বাংলা – নবম শ্রেণি – ইলিয়াস (গদ্য)
লেখক পরিচিতিঃ লিও তলস্তয়
পুরো নাম হল Lev Nikolayevich Tolstoy, সংক্ষেপে ওনাকে লিও তলস্তয় বলা হয়। উনি ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ৯ই সেপ্টেম্বর এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশবে গৃহে এবং পরবর্তীকালে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৮৫১ সালে তার অগ্রজ Caucasus এর সঙ্গে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে সৈন্য হিসাবে তিনি যোগদান করেন। তিনি এই যুদ্ধের সময় এগারো মাস Sevastopol-এ ছিলেন। এই সময়েই তিনি তার তিন খণ্ডের আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড – ‘চাইল্ডহুড’ লেখেন। পরবর্তীকালে তিনি আত্মজীবনীর বাকি দুটি খণ্ড ‘বয়হুড’ ও ‘ইয়ুথ’ লেখেন। তার কয়েকটি বিখ্যাত উপন্যাস রাশিয়ার উপর ফ্রান্সের আক্রমণ নিয়ে – ‘ওয়্যার অ্যান্ড পিস’ (war and peace), রাশিয়ার সামাজিক প্রেক্ষাপটে – অ্যানা কারেনিনা (Anna Karenina), দার্শনিক চিন্তায় উদ্বুদ্ধ ‘দি কিংডম অফ গড ইজ উইদিন ইয়ু’ (The kingdom of God is within you) ইত্যাদি উল্লেখ্য। তিনি ছিলেন সর্বকালের অন্যতম একজন সেরা লেখক। তার লেখা বহু মনিষীকে (যেমন মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়ার ইত্যাদি) কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
নবম শ্রেণির পাঠ্য ‘ইলিয়াস’ গল্পটি লিও তলস্তয় রচিত ‘টুয়েন্টি থ্রি টেলস’ (Twenty three tales) গল্প সংকলনের অন্তর্গত। এই ছোট গল্পটির বাংলা তর্জমা করেছেন শ্রী মণীন্দ্র দত্ত মহাশয়।
[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]
ইলিয়াস গল্পের সারাংশ
লিও তলস্তয় রচিত ‘ইলিয়াস’ ছোটগল্পটি একজন পরিশ্রমী, কর্মঠ ভালমানুষের জীবন উপলব্ধির কাহিনী।
গল্পের কেন্দ্রবিন্দু আঠেরোশ শতাব্দীর রাশিয়ার উফা প্রদেশ। এই প্রদেশের একটি পশুপালক পরিবারের সদস্য ছিলেন ইলিয়াস। ইলিয়াসের বিয়ের মাত্র একবছর পর তার বাবা মারা যান এবং পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব এসে পড়ে তার উপর। ইলিয়াসের কঠোর পরিশ্রমের ফলে তার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি, সাতটি ঘটকী, দুটি গরু ও কুড়িটি ভেড়া মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরে পরিবর্তিত হয়ে দুশো ঘোড়া, দেড়শো গরু-মোষ আর বারোশো ভেড়া হয়। ইলিয়াসের এই ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতেও চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয় না। ইলিয়াস ও তার স্ত্রী শাম-শেমাগি সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করে, অতিথিদের যথাসাধ্য সেবা করে।
ক্রমে ইলিয়াসের পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়। তার এক পুত্র মারামারিতে মারা যায় ও অন্য পুত্র বাবার আদেশ অমান্য করার ফলে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়। এছাড়া দুর্ভিক্ষ, মড়কে তার পালিত পশুরা মারা যায় ও ‘কিরবিজ’ উপজাতির ডাকাতির ফলে তার সবচেয়ে ভালো ঘোড়াগুলি খোয়া যায়। বৃদ্ধ দম্পতি অবশেষে সব বিক্রি করে, শুধুমাত্র একটি বোঁচকা সম্বল করে লোকের বাড়ি-বাড়ি কাজ করে অন্নসংস্থান করা শুরু করে।
এক মধ্যবিত্ত প্রতিবেশী ‘মহম্মদ শা’ ইলিয়াসের দুর্দশা দেখে তাকে করুণাবশত তাকে ও তার স্ত্রীকে তার বাড়ির কাজে নিয়োগ করেন। প্রথমে কষ্ট হলেও অদম্য বৃদ্ধ দম্পতি পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়। একদিন মহম্মদ শায়ের বাড়ি অথিতি সমাগম হয় ও কয়েকজন অথিতি ইলিয়াসের পূর্ব পরিচয় জানতে পেরে তাদের মনের অবস্থার কথা জানতে চায়।
সকলকে আশ্চর্য করে ইলিয়সের স্ত্রী শাম-শেমাগি ব্যক্ত করে যে –
তারা এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছে, তারা এখন সত্যিকারের সুখ খুঁজে পেয়েছে। কারণ এখন তাদের এখন আর কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা নেই। তারা যখন ধনী ছিল, তখন লোকনিন্দার ভয়ে অথিতিদের যথাসাধ্য সেবা করতে হত, মজুরেরা ফাঁকি দিচ্ছে কিনা তাতে কড়া নজর রাখতে হত, পশুরা ঠিক মতো আছে কিনা এই ভেবে সারা রাত দুশ্চিন্তা হত, মাঝে মাঝে পারিবারিক অশান্তিও হত। এতকিছুর মধ্যে নিজেদের একসঙ্গে সময় কাটানো, ঈশ্বরের প্রার্থনা, নিজেদের অন্তরের কথা চিন্তার কোনো অবকাশ ছিল না। অথচ এখন কপর্দকহীন অবস্থায় কোন প্রকার দুশ্চিন্তা নেই, মনিবের যথাসাধ্য সেবাই হল প্রাধান কাজ। নিজদের মধ্যে বিরোধ নেই, প্রয়োজনীয় খাবারের অভাব নেই, ঈশ্বরের প্রার্থনা করার সময় আছে। তাই ধনী অবস্থায় নয়, বরং পঞ্চাশ বছর ধরে সুখ খুঁজে আজ আমরা সত্যিকারের সুখ খুঁজে পেয়েছি।
JUMP ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখাগুলির বিনামূল্যে WhatsApp আপডেট পান।?
বৃদ্ধ দম্পতির কথার অন্তর্নিহিত মানে বুঝতে না পেরে সবাই হেসে উঠলেও মোল্লা তাদের কথার সমর্থনে বলেন, ইলিয়াস ও তার স্ত্রী যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলিই জীবনের সার সত্য এবং পবিত্র গ্রন্থে এই কথাগুলিই লেখা আছে।
[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌত বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবনবিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]
ইলিয়াস গল্পের মূল বক্তব্য
বৃদ্ধ ইলিয়াস ও তার স্ত্রীয়ের কথা আপাতভাবে হাসির উদ্রেক করলেও, বিষয়টি ভালোভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় – সম্পদ ও বৈভব থেকে মানুষের মনের শান্তি পাওয়া যায় না, বরঞ্চ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনই শান্তির বার্তা নিয়ে আসে। আপন লোকেদের সাথে সময় কাটানো, ঈশ্বরচিন্তা ও আত্মচিন্তাই মানুষকে সঠিক শান্তি দিতে পারে ও মনকে আনন্দে ভরে তুলতে পারে।
জীবনে কিছুই চিরস্থায়ী নয়। তাই সুখের মতো দুঃখকেও হাসিমুখে মেনে নিতে পারলেই শান্তির সন্ধান পাওয়া সম্ভব।
প্রধান চরিত্রগুলির চারিত্রিক বর্ণনা
ইলিয়াসঃ গল্পের প্রধান চরিত্র ইলিয়াস। ইলিয়াস জীবনের দুটি দিকই দেখেছে, স্বাচ্ছন্দ্য এবং অভাব। গল্পে তার চরিত্রের যে দিকগুলি দেখা যায় সেগুলি হল-
- পরিশ্রমী ও কর্মঠঃ শুধুমাত্র তার কঠোর পরিশ্রমের ফলে তার বাবার রেখে যাওয়া সামান্য সম্পত্তি থেকে বিপুল সম্পত্তি লাভ করেছিল। সে সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করত।
- অতিথি বাৎসল্যঃ ইলিয়াস তার সকল অথিতিদের সাধ্য মত সেবা করত ও তাদের উপহার দিত। যে-কোনো অতিথি এলেই তাকে নিজে হাতে কুমিস, চা, শরবৎ আর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করত।
- অদম্য মানসিকতা ও ঈশ্বর বিশ্বাসঃ প্রবল পারিবারিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলেও, সে কখনো জীবন ও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারায়নি। সকল অবস্থাই সে হাসি মুখে মেনে নিয়েছে।
- সৎ ও নিষ্ঠাবানঃ এক সময়ে সে ছিল ধনী ও বহু মজুরের প্রভু। সময়ের ফেরে সে যখন গ্রাসাচ্ছাদন করার জন্যে অপরের বাড়ি মজুরের জীবনযাপন করছে, তখনও সে একই প্রকার সৎ, নিষ্ঠাবান ও কর্মঠ।
- শাম-শেমাগিঃ প্রধান চরিত্র ইলিয়াসের স্ত্রী হলেন শাম-শেমাগি। গল্পে তার চরিত্রের যে দিকগুলি দেখা যায় সেগুলি হল-
- কর্তব্য পরায়নতাঃ তিনি সর্বদা তার স্বামীকে অনুসরণ করেছেন ও সুখে এবং দুঃখের সময়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
- কর্মঠঃ স্বামীর সুখের সময় যেমন তিনি স্বামীর সঙ্গে দিন-রাত কাজ করেছেন আবার তেমনি বৃদ্ধ অবস্থাতেও মহম্মদ শায়ের বাড়িতে যথাসাধ্য কাজ করেছেন।
ইলিয়াস গল্পের আলোচনা শুনুন ↓
মহম্মদ শাহঃ প্রধান চরিত্র ইলিয়াসের মধ্যবিত্ত প্রতিবেশী মহম্মদ শাহ। গল্পে তার চরিত্রের যে দিকগুলি দেখা যায় সেগুলি হল-
- পরোপকারীঃ ইলিয়াসের দুঃখের সময়, তিনি ইলিয়াস ও তার স্ত্রীকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন।
- বিনয়ীঃ মহম্মদ শাহের সাথে ইলিয়াস ও তার স্ত্রীয়ের প্রভু – ভৃত্যের সম্পর্ক থাকলেও, তিনি কখনই বৃদ্ধ দম্পতির সাথে খারাপ ব্যবহার বা প্রভুসুলভ আচরণ করতেন না।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ
- কুমিস – ভেড়ার দুধ থেকে প্রস্তুত পানীয়
- বাসকি – রিপাবলিক অফ বাসকরতোস্থানের বাসিন্দা
- বোলবোলাও – প্রভাব প্রতিপত্তি
- কিরবিজ – রাশিয়ার একটি উপজাতি
- মোল্লা – মুসলমানদের ধর্মাচরণে সহায়ক পণ্ডিত ব্যাক্তি
দেখতো নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে পারো কি না?
- মহম্মদ শা-র বাড়িতে বৃদ্ধ দম্পতি সুখি কেন?
- “ঈশ্বর আমাদের কাছে সত্যকে উন্মুক্ত করেছেন” কোন সত্যের কথা বলা হয়েছে?
- ইলিয়াসের অবস্থা কিভাবে খারাপ হয়ে পড়ল?
- ইলিয়াস কে? তার সম্পর্কে কি জানো?
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX_Ben_ilias
Nice
Thanks