oceania
WB-Class-8

ওশিয়ানিয়া

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: ভূগোল । অধ্যায় – ওশিয়ানিয়া

আগের পর্বে আমরা জেনেছি দক্ষিণ আমেরিকা সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা ওশিয়ানিয়া সম্পর্কে আলোচনা করবো।

ওশিয়ানিয়া পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মহাদেশ।

এর মোট আয়তন মাত্র ৪৪ লক্ষ বর্গ কিমি। প্রায় দশ হাজারের বেশি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মহাদেশ। ওশিয়ানিয়ার জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে তিন কোটি। মহাদেশটি অভূতপূর্ব জীববৈচিত্র্যে ভরপুর, যেমন – ক্যাঙ্গারু, প্লাটিপাস, কোয়ালা, এমুপাখি, কিউই পাখি। ইউক্যালিপটাস, জারা, কারি, প্রভৃতি দুর্লভ গাছ এই মহাদেশে লক্ষ্যণীয়।

ওশিয়ানিয়ার দ্বীপগুলিতে পর্যটন শিল্পী অর্থনীতির মূল স্তম্ভ। বেশিরভাগ ভূভাগই যেহেতু দক্ষিণ গোলার্ধে তাই জুন-জুলাই মাস শীতকাল আর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস গ্রীষ্মকাল। উত্তরে 15° উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে 47° দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং পশ্চিমে 114° পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে 134° পশ্চিম দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত। পাপুয়া, নিউগিনি দ্বীপের মাউন্ট উইলহেল্ম (4509 কিমি)।

অস্ট্রেলিয়ার মারে-ডার্লিং নদীটি এই মহাদেশের দীর্ঘতম নদী (3752কিমি)।

এই দ্বীপ মহাদেশটির মধ্যে সার্বভৌম দেশের সংখ্যা – 14টি, নির্ভরশীল অঞ্চলের সংখ্যা – 21টি। ভাষার সংখ্যা মোট 28টি। প্রধান প্রধান দেশগুলি হল – ক্যানবেরা, সিডনি, মেলবোর্ন, পারথ, এডিলেড, অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন।

ওশিয়ানিয়ার আঞ্চলিক বিভাগ

• অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিয়ে এই অংশটি গঠিত।

অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু

• মেলানেশিয়া: নিউগিনি, সলোমন, ফিজি, নরফোক, নিউ ক্যালিডোনিয়া, নিউ হেব্রিডিজ।
• মাইক্রোনেশিয়া: মাইক্রো শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র। গুয়াম, মারশাল, নাউরু প্রভৃতি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
• পলিনেশিয়া: পলি শব্দের অর্থ বহু। ওশিয়ানিয়ার একেবারে পূর্বদিকে হাওয়াই , সামোয়া, ইস্টার, তাহিতি প্রভৃতি অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে গঠিত।

ওশিয়ানিয়ার ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য

ছোট-বড় অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে গঠিত ওশিয়ানিয়া। এখানকার প্রধান ভূখণ্ডগুলির ভূপ্রকৃতি হল-

ক) অস্ট্রেলিয়ায় প্রকৃতি

অস্ট্রেলিয়াকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।

• পূর্বের উচ্চভূমি

অস্ট্রেলিয়ার পূর্বদিকে বরাবর উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত হয়েছে একটি প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণী। এর নাম গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ। নিউইংল্যান্ড রেঞ্জের মাউন্ট কোসিয়াস্কি (2230 কিমি) অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

• পশ্চিমের মালভূমি

অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমে রয়েছে মালভূমি ও মরুভূমি অঞ্চল। এখানকার গড় উচ্চতা 200-500 মিটার। ভিক্টোরিয়া, গিবসন, গ্রেটাস্যান্ডি মরুভূমি বিখ্যাত। লাল স্যান্ডস্টোনে গঠিত আয়ার রক অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের একটি দর্শনীয় বস্তু।

• মধ্যভাগের সমভূমি

পূর্বে গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ আর পশ্চিমে মালভূমির মাঝের অঞ্চল সমতল। গ্রে আর সেলুইন নামে দুটি উচ্চভূমি রয়েছে।

• উপকূলের সমভূমি

অস্ট্রেলিয়ার চারপাশে উপকুলেই সমভূমি রয়েছে। উত্তর-পূর্ব উপকূল বরাবর সমুদ্রের মধ্যে সমান্তরাল অবস্থান করছে পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর গ্রেট ব্যারিয়র রিফ।

নিউজিল্যান্ডের প্রকৃতি

কতকগুলি ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। এখানকার বেশিরভাগ ভূমিই পর্বতময়। অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি আছে এখানে। দক্ষিণ দ্বীপের দক্ষিণ আল্পস পরধান পর্বতশ্রেণী।

এই পর্বতশ্রেনির মাউন্ট কূক (3754 মি:) নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

এই দ্বীপের পূর্ব উপকূল বরাবর গড়ে উঠেছে বিখ্যাত ক্যান্টারবেরি সমভূমি। এখানকার প্রধান নদনদী হল – ক্লথ, টায়েরি। এদেশের পার্বত্য অঞ্চলে অনেক হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ রয়েছে।

মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া ও পলিনেশিয়ার ভূপ্রকৃতি

অসংখ্য ছোট দ্বীপ (প্রায় হাজারের কাছাকাছি ) নিয়ে গঠিত এই তিনটি অঞ্চল। এখানকার বেসিরভাগ দ্বীপগুলি গঠিত হয়েছে সমুদ্রের তলদেশে আগ্নেয় পদার্থ জমা হয়ে, আর কিছু দ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে মৃত প্রবাল জমা হয়ে। হাওয়াই, তাহিতি, ফিজি উল্লেখযোগ্য আগ্নেয়গিরি। মার্শাল, গিলবারট দ্বীপগুলি প্রবাল দ্বীপ।

ওশিয়ানিয়ার নদনদী

মারে-ডারলিং নদী

মারে নদী অস্ট্রেলিয়ান আল্পস পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে এনকাউন্টার উপসাগরে পড়েছে। ডার্লিং নদী গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জের পশ্চিমের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে আয়ার হ্রদে পড়েছে। এটি ওশিয়ানিয়ার বৃহত্তম অন্তরবাহিনী নদী।

ডার্লিং নদী

ওয়াটকি নদী

বেনেমার হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়েছে।

ক্লাথা নদী

অয়ানাকা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়েছে। এই দুটি নদী মিলিতভাবে নিউজইল্যান্ডের দীর্ঘতম নদী।

ওশিয়ানিয়ার জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ

এই মহাদেশের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিস্তৃতি অনেকখানি বেশি এবং অসংখ্য ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত হওয়ায়, বিভিন্ন স্থানে জলবায়ুর পার্থক্য দেখা যায়। আবার অস্ট্রেলিয়ার মোট বড় স্থলভাগের ভেতরে জলবায়ু চরমভাবাপন্ন হয়। এই পার্থক্যের জন্যে মহাদেশটিকে কয়েকটি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা হয়।

• নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল ও ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য

মেলানেশিয়া, পলিনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জগুলিতে নিরক্ষীয় জলবায়ু দেখা যায়। একগানে চিরহরিৎ বনভুমির সৃষ্টি হয়েছে। মেহগিনি, পাম, এবনি প্রভৃতি গাছ জন্মায়।

• ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চল ও ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য

অস্ট্রেলিয়ার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে এই জলবায়ু দেখা যায়। মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে পর্ণমোচী জাতীয় বনভূমি দেখা যায়। পাম, বারচ, সিডার গাছ জন্মায়।

• নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু ও নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য

অস্ট্রেলিয়ার মারে-ডার্লিং অববাহিকা ও পূর্ব উপকূলের ব্রিসবেনে এই জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়। ওক, ম্যাপেল, পপলার এখানকার প্রধান উদ্ভিদ।

• ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু ও ভূমধ্যসাগরীয় উদ্ভিদ

অস্ট্রেলিয়ার উপকূল বরাবর পারথ আর অ্যাডিলেড অঞ্চলে এই জলবায়ুর প্রভাব রয়েছে। জারা, কারি প্রভৃতি গাছ জন্মায় এখানে।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান | ভূগোল

• ক্রান্তীয় মরু ও মরুপ্রায় জলবায়ু এবং মরু উদ্ভিদ

অস্ট্রেলিয়ার মধ্য ও পশ্চিমাংশ এইধরণের জলবায়ুর অন্তর্গত। কম বৃষ্টিপাতের কারণে ক্যাকটাস, লবনাম্বু ঝোপঝাড় ইত্যাদি জন্মায়।

• ব্রিটিশ জলবায়ু

দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, নিউজিল্যান্ড এ এই জলবায়ু দেখা যায়।

• নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি

গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জের পশ্চিমদিকে মারে-ডার্লিং অববাহিকায় ছোট ছোট ঘাসের বিশাল তৃণভূমি দেখা যায়, এই তৃণভূমি ‘ডাউনস’ নামে পরিচিত।

• ক্রান্তীয় তৃণভূমি

অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বড় বড় ঘাস জন্মায়। অস্ট্রেলিয়ার এই অঞ্চল ‘পার্কল্যান্ড সাভানা’ নামে পরিচিত। এই তৃণভুমিতে ইউক্যালিপটাস, জুরা প্রভৃতি প্রজাতির গাছ দেখা যায়।

পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতিঃ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্রী শ্রীপর্ণা পাল। পড়াশোনার পাশাপাশি, গান গাইতে এবং ভ্রমণে শ্রীপর্ণা সমান উৎসাহী।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

VIII_Geo_11a