kichu-joruri-ktha copy
Editorial (সম্পাদকীয়)

কিছু জরুরী কথা।

আমাদের মধ্যে অনেক ছাত্রছাত্রী আছে, যাদের লক্ষ্য জীবনে সফল ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো বা সঠিক উপায়ে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করা।

তাহলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কে দক্ষ বা অদক্ষ বুঝবে তা বিচার করবে কে? বিচার করবেন তারা যারা আমাদের পরবর্তীকালে নিযুক্ত করবেন; তা সে কোন প্রাইভেট মাল্টি ন্যাশনাল সংস্থা হোক বা সরকারি কোন সংস্থাই হোক। এরাই ভবিষ্যতে ছাত্রছাত্রীদের তাদের নিয়োগযোগ্যতা বা employability বিচার করে তাদের উপযুক্ত কাজে নিযুক্ত করবেন।

আমাদের আজকের আলোচনা এই নিয়োগযোগ্যতা বা employability নিয়ে।

আচ্ছা ভেবে দেখেছেন কোন সংস্থা কর্মী নিয়োগ কেন করে?

প্রত্যেকটি সংস্থা তাদের নিজস্ব বাজারের চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা ও প্রাপ্য রসদের ভিত্তিতে কিছু Goods and Services প্রদান করে। আর তার জন্য তার দরকার কাঁচামাল, অর্থ ও সর্বোপরি মানবসম্পদ; অর্থাৎ যারা কাজটি করবে। যাদের দক্ষতাতেই সমৃদ্ধ হবে পরিষেবা, তাদের হাতেই থাকবে প্রতিষ্ঠানের মান ও প্রসিদ্ধির এর চাবিকাঠি।

আগেকার দিনের উপন্যাস বা গল্প পড়বেন, দেখবেন সেখানে কোথাও কোনো রান্না বা শিল্পের উল্লেখ থাকলে বলা হতো “অমুক জায়গা থেকে কারিগর নিয়ে এসেছি”। আজও দুর্গাপূজাতে বেরোলে শুনতে পাওয়া যায় কৃষ্ণনগরের প্রতিমা বা চন্দননগরের লাইটিংয়ের কথা। তার মানে শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, কর্মদক্ষতা একটি নগরের, একটি অঞ্চলের প্রসিদ্ধিকেও উন্নত করে।

এই প্রসিদ্ধির ফলে জন্মায় বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাস থেকে হয় বাণিজ্য, আদানপ্রদান। সম্পদের বিনিময়ে সম্পদের আদানপ্রদান। নাম যশ পায় কারিগর, তার সাথে সাথে উন্নত হয় তার জীবনযাত্রার মান। এটাই ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি।

JUMP whats-app subscrition

কিন্তু নিয়োগযোগ্যতা বা কর্মদক্ষতার সাথে ভীষণ ভাবে জড়িয়ে আছে শিক্ষা। যখন আমরা মাটির মূর্তি তৈরী বা মিষ্টি তৈরির উদাহরণ ভাবি, সেখানে থাকে বংশপরম্পরায় চলে আসা শিক্ষা বা apprenticeship। কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় আধুনিক দক্ষতার কথা বলতে গেলে আলোচনা করতে হয় স্কুল শিক্ষার ব্যাপারে।


[আরো পড়ুন – সাফল্যের জন্য চাই ধারাবাহিকতা]

আমাদের দেশে স্কুল শিক্ষার প্রবর্তন ব্রিটিশদের হাত ধরে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কেরানি তৈরী যাতে তাদের দেশ শাসনে প্রজা ও রাজার মধ্যে (প্রাথমিকভাবে কোম্পানি, কারণ স্কুলশিক্ষার সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন চলছিল) যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। ক্রমশ সেটি পর্যবসিত হয় ফ্যাক্টরিতে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শিক্ষা হিসেবে। ১৯৯২ এর আর্থিক উদারীকরণের পরে কম্পিউটার আসে এবং তা পুরোনো কিছু যান্ত্রিক কাজকে বাতিল করে, ও নতুন শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে কম্পিউটার শিক্ষা একটি জরুরি অংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। 

কিন্তু আগামী দশকে আরেকটি নতুন প্রযুক্তি আত্মপ্রকাশ করে ফেলেছে, যেটি আগামী দিনে কাজের বাজারকে আমূল পরিবর্তন করে দেবে- যার নাম AI। ১৮৬০ সালের শিল্পবিপ্লবের পর থেকে এতো বড়ো পরিবর্তন আগে কখনো হয়নি।

নিচের ভিডিওতে ‘সোফিয়া’ নামক একটি AI প্রজুক্তির দ্বারা নির্মিত রোবটকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখুন। প্রসঙ্গত ‘সোফিয়া’ বিশ্বের প্রথম রোবট যাকে বিশ্বের একটি দেশ নাগরিকত্ব প্রদান করেছে।

তাই আজ আমাদের ভাবতে হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা কি এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত?

আসুন বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। এখনকার পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে তাৎক্ষণিক পুরষ্কার (Immediate Incentive) পাওয়ার একটি তাগিদ কাজ করে। অর্থাৎ আমরা সাধারণত ভাবি ভালো নম্বর মানে ভালো সুযোগ যেমন নম্বরের ভিত্তিতে বড়ো প্রতিষ্ঠানে পড়বার সুযোগ বা চাকরি, উন্নততর জীবনযাত্রা।

তাই দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে যুক্তি ও বোধের বিকাশ করার প্রতি আমাদের কোনো ঝোঁক থাকে না। কিন্তু কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয় চাকরির নিযুক্তির ক্ষেত্রে গিয়ে। ব্যবসা করার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা সকলের থাকে না। তাই অধিকাংশ শিক্ষিত পরিবারের কাছে চাকরিই অর্থ সংস্থানের একমাত্র পথ।

তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়োগের সময় দেখা যায়, যে অনেক ভালো নম্বর পেয়েও, অনেক বড়ো প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেও চাকরিতে rejection এর মুখোমুখি হতে হয়, বা কোম্পানিকে বাধ্য হয়ে নিজে থেকে আবার পুরো ট্রেনিং দিতে হয়।

অর্থাৎ যা আমরা শিখে যাচ্ছি, হয় তা প্রাচীন, নয় তা আমরা ভালো করে রপ্ত-ই করতে পারিনি। তাই IIT থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ারকে Humiliate হতে হয় তার অধঃস্তন কিন্তু অধিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মাধ্যমিকে ইতিহাসে ১০০ তে ১০০ student-কে ভারতের স্বাধীনতা দিবস না বলতে পারার লজ্জায়।


[আরো পড়ুন – ভবিষ্যতে মানুষের সাথে কিভাবে পাল্লা দেবে AI]

এর ফলে মনের মত চাকরি মেলা দুষ্কর হয়ে ওঠে। কিংবা চাকরি মিললেও বেতন হয় কম। অধিক দক্ষ মুষ্টিমেয়র সাথে সৃষ্টি হয় wage gap।

এর থেকে বেরোনোর একটাই উপায়, নিজের দক্ষতাকে এতটা উঁচুতে নিয়ে যাওয়া যাতে চাকরি ক্ষেত্রে আপনি valuable হয়ে ওঠেন। বাজারে আপনার চাহিদা বাড়ে। আপনার দক্ষতা কোম্পানিকে সমৃদ্ধ করে, প্রসিদ্ধি দেয়। তার জন্য চাই যুগোপযোগী শিক্ষা অর্থাৎ নিরন্তন, মূলগত মানবসম্পদ উন্নয়নকেন্দ্রিক শিক্ষা।

মুখস্থ করে অধীত বিদ্যাকে অবহেলা করে সে শিক্ষা অধিকার করা কিন্তু খুবই কঠিন। তাই কালকের দুনিয়াতে সাফল্যের সাথে টিকে থাকতে গেলে একমাত্র উপায় মুখস্থ বিদ্যাকে দূরে সরিয়ে রেখে পড়ার প্রতিটি বিষয়কে ভালো ভাবে বুঝে আত্তীকরণ করা।

যাতে কালকের দুনিয়ায় আজকের জন্য আপনাকে আর বিপদে পড়তে না হয়।

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –