production-and-factors-of-production
Class-11

উৎপাদন ও উৎপাদনের উপাদানের ধারণা

EconomicSএকাদশ শ্রেনি – অর্থনৈতিক বিষয়বস্তু ও প্রাথমিক ধারণাসমূহ (প্রথম পর্ব)


উৎপাদন (production) কাকে বলে?

অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে গেলে, উৎপাদন কি তা আমাদের জানতেই হবে। অর্থনীতিতে উৎপাদন বা production খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। উৎপাদনের সংজ্ঞাকে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে ব্যাখা করেছেন। আমরা তার মধ্যে একটি বেছে নিলাম।

উৎপাদনের সংজ্ঞা

উৎপাদন বলতে একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার সাহায্যে বিভিন্ন দ্রব্য এবং সেবা সৃষ্টি করা যায়। এই দ্রব্য বা সেবাগুলিকে আমরা বাজারে বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ রোজগার করতে পারি।

যেমন, ধরো কেউ বাজারে বিক্রয়ের জন্য চাল, গম, ব্যাগ, জামাকাপড় ইত্যাদি সৃষ্টি করছে বা বানাচ্ছে, আমরা এই কাজটিকে উৎপাদন (Production) বলব। আবার ধরো,ডাক্তার, আইনজীবী, পুলিশ, অভিনেতা এরাও বিভিন্নভাবে সেবা (Service) সৃষ্টি করেন। এই প্রক্রিয়াটিকেও আমরা উৎপাদন বলে থাকি।

এবার আমাদের মনে একটা প্রশ্ন আশা খুব স্বাভাবিক, উৎপাদনের উপাদান কি কি?

উৎপাদনের উপাদান (factors of production):

যে কোনো উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন উপকরনের প্রয়োজনে হয়। যেমন চাষ করতে লাঙ্গল, জমি, বলদ, সার ইত্যাদি বিভিন্ন উপকরন দরকার বা ধরো কোন কারখানায় কোন দ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে সেখানে মেশিন, কাঁচামাল দরকার সেই রকমই যে কোনো উৎপাদনের জন্য মুলত চারটি উপাদান দরকার হয়ে থাকে। সাধারনত যে উপাদানগুলি প্রয়োজন, সেগুলি হল-
জমি(land),
শ্রম (labour),
মূলধন (capital) ও
উদ্যোগ গ্রহণ (organization)।

উৎপাদনের উপাদান ও তাদের বৈশিষ্ট্য

1. জমি

সাধারণত আমরা জমি বলতে মাটি বা কোন জায়গাকে বুঝি কিন্তু অর্থনীতিতে জমি শব্দটিকে আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। এখানে জমি বলতে প্রকৃতি থেকে যা আমরা পেয়ে থাকি সব কিছুকেই বোঝাই।

যেমন ধরো জল, আলো, বাতাস, জমি, পাহাড়-পর্বত, খনি, গোচারণভূমি, বনভুমি ইত্যাদি সব কিছুকেই আমরা অর্থনীতিতে জমি বলব।

জমির বৈশিষ্ট্য

(i) জমি প্রকৃতির দান।

(ii) জমি যেহেতু প্রকৃতি সৃষ্টি করে এটিকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়না তাই এটির জোগানও সীমাবদ্ধ।

(iii) জমিকে পুনরায় উৎপাদন করা যায়না।

(iv) জমিকে চাইলেও স্থানান্তরিত করা সম্ভব নয়। আমরা চাইলেও একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যেতে পারব না।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry  | Biology | Computer

2. শ্রম

শ্রম হল উৎপাদনের আর একটি উপাদান। শ্রম বলতে আমরা শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক পরিশ্রম দুটোকেই বুঝি।

যেমন ধরো কোন ব্যাক্তি কোন কারখানায় শারীরিক পরিশ্রম করে কোন দ্রব্য তৈরি করছে, সুতরাং তার পরিশ্রমকে আমরা শারীরিক পরিশ্রম বলব। আবার ধরো, ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী এনারা যে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে সেই পরিশ্রমকে আমরা মানসিক শ্রম বলব।

একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, শ্রম আমরা সেই কাজকেই বলব যেই শ্রমের দ্বারা কোন ব্যাক্তি অর্থ উপার্জন করে। ধরো তুমি বাড়ির কোন কাজ করলে এবং সেটির জন্য তুমি কোন অর্থ পেলেনা সেরম কাজকে আমরা অর্থনীতিতে শ্রম বলব না।

শ্রমের বৈশিষ্ট্য

(i) শ্রমিক থেকে শ্রমকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না।
(ii) শ্রমকে সঞ্চয় করা সম্ভব না। কারণ কেউ একদিন কাজ না করলে তার সেই দিনের শ্রম নষ্টই হয়ে যায়।
(iii) পরিশ্রমের ফলে শ্রমিকের শ্রম ধ্বংস হয়।
(iv) মজুরি বাড়ার পরের ও শ্রমের জোগান কমতে পারে। যদি কোন শ্রমিক অর্থের তুলনায় আরামকে বেশি পছন্দ করে তাহলে তার মজুরি বাড়লেও সে শ্রমের জোগান দিতে রাজি থাকবে না।

3. মূলধন

উৎপাদনের আর একটি উপাদান হল মূলধন। যে সকল দ্রব্যকে সরাসরি আমরা ভোগের কাজে ব্যবহার না করে, অনান্য দ্রব্য উৎপাদন করতে ব্যবহার করি সেই দ্রব্যগুলিকেই আমরা মূলধন বলে থাকি।

উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদানই হল মূলধন। যেমন কারখানার যন্ত্রপাতি, কৃষকের লাঙ্গল ইত্যাদি সবই মূলধনের উদাহরণ।


একাদশ শ্রেণি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

মূলধনের বৈশিষ্ট্য

(i)মূলধন হল শ্রমের দ্বারা উৎপাদিত উপাদান।
(ii)মূলধনের সাহায্যে আমরা ভবিষ্যতে অর্থ উপার্জন করতে পারি।
(iii)কোন শ্রমিক মূলধনের সাহায্যে কম সময়ে বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম।
(iv) মূলধন হল সঞ্চয়ের ফল।

4. উদ্যোগ গ্রহণ

যেসব ব্যাক্তি উৎপাদনের অন্যান্য উপাদান , জমি, শ্রম, মূলধন এগুলিকে একত্র করে সমন্বয়সাধন করে এবং উৎপাদনসম্বন্ধীয় নানা সিধান্ত গ্রহণ করে তাদেরকেই সাধারণত আমরা উদ্যোগে গ্রহীতা বা উদ্যোক্তা কিংবা সংগঠক বলে থাকি।

উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য :-

(i) এনারা উৎপাদন সম্পর্কিত বিভিন্ন সিধান্ত নেন।
(ii) এনারা ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বহন করেন।
(iii) এনারা বিভিন্ন উপাদানগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে থাকেন।


একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

উপাদানের মুল্য

বিভিন্ন উপাদানের মুল্যকে আমরা বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করি যেমন ধরো কোন জমি থেকে প্রাপ্ত আয়কে আমরা বলি খাজনা, আবার শ্রমিকরা শ্রমের মাধ্যমে যে অর্থ উপাজন করে তাকে আমরা বেতন বা মজুরি বলে থাকি, মূলধন থেকে আমরা যে আয় উপার্জন করি তাকে সুদ বলা হয় এবং উদ্যোক্তাদের প্রাপ্ত মুনাফাকে লাভ বলা হয়।

পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


 লেখিকা পরিচিতি

শ্রীরামপুর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তনী শুভ্রা পাল। স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি গান শুনতে এবং বাগান পরিচর্যা করতে ভালবাসেন শুভ্রা।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



এছাড়া,পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহন করতে যুক্ত হতে পারেন ‘লেখা-পড়া-শোনা’ ফেসবুক গ্রূপে। এই গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন এখানে।