Abohoman-poem-class-nine
WB-Class-9

আবহমান কবিতার আলোচনা | নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

বাংলানবম শ্রেণি – আবহমান (পদ্য) | Abohoman

কবি পরিচিতি

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। কবি তার বর্ণময় জীবনে সৃষ্টি করেছেন বহু অমুল্য সাহিত্য কার্য। তবে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একটি বিশেষ কাজের জন্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন; কবি ছিলেন ‘আনন্দমেলা’ নামক কিশোর পত্রিকার প্রথম সম্পাদক। তার আমলে এই পত্রিকা পাঠক মহলে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর একটা কথা না উল্লেখ করলেই নয়, বিখ্যাত কমিকস চরিত্র ‘টিনটিনের’ বঙ্গানুবাদ করেছিলেন নীরেন্দ্রনাথ  চক্রবর্তী। বর্তমান আলোচ্য কবিতাটি ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।


আবহমান কবিতার বিস্তারিত আলোচনা দেখে নাও এই ভিডিও থেকে↓


নামকরণের তাৎপর্য

‘আবহমান’ কথার অর্থ হল যা ক্রমাগত, অর্থাৎ যা চিরকালীন ভাবে চলছে। সময়ের সঙ্গে যা জীর্ণ হয় না, যা কখনো মলিন হয় না। এই প্রতীকী কবিতায়, কবি আমাদের শিকড় অর্থাৎ গ্রামবাংলার কথা বলেছেন, কাজের তাগিদে আমরা যাকে ছেড়ে এলেও যার মহিমা কখনই মলিন হয় না, যার টান আমাদের মনের মনিকোঠায় চিরকালীন, সর্বদা ভাস্বর  হয়ে থাকে।


নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

আবহমান কবিতার সারাংশ

কোন কথা যখন বারবার ব্যবহার করা হয় তার অর্থ হল সেই বক্তব্যের উপর বিশেষ জোর দেওয়া।

abohoman-poem

‘লাউমাচা এবং ছোট্ট সাদা ফুল’ এই দুটি শব্দ কবি বারবার ব্যবহার করেছেন। এই দুটি হল প্রতীক, এরা গ্রাম বাংলাকে  উপস্থাপন করেছে । গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি ঘরের সামনে ফাঁকা জমিতে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি মাচার ওপরে লাউ চাষ করা হয়। সবুজ লাউ গাছ  মাচার ওপরে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে। ছোট সাদা ফুল ধরে তাতে। সন্ধ্যের বাতাসে সেই ফুলের আন্দোলন গ্রাম বাংলার একটি পরিচিত চিত্র।

abohoman-poem-2

গ্রাম বাংলায় আমাদের শিকড় প্রোথিত রয়েছে। বর্তমানে বহু মানুষ জীবিকা বা অন্য কোন প্রয়োজনে গ্রাম বাংলাকে  ছেড়ে  দূর-দুরান্তে পাড়ি দিয়েছে, কিন্তু তার মনের আঙিনায় তার জন্মস্থান ‘গ্রাম বাংলা’ আপন বৈশিষ্ট্যে জাজ্বল্যমান। সব সময় উপায় না থাকলেও, মানুষের মন বার বার তার চিরপরিচিত গ্রাম বাংলার মাটিতে ফিরে আসতে চায়।


নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

সময় অতিবাহিত হয়, গ্রাম বাংলার বয়সও বাড়ে। কিন্তু আজ থেকে বহু বছর আগেও বাংলায় যে রূপ-সম্পদ ছিল তা সময়ের সঙ্গে কিছু মাত্র জীর্ণ হয়না। সময় শুধু এগিয়ে চলে, কিন্তু বাংলার রূপ মাধুরীর সম্পদ ভাণ্ডার একই থাকে, তা অপরিবর্তনীয়। যা কবির ভাষায় –

abohoman-3

‘মুড়িয়ে’ কথার অর্থ শেষ হয়ে যাওয়া। সেই গ্রাম, সেই ‘উঠান’, বাড়ির সামনের লাউমাচা ছেড়ে আসতে হয়েছে অনেক দিন কিন্তু মনের মধ্যে সেই ‘লাউ মাচার পাশে’ সেই উঠোন একই রকম ভাবে ‘ভাস্বর’।

abohoman-poem-4

যার ‘গোঁয়ার্তুমি আছে  অর্থাৎ যে জেদী তাকে একগুঁয়ে বলে। দুরন্ত পিপাসা, আমরা জানি পিপাসা কথাটির অর্থ তৃষ্ণা আর দুরন্ত শব্দটির মানে প্রচন্ড। এখানে বাংলার রূপরস আস্বাদনের পিপাসার কথা বলা হয়েছে, জলের খোঁজে তৃষ্ণার্ত পথিক যেমন জলের কাছে ফিরে আসে, তেমনি গ্রাম বাংলাকে ছেড়ে এলেও তার ভালোবাসার টানে আমাদের মন বার বার ফিরে আসতে চায় তার মাটির কাছে।


আরো পড়ুন → A day in the Zoo | All about a Dog

গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য আকন্ঠ পান করেও মনের তৃষ্ণা কিছুতেই নিবৃত্ত হয় না, ‘ঘাসের গন্ধ সে যেন আপন মনে সারাদিন ধরে গায়ে মাখে, নীল আকাশের বুকে যে সারা রাত জেগে থাকে, দুরন্ত একগুঁয়েটা’ যেন তার মনের সব স্বপ্ন তারাদের বলে।

abohoman-poem-5

এখানে ‘তার’ বলতে গ্রাম বাংলার কথা বলা হয়েছে। মায়ের কোল থেকে সন্তান যদি দূরে চলে যায় তবে মায়ের মনে কষ্ট হয়। মা অপেক্ষা করে থাকেন সন্তানের পুনরায় ফিরে আসার জন্য। গ্রাম বাংলার বুক থেকেও বহু সন্তান জীবিকা উপার্জনের জন্য বা অন্য কোন কারণের জন্য দূরে যেতে বাধ্য হয়। সেটাই গ্রাম বাংলার যন্ত্রনা এই যন্ত্রনা শেষ হয় না, তার মনের দুঃখও পুরনো হয় না, যা কবির কথায় ‘দুঃখ হয় না বাসি’ ।

কারণ গ্রাম বাংলার বুক থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে পাড়ি দেওয়ার ঘটনা আজও নিরন্তর ঘটে চলেছে। কিন্তু গ্রাম বাংলা আজও তেমনি প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর, নির্মল বায়ুযুক্ত, চারিদিকে সবুজের সমারোহ  বাগানে ফুটে আছে কুন্দ ফুল। কুন্দফুল সাদা, আর শুভ্রতা হল পবিত্রতার প্রতীক। সাদা কুন্দফুল যখন ফুটে থাকে তখন মনে হয় কুন্দফুল যেন হাসছে।

গ্রাম বাংলা হয়তো শহরের সভ্যতার অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত কিন্তু সেখানকার জীবন সরলতায় ভরা। সেইখানে অনন্তকাল ধরে সূর্য উঠছে আবার অস্ত যাচ্ছে, নদীর ধার থেকে সুমিষ্ট সন্ধ্যার বাতাস বইছে এর কোন ক্ষয় নেই, শেষ নেই, তা আদি অনন্ত। যার জন্য কবি বলেছেন সময় অতিবাহিত হয়ে চলেছে কিন্তু গ্রাম বাংলার অপার সৌন্দর্য, শান্তিময় জীবনের, কোন কিছুরই  ক্ষয় হচ্ছে না।

কবি বলতে চেয়েছেন প্রকৃত জীবন আছে গ্রাম বাংলাতেই, আমরা যেন আমাদের উৎসস্থল গ্রাম বাংলায় আবার ফিরে আসি, শহরের সভ্যতার সৃষ্টি অনেক পরে, গ্রামবাংলাই আমাদের ভিত্তি।

শহরের ব্যাস্ত জীবনে কর্মযজ্ঞে ডুবে থাকলেও গ্রামের আকর্ষণ অমোঘ। তাই বারে-বারে যে স্থানেই কেউ থাকুক না কেন, গ্রাম বাংলার হাতছানি তার মনকে অধীর করে তোলে।

তাই সে আবার ফিরে আসতে চায় লাউমাচাটার পাশে, যেখানে এখনও সেই ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল সন্ধ্যার বাতাসে।

পর্ব সমাপ্ত। আরো পড়ো → আকাশে সাতটি তারা কবিতার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX_Beng_Abohoman

5 Replies to “আবহমান কবিতার আলোচনা | নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

  1. এককথায় বলতে গেলে অদ্বীতিয় ।
    আর কিছুই না ।
    যদি কেউ বুঝতে সমর্থ হয়।
    Thnk’s to JUMP MAGAZINE.

    1. প্রিয় পাঠক, আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের অনুপ্রেরিত করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ?

    1. প্রিয় মনীষা মণ্ডল, আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের অনুপ্রেরিত করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। 🙂

Comments are closed.