study-routine
পরীক্ষা প্রস্তুতি

পড়ার রুটিন



আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে সারাবছর কিছু ‘কমন’ প্রশ্ন পাই, তা হল –

কিভাবে পরিকল্পনা মাফিক পড়াশোনা করা যায়?

কিভাবে পড়ার রুটিন তৈরি করবো?

এই প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন।

প্রথমে বুঝে নিতে হবে যে, পড়াশোনায় সাফল্যের জন্য প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা বা একটা রুটিন তৈরি করা কেন প্রয়োজন?

বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিটা ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি গৃহশিক্ষকের সাহায্য নিয়ে থাকে। এবার নিয়মিত বিদ্যালয়ের পড়ার পাশাপাশি, গৃহশিক্ষকের পড়ার জন্য আলাদা সময় বের করতে হয়। এর ফলে, নিজের পড়ার সময়টা অনেকটাই কমে যায়।

কিন্তু পরীক্ষায় সাফল্য পাবার জন্য, প্রতিদিন নিয়ম করে পরিকল্পনামাফিক নিজস্ব পড়া চালিয়ে যাওয়া ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি নিয়ে কিছু আলোচনা নীচে দেওয়া হল।

প্রতিদিনের পড়ার রুটিনঃ

নিয়মিত একটা রুটিন ফলো করলে পড়াটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

অঙ্কঃ প্রতিদিনের রুটিনে অঙ্ক রাখতেই হবে। অঙ্ক এমন একটি বিষয় যা অভ্যাস না করলে দক্ষতা কমে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। নতুন অধ্যায় বুঝতে না পারলে পুরানো অধ্যায়ের অনুশীলনী আবার অভ্যাস করা বা টেস্ট পেপারের থেকে নতুন অঙ্ক কষা যেতে পারে। প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা অঙ্ক অনুশীলন করতেই হবে।

বিজ্ঞানঃ জীবন বিজ্ঞান ও ভৌত – বিজ্ঞান দুটি বিষয়ের মধ্যে অন্তত একটি বিষয় প্রতিদিন পড়তেই হবে। পুরানো অধ্যায় আরো একবার দেখে নেওয়া এবং নতুন অধ্যায় নিজে থেকেই শুরু করা যেতে পারে।

বাংলাঃ একদিন অন্তর ইংরাজি বা বাংলা পড়া যেতে পারে। সময়ের অভাবে বাংলা ব্যাকরণ অনেক সময় গুরুত্ব পায় না। এই সময়টা ব্যাকরণের ফাঁকগুলি খুঁজে ভালো করে মেরামত করা যেতে পারে।

ইংরাজিঃ গ্রামার নিয়মিত অভ্যাস করো। এছাড়া পুরানো টেস্ট পেপার বা প্রশ্নের বই থেকে একদিন অন্তর একটি করে Unseen passage solve করো। Vocabulary গুলো অবশ্যই বিশেষ মনযোগ দিয়ে করবে, দরকার হয়ে dictionary সাহায্য নাও। পুরানো পাঠ্যগুলো আরো একবার ভালো করে পড়ে নাও।

ইতিহাস ও ভূগোলঃ এই দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি প্রতিদিন অভ্যাস করতেই হবে। ইতিহাস একটি অধ্যায় আর একটি অধ্যায়ের সাথে জড়িত। ফলে পরীক্ষার আগে যদি পুরো বইটা একবার পড়ে ফেলতে পারো তাহলে পরবর্তী সময়ে বুঝতে খুব সুবিধা হবে। এছাড়া ভূগোলের ক্ষেত্রে সপ্তাহে অন্তত একদিন সিলেবাসের সব ম্যাপ পয়েন্টিং করে রাখতে পারো।

তোমাদের সুবিধার জন্য নীচে একটা plan করে দেওয়া হল। পড়াশোনার রুটিনের এই ছকে প্রতি সপ্তাহ হিসাবে তোমার অধ্যায়ের নাম নিজেরা লিখে নিও। আর একটা বিষয়, শুধু পড়াশোনার রুটিন তৈরি করলেই হবে না সেই প্ল্যানের পর্যালোচনা করাটা কিন্তু খুব জরুরী।

study-routine-format

MCQ প্রশ্নের সমাধান

MCQ ধরনের প্রশ্ন এবং এক কথায় উত্তর আজকের সময়ের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।  এই ব্যাপারে একটা কথা বলে রাখা ভালো, তোমাদের মধ্যে অনেকেই যখন টেস্ট পেপার বা প্রশ্নের বই থেকে MCQ প্রশ্নের সমাধান করো, তখন ঐ প্রশ্নপত্রের উপরেই দাগ দিয়ে উত্তর লিখে ফেল।

এটা ভুল অভ্যাস।

এর বদলে, টেস্ট পেপার বা অন্য কোন প্রশ্নের বই থেকে তোমরা বিষয় ও অধ্যায় ভিত্তিক ভাবে আলাদা আলাদা করে প্রশ্নগুলির সমাধান লিখে রাখতে পারো। এতে যেমন তোমাদের অভ্যাস বাড়বে ঠিক তেমনই পরীক্ষার আগে রিভিশন করতেও দারুণ কাজ দেবে।


[আরো পড়ো – মধ্যমিকে কিভাবে নম্বর বাড়ানো যায়?]


পড়া ভালো করে বোঝা

হয়তো যখন পড়া বোঝানো হয়েছিল, তখন বুঝতে পেরেছিলে। কিন্তু নিজে পড়তে বসে হয়তো দেখলে যে এখন আর পড়া বুঝতে পারছো না।

এই সময়ে পড়তে গিয়ে যে যে অংশগুলো বুঝতে পারছো না বা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে সেই অংশগুলো একটি আলাদা খাতায় লিখে রাখো। এতে পরে শিক্ষক / শিক্ষিকাদের জিজ্ঞাসা করে ব্যাপারগুলি খুব সহজেই বুঝে নিতে পারবে। শিক্ষক / শিক্ষিকাদের সঠিক ভাবে সমস্যা গুলি না বলতে পারলে তারা তোমার সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না।

এছাড়া JUMP ম্যাগাজিনের অধ্যায় ভিত্তিক আলোচনাগুলিও পড়ে নিতে পারো, তোমাদের জন্য নবম ও দশম শ্রেণির আলোচনার লিঙ্কগুলি দেয়া রইল।


নবম শ্রেণির লেখাগুলি বিনামূল্যে পড়ে নাও । দশম শ্রেণির লেখাগুলি বিনামূল্যে পড়ে নাও

প্রশ্ন উত্তর লেখা

প্রতিদিন যেমন পড়ার অভ্যাস করতে হবে তেমনই লেখার অভ্যাসটাও চালিয়ে যেতে হবে। তাই একটা সময় আলাদা করে রাখতে হবে প্রশ্ন – উত্তর লেখার জন্য। এই সময়ে নিজেই কিছু প্রশ্ন বেছে নিয়ে তার উত্তর লেখা অভ্যাস করতে পারো। লেখা হয়ে গেলে নিজের লেখা উত্তর, নিজে দুই – একবার পড়লেই নিজেই ভুলগুলি ধরতে পারবে।

সময়ের উপযোগিতা

পড়াশোনা করার পরেও যে দিনের বেশ কিছুটা সময় তোমাদের বেঁচে যায় তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আমাদের অনুরোধ, সময় নষ্ট না করে এই সময়কে যত কাজে লাগাতে পারবে ততটাই তোমাদের লাভ। যেমন ধরো, কোন বই পড়া হয়নি – এই সময়ে পড়ে ফেলতে পারো, লেখালিখি করতে ভালো লাগে – এই সময়ে জমিয়ে একটা গল্প বা কবিতা লিখতে পারো, রান্না করতে ভালো লাগে – একদিন বিকালে দারুণ জল-খাবার রান্না করে বাড়ির সবাইকে চমকে দিতে পারো।

অর্থাৎ, যা খুশী করতে পারো কিন্তু মোবাইলে গেম খেলে বা বোকা-বোকা ভিডিও দেখে সময় নষ্ট করো না।

একটা কথা মাথায় রাখবে, বিশ্বের ব্যাস্ততম মানুষ এবং একজন অলস ব্যাক্তি, এদের দুজনের জন্যই এক দিনের সময়কাল 24ঘণ্টা। শুধুমাত্র সময়ের সঠিক উপযোগিতাই এদের দুজনের মধ্যে ফারাক গড়ে দিয়েছে। তাই ছোটবেলা থেকে সময়কে যতটা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবে, আগামী দিনের জন্য ততটাই সুবিধা হবে।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –