varotiyo-krishi-tar-boishisthyo
Madhyamik

ভারতীয় কৃষি ও তার বৈশিষ্ট্য

ভূগোলদশম শ্রেণি – ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ (প্রথম পর্ব)

আগের পর্বে আমরা ভারতের অরণ্য সংরক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজকের পর্বে আমরা ভারতীয় কৃষি ও তার বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ভারত কৃষি প্রধান দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৪% মানুষের জীবন- জীবিকা প্রধানত কৃষির উপর নির্ভরশীল। দেশের মোট জাতীয় আয়ের প্রায় ৩০% আসে কৃষি থেকে। ভারতের মোট আয়তনের প্রায় ৫৫% জমিতে প্রতিবছর কৃষিকাজ করা হয় এবং ৭% জমিতে দু-তিন বছর অন্তর অন্তর একবার চাষ হয়। বিগত কিছু বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাদ্যশস্যের উৎপাদন।


ভারতীয় কৃষি ও তার বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুনে নাও এই ভিডিও থেকে↓


ভারতীয় কৃষিকাজের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

  • জীবিকাসত্তা ভিত্তিক কৃষি

ভারত কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় অধিকাংশ অধিবাসীরাই মূলত জীবনধারণের জন্য কৃষিকাজে নিযুক্ত হয়। ব্যপকহারে খাদ্যশস্য ফলন, উৎপাদিত ফসলের প্রায় সবটাই পরিবারের খাদ্যের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। ফলে উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণ কম হওয়ায় বাজারে বিক্রয়যোগ্য ফসলের পরিমাণ, রপ্তানি অত্যন্ত কম।

কৃষিকাজ
  • জনসংখ্যার চাপ

অত্যাধিক জনসংখ্যা হওয়ার কারণে, মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ খুব কম। জমির পরিমাণ কম হওয়ার ফলে বিপুল জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য জমির ওপর চাপ পড়ে, অর্থাৎ শস্যের চাষ করা হয়ে থাকে।

  • শ্রমনিবিড় কৃষি

কৃষি কর্মে যন্ত্রের পাশাপাশি শ্রমিকের আধিক্য ভারতীয় কৃষির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

  • মাথাপিছু স্বল্প উৎপাদন

বিপুল পরিমানে চাষআবাদ হলেও মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ কম হওয়ায়, হেক্টর প্রতি শস্য উৎপাদনের পরিমাণ কম। এর ফলে মাথাপিছু ফলনের পরিমাণও স্বল্প হয়ে থাকে।

  • প্রকৃতি নির্ভর কৃষি

ভারতে কৃষিকাজে জলের জোগান প্রধানত বৃষ্টিপাত থেকেই হয়ে থাকে। ভারতে কৃষিকাজ মূলত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল।বর্ষাকালে খরিফ শস্য এবং শীতকালে বৃষ্টির সঞ্চিত জলে সেচের মাধ্যমে রবিশস্য চাষ করা হয়।

  • কৃষিতে পশুশক্তির প্রাধান্য

ভারতে কৃষিতে বেশ কিছু অঞ্চলে প্রযুক্তির প্রয়োগের পরিবর্তে এখন মাটি কর্ষণ, শস্য বহন ইত্যাদি কাজে গোরু, মহিষ, গাধা প্রভৃতি প্রাণীর প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।

  • ক্ষুদ্র জমিজোত

অধিকাংশ কৃষিজমি আয়তনে ছোট, বিভিন্ন আকৃতির এবং বিক্ষিপ্ত ধরনের। বর্তমানে কৃষিজোতের গড় ক্ষেত্রফল ১.১৬ হেক্টর। মূলত একান্নবর্তী পরিবারগুলি ভেঙ্গে যাওয়া, জমিদারির কারণে বৃহৎ কৃষিজোতগুলি ছোট খণ্ডীকৃত জমিতে পরিণত হয়েছে।

  • প্রান্তিক ও ভূমিহীন বা ভাগচাষীর প্রাধান্য

বহুক্ষেত্রেই কৃষকেরা অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে থাকেন, এদের নিজস্ব কোন জমি না থাকায় এরা ভূমিহীন কৃষক হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও প্রান্তিক কৃষকেরা স্বল্প পরিমাণ জমিতে ( ২-৪ একর) চাষাবাদ করে থাকেন। ভারতের প্রায় ৭০% কৃষক প্রান্তিক কৃষির সঙ্গে জড়িত। যাদের ভূমির পরিমাণ অর্থনৈতিক জোতের আকারের অনেক নীচে, তারাই ভাগচাষী হিসেবে পরিচিত।

  • খাদ্যশস্যের প্রাধান্য

ভারতীয় কৃষি মূলত বিপুল জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান দিয়ে থাকে। ভারতে মোট কৃষিজমির ২/৩ এরও বেশি অংশে খাদ্যশস্য চাষ করা হয়ে থাকে।


jump magazine smart note book


  • শস্য উৎপাদনে আঞ্চলিক প্রাধান্য

অনেকক্ষেত্রেই শস্য উৎপাদনে আঞ্চলিক প্রাধান্য দেখা যায়। যেমন – পূর্ব ভারতে পাট ও ধান চাষ, পশ্চিম ভারতে তুলো, দক্ষিণ ভারতে কফি চাষ ইত্যাদি।

  • বহুশস্যের উৎপাদন

ভারতে কৃষিজমিকে কখনো ফাঁকা ফেলে রাখা হয় না। বছরে একই জমিতে দু থেকে তিনবার ফসল ফলানো হয়। শস্য সমন্বয় এবং শস্যাবর্তনের মাধ্যমে দুটি প্রধান শস্যের উৎপাদনকালের মাঝের সময়ে ডাল ও সবজি চাষ করে একাধিক ফসল উৎপাদন করা হয়।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলিগণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান

এছাড়াও ইন্টারকালচার পদ্ধতিতে দুটি প্রধান শস্যের মাঝের সারিতে একই সময়ে অন্য একটি শস্য রোপণ করা হয়।

  • ক্ষুদ্রাকারে পশুপালন ও পশুখাদ্যের অভাব

কৃষিকাজের পাশাপাশি স্বল্প পরিমাণে পশুপালন হয়ে থাকে তবে, অধিকাংশ জমি খাদ্যের সরবরাহে নিযুক্ত থাকায় মাত্র ৪-৫% জমিতে পশুখাদ্যের চাষ হয়ে থাকে। যা পরিমাণে বেশ কম।

পশুপালন
  • আধুনিক কৃষিপদ্ধতির প্রচলন

বর্তমানে প্রাচীন কৃষিপদ্ধতিকে আধুনিক করার জন্য এবং কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য এবং উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার শুরু হয়েছে।


দশম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল

  • জলসেচের সুবিধা

বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য এবং স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে একাধিকবার চাষের জন্যে জলসেচ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে ভারতের প্রায় ২৫% এলাকা জলাশয়, ভৌমজল ইত্যাদি দ্বারা সেচসেবিত হয়ে থাকে।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → ধান ও গম উৎপাদন ব্যবস্থা

লেখিকা পরিচিতি

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্রী শ্রীপর্ণা পাল। পড়াশোনার পাশাপাশি, গান গাইতে এবং ভ্রমণে শ্রীপর্ণা সমান উৎসাহী।



এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

X-geo-6-a