bivinno-prakritik-poribesh-kosher-upor-provab
WB-Class-8

বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কোষের উপর প্রভাব

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – দেহের গঠন (চতুর্থ পর্ব)


আগের পর্বে আমরা জেনেছি প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ও কোষীয় অঙ্গাণু সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কোষের উপর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করবো।

পৃথিবীর সকল স্থানের আবহাওয়া ও পরিবেশ একরকম নয়। স্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবেশ ও আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু সব স্থানে কিছু প্রাণী ও উদ্ভিদ আমরা দেখতে পাই। এদের মধ্যে অনেকে অতি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বেঁচে থাকে।

উষ্ণতা, বায়ুর আদ্রতা, চাপ, অক্সিজেনের পরিমাণ, মাটিতে লবণের উপস্থিতি প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার অবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ শরীরে নানা বিশেষ পরিবর্তন ঘটে যা অভিযোজন নামে পরিচিত।

অভিযোজন কাকে বলে?

কোন জীব যে আংশিক অথবা সমগ্র দেহের গঠনগত, কার্যগত, আচরণগত বা শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের দ্বারা কোন নির্দিষ্ট পরিবেশে বেঁচে থাকা ও বংশবৃদ্ধির জন্য নিজেকে উপযুক্ত করে তোলে, তাকে অভিযোজন বলে।

বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য জীবদেহে বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য দেখা যায়

• মরুভূমি ও অত্যন্ত শুষ্ক স্থানের উদ্ভিদ

এই সকল অঞ্চলে বড় আকারের উদ্ভিদ দেখা যায় না। এই অঞ্চলে ক্যাকটাস জাতীয় ছোট গাছ দেখা যায়। শুষ্ক অঞ্চলের এই উদ্ভিদগুলির কাণ্ডে অধিক পরিমাণ জল সঞ্চিত থাকে। বাষ্পায়নের হার হ্রাস করার জন্য এদের পাতাগুলি খুব ছোট হয়ে কাঁটায় পরিণত হয়।

মরু অঞ্চলে ক্যাকটাসের সারি

এছাড়া এই জাতীয় উদ্ভিদের কোষের বাইরে মোম জাতীয় পদার্থের আস্তরণ থাকে, যা বাষ্পায়নের হার কমাতে সাহায্য করে।

• শীতপ্রধান অঞ্চলের প্রাণী

তুষার ভাল্লুক, সিল মাছ প্রভৃতি প্রাণীরা মেরু প্রদেশের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় বেঁচে থাকতে পারে। তাদের দেহে এক বিশেষ প্রকার প্রোটিন থাকে যা অত্যন্ত ঠাণ্ডায় কোষীয় তরলের জমে যাওয়া প্রতিরোধ করে।

মেরু অঞ্চলের প্রয়োজনে অভিযোজিত মেরু ভাল্লুক

এছাড়া শীতপ্রধান অঞ্চলের প্রাণীদের চামড়ার নীচে চর্বির মোটা স্তর থাকে, যা শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

• সমুদ্র উপকূলবর্তী লবণাক্ত অঞ্চলের জীবকূল

লবনাক্ত জলে বসবাসকারী প্রাণীদের শরীরে এক বিশেষ ধরনের কোষ দেখা যায়, যাকে ক্লোরাইড কোষ বলে। এই কোষের সাহায্যে প্রাণীরা তাদের দেহের অতিরিক্ত লবণ শরীর থেকে বার করে দিতে পারে।

এছাড়া লবণাক্ত মাটিতে যেসব উদ্ভিদ হয় তাদের মূলে বিশেষ প্রকার গঠন দেখা যায়। সমুদ্র তীরের লবণাক্ত মাটিতে যেসব উদ্ভিদ জন্মায় তাদের পাতা খুব পুরু ও মোম জাতীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে এবং পত্ররন্ধ্রগুলি শুধুমাত্র পাতার নীচের ত্বকে থাকে।

পাতার নীচে পত্ররন্ধ্র থাকায় সূর্যালোক সরাসরি পত্ররন্ধ্রে পড়তে পারে না, ফলে বাষ্পমোচন কম হয় এবং লবণযুক্ত জল মাটি থেকে কম শোষণ হয়। পাতায় মোমের প্রলেপ এই বাষ্পায়ন কমাতে সাহায্য করে।

ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের অভিযোজিত বৈশিষ্ট্য ঠেসমূল

বাষ্পায়ন কম হবার অর্থ মাটি থেকে কম জল শোষণ হওয়া। ফলে উদ্ভিদের শরীরে লবণ কম প্রবেশ করে। সমুদ্র তীরের মাটি কর্দমাক্ত ও রন্ধ্রবিহীন হয়। তার ফলে মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ খুব কম থাকে।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান

এছাড়া সমুদ্র তীরের মাটি অনেক সময় জোয়ারের জলে প্লাবিত থাকে। এই কারণে দেখা যায়, কিছু শাখা মূল অভিকর্ষের বিপরীতে গিয়ে মাটি ভেদ করে উঠে আসে, যাকে শ্বাসমূল বলে। এই শ্বাসমূলে অবস্থিত গাত্রছিদ্র দিয়ে অক্সিজেন শোষণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয়। যা মাটির নীচে অবস্থিত মূলের কোষগুলির শ্বাসকার্যের অসুবিধা দূর করে।

• জলে ভাসমান উদ্ভিদ

কচুরিপানা জলে ভেসে থাকে। এদের কাণ্ডে উপস্থিত বায়ুগহ্বর যুক্ত প্যারেনকাইমা কোষ এদের ভেসে থাকতে সাহায্য করে।

জলাশয়ে ভাসমান কচুরীপানা

• অধিক উচ্চতাযুক্ত স্থানের জীবকুল

অতি উচ্চস্থানে যেসব প্রাণীরা বাস করে, দেখা যায় তাদের শরীরের রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হয়। এর কারণ, বাতাসে উপস্থিত থাকা অক্সিজেনের পরিমাণ। আমরা জানি, উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ হ্রাস পায় এবং তার ফলে বাতাসে উপস্থিত অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে নীচে নেমে যায়।

রক্তে লোহিত কণিকা বৃদ্ধির অর্থ হল হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পাওয়া। এই হিমোগ্লোবিন দ্বারা রক্তে অক্সিজেন পরিবহণ ঘটে। ফলে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্তে অক্সিজেনের যোগান বৃদ্ধি পায়।

• উড্ডয়নশীল প্রাণী

একই ভাবে পাখিরা যখন আকাশে ওড়ে, তখন তাদের শরীরে অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। এই কারণে উড়তে সক্ষম এমন প্রাণীদের শরীরে অক্সিজেন যোগান দিতে বেশি সংখ্যক হিমোগ্লোবিন থাকে। অতিরিক্ত হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতি শরীরে বাড়তি অক্সিজেন পরিবহণ করে।

উড্ডয়নশীল প্রাণীদের অভিযোজনের দরুন অতিরিক্ত অক্সিজেনের চাহিদার পূরণ

এছাড়া উড়বার সময় প্রাণীদের বেশি শক্তি প্রয়োজন হয়। দ্রুত শক্তি উৎপাদনের জন্য এদের কোষে মাইটোকনড্রিয়া অনেক বেশি পরিমাণ থাকে। এই মাইটোকনড্রিয়াকে কোষের শক্তি ভাণ্ডার বলা হয়, কারণ এরা খাদ্যকে ভেঙে কোষে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগান দেয়।

• গভীর সমুদ্রের তলদেশের প্রাণীকূল

জলের গভীরে মাছের গমন

একই ভাবে অতিরিক্ত শক্তির চাহিদা পূরণের জন্য গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণীদের দেহকোষে মাইটোকনড্রিয়া সংখ্যা বেশি হয়।

পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতিঃ

বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা।তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

VIII_science_12d