বাংলা – একাদশ শ্রেণি – বাঙালির শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি (তৃতীয় অধ্যায়)
এর আগে প্রাচীন বাংলার সমাজ ও সাহিত্য – দ্বিতীয় পর্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছি, এই পর্বে আমরা ঐ অধ্যায়ের দ্বিতীয় অংশটি সম্পর্কে আলোচনা করবো।
অন্ধকারময় যুগ
কী বন্ধুরা, ভাবছো তো হঠাৎ আলোচনার বিষয় অন্ধকারময় যুগ কেন? এই কথার মানেই বা কী? দুশ্চিন্তার কারণ নেই, বিদ্যুৎ-চালিত আলো না থাকার কথা এখানে বলবো না আবার আদিম আদিম যুগের গুহাবাসী মানুষের নিস্তেল আঁধারের কথাও বলবো না। এ যুগের অন্ধকার, মানব সমাজে সৃষ্টির অন্ধকার। এহে আবার জটিল জটিল কথা চলে আসছে। এখুনি হয়তো পড়া ছেড়ে পালাবে তোমরা।
না না, থামো। চিন্তা নেই। আমাদের সেই সনাতন সহজ সুরেই আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো আজকের আলোচনা।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়তে এসে এই শব্দবন্ধটা তোমাদের বেশ গুরুত্ব দিয়ে নজর করতে হবে বন্ধুরা। আমরা এর আগের পর্বগুলোয় জেনেছি কীভাবে বাংলা সাহিত্যের একেবারে প্রাচীনতম নিদর্শনগুলি আবিষ্কার করা হয়েছিল।
চর্যাপদ যে সময় লেখা হয়েছিল সেটা মোটামুটিভাবে ৯০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু তার পরে দীর্ঘ দেড়শো বছর বাংলা সাহিত্যে আর কোনোরূপ সাহিত্যিক নিদর্শন পাওয়া যায়নি।
তার মানে মানুষ সে সময় কোনো সাহিত্য রচনা করেননি। কিন্তু কী এমন ঘটনা ঘটলো যে মানুষের মন থেকে সাহিত্যপ্রীতি মুছে গেল একেবারে? সাহিত্য রচনা করার যে তাড়না, যে মানসিক প্রশান্তি তার অভাব ঘটেছিল হয়তো, হয়তো সমাজে চলছিল কোনো বিশৃঙ্খল অবস্থা বা অন্য কিছু। যে কারণেই হোক এই যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা সাহিত্যের কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি এবং বাঙালির সমাজ-রাজনৈতিক জীবনে ছিল বিশৃঙ্খলা তাই এই যুগকে বলা হয় অন্ধকারময় যুগ।
সময়ের হিসেবে ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দী (আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)-কে বলা হয় অন্ধকারময় যুগ।
আশা করি এবারে তোমাদের দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন তোমরা করতেই পারো যে এর পিছনে আসল কারণটা কী ছিল? সেটা নিয়েই আজকের আলোচনা।
ঐ দীর্ঘ সময়ে সাহিত্য রচনার যে অনুকূল পরিবেশ ছিল না তার কারণ মূলত তুর্কি আক্রমণ। এখানেই আমাদের খুব সহজ করে জেনে নিতে হবে এই তুর্কি কারা বা তুর্কি আক্রমণের ঐতিহাসিক পটভূমি কী ছিল? মনে রেখো বন্ধুরা, বাংলা সাহিত্য এবং সেকালের বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতিতে এই তুর্কি আক্রমণের মতো ঘটনা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল যা সাহিত্যের পর্যায়কে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে উন্নীত করেছিল। অর্থাৎ তুর্কি আক্রমণের ফলেই বাংলা সাহিত্য তাঁর প্রাচীন রূপ ছেড়ে মধ্যযুগে পদার্পণ করেছিল। সেই সঙ্গে আমূল পালটে গিয়েছিল সমাজের মানসিকতা, ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা।
একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল
আমরা আগের পর্বে জেনেছি চর্যাপদ যে সময় লেখা হয়েছিল, সেসময় বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে পাল রাজাদের শাসন চলছিল। পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক। ধীরে ধীরে বাংলায় সেন রাজবংশের শাসন শুরু হয়। এই সেন রাজারা আবার বৌদ্ধদের ভালো চোখে দেখতেন না, এরা সকলেই ছিল হিন্দু ব্রাহ্মণ সন্তান। ফলে সেন রাজাদের আমলে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ফুলে-ফেঁপে ওঠে এবং বাংলা থেকে বৌদ্ধদের অবলুপ্তি ক্রমেই ত্বরান্বিত হতে থাকে। ব্রাহ্মণ্য ধর্ম যখন পুরো বঙ্গদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তখন বাংলার সমাজ-সংস্কৃতি হিন্দু ধর্ম দ্বারা চালিত হচ্ছে। হিন্দু আচার-সংস্কার সবই মানুষের অভ্যাসে ঢুকে পড়েছে। এই সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেনের আমলেই ঘটে তুর্কি আক্রমণ।
আনুমানিক ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন বিন বখতিয়ার খলজি বাংলার শেষ হিন্দু রাজা লক্ষ্মণ সেনকে আক্রমণ করেন এবং তাঁকে পরাজিত করে নবদ্বীপ দখল করেন। বখতিয়ার খলজির বঙ্গবিজয়কেই তুর্কি বিজয় বা তুর্কি আক্রমণ বলা হয় ইতিহাসে।
আক্ষরিক অর্থে ‘তুর্কি’ বলতে বোঝায় কাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ইত্যাদি অঞ্চলের মানুষদের বোঝায়। খুব সহজে ও সংক্ষেপে বললে মধ্য এশিয়া বা মধ্য প্রাচ্যের নির্দিষ্ট কিছু অংশের বাসিন্দাদের তুর্কি বলা হয়। বখতিয়ার খলজি লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে বাংলা থেকে সম্পূর্ণ রূপে সেনবংশের শাসনের বিলোপ ঘটান। তারপর থেকেই শুরু হয় বাংলায় মুসলিম শাসন।
প্রাথমিক পর্বে তুর্কি বিজয়ের সময় বখতিয়ার খলজি বাংলার বহু মন্দির ধ্বংস করেন, ধ্বংস করেন বৌদ্ধ বিহার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় ইত্যাদি। বহু গ্রন্থাগার, পুঁথিপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আদপেই তুর্কীরা ছিল দুর্ধর্ষ জাতি, ইসলাম ধর্মে যা নেই তাকেই তারা ভ্রান্ত বলে মনে করতো এবং তা ধ্বংস করতো নির্বিচারে। প্রাচীন সংস্কৃতির সমস্ত চিহ্নই বিলোপ করেছিল তাদের ধ্বংসলীলা। বলপূর্বক মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করানো শুরু হয়েছিল সেই সময়। ঠিক এই সময়ে বাংলার সনাতন সমাজে হিন্দুদের মধ্যে জাতবিভাজনের বেড়াজাল ছিন্ন হয়ে উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের মানুষরা একজোট হয়ে এই আক্রমণের প্রতিরোধে সামিল হয়েছিল।
বৌদ্ধরা এই সময়েই তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ সব পুঁথিপত্র নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল নেপালে ও তিব্বতে।
চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ গৌড়ের সুলতান পদে বসেন এবং তাঁর আমলেই সমস্ত বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা থেমে গিয়ে শান্তি ফিরে আসে বাংলায়। ১৪৯৩ সালে বাংলার শাসনভার দখল করেন আলাউদ্দিন হুসেন শাহ। হিন্দুরা তাঁকে বলতেন ‘নৃপতিতিলক’। তাঁর আমলে বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এক আমূল পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তাঁর শাসনকালেই বানগালিদের মধ্যে ধর্মের দিক থেকে সমস্ত ভেদাভেদ ঘুচে যায়। হিন্দু ও মুসলিম এই দুই ধর্মের পৃথক সংস্কৃতি কাছাকাছি আসার সুযোগ পায়, উভয়ের মিশ্রণ ঘটে এক সমন্বয়বাদী ধারার জন্ম দেয়। দেবদেবীদের ক্ষেত্রেও এই মিশ্রণ লক্ষ করা যায়। উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ্য দেব-দেবীর সঙ্গে অন্ত্যজ সমাজের দেব-দেবীর মিশ্রণ ঘটে নতুন দেব-দেবীর জন্ম হয়।
একাদশ শ্রেনি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
মুসলিম শাসনের তৃতীয় পর্বে দেখা যায় মুসলিম সুলতানেরা হিন্দু কবিদের দিয়ে সভায় রামায়ণ-মহাভারত পাঠ করাচ্ছেন এবং সেই পাঠের উপযোগী করে অনুবাদও করার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। ফলে এর মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যে পৃথকভাবে একটি অনুবাদ সাহিত্যের ধারা তৈরি হয়। একইভাবে কিছুদিনের মধ্যেই চৈতন্যের জন্ম হয় এবং চৈতন্যের আবির্ভাবে বাংলার সাহিত্য ও সমাজের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু সেই সমাজের বাঁকবদলের ঘটনাটির প্রথম পর্ব সূচিত হয়েছিল এই সময়েই। তাই এই সময়কালকে এক যুগসন্ধির লগ্ন বলা চলে যে সময় আসলে বাংলা সাহিত্যকে প্রাচীন যুগ থেকে মধ্যযুগের দিকে এক ধাপ অগ্রসর হতে সাহায্য করেছিল।
তুর্কী আক্রমণের সময়কার সাহিত্যের ইতিহাস আসলে শূন্যতার ইতিহাস। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাহিত্যের ইতিহাসকারেরা দেখিয়েছেন যে এই সময় মোটামুটিভাবে চতুর্দশ শতকে ‘শূন্যপুরাণ’ নামে একটি সাহিত্যিক নিদর্শন পাওয়া যায় যার মধ্যে ‘নিরঞ্জনের রুষ্ণা’ নামক কবিতায় উড়িষ্যার কোনারক মন্দির ধ্বংসের চিত্র লক্ষ করা যায়। সেই কবিতায় বলা হয়েছে যে বৌদ্ধদের প্রতি ব্রাহ্মণেরা অত্যাচার করাতে নিরঞ্জন রুষ্ট হয়ে ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে দেবতাদের নিয়োজিত করেন এবং সেই দেবতারাই মুসলমান তুর্কীর রূপে মর্ত্যে আসেন। মনে করা হয়, এই কবিতার রচয়িতা নিজেও একজন বৌদ্ধ ছিলেন, ফলে আশ্চর্যভাবে তুর্কী আক্রমণ তাঁর কাছে ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের বদলা স্বরূপ হয়ে উঠেছে।
তুর্কি-আক্রমণের ফলে বাংলার সমাজজীবনে যে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তা সাহিত্যসৃষ্টির পক্ষে অনুকূল ছিল না। কিন্তু সাহিত্যক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল যথেষ্টই।
- বর্গসম্মিলনের সূত্র ধরে অনার্য দেবদেবীদের আর্যীকরণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, তার ফলেই সৃষ্টি হয় মঙ্গলকাব্যগুলির। লৌকিক পরিমণ্ডলে মনসা, চণ্ডী ইত্যাদি দেবদেবীর যেসব বন্দনাগান প্রচলিত ছিল, সেগুলি লিখিত রূপ হিসেবে স্থান পায় বিভিন্ন মঙ্গলকাব্যে।
- সাধারণ মানুষ পৌরাণিক দেবদেবীদের পূজা-অর্চনার অধিকার পাওয়ায় সূচনা হয় অনুবাদ সাহিত্যের। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল এইসব দেবতাদের মাহাত্ম্যের সঙ্গে লোক-সাধারণের সরাসরি সংযোগসাধন। এভাবেই রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবতের অনুবাদে সমৃদ্ধ হয় বাংলা সাহিত্য। এই তুর্কী আক্রমণের ফলে মূলত দেবতাদের উপর মানুষের আস্থা বেড়ে গিয়েছিল, যে কারণে মধ্যযুগের দৈব-নির্ভর সাহিত্যের সূচনা ঘটে।
- তুর্কি-আক্রমণের ফলে সমাজ মানসিকতার যে বদল ঘটে, তার ফলে সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা পায় লৌকিকতা। বড়ু চণ্ডীদাসের ‘আভীর’ কৃষ্ণ এই লৌকিকতারই ফসল। কৃত্তিবাসের বাঙালিয়ানাতেও আর-একভাবে আসে এই লৌকিকতা।
- তুর্কি-আক্রমণের ফলে হিন্দু রক্ষণশীলতার দুর্গে ফাটল ধরে, আর এই মিশ্র সংস্কৃতির পথ ধরেই ঘটে চৈতন্যের আগমন। আবার এই পথেই সুফি ধর্মের যে বিকাশ ঘটে, তা বাংলা সাহিত্যে বাউল ভাবধারার জন্ম দেয়।
এভাবেই তুর্কি-আক্রমণ আপাতভাবে নিষ্ফলা হলেও বাংলা সাহিত্যে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখতে সমর্থ হয়। এই তুর্কী আক্রমণ এক যুগসন্ধির সেতুর মতো কাজ করেছে। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বাঁকবদলের সূচনা করে দেয় এই তুর্কী আক্রমণ। প্রাচীন যুগ থেকে মধ্যযুগে পদার্পণ করে বাংলা সাহিত্য এবং সাহিত্যের ধরন-ধারণও বদলে যায় অনেকটাই। এই অবসরে মধ্যযুগের সাহিত্যের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে রাখা যাক। সেক্ষেত্রে পরবর্তী আলোচনাগুলি বুঝতে অনেক সুবিধে হবে।
মধ্যযুগের সাহিত্য- বিন্দুতে সিন্ধু
মধ্যযুগের সূচনা হচ্ছে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে। এই সময় বাঙালির চিন্তায়-চেতনায় দৈব নির্ভরতা বেড়ে গেছে অনেক। তুর্কী আক্রমণের দারুণ দূর্দিনে মানুষ অবলম্বনহীন হয়ে পড়েছিল, তাঁর মনের মধ্যে থাকা ভয়-আতঙ্কের সুযোগে একমাত্র সহায় হয়ে উঠেছিল দেব-দেবীরা। ফলে মধ্যযুগের সাহিত্যে আমরা দেখবো প্রধান উপাদান হল দেব-দেবীর কাহিনী এবং তাদের পূজা প্রচারের নানাবিধ কথা।
এটা তোমাদের মাথায় রাখতে হবে। সাধারণভাবে মধ্যযুগের সাহিত্য এক বিপুল সমুদ্রের মতো। এর মধ্যে যেমন আছে বৈষ্ণব পদাবলী, তেমনি আছে শাক্ত পদাবলী, এতে আছে মঙ্গলকাব্য, নাথ সাহিত্য, আছে গীতিকা, আছে আরাকান রাজসভার সাহিত্য। এতকিছুর মধ্যে যদি সঠিক দিশায় পড়া না হয়, তবে নিশ্চিত তোমরা পথ হারাবে। তখন কপালকুণ্ডলা সদৃশ সিলেবাস এসে তোমাদের মতো নবকুমারদের কানে কানে বলবে পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ? কুয়াশায় দূরের দিশা দেখতে না পেয়ে তখন সেই নৌকামধ্যস্থ যাত্রীদের মতো তোমরা আতঙ্কে ব্যাকুল হয়ে উঠবে। তাই সেই ভবিতব্য আতঙ্কের মেঘ দূর করতেই আমার এই প্রয়াস।
সহজ করে বললে মধ্যযুগের সাহিত্যের মূলত ছয়টি ধারা দেখা যায় –১) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, ২) অনুবাদ সাহিত্য, ৩) মঙ্গলকাব্য, ৪) বৈষ্ণব পদাবলী, ৫) আরাকান রাজসভার সাহিত্য, ৬) গীতিকা
তবে সাধারণভাবে খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে অস্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালকেই মধ্যযুগ বলে ধরা হয়।
এরই মধ্যে জন্মেছেন বাংলার এক বৈপ্লবিক মনীষা – শ্রী চৈতন্যদেব।
তাঁর জন্ম ও মৃত্যু সাহিত্য-সংস্কৃতির এক মানদণ্ড ধরা হয়। কেন ধরা হয়, মানে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে শ্রীচৈতন্যের কি অবদান সে বিষয়ে আমরা পরে অবশ্যই আলোচনা করবো, তখন এই ব্যাপারটা পরিস্কার হবে।
আপাতত জেনে রাখো, শ্রীচৈতন্যের জন্মের ভিত্তিতেও মধ্যযুগের সাহিত্যকে তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয় – ক) প্রাক্-চৈতন্য সাহিত্য, খ) চৈতন্য সমকালীন সাহিত্য, গ) চৈতন্য-পরবর্তী সাহিত্য
চৈতন্যদেবের জন্মের আগে অর্থাৎ চতুর্দশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত হয়েছে বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’, কৃত্তিবাসের ‘শ্রীরাম পাঁচালি’, মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’, চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতির বৈষ্ণব পদাবলী, মনসামঙ্গল কাব্য ইত্যাদি রচনা। চৈতন্য-পরবর্তী কাল অর্থাৎ সপ্তদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীকে বলা হয় যুগসন্ধির কাল।
একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
এই সময়ে রচিত হয়েছিল কাশীদাসী মহাভারত, চৈতন্য জীবনীসাহিত্য, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মঙ্গলকাব্যগুলি এবং গীতিকা, শাক্ত পদাবলী, আরাকান রাজসভার সাহিত্য ইত্যাদি। চৈতন্যদেবের জন্মের সময় বাংলা সাহিত্যে টুকটাক কিছু অনুবাদের ধারা বজায় ছিল, আর বিশেষ কিছু দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। ফলে আমাদের পড়ার দিক নির্দেশ শুরু হবে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য দিয়ে। তার মাঝেই আমরা আলোচনা করে নেব চৈতন্যদেবের বিষয়ে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ।
তাহলে আজ এতটুকুই থাক। পরের ক্লাসগুলি থেকে আমরা জোরকদমে শুরু করে দেবো মধ্যযুগের সাহিত্য পড়া। আজকের মতো ছুটি।
পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখক পরিচিতি
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সিমন রায়। সাহিত্যচর্চা ও লেখা-লিখির পাশাপাশি নাট্যচর্চাতেও সমান উৎসাহী সিমন।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
XI_Beng_modhyojug_Somaj_sahityo_1