরের জ্ঞানের আলো এসে পৌঁছয় না। আর সেই প্রাচীরের বাঁধন – নিয়মের নিগড় ভেঙে বেরোতে চেয়েছিল পঞ্চক। ফলে নিয়মের ধ্বজাধারীদের হাতে পঞ্চক শাস্তি পেল। এই কথিকার ভাষায় তা হল ‘ভূতের কানমলা’। অচল-অটল বদ্ধ দেশে যারাই স্বাধীনভাবে ভাবতে যায়, যুক্তিকে প্রাধান্য দেয় ধর্মতন্ত্রের শাস্তি নেমে আসে তাদের উপর। এ যেন এক দূরূহ নিয়মের প্রাচীর – সে নিয়ম অযৌক্তিক, অহেতুক এবং প্রগতির বিরোধী। সেই নিয়ম ভাঙার জো নেই কারো। ধর্মের আফিম খেয়ে সমস্ত দেশ মত্ত, ‘তাসের দেশ’ নাটকের মতো সবাই যেন কলের পুতুলের মতো বলে যায়‘চলো নিয়মমতে / চলো নিয়মমতে’। এই ভূতের দেশে ভূতের জেলখানার ঘানিতে মানুষের সব তেজ বেরিয়ে যায় আর তাই লেখক বলছেন,

‘…ভূতের রাজত্বে আর কিচ্ছুই না থাক্‌ – অন্ন হোক, বস্ত্র হোক, স্বাস্থ্য হোক – শান্তি থাকে।’

অযৌক্তিক ধর্মীয় ক্রিয়া-আচার সর্বস্বতায় কখনো দেশবাসীর অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান হয় না, কিন্তু অভাব থাকলেও ধর্মভীরু মানুষের মধ্যে প্রতিবাদ স্ফূরিত হয় না। স্থবির দেশে আন্দোলন দানা বাঁধে না। এই প্রশ্নহীন অন্ধ আনুগত্যকেই সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। আধুনিকতাই বলি আর নবজাগরণই বলি তা আমাদের প্রশ্ন করতে শেখায়, যুক্তির নিক্তিতে সবকিছু বিচার করতে শেখায়। কিন্তু শিব ঠাকুরের আপন দেশে যুক্তি-তর্ক চলে না বলেই যখন পৃথিবীর অন্যান্য দেশ উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় অনেক উপরে, প্রাচীন রক্ষণশীল ভারতীয় সমাজ তখন উন্নতিবিমুখ থাকে। পৃথিবীর অন্য দেশগুলিকে ভূতে পায়নি, সেখানে ধর্মতন্ত্রের অন্ধকার নেই। লেখক লিখছেন,

‘তাই অন্য সব দেশে যত ঘানি ঘোরে তার থেকে তেল বেরোয় তাদের ভবিষ্যতের রথচক্রটাকে সচল করে রাখবার জন্যে, বুকের রক্ত পিষে ভূতের খর্পরে ঢেলে দেবার জন্যে নয়…’।

অন্যান্য দেশের মানুষ তাদের গঠনমূলক শ্রমের মাধ্যমে দেশের উন্নতিসাধন করেন আর এই দেশের মানুষ ধর্মতন্ত্রের খুঁটিতে বাঁধা ভেড়ার পালের মতো গড্ডলিকা-প্রবাহে গা ভাসায়। নাট্যকার গিরিশ ঘোষ বলেছিলেন, ‘ভারতের মর্ম্মে মর্ম্মে ধর্ম্ম’ আর সেই ধর্ম যখন ধারণ করার বদলে আচার-সর্বস্বতার নামান্তর হয়ে দাঁড়ায় তখনই তা প্রগতির পথ রোধ করে। রবীন্দ্রনাথ এই কথিকায় যখন বলেন,

“এদিকে দিব্যি ঠান্ডায় ভূতের রাজ্য জুড়ে ‘খোকা ঘুমোলো, পাড়া জুড়োলো’।”

তখন সেই প্রচলিত ছেলেভুলানো ছড়াটির কথা মনে পড়ে –
খোকা ঘুমোলো, পাড়া জুড়োলো / বর্গি এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে / খাজনা দেব কিসে’।

এখানে এসে রচনায় একটা পর্বান্তর ঘটে।

সামান্য একটা ছেলেভুলানো ছড়ার অন্যতর এক সমাজ-রাজনৈতিক তাৎপর্য লেখক এখানে তৈরি করেছেন। ভূতের রাজ্যের মানুষ অদৃষ্টের উপর সব ছেড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে। এই ঘুম অজ্ঞানতার, এই ঘুম অচেতনতার। এই ঘুমের সুযোগ নিয়ে ঢুকে পড়ে ‘বর্গি’ – বহিরাগত লুণ্ঠনকারী। রূপকার্থে এখানে বর্গি বলতে ইংরেজদের বুঝিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। বারবার বহু বিদেশি শক্তির হাতে নির্জিত হয়েছে ভারতবর্ষ, বহু সম্পদ লুণ্ঠিত হয়েছে। লেখক লিখছেন…

‘এতকাল উত্তর দক্ষিণ পুব পশ্চিম থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নানা জাতের বুলবুলি এসে বেবাক ধান খেয়ে গেল, কারও হুঁশ ছিল না।’

রবীন্দ্রনাথ আসলে এই বুলবুলি বলতে শক, হুণ, পাঠান, মোগল, ইংরেজ প্রভৃতি সাম্রাজ্যবাদী বিদেশি শক্তিকেই ইঙ্গিত করেছেন। ভারতের ইতিহাসের দিকে তাকালে অবাক হতে হয় সামান্য বণিক হিসেবে এ দেশে পা রেখে কখন অজ্ঞাতসারে দেশের শাসনভার চলে গেল ইংরেজদের হাতে তা ভারতবাসী বুঝতেই পারেনি। রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘পোহালে শর্বরী / বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল / রাজদণ্ড রূপে।’ কিন্তু তবু দেশের শিরোমণিরা বলেন ‘এটা ভূতের দোষ নয়, ভূতুড়ে দেশের দোষ নয়, বর্গিরই দোষ’। প্রাচীনপন্থী বিদ্বানেরা বলেন, অচেতন যারা তারাই পবিত্র কারণ ‘প্রবুদ্ধমিব সুপ্তঃ’। এর অর্থ হল চেতনাপ্রাপ্ত ব্যক্তিমাত্রেই ঘুমন্ত বা সুপ্ত থাকেন।


একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

কিন্তু আদতে এই সুপ্ত থাকার অর্থ প্রশ্নহীন আনুগত্যে প্রতিবাদহীন থাকা নয়, অচেতন থাকা নয়। দেশবাসী যখন প্রশ্ন করে, ‘ভূতের শানটাই কী অনন্তকাল চলবে’ তখন ঘুমপাড়ানি মাসিপিসিরা মনে করেন তাদের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করা সর্বনাশের লক্ষণ। কীভাবে বহিঃশত্রুর মোকাবিলা করা যায় তার প্রশ্নে তারা বলেন যে বুলবুলির ঝাঁক আর বর্গির দল উভয়কেই কৃষ্ণনাম শোনাবেন তারা। এখানেই দ্বিমত তৈরি হয়। এই কৃষ্ণনাম আসলে অহিংসার বাণী। ঘুমপাড়ানি মাসিপিসিরা সাবেকপন্থী সনাতন ঘুম চান, তারা ধর্মের মোহে, অহিংসার মোহে, আচার-সংস্কারে সকলকে শান্ত রাখতে চান। এখানে মনে পড়ে যায় গান্ধী-রবীন্দ্রনাথ বিরোধের ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ। অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উভয়ের মতবিরোধ হয়েছিল, বিদেশি পণ্য বর্জনের পাশাপাশি গান্ধী শিক্ষাক্ষেত্রেও ইংরেজি বর্জনের মাধ্যমে ভারতীয় যুবসমাজকে পাশ্চাত্য শিক্ষার জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে দিতে চাননি বলে মনে করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

অহিংসা যেন কখনো প্রগতির পথ রুখে না দেয় এমন চিন্তা ছিল তাঁর। যদিও এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা প্রয়োজন যা এখানে বাহুল্য। দেশের ভূত কিভাবে দূর হবে এ প্রশ্নের উত্তরে কর্তা বলেন দেশবাসী যদি তাঁকে ছেড়ে দেয় তাহলেই তিনি ছেড়ে যাবেন।

কিন্তু দেশের লোকের বড় ভয় হয়।

দেশের লোক আত্মবিশ্বাসহীন, কোনোভাবেই তারা আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে প্রাচীন ধর্মীয় সংস্কারের গোড়ায় কুঠারাঘাত করতে পারে না। আর এই ‘ভয়’ থেকেই ভূত চেপে বসে। জনসাধারণের জাগ্রত হওয়া দরকার। ধর্ম যে আসলে দূর্বল মানুষের অবলম্বন তা বুঝেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘যখন আপন শক্তির মূলধন লইয়া জনসাধারণের কারবার না চলে, তখন সকল ব্যাপারেই মানুষ দৈবের কাছে, গ্রহের কাছে, পরের কাছে হাত পাতিয়া ভয়ে ভয়ে কাটায়’। তাই ‘কর্তার ভূত’ আসলেই ধর্মান্ধ মানুষের মনের গহনে থাকে, জ্ঞানের শিখায় সেই ভূত তাড়াতে পারলে তবেই সমাজ উন্নত হয়।

এই ছোট্ট কথিকায় রবীন্দ্রনাথ এক চরম সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করালেন আমাদের, রবীন্দ্রনাথের স্বদেশচিন্তায় বারবারই এই প্রাচীনতা আর আধুনিকতার সংঘাতের কথা এসেছে আর প্রতিবারই তিনি জরাজীর্ণ প্রাচীন সংস্কারকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুক্তির আলোয় গেয়েছেন – জীর্ণ আবেশ কাটো সুকঠোর হাতে বন্ধন হোক ক্ষয়’।

সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখক পরিচিতি

প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সিমন রায়। সাহিত্যচর্চা ও লেখা-লিখির পাশাপাশি নাট্যচর্চাতেও সমান উৎসাহী সিমন।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –