ammonia
Madhyamik

অ্যামোনিয়া (Ammonia)

শ্রেণি- দশম | বিষয় – ভৌতবিজ্ঞান | অধ্যায় – পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রাসায়ন (অ্যামোনিয়া)

অ্যামোনিয়ার কথা

যদি তুমি কোনোভাবে অ্যামোনিয়াকে বিশ্লিষ্ট করতে পারো, তবে দেখতে পাবে যে তার মধ্যে 3 ভাগ হাইড্রোজেন ও এক ভাগ নাইট্রোজেন আছে।

কিন্তু কেন? তিনভাগ হাইড্রোজেনই কেন 1 ভাগ নাইট্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করলো? তার উত্তর পাওয়া যায় এদের ইলেক্ট্রন বিন্যাসে।

N-এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক 7, অর্থাৎ এই মৌলের পরমাণুর কেন্দ্রকে 7টি করে প্রোটন থাকবে। যেহেতু প্রোটন ও ইলেক্ট্রনের চার্জ সমান ও বিপরীত, তাই বলা যায় নিস্তড়িৎ অবস্থায় 7টি ইলেক্ট্রনই N এর কক্ষপথে ঘোরাফেরা করবে। কিন্তু যেকোনো মৌলের প্রথম কক্ষপথে সর্বোচ্চ 2টি ও পরবর্তী দ্বিতীয় কক্ষপথে 8টি ইলেক্ট্রন থাকতে পারে। সুতরাং N এর ইলেক্ট্রন বিন্যাস হবে – 7N = 2, 5 ।

এখন যেকোনো পরমাণুর উদ্দেশ্য স্থায়ীত্ব লাভ এবং তার জন্য তারা নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় গ্যাস He, Ne, Ar, Kr, Xe বা Rn এর ন্যায় ইলেক্ট্রন বিন্যাস পাওয়ার চেষ্টা করে।

He তে সর্ব্ববহিঃস্থ কক্ষপথে 2টি ও বাকিতে 8 টি ইলেক্ট্রন বর্তমান থাকার কারণে এদের ইলেক্ট্রন বিন্যাস যুগ্মপূর্ণ বা অষ্টকপূর্ণ বলা হয়। খেয়াল করে দেখো N-এর দ্বিতীয় কক্ষপথের অষ্টক পূর্তিতে 3টি অতিরিক্ত ইলেক্ট্রন লাগে।

ঠিক তেমনই H-এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক 1। সুতরাং আগের যুক্তি অনুসারে H-এর ইলেক্ট্রন বিন্যাস 1H = 1।

jump magazine plus

এই মৌলের পরমাণুর অষ্টক পূর্তির শর্ত হলো 1টি ইলেক্ট্রন গ্রহণ। (যদিও H-এর একমাত্র কক্ষপথে সর্বোচ্চ দুটি ইলেক্ট্রন জায়গা দখল করে, এবং একটি ইলেক্ট্রন সংগ্রহ করে H-এর বিন্যাস He-এর মতো হলে অষ্টক নয় যুগ্ম পূর্তি হয়, তবুও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এই ঘটনা অষ্টক পূর্তির অনুরূপ হওয়ার কারণে এর যুগ্মপূর্তিকে অষ্টকপূর্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়)।

তাই একটি N তিনটি H এর সঙ্গে 1টি করে ইলেক্ট্রন সমবন্টন করে ব্যবহার করে ও উভয়ের অষ্টকপূর্তি ঘটে।

অ্যামোনিয়া

অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতি

রসায়নাগারে বিজ্ঞান:

যেকোনো অ্যামোনিয়াম লবণের ভেতর অ্যামোনিয়া লুকিয়ে থাকে। অ্যামোনিয়া একটি ক্ষারকীয় গ্যাস।

তাই এটি যেকোনো অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়ার ফলে অ্যামোনিয়াম লবণ তৈরী করে। এখন সেই লবণের মধ্যে তাহলে অ্যামোনিয়া আর অ্যাসিডটি যৌথভাবে বর্তমান। সুতরাং আমি কোনো তীব্র ক্ষারক ব্যবহার করে যদি অ্যামোনিয়াম লবণটিকে উত্তপ্ত করি তবে সেই লবণ থেকে অ্যাসিডটি বেরিয়ে এসে নতুন ক্ষারকটির সাথে লবণ ও জল উৎপন্ন করবে। ফলে অ্যামোনিয়াটি একলা পড়ে থাকবে। আর আমরা তখন সেই গ্যাসটিকে বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা সংগ্রহ করে নিতে পারবো।

NH4A + BOH = NH3 + BA + H2O (এখানে A যেকোনো অ্যাসিডের ঋণাত্মক আয়ন ও B যেকোনো ক্ষারকের ধনাত্মক আয়ন। উদা: A = Cl হলে NH4A = NH4Cl B = K হলে BOH = KOH )

NH4A = NH3+ HA

HA + BOH = BA + H2O

উভয় সমীকরণকে যোগ করে পাই NH4A + BOH = NH3 + BA + H2O (HA উভয় লাইন থেকে কাটাকুটি হয়ে গেলো ‘=’ চিহ্নের দুপাশে ছিল বলে)

2 NH4Cl  + Ca(OH)2 = 2 NH3 + Ca(OH)2 + 2 H2O

NH3-এর আণবিক ভর 17। সুতরাং বাষ্প ঘনত্ব (হাইড্রোজেন অণুর তুলনায় কতগুণ ভারী) 8.5। সেখানে বায়ুর বাষ্পঘনত্ব 14.4, সুতরাং এটি বায়ুর থেকে হাল্কা!

তাই একে বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা সংগ্রহ করা হয়। অ্যামোনিয়া জলে তীব্রভাবে দ্রাব্য। তাই এটিকে জলের মধ্যে দিয়ে চালনা করে গ্যাস হিসাবে সংগ্রহ করা যায় না। আমরা যদি অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড NH4OH বানানোর চেষ্টা করতাম, তবে জলের মধ্যে এটিকে সরাসরি দ্রবীভূত করতাম।

পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া উৎপাদন
পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া উৎপাদন

অ্যামোনিয়ার শুষ্ককরণ

এই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সামান্য জল উৎপন্ন হয় যেটি দ্রাব্যতা ও উত্তাপের কারণে NH3-র সাথে সাথে বাষ্পীভূত হয়। সেটিকে দূর করতে পোড়াচুন CaO-র সাহায্য নেওয়া হয়। অন্যান্য শুষ্ককরণ পদ্ধতিতে আম্লিক H2SO4 P2O5এর সাহায্য নেওয়া হয় যা ক্ষারকীয় NH3র সাথে বিক্রিয়া করে ফেলবে। তাই H2SO4 ও P2O5 দ্বারা NH3কে শুষ্ক করা হয়না। CaCl2র সাথে NH3 যুগ্ম যৌগ গঠন করে ফেলে। তাই বহুলপ্রচলিত CaCl2 দ্বারাও NH3কে শুষ্ক করা যায় না!

jump magazine plus

অ্যামোনিয়ার ধর্ম

ভৌত ধর্ম বর্ণহীন ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত ক্ষারকীয় গ্যাস। বায়ুর থেকে হালকা ও জলে তীব্রভাবে দ্রাব্য। আন্তঃরাণবিক আকর্ষণবল আছে, তাই চাপের প্রয়োগে তরলে পরিণত করা যায়! এর জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে। এমনকি গ্যাসটি স্বয়ং সিক্ত লিটমাস কাগজকে নীল করে দেয়।

Liquor বা লাইকার (লিকার) অ্যামোনিয়া কি?

Liquor বা লাইকার (লিকার) অ্যামোনিয়া হলো NH3র জলীয় দ্রবণ। সম্পৃক্ত অবস্থায় এটি 35% (w/w) গাঢ়ত্বের দ্রবণ তৈরী করে। এক লিটার জলে মোট 308 গ্রাম NH3 দ্রবীভূত থাকে। উচ্চ উষ্ণতায় NH3-র দ্রাব্যতা কমতে থাকে ও ঠাণ্ডায় বৃদ্ধি পায়। ফলে এর দ্রবণের বোতলকে উচ্চ উষ্ণতায় রেখে খোলা উচিত নয়। ওই উষ্ণতার ফলে অদ্রাব্য অতিরিক্ত গ্যাস যে অতিরিক্ত চাপ তৈরী করে তার ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ল্যাবরেটরিতে অসম্পৃক্ত 25% (w/w) গাঢ়ত্বের দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এর তীব্রতা বেশি হয়না এবং অসম্পৃক্ততার কারণে সহজে গ্যাস বেরোতে পারে না।

Liquor অ্যামোনিয়া আর liquid অ্যামোনিয়া এক জিনিস নয়। Liquor অ্যামোনিয়াতে OH আয়নের উপস্থিতিতে সেটি তীব্র ক্ষারের ন্যায় আচরণ করে। Liquid অ্যামোনিয়াতে জলের অনুপস্থিতিতে কোনো আয়ন তৈরী হয়না। তার ফলে এটির মৃদুক্ষার ধর্ম দেখা যায়।

অ্যামোনিয়ার রাসায়নিক ধর্ম 

অ্যাসিড বিক্রিয়া 

NH3+ HA = NH4A

এক্ষেত্রে NH3টি অ্যাসিডটির থেকে অসমযোজ্যতার দ্বারা একটি H+ সংগ্রহ করে NH4+ আয়ন বানায় এবং সেই আয়ন Aএর সাথে তীব্র তড়িদাকর্ষণের দ্বারা NH4A লবণ তৈরী করে।

NH3+ HCl = NH4Cl, NH3+ HNO3= NH4NO3, 2 NH3+ H2SO4 = (NH4)2SO4

বিজারণ বিক্রিয়া 

2 NH3+ 3 CuO = 3Cu + N2 + 3H2O

এখানে NH3-র হাইড্রোজেনগুলি জারক দ্রব্যের O সংগ্রহ করে H2O তৈরির চেষ্টা করে। এবং তার ফলে N2 মুক্ত হয়ে উড়ে যায় এবং জারকের বাকি অংশ পৃথক হয়ে অধঃক্ষিপ্ত হয়।

4 NH3+ 5 O2 = 4 NO + 6 H2O (অ্যামোনিয়ার দহন)

এখানে Pt অনুঘটকের উপস্থিতিতে 800oC তে বিক্রিয়া ঘটালে O বিয়োজিত হয়ে N ও H উভয়ের সাথে যুক্ত হয়ে NO ও H2O তৈরী করে।

প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া 

BA + NH4OH = NH4A + BOH

বিভিন্ন দুর্বল ধাতুর তীব্র অ্যাসিড লবণ জলে দ্রাব্য। Liquor অ্যামোনিয়া সেই ধাতুর ধনাত্মক অয়নের সাথে বিক্রিয়া করে দুর্বল ক্ষারক ধাতব হাইড্রোক্সাইড অধঃক্ষিপ্ত করে। নিজে তীব্র অ্যাসিডটির অ্যামোনিয়াম লবণে পরিণত হয়ে দ্রবীভূত হয়ে থাকে।

FeCl2 + 2 NH4OH = 2 NH4Cl + Fe(OH)2। Fe(OH)2 সবুজ অধঃক্ষেপ তৈরী করে। এখানে ধাতুর জায়গায় অ্যামোনিয়াম অয়নের থেকে তীব্র ক্যাটায়ন সৃষ্টিকারী ধাতু K, Na, Ba, Li থাকলে বিক্রিয়াটি হয় না। কারণ সেটি সহজে OH আয়নের সাথে অধঃক্ষিপ্ত হয়না।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

অসমযোজ্যতা 

বিভিন্ন ধাতব লবণের অধঃক্ষেপ যেমন CuSO4, ZnCl2, AgCl প্রভৃতি Liquor অ্যামোনিয়ার সাথে বিক্রিয়া করে পুনরায় দ্রবীভূত হয়। কারণ এর ধাতব আয়ন অ্যামোনিয়ার সাথে অসমযোজী বন্ধন করে জটিল যৌগ তৈরী করে। সেই জটিল যৌগ জলে দ্রাব্য।

CuSO4+ 4 NH4OH = [Cu(NH3)4]SO4 + 4 H2O

ZnCl2+ 4 NH4OH = [Zn(NH3)4]Cl2 + 4 H2O

AgCl + 2 NH4OH = [Ag(NH3)2]Cl + 2 H2O

অ্যামোনিয়ার সনাক্তকরণ

অ্যামোনিয়া দ্রবণকে নেসলার বিকারক K2[HgI4] এর জলীয় দ্রবণে যোগ করলে বাদামি বা তামাটে অধঃক্ষেপ তৈরী হয়। এটিই অ্যামোনিয়ার সনাক্তকরণ।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবন বিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান |

অ্যামোনিয়ার শিল্প উৎপাদন

হেবার পদ্ধতিতে Fe চূর্ণ ও Mo এর উপস্থিতিতে বা অ্যালুমিনা (Al2O3) ও K2O-এর মিশ্রণের সহযোগীতায় 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও 550oC-এ 1 ভাগ নাইট্রোজেন ও 3 ভাগ হাইড্রোজেন সরাসরি যুক্ত হয়ে অ্যামোনিয়া তৈরী করে N2 + 3H2 = 2NH3

অ্যামোনিয়ার ব্যবহার

ইউরিয়া, সার, রাসায়নিক (Na2CO3 HNO3 এবং ওষুধ) প্রস্তুতিতে ও শীতক হিসেবে অ্যামোনিয়া আর অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহৃত হয়।

2NH3 + CO2 = NH2COONH4

NH2COONH4 (+তাপ) = H2O + CO(NH2)2 (ইউরিয়া)

এই পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → হাইড্রোজেন সালফাইড

jump magazine plus



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –