শ্রেণি – দশম | বিষয়: ভৌত বিজ্ঞান । অধ্যায়: চলতড়িৎ (ষষ্ঠ পর্ব)
আমরা আগেই একটা ব্যপারের লক্ষ্য করেছিলাম যে অন্য কোন শক্তি যদি বর্তনীর মধ্যে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় তবে বলা যায় যে সেখানে তড়িৎচালক বল কাজ করছে ।
এই তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশ প্রকৃত পক্ষে বর্তনীতে তড়িৎচালক বল উদ্ভবের একটি প্রক্রিয়া।
মাইকেল ফ্যারাডে প্রথম এই তত্ত্বের আবিষ্কার করেন এবং ম্যাক্সওয়েল এই তত্ত্বের গাণিতিক ব্যাখ্যা দেন।
ধরা যাক নিচের চিত্রের মত দুটি চুম্বকের বিপরীত দুটি মেরুকে মুখোমুখি রাখা আছে।
এই অবস্থায় চুম্বকীয় বলরেখা গুলি উত্তর মেরু থেকে নির্গত হয়ে সমান্তরাল ভাবে অন্য চুম্বকটির দক্ষিণ মেরুর দিকে ধাবিত হবে অর্থাৎ চুম্বক দুটির মাঝে অভিন্ন একটি চুম্বক ক্ষেত্র থাকবে। এখন এই অভিন্ন চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে একটি চৌম্বক পদার্থ নির্মিত পাত নীচের চিত্রের মত রাখা হল।
সুতরাং চৌম্বক বলরেখা গুলি ঐ চৌম্বক পদার্থের পাতটি ভেদ করে যাবে।
এখন ঐ চৌম্বক পদার্থের পাতটির প্রতি একক ক্ষেত্রফলে কতগুলি বলরেখা লম্বভাবে ভেদ করছে তাকে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স বলে।
এই ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের পরিমান যদি ঐ চৌম্বক পদার্থের পাতটিতে পরিবর্তন করা যায়, তবে ঐ পাতটিতে তড়িৎ চালক বলের উদ্ভব হবে।
ধরা যাক প্রাথমিক অবস্থায় ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স ছিল φ1এবং t সময় পরে তা পরিবর্তিত হয়ে হল φ2 ।
এই সূত্রটি লেঞ্জের সুত্র নামেও পরিচিত।
লেঞ্জের সূত্রটিতে দেখা যাচ্ছে যে একটি ঋণাত্মক চিহ্ন সমীকরণের ডানদিকে ব্যবহার করা হয়েছে। এর কারণ হল, যে কারণে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটে, আবিষ্ট তড়িৎ চালক বল সেই কারণকে বাধা দেয়। তা যদি না হত, তবে বাইরে থকে যেকোন শক্তি প্রয়োগ ছাড়া নিজেই ঐ চৌম্বক পদার্থের পাতে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটে তড়িৎ চালক বলের উদ্ভব ঘটত, যা শক্তি সংরক্ষণ সুত্রের পরিপন্থী।
এখন প্রশ্ন হল ঐ চৌম্বক পদার্থের পাতটিতে ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটানো হবে কিভাবে?
যদি পাতটি স্থির অবস্থায় চিত্র অনুসারে থাকে তবে ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি একে AB অক্ষের স্বাপেক্ষে ঘোরান হয় তবে সময়ের সাথে পাত ভেদ করে যাওয়া বলরেখার সংখ্যা পরিবর্তিত হবে, অর্থাৎ ফ্লাক্স পরিবর্তন ঘটবে।
বস্তুত এই লেঞ্জের সুত্র ব্যবহার করেই তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয় এবং যন্ত্রটিকে বলা হয় জেনারেটার।
দশম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলি পড়ুন –ভৌতবিজ্ঞান | গণিত | জীবনবিজ্ঞান
পরবর্তী পর্ব → জেনারেটারের কার্য প্রণালী।