WB-Class-9

ক্ষার ও ক্ষারক

নবম শ্রেণি | বিষয়: ভৌতবিজ্ঞান | অধ্যায়: অ্যাসিড, ক্ষার ও লবণ (দ্বিতীয় পর্ব)

আগের পর্বে আমরা অ্যাসিডের কথা বলতে গিয়ে ছয়টি স্বাদের কথা বলেছিলাম। আর জেনেছিলাম যে টক স্বাদটার জন্য অ্যাসিড দায়ী। সেই সময় আরেকটি স্বাদের কথা আমরা উল্লেখ করেছিলাম, তা ছিল কষা

এই কষা স্বাদের জন্য দায়ী এক বিশেষ ধরণের রাসায়নিক। এমন একটা রাসায়নিক যা আমাদের শরীরে তৈরী হয়, হজম করতে সাহায্যও করে, প্রায় সকল গাছের মূল ও কাণ্ডে থাকে। ওলকচু থেকে শুরু করে গঁদের আঠা, সবই এই রাসায়নিক। অনেক বস্তুর শিল্প প্রস্তুতি, যেমন – সাবান, চিনি ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। কাপড় পরিষ্কারের কাজে, রান্নার কাজে এর ব্যবহার প্রচুর। এটি ক্ষার বা ক্ষারক। ইংলিশে যাকে বলে অ্যালকালি (Alkali) বা বেস (Base)


[আরো পড়ো – বল ও গতি (সরণ, বেগ ও ত্বরণ)]


ক্ষার ও ক্ষারক কাকে বলে?

ক্ষারের সংজ্ঞা হিসেবে বললে,

যে সমস্ত যৌগ জলে দ্রবীভূত হয়ে OH  আয়ন তৈরী করে, তাদের ক্ষার বলে

অপরদিকে ক্ষারকের সংজ্ঞায় বলা

যে সমস্ত যৌগ অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়ার লবণ ও জল উৎপন্ন করে তাদের ক্ষারক বলে

একমাত্র অ্যামোনিয়া বা জৈব অ্যামিন অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়ায় লবণ দেয়, জল নয়। কারণ এতে অক্সিজেন অনুপস্থিৎ।

ক্ষার ও ক্ষারকের মধ্যে পার্থক্য কি?

অনেক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ধন্ধ থাকে যে ক্ষার ও ক্ষারকের মধ্যে প্রভেদ কি? কেউ বলে জলে অদ্রাব্য হলে ক্ষারক। কিন্তু সেই কারণটি ক্ষারকের সংজ্ঞার সাথে মেলে না। কারণ ক্ষারক মাত্রেই অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়ায় লবণ ও জল দেয়। সেই হিসেবে, NaOH ক্ষারক। কিন্তু এটি জলে অতিমাত্রায় দ্রাব্য। সুতরাং এই পয়েন্টটি ভুল। আবার কেউ বলে জলে দ্রাব্য ক্ষারকই ক্ষার। সেক্ষেত্রে NH3; ক্ষার, কারণ এটি জলে অতিমাত্রায় দ্রাব্য। কিন্তু এটি ক্ষারক,ক্ষার নয়।  

আসলে সব ক্ষারই ক্ষারক। কারণ তারা সবাই অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়ায় লবণ ও জল দেয়।

কিন্তু তাহলে ক্ষার নয় এমন ক্ষারক কারা?

যাদের মধ্যে OH মূলক উপস্থিত নেই বা OH মূলক থাকলেও যারা জলে গিয়ে সেটিকে আয়নিত করতে পারে না তারা কেবলমাত্র ক্ষারক। যেমন CaO, Fe2O3, Fe(OH)3, CuOH, Na2O, NH3। লক্ষ্য করে দেখা যায় যে এদের মধ্যে Na2O, NH3 জলে দ্রাব্য। CaO মৃদুভাবে জলে গোলে।

ক্ষারক চিনবো কি দেখে? এর সাধারণ গঠন কি? ক্ষারের সাধারণ রূপই বা কি?

ক্ষারকের সাধারণ গঠন: B2Ox এবং B(OH)x যেখানে B মানে কোনো ক্ষারকীয় মূলক। তবে আমোনিয়া ঘটিত ক্ষারের গঠন সংকেত আলাদা। B মানে Na, Li, Fe, Cu, Zn, Al, NH4, CH3NH3, (CH3)2NH2, (CH3)3NH ইত্যাদি হতে পারে। এবং x মানে B-এর যোজ্যতা।

যেমন – Na, Li, K, Cu, NHএর জন্য 1;

Cu, Fe, Zn, Mg এর জন্য 2;

Al, Fe এর জন্য 3

অর্থাৎ B2Ox মানে Na2O, Li2O, Cu2O, CuO, K2O, FeO, Fe2O3, MgO, Al2O3, ZnO ইত্যাদি। B(OH)x মানে NaOH, LiOH, CuOH, Cu(OH)2, KOH, Fe(OH)2, Fe(OH)3, Mg(OH)2, Al(OH)3, Zn(OH)2 NH4OH, CH3NH3OH, (CH3)2NH2OH,(CH3)3NHOH ইত্যাদি। এছাড়াও O বিহীন ক্ষারক হওয়াও সম্ভব। যেমন – NH3, CH3NH2, (CH3)2NH,(CH3)3N.


[আরো পড়ুন – ক্ষারের শ্রেণীবিভাগ]

ক্ষারক কি কি রাসায়নিক বিক্রিয়া করে?

সাধারণতঃ ক্ষারক অ্যাসিডের সাথেই বিক্রিয়া করতে পারে। এছাড়াও কিছু লবণের সাথে তীব্র ক্ষারগুলি বিক্রিয়া করে মৃদু লবণের অধঃক্ষেপ তৈরী করতে পারে। একবার সাধারণ বিক্রিয়ার সাহায্যে দেখে নিই কি হয়

এখানে BB’ মানে যে-কোনো ক্ষারকীয় মূলক এবং ধাতু বোঝাবে। A মানে যে-কোনো অ্যাসিড মূলক।

  • B2O+ 2HA = 2BA+ H2O
  • Cu2O+ 2HCl = 2CuCl+ H2O

[আরো পড়ুন – নির্দেশক কি? অ্যাসিডে ওক্ষারে নির্দেশকের বর্ণ কি কি হয়?]

  • BOH + HA = BA+ H2O

  • NaOH + HCl = NaCl+ H2O

 

  • BOH + B’A = BA + B’OH
  • 3NaOH+ FeCl3 = 3NaCl+ Fe(OH)3

কোনো দ্রবণ অ্যাসিড নাকি ক্ষার তা বোঝার জন্য পরীক্ষাগারে নানান নির্দেশকের সাহায্য নেওয়া হয়।

পরবর্তী অধ্যায় – দ্রবণের প্রাককথন


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

IX-PS-4.4-b

One Reply to “ক্ষার ও ক্ষারক

Comments are closed.