ouponibeshik-kortitwo-protistha
WB-Class-8

ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: ইতিহাস । অধ্যায় – ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা (তৃতীয় অধ্যায়)


বন্ধুরা আবার চলে এলাম ইতিহাস আলোচনায়। আগের দিনতো আলোচনা করেইছি ব্রিটিশরা কিরকম বুদ্ধি খাটিয়ে ভারতবর্ষে ঘাঁটি গাড়তে শুরু করে। আজ জানব কিভাবে তারা গোটা দেশে প্রভুত্ব করা শুরু করে।

বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্রিটিশরা ভারতে এসে দেশের শাসন ব্যবস্থায় প্রবেশ করেছিল। তারা অত্যন্ত কৌশলে এতো বড় দেশের শাসনভার পরিচালনা করার জন্য দেশের তিনটি অঞ্চলে তিনটি প্রেসিডেন্সী নির্মাণ করেছিল যথাক্রমে মাদ্রাজ, বোম্বাই, কলকাতা।

এই মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর অন্তর্গত ছিল, দক্ষিণ ভারতের এক বিস্তীর্ণ অংশ। তামিলনাড়ু, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক ও দক্ষিণ উড়িষ্যার এক বিশাল অঞ্চল ছিল এই প্রেসিডেন্সীর অধীনে।

অন্যদিকে, বোম্বাই প্রেসিডেন্সী পশ্চিম ও মধ্য ভারতের এক বিরাট অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। সুদূর সিন্ধু প্রদেশ ও ছিল এই প্রেসিডেন্সীর অন্তর্গত। এই প্রেসিডেন্সী বোম্বাই প্রেসিডেন্সী নামেও পরিচিত।

[তবে জেনে রেখো, প্রথমে সুরাটকে কেন্দ্র করেই এই প্রেসিডেন্সীর সূচনা হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে সুরাটের বাণিজ্যিক গুরুত্ব কমে যায়, আর বোম্বাই জনপ্রিয়তা বাড়ে।]

কলকাতাতে ছিল ব্রিটিশ ভারতের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। 1765 সালে দিওয়ানি লাভের পর থেকেই এই অঞ্চলের উপর কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই প্রেসিডেন্সী বাংলার বাইরে বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, ত্রিপুরা, পাঞ্জাব, উঃ মধ্য ভারতের বিরাট অঞ্চলে বিস্তৃতি পেয়েছিল। এই বাংলা প্রেসিডেন্সীতেই গড়ে উঠেছিল ফোর্ট উইলিয়াম।

এইভাবেই তিনটি ভিন্ন প্রেসিডেন্সীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তিনটি কাউন্সিল, এই কাউন্সিলগুলি ইংল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ রেখে চলত। আবার এই কাউন্সিলগুলির মধ্যে থেকে একজন সদস্যকে গভর্নর নির্বাচন করা হত।

আবার আমাদের ভারতবর্ষ ঠিক কিভাবে শাসন করা হবে, তা ঠিক করা হত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে তৈরি হওয়া আইনের মাধ্যমে।

এইরকমই দুটি বিখ্যাত আইন ছিল রেগুলেটিং অ্যাক্ট (1773 খ্রিঃ) ও পিটের ভারত শাসন আইন (1784 খ্রিঃ)।

রেগুলেটিং অ্যাক্ট (1773 খ্রিঃ)

এই অ্যাক্ট অনুযায়ী গভর্নর জেনারেল নামে একটি নতুন পদ তৈরি করা হয় এবং বাংলার গভর্নরকেই ভারতের গভর্নর হিসাবে স্বীকৃত করা হয়।

পিটের ভারত শাসন আইন (1784 খ্রিঃ)

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিটের এই আইনের দ্বারাই তৈরি হয় বোর্ড অফ কন্ট্রোল এবং ব্রিটিশ কোম্পানির কার্যকলাপ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নজরাধীন হয়। এছাড়াও যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেলের সিদ্ধান্তকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ওয়ারেন হেস্টিংস ও বিচার ব্যবস্থা

1772 খ্রিঃ প্রতি জেলাতে দেওয়ানি ও ফৌজদারী আদালত তৈরি হয়। মুঘল শাসনের বিচার ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থা প্রচলিত হতে শুরু করে। 1773 খ্রিঃ এর রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুসারে 1774 সালে সুপ্রিম কোর্ট বা ইম্পেরিয়াল কোর্ট প্রতিষ্ঠা হয়। যার ফলে বিচারব্যবস্থাতেও প্রচুর পরিবর্তন আসে। একজন প্রধান বিচারপতি ও তিনজন বিচারপতিকে নিযুক্ত করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিল স্যার এলিজা ইম্পে।

[জেনে রাখো, কলকাতাসহ মাদ্রাজ ও বোম্বাইতেও দুটি সুপ্রিম কোর্ট গঠন করা হয়েছিল।]

বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। তিনি বিচারে সমতা রক্ষা করার জন্য ১১ জন হিন্দু পণ্ডিত ও কিছু মুসলিম পণ্ডিতের সাহায্যে হিন্দু ও মুসলিম আইনগুলির একটি সংকলন তৈরি করে তা ইংরাজিতে অনুবাদ করেন। এতে ইংরেজ বিচারকরা ভারতীয় সহকারীদের সাহায্য ছাড়াই স্বাধীনভাবেই বিচারব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারতেন।

লর্ড কর্নওয়ালিস ও বিচার ব্যবস্থা

লর্ড কর্নওয়ালিসের আমলে বিচারব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়।

প্রথমত, জেলা থেকে সদর পর্যন্ত বিচারব্যবস্থা সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়।
দ্বিতীয়ত, তিনি আইনগুলিকে সাজিয়ে গুছিয়ে কোডের আকার দেন।
তৃতীয়ত, নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে আবেদন করার অধিকার দেওয়া হয়।
চতুর্থত, এই বিচারব্যবস্থায় ভারতীয়দের সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় এবং ব্রিটিশদেরই বিচারক হওয়ার অধিকার দেওয়া হয়।


পরবর্তী পর্ব →ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সময়কালীন পরিবর্তন


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতিঃ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত প্রত্যুষা মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয় চর্চার পাশাপাশি নাচ,গান, নাটকেও প্রত্যুষা সমান উৎসাহী।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

VIII_His_3a