prani-udvid-deher-bivinno-sharirbrittiyo-prokriya-koshiyo-onganu
WB-Class-8

প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ও কোষীয় অঙ্গাণু

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – দেহের গঠন (তৃতীয় পর্ব)

আগের পর্বে আমরা জেনেছি শারীরবৃত্তীয় কাজ ও কোষীয় বিশেষত্ব সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ও কোষীয় অঙ্গাণু সম্পর্কে আলোচনা করবো।

কোষ হল প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহের গঠনগত ও কার্যগত একক যা প্রোটোপ্লাজম দ্বারা গঠিত হয়।

পূর্ববর্তী কোষ থেকে নতুন কোষ সৃষ্টিও হয়। প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়ের দেহ কোষ দ্বারা গঠিত হলেও প্রাণীকোষ এবং উদ্ভিদ কোষের গঠনের মধ্যে পার্থক্য আছে।

প্রাণী কোষের গঠন প্রকৃতি

কোন প্রাণী কোষকে প্রধানত দুটি অংশে ভাগ করা যায় যথা: কোষপর্দা বা কোষ আবরণী বা প্লাজমা মেমব্রেন এবং প্রোটোপ্লাজম। প্রোটোপ্লাজমের প্রধান অংশ দুটি হল সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস।

প্রাণী কোশের গঠন (চিত্র সৌজন্য পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ)

কোষপর্দা কি?

কোষের বাইরে যে পাতলা পর্দা দেখা যায় তাকে কোষপর্দা বা প্লাজমা মেমব্রেন বা কোষ আবরণী বলা হয়। কোষের প্রোটোপ্লাজম বা সাইটোপ্লাজমের বাইরের অংশ পরিবর্তিত হয়ে এই কোষপর্দা গঠন করে।

কোষপর্দা হল সূক্ষ্ম, স্থিতিস্থাপক, ছিদ্র যুক্ত পর্দা যা একটি কোষকে অন্য কোষ থেকে পৃথক করে রাখে।

কোষপর্দার কাজ

• কোষপর্দা কোষকে আকৃতি প্রদান করে।
• প্রোটোপ্লাজমকে রক্ষা করে।
• কোষের অন্তঃ ও বহিঃ মাধ্যমের মধ্যে অভিস্রবণ নিয়ন্ত্রণ করে।
• এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা, গলগি বডি ও অন্যান্য কোষীয় অঙ্গাণু গঠনেও সাহায্য করে।

সাইটোপ্লাজম কাকে বলে?

কোষ আবরণীর মধ্যে বর্তমান অস্বচ্ছ, অর্ধতরল, জেলির ন্যায়, দানাদার যে পদার্থ থাকে তাকে সাইটোপ্লাজম বলে। কোষের মধ্যে নিউক্লিয়াস বাদ দিলে যে অবশিষ্ট অংশ থাকে, তা সাইটোপ্লাজম। কোষের বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া সাইটোপ্লাজমের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

সাইটোপ্লাজমের প্রধান অংশ তিনটি কোষ মাতৃকা, কোষীয় অঙ্গাণু এবং কোষীয় জড়বস্তু।

নিউক্লিয়াস

কোষের প্রোটোপ্লাজমের যে অংশটি তুলনামূলকভাবে ঘন, প্রায় গোলাকার ও আবরণী দ্বারা বেষ্টিত তাকে নিউক্লিয়াস বলে। নিউক্লিয়াস কোষের অত্যাবশ্যকীয় কার্যগুলি নিয়ন্ত্রণ করে, তাই একে কোষের মস্তিষ্ক বলা হয়।

কোষ বিভাজন শুরুর আগের অর্থাৎ ইন্টারফেজ দশায় নিউক্লিয়াসের চারটি অংশ দেখা যায়, নিউক্লিয় মেমব্রেন বা পর্দা, নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস এবং ক্রোমাটিন তন্তু।

নিউক্লিয় পর্দার ভিতর নিউক্লিওপ্লাজম নামক তরল পদার্থ থাকে। নিউক্লিয়াসের মধ্যে যে ঘন গোলাকার অংশ থাকে তাকে নিউক্লিওলাস বলে, যেখানে রাইবোজোম তৈরি হয়। ক্রোমাটিন তন্তুর মধ্যে থাকে DNA।

DNA–এর full from হল Deoxyribo Nucleic Acid। DNA হল বংশগতির ধারক ও বাহক।

কোন জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য DNA–এর মাধ্যমে তার পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হয়। নিউক্লিওপ্রোটিন যুক্ত DNA–কে ক্রোমোজোম বলা হয়। মানব দেহকোষে 23 জোড়া অর্থাৎ 46টি ক্রোমোজোম থাকে।

নিউক্লিয়াস ও মাইটোকনড্রিয়া (চিত্র সৌজন্য পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ)

মাইটোকনড্রিয়া

এটি ডিম্বাকার, গোলাকার বা রডের মতন দেখতে হয়। খাদ্যে বর্তমান গ্লুকোজ, ফ্যাটি অ্যাসিড প্রভৃতি ভেঙে এটি শক্তি উৎপাদন করে, যা কোষ ব্যবহার করে।

এই কারণে একে কোষের শক্তি ভান্ডার বলা হয়।

গলগি বডি

গলগি বডি হল সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত কতগুলি চওড়া থলির মত অঙ্গাণু। উৎসেচক পরিবহণ ও ক্ষরণ এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।একে কোষের প্যাকেজিং কেন্দ্র বলে।

রাইবোজোম

রাইবোজোম হল কোষের সাইটোপ্লাজমে ছড়িয়ে থাকা পর্দাবিহীন কোষীয় অঙ্গাণু, যা প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে।

লাইসোজোম

সাধারণত প্রাণীকোষে এই অঙ্গাণু দেখা যায়। আন্তঃকোষীয় পরিপাক ক্রিয়ায় এটি সহায়তা করে। কোষ বিভাজনের সময় এরা কোষের নিউক্লিও আবরণী ভাঙতে সাহায্য করে। এটি জীবাণু এবং পুরনো জীর্ণ কোষকে ধ্বংস করে।

যে কোষে লাইসোজোম অবস্থান করে সেই কোষকে লাইসোজোম ধ্বংস করতে পারে, তাই একে আত্মঘাতী স্কোয়ার বা আত্মঘাতী থলিকা বলা হয়।

লাইসোজোম ও এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা (চিত্র সৌজন্য পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ)

এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা

এটি হল কোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত এক প্রকার জালিকার ন্যায় অঙ্গাণু। এখানে একস্তরীয় আবরণ বিশিষ্ট অজস্র সূক্ষ্ম নালিকা থাকে, যা পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে জালক সৃষ্টি করে। এই জালিকা সাইটোপ্লাজমকে অনেকগুলি অংশে ভাগ করে এবং লিপিড ও প্রোটিন পরিবহণে অন্তঃবাহকের কাজ করে।

এছাড়া এরা কোষ প্রাচীরের জন্য সেলুলোজ তৈরি করে এবং কোষের ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ নিষ্ক্রিয় করে।

উদ্ভিদ কোষের গঠন

উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের গঠন সম্পূর্ণ এক হয় না। উভয়ের গঠনগত কিছু পার্থক্য আছে। নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম, কোষপর্দা, মাইটোকনড্রিয়া প্রভৃতি অঙ্গাণুগুলি প্রাণী কোষের মতন উদ্ভিদ কোষেও দেখা যায়। আবার কোষগহ্বর, কোষপ্রাচীর, ক্লোরোপ্লাস্ট–এর মতন অংশগুলি শুধুমাত্র উদ্ভিদ কোষে দেখা যায়।

উদ্ভিদ কোশের গঠন (চিত্র সৌজন্য পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ)

কোষপ্রাচীর

এটি কোষ ঝিল্লীর বাইরে অবস্থিত সেলুলোজ, পেকটিন, লিগনিন প্রভৃতি দ্বারা গঠিত একটি অনমনীয় স্তর। কোষ প্রাচীরের প্রাথমিক কাজ হল কোষকে রক্ষা করা এবং কাঠামো গঠনে সহায়তা করা।

কোষপর্দা বা কোষ ঝিল্লি

এটি কোষপ্রাচীরের ভিতরে অবস্থিত অর্ধভেদ্য পর্দা, যা কোষে বিভিন্ন পদার্থের প্রবেশ ও নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করে।

কোষগহ্বর

প্রাণী কোষে কিছু ক্ষুদ্র গহ্বর বা শূন্যস্থান সাধারণত দেখা যায়। তবে উদ্ভিদ কোষে এই কোষগহ্বর আকারে খুব বড় হয়। এই গহ্বর আকারে ক্রমশ বড় হয় এবং অবশেষে দেখা যায়, কোষের মাঝে পুরো গহ্বর আর নিউক্লিয়াসসহ সাইটোপ্লাজম কোষের চারিদিকের প্রান্ত বরাবর অবস্থান করছে।

উদ্ভিদ কোষে কোষগহ্বর বেষ্টন করে সাইটোপ্লাজমের এই বিশেষ অবস্থান প্রাইমরডিয়াল ইউট্রিকল নামে পরিচিত।

প্লাস্টিড

এগুলি সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় স্টার্চ সঞ্চয় করতে প্রয়োজন হয়। প্লাস্টিড একাধিক প্রকার হয়-

ক) লিউকোপ্লাস্ট

উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষে অক্ষম টিস্যুতে এটি পাওয়া যায়। এগুলি প্রোটিন, লিপিড ও স্টার্চ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান

খ) ক্লোরোপ্লাস্ট

এতে সালোকসংশ্লেষের জন্য সবুজ বর্ণের রঞ্জক পদার্থ ক্লোরোফিল থাকে। ক্লোরোফিল সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ও জল থেকে শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে।

গ) ক্রোমোপ্লাস্ট

এগুলিতে লাল, কমলা ও হলুদ রঙের রঞ্জক থাকে, যা ফল ও ফুলের বর্ণ তৈরি করে।

[এই প্রবন্ধে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক প্রকাশিত অষ্টম শ্ৰেণীর পাঠ্য পুস্তক ‘পরিবেশ ও বিজ্ঞান’ থেকে কিছু বৈজ্ঞানিক চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এটি শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে করা হয়েছে, এর কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য JUMP Magazine কর্তৃপক্ষের নেই।]

পর্ব সমাপ্ত।পরবর্তী পর্ব →বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কোষের উপর প্রভাব


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতিঃ

বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা।তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

VIII_science_12c