ভূগোল – একাদশ শ্রেণি – অধ্যায় – মহাসাগর তলদেশের ভূপ্রকৃতি
মহীসোপান কাকে বলে?
সমুদ্র জলে ডুবে থাকা মহাদেশসমূহের প্রান্তভাগকে মহীসোপান বলে। সাধারণভাবে সমুদ্রে ২০০ মিটারের গভীরতা পর্যন্ত অঞ্চলকে মহীসোপান বলে।নদীর দ্বারা বয়ে আনা বিভিন্ন আকারের শিলাখন্ড, বালুকণা, কর্দম কণা এবং সমূদ্র উপকূলের সমুদ্র তরঙ্গের ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ সঞ্চিত হয়ে মহীসোপানের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
মহীসোপানের বৈশিষ্ট্য
১) মহীসোপানের ঢাল ১° এর কম। এগুলি অতি ধীরে ঢালু হয়ে সমুদ্রের দিকে নেমে গেছে।
২) মহীসোপানের গভীরতা ২০০ মিটার বা ১০০ ফ্যাদম হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬০০ মিটার পর্যন্ত গভীর হয়।
৩) এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাঙ্কটন লক্ষ্য করা যায়।এর ফলে এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মাছের সমাবেশ ঘটে যা বাণিজ্যিক মৎস্য শিকার কেন্দ্র গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ।
৪) মহীসোপানের বিস্তৃতি সর্বত্র সমান নয়। গড়ে এটি প্রায় ৫০ কিলোমিটার হয়। এর সর্বাধিক বিস্তৃতি ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
৫) পৃথিবীর মোট সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৭.৫% জায়গা জুড়ে আছে।
৬)মহীসোপান অঞ্চলে মূল্যবান মণিমুক্তা, প্রবাল, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলিত হয়। তাই মহীসোপান অঞ্চলকে সমুদ্র সম্পদের ভাণ্ডার বলা হয়।
৭)মহীসোপান অঞ্চলের ভগ্ন উপকূল বরাবর বন্দর ও পোতাশ্রয় গড়ে ওঠে।
৮) মহীসোপানের প্রান্তভাগে ঢালের গভীরতা গড়ে ১৩০ মিটার।
মহীসোপান সৃষ্টির কারণ
১) সমুদ্রতরঙ্গ ও সমুদ্রস্রোতের ফলে মহাদেশের প্রান্তভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মহাদেশীয় মঞ্চ তৈরি করে এবং তার ওপরে নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে মহীসোপান গঠিত হয়।
২) ভূগর্ভ থেকে উত্থিত ম্যাগমার পরিচলন স্রোতের প্রভাবে মহাদেশের প্রান্তভাগ অবনমিত হলে মহীসোপানের সৃষ্টি হয়।
৩)সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষয়ের ফলে তরঙ্গকর্তিত মঞ্চ সমুদ্র জলে নিমজ্জিত হলে মহীসোপান তৈরি হয়।
এছাড়া অনেক সময় মহাদেশের প্রান্তভাগ বরাবর চ্যুতির সৃষ্টি হলে, মহাদেশের প্রান্তভাগে হিমবাহের ক্ষয়ের ফলে এবং মহাদেশীয় প্রান্তভাগ উত্থিত হয়ে সমূদ্রের অভিমুখে হেলে অবস্থান করলে মহীসোপান গঠিত হয়।
মহীসোপানের শ্রেণীবিভাগ
- মহীসোপানকে প্রকৃতিগত তারতম্যের দিক থেকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ক)তটদেশীয় অঞ্চল, খ) নেরিটিয় অঞ্চল।
- আবার গঠন প্রণালীর ওপর নির্ভর করে মহীসোপানকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।ক) হৈমবাহিক মহীসোপান, খ)অহৈমবাহিক মহীসোপান
মহীঢাল কাকে বলে?
মহীসোপানের শেষ প্রান্ত থেকে খাড়াভাবে যে ভূত্বকীয় অংশ নেমে গিয়ে সামুদ্রিক সমভূমির সাথে মিলিত হয়েছে,সেই অংশকে মহীঢাল বলে। এই মহীঢাল হল সমুদ্র সমভূমির শেষসীমা। এই অঞ্চল সামুদ্রিক ও মহাদেশীয় সঞ্চয় দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে।এখানে কর্দমের পরিমাণ প্রায় ৬০%, বালির পরিমাণ ২৫% এবং শৈবাল ও সামুদ্রিক কর্দম মিশিয়ে ১৫%।
একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
মহীঢালের বৈশিষ্ট্য
১) মহীঢালের গড় ঢাল প্রায় ৫°। এগুলি খাড়া ঢালবিশিষ্ট হয়।
২)এর গড় গভীরতা প্রায় ২৫০০-৩০০০ মিটার।মহীঢালের শেষ থেকে গড় সমূদ্রের সমভূমির সাথে মিলিত হয়েছে।
৩) সমুদ্রের প্রায় ৮.৫% জুড়ে বিস্তৃত মহীঢাল।
৪) মহীঢালে সমুদ্র তরঙ্গ নিস্ক্রিয় থাকে।
৫) পৃথিবীর মোট সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৭.৫% জায়গা জুড়ে আছে।
৬) এখানে সামূদ্রিক সঞ্চয় অজৈব ও জৈব পদার্থের সঞ্চয় অতি কম।
মহীঢালের শ্রেণীবিভাগ
প্রকৃতিগত পার্থক্য অনুযায়ী মহীঢালকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। ক) ক্যানিয়ন-সমন্বিত মহীঢাল খ) মঞ্চযুক্ত মহীঢাল গ)চ্যুতিভৃগু মহীঢাল, ঘ)বেসিন ও পার্বত্য ঢালযুক্ত মহীঢাল, ঙ)ক্ষয়জাত মহীঢাল
আটলান্টিক মহাসাগরের ভূপ্রকৃতি
আটলান্টিক মহাসাগরের আয়তন
প্রশান্ত মহাসাগরের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর হল আটলান্টিক মহাসাগর।যা 16% স্থান জুড়ে অবস্থান করছে।এবং যার মোট ক্ষেত্রফল হল 8.22 কোটি বর্গ কিলোমিটার।
আটলান্টিক মহাসাগরের আকার
এই মহাসাগরের আকৃতি ইংরেজী “S”অক্ষরের মতো।এর দু দিকের উপকূল রেখার বিন্যাস লক্ষ করে অনুমান করা হয় যে আটলান্টিকের উভয় পাশের মহাদেশগুলি প্রাচীন ভূত্বাত্তিক যুগের।
একাদশ শ্রেণি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল
আটলান্টিক মহাসাগরের সীমানা ও বিস্তার
আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্বদিকে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ, পশ্চিমদিকে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ , উত্তরে সুমেরু ও দক্ষিণে কমেরু মহাসাগর অবস্থিত।এই মহাসাগরটি 70°উত্তর অক্ষাংশ থেকে 66°30’দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং 85° পশ্চিম দ্রাঘিমা থেকে 30° পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত।
আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্র তলের ভূপ্রকৃতি
আটলান্টিক মহাসাগরীয় মহীসোপান
আটলান্টিক মহাসাগরীয় 13.03% মহীসোপানের অন্তর্গত।200 মিটারের কম গভীরতাসম্পন্ন মহীসোপান আটলান্টিক মহাসাগরের সমস্ত উপকূল বরাবর দেখা যায়, তবে মহীসোপানের বিস্তৃত সর্বত্র সমান নয়।ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বিস্কেউপসাগর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সমগ্র পশ্চিম উপকূল ধরে উত্তমাশা অন্তরীপ পর্যন্ত মহীসোপানের বিস্তৃতি 80 থেকে150 কিমি।উত্তর আমেরিকার ল্যাব্রাডার উপকূলে মহীসোপান 200 কিমি থেকে 400 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃতি।
নিউফাউন্ডল্যন্ডের নিকট ডগার ব্যাঙ্ক ও ব্রিটিশ দ্বীপ পুঞ্জের পূর্বে উত্তর সাগরে অবস্থিত গ্র্যান্ডব্যাঙ্ক পৃথিবীর প্রশস্ততম মহীসোপান।
দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের বাহিয়া ব্লাঙ্কার দক্ষিণের মহীসোপান পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয়ে অবশেষে কুমেরু মহাসাগরের গ্রাহাম উপদ্বীপের মহীসোপানের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
আটলান্টিক মহাসাগরের শৈলশিরা ও উচ্চভূমি
আটলান্টিক মহাসাগরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা।এটি উত্তরে আইসল্যান্ড থেকে দক্ষিণে বুভেট (55°30’দঃ ও 4°30’পূঃ) পর্যন্ত প্রসারিত আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝ বরাবর নিমজ্জিত শৈলশিরাটি অবস্থান করছে।এটি সমুদ্রপৃষ্টের নীচে 4000 মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
আটলান্টিক মহাসাগরের বৈশিষ্ট্য
১) এটি সমান্তরালভাবে অবস্থান করে।
২) শৈলশিরার তলদেশে কোনো মাধ্যাকর্ষণ অসঙ্গতি নেই, কিন্তু শীর্ষদেশ থেকে পার্শ্বদেশ বরাবর এর অসঙ্গতি রয়েছে।
৩) নিরক্ষরেখার ওপর রোমানসশ খাত দ্বারা মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা দ্বিবিভক্ত যার একটি অংশ উত্তর আটলান্টিকে ডলফিন উচ্চভূমি ও অন্য অংশ দক্ষিণ আটলান্টিকে চ্যালেন্জার উচ্চভূমি নামে পরিচিত।
৪) এটি প্রবল ভূমিকম্পপ্রবন অঞ্চল।
৫) চ্যুতি, ফাটল, স্রংস উপত্যকা ও স্তুপ পর্বত ইত্যাদি ভূতাত্ত্বিক গঠন নিয়ন্ত্রনকারী ভূমিরূপ এই শৈলশিরা দেখা যায়।
৬) মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা উত্তর দিকে ধীরে ধীরে প্রশস্ত হয়ে ল্যাব্রাডর ও আয়ারল্যান্ডের নিকট একটি নিমজ্জিত মালভূমিতে পরিনত হয়েছে।এর নাম টেলিগ্রাফ মালভূমি।
এছাড়াও কিছু উল্লেখযোগ্য শৈলশিরা – নিউফাউন্ডল্যান্ড উচ্চভূমি উইভিল থমসন, অ্যাজোর্স-সেন্ট প্রভৃতি উচ্চভূমি।দক্ষিণ আটলান্টিক প্রধান শৈলশিরাগুলি হল কুমেরু শৈলশিরাব্রমলি মালভূমি, রিও গ্র্যান্ডি শৈলশিরা, স্কোশিয়া শৈলশিরা।
একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
আটলান্টিক মহাসাগরের খাতসমূহ
আটলান্টিক মহাসাগরের বেশ কিছু খাত লক্ষ্য করা যায় যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ন হল-
১| দক্ষিণ আটলান্টিকে দক্ষিণ স্যান্ডউইচ খাতের মধ্যে গভীরতম অংশটি হল মিটিওর ডেপথ (8264 মিটার) নামে পরিচিত।
২| মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরায় অবস্থিত রোমানস খাত গভীরতা(7594 মিটার)
৩| আমেরকা বেসিনের নারিস খাত (8995 মিটার)
৪| পুয়ের্তোরিকোর উত্তরে পুয়ের্তোরিকো খাত এটি আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরতম খাত যা (9219 মিটার)
৫| কিউবার দক্ষিণে কেম্যানখাত, এটির গভীরতা প্রায় (7119 মিটার)।
পর্ব সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতি
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী মোনালিসা মাইতি। পড়াশোনার পাশাপাশি বই পড়তে এবং গান গাইতে ভালোবাসেন মোনালিসা ।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
XI_geo_7a