Economics – একাদশ শ্রেণি – চাহিদা, জোগান, উৎপাদন, উৎপাদন ব্যয়, বাজার (প্রথম পর্ব)
আগের পর্বে আমরা উৎপাদন সম্ভাবনা রেখার ধারণা পেয়েছি। এই পর্বে আমরা বাজার অর্থনীতির অন্যতম বিষয়, দাম কিভাবে চাহিদা জোগানের ঘাত প্রতিঘাতে নির্ধারিত হয় তা দেখব।
চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে বাজারে কিভাবে ভারসাম্য দাম নির্ধারিত হয় এটি জানতে গেলে সবার প্রথমে আমাদের চাহিদা ও জোগান কাকে বলে এবং চাহিদা ও জোগানের সূত্রটি জানতে হবে।
চাহিদা (Demand) কাকে বলে?
কোন ব্যাক্তি তার ক্রয়ক্ষমতা দ্বারা কিনতে ইচ্ছুক কোন দ্রব্য যতটা পরিমান ক্রয় করে, তার মোট পরিমাণকেই আমরা সেই ব্যাক্তিটির ওই নির্দিষ্ট দ্রব্যের প্রতি চাহিদা বলি।
চাহিদার পরিমাণের এবং দামের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখা যায় যেটিকে চাহিদার সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
উপরের চিত্রে অনুভূমিক অক্ষে দ্রব্যের পরিমাণ ও উল্লম্ব অক্ষে দ্রব্যের দাম পরিমাপ করা হচ্ছে। DD হল চাহিদা রেখা, যেখানে P1 দামে Q1 পরিমাণ দ্রব্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।
DD ঋণাত্মক ঢাল বিশিষ্ট।
চাহিদার সূত্র
দ্রব্যের দাম বাদে চাহিদা নির্ধারণকারী সকল বিষয় (যেমন ক্রেতার আয়, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দ্রব্যের দাম, ক্রেতার ভবিষ্যৎ দামের বিষয়ে প্রত্যাশা, ক্রেতার রুচি ও পছন্দ ইত্যাদি) অপরিবর্তিত থাকা অবস্থায়, যদি দ্রব্যের দাম বাড়ে তাহলে সেই দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ কমবে এবং দাম কমলে দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ বাড়বে। একেই চাহিদার সূত্র বলা হয়ে থাকে।
চাহিদা রেখার ঢাল ঋণাত্মক হয় কেন?
এখানে দ্রব্যের দাম ও দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণের মধ্যে একটি ঋণাত্মক সম্পর্ক প্রকাশিত হয়। এই ঋণাত্মক সম্পর্কের জন্য চাহিদা রেখাটি নিম্নমুখী ধরনের হয়।
জোগান (Supply) কাকে বলে?
কোন উৎপাদক একটি নির্দিষ্ট দামে যত পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করতে বা বিক্রি করতে রাজি থাকে, নির্দিষ্ট দামে সেই মোট পরিমাণকে দ্রব্যটির জোগান বলা হয়।
জোগানের পরিমাণ এবং দামের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখা যায় যেটিকে জোগানের সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
উপরের চিত্রে অনুভূমিক অক্ষে দ্রব্যের পরিমাণ ও দ্রব্যের দাম পরিমাপ করা হচ্ছে। SS হল জোগান রেখা, যেখানে P1 দামে Q1 পরিমাণ দ্রব্যের জোগান সৃষ্টি হয়েছে।
SS ধণাত্মক ঢাল বিশিষ্ট।
জোগানের সূত্র
দাম বাদে জোগান নির্ধারণকারী সকল বিষয় অপরিবর্তিত থাকলে, কোন দ্রব্যের দাম বাড়ালে সেই দ্রব্যটির জোগানের পরিমাণ বাড়বে এবং দাম কমলে সেই দ্রব্যটির জোগানের পরিমাণও কমবে। দাম এবং জোগানের পরিমাণের মধ্যে এই সম্পর্ককেই জোগানের সূত্র বলা হয়।
জোগান রেখার ঢাল ধণাত্মক হয় কেন?
দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে উৎপাদকরা বেশি মুনাফা লাভের আশায় দ্রব্যের জোগান বৃদ্ধি করে, আবার দাম কমে গেলে মুনাফা হ্রাস পাবে এই ভেবে দ্রব্যের জোগান হ্রাস করে। এইজন্য দ্রব্যের দাম ও দ্রব্যের জোগানের পরিমাণের মধ্যে একটি ধনাত্মক সম্পর্ক প্রকাশিত হচ্ছে। এবং এই ধনাত্মক সম্পর্কের জন্য জোগান রেখাটি ঊর্ধ্বমুখী ধরনের হয়।
ভারসাম্য দাম (Equilibrium Price) ও ভারসাম্য পরিমাণ (Equilibrium Quantity) নির্ধারণ
আমরা উপরের আলোচনা থেকে লক্ষ্য করছি যে বাজারে দ্রব্যের দাম ওঠা নামার সাথে দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ ও জোগানের পরিমাণের মধ্যে একটি বিপরীতমুখী পরিবর্তন দেখা যায়।
এই বিপরীতমুখী পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে ভারসাম্য দাম ও ভারসাম্য পরিমাণ নির্ধারিত করা সম্ভব।
ভারসাম্য দাম ও ভারসাম্য পরিমাণ কাকে বলে?
ভারসাম্য দাম বলতে আমরা সেই দামকেই বুঝব যেই দামে দ্রব্যের চাহিদা ও জোগান পরস্পর সমান হবে এবং ভারসাম্য দামে যে পরিমাণ দ্রব্যের চাহিদা ও জোগান সৃষ্টি হয়, সেই পরিমাণকে ভারসাম্য পরিমাণ বলা হয়।
দাম নির্ধারণ
আমরা ভারসাম্য দাম নির্ধারণের বিষয়টিকে চিত্রের সাহায্যে বুঝে নেব।
চাহিদা ও জোগানের ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার বাজারে যেকোনো দ্রব্যের ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
চিত্রে X অক্ষে দ্রব্যের পরিমান এবং Y অক্ষে দ্রব্যের দাম পরিমাপ করা হয়েছে। এখানে, SS1 রেখাটি হল জোগান রেখা এবং DD1 রেখাটি হল চাহিদা রেখা।
আমরা জানি, ভারসাম্য দামে জোগান ও চাহিদা পরস্পর সমান হয়।
এখানে SS1 রেখা ও DD1 রেখাটি পরস্পরকে E বিন্দুতে ছেদ করেছে। সুতরাং E বিন্দুতে চাহিদা ও জোগান সমান। তাই E বিন্দুটিকে ভারসাম্য বিন্দু বলা হয়। সুতরাং, ভারসাম্য দাম হল OP* এবং ভারসাম্য পরিমাণ হল OQ*। কারণ OP* দামে জোগান = চাহিদা হচ্ছে।
একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
এবার ধরা যাক, বাজারে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সেক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি পেয়ে OP* থেকে OP1 হয়ে গেছে। এখন চিত্রানুসারে OP1 দামে চাহিদার পরিমাণ P1A এবং জোগানের পরিমাণ P1B।
সুতরাং দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জোগান চাহিদার তুলনায় বেশি কারণ এখানে P1B > P1A। সুতরাং, উদ্বৃত্ত জোগান AB সৃষ্টি হবে।
এই উদ্বৃত্ত জোগানের জন্য বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে যা দ্রব্যের দামকে কমিয়ে আনতে বাধ্য করবে। এবার, চাহিদার সূত্রানুযায়ী দাম কমলে চাহিদা বাড়বে এবং জোগানের সূত্রানুযায়ী দাম কমলে জোগানও কমবে। সুতরাং, উদ্বৃত্ত জোগান কমতে থাকবে ।
এই প্রক্রিয়াটি ততক্ষণ চলতে থাকবে যতক্ষণ দাম ভারসাম্য অবস্থায় না আসছে এবং অবশেষে OP* দামে চাহিদা ও জোগান সমান হবে।
আবার ধরা যাক, দ্রব্যের দাম হ্রাস পেয়েছে সেক্ষেত্রে দাম হ্রাস পেয়ে OP* থেকে OP2 হয়ে গেছে। এখন OP2 দামে চাহিদার পরিমান P2G এবং জোগানের পরিমাণ P2F। সুতরাং দাম হ্রাস পাওয়ায় চাহিদা জোগানের তুলনায় বেশি কারণ এখানে P2G > P2F ।
একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
সুতরাং, উদ্বৃত্ত চাহিদা FG সৃষ্টি হবে। এই উদ্বৃত্ত চাহিদার জন্য ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে যা দ্রব্যের দামকে বাড়াতে বাধ্য করবে। এবার, চাহিদার সূত্রানুযায়ী দাম বাড়লে চাহিদা কমবে, এবং জোগানের সূত্রানুযায়ী দাম বাড়লে জোগানও বাড়বে।
সুতরাং, উদ্বৃত্ত চাহিদা কমতে থাকবে এবং অবশেষে OP* দামে চাহিদা ও জোগান সমান হবে।
এইভাবে, দাম ভারসাম্য দামের থেকে বেশি বা কম হলেও চাহিদা ও জোগানের ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যমে আপনাআপনি ভারসাম্য দামে ফিরে আসে এবং ভারসাম্য দাম নির্ধারিত হয়।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতি
শ্রীরামপুর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তনী শুভ্রা পাল। স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি গান শুনতে এবং বাগান পরিচর্যা করতে ভালবাসেন শুভ্রা।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা