নবম শ্রেণী – জীবনবিজ্ঞান | তৃতীয় অধ্যায় – জৈবনিক প্রক্রিয়া (সালোকসংশ্লেষ) – তৃতীয় পর্ব
আগের দুটি পর্বে আমরা সালোকসংশ্লেষ, ক্লোরোপ্লাস্ট এবং আলোক দশা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বে আমরা সালোকসংশ্লেষের দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ অন্ধকার দশা বা আলোক নিরপেক্ষ দশা বা জৈব সংশ্লেষ দশা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আলোক দশার পরর্বতী এই দশায় আলোর প্রয়োজন নেই বলে এই দশাকে আলোক নিরপেক্ষ দশা বলা হয়।
অনেকের হয়ত মনে হতে পারে এই দশাটি সূর্যের আলো থাকাকালীন হয় না, শুধু মাত্র রাতেই হয় তা কিন্তু নয়, দিনের বেলাতেও এই দশা সংঘটিত হতে পারে। আসলে আলোক দশা পরর্বতী এই দশায় আলোকের উপস্থিতি প্রয়োজন হয় না।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – বাংলা | English | ইতিহাস | ভূগোল
আলোক দশায় উৎপন্ন কি কি পদার্থ এই দশায় প্রয়োজন হয়?
আলোক দশায় উৎপন্ন ATP এবং বিজারিত NADP (নিকোটিনামাইড আডেনাইন ডাই ফসফেট) অর্থাৎ NADPH+H+ এই দশায় ব্যবহৃত হয়।
অন্ধকার দশায় কি কি ঘটনা সংঘটিত হয়?
শর্করা সংশ্লেষঃ এই অন্ধকার দশায় জৈব অণু শর্করা সংশ্লেষিত হয়। তাই এই দশাকে জৈব সংশ্লেষ দশাও বলা হয়।
অঙ্গার আত্তীকরণঃ বায়ুর কার্বন ডাই অক্সাইড এর কার্বন বা অঙ্গার এই দশায় উৎপন্ন শর্করায় অঙ্গীভূত হয়। তাই সালোক সংশ্লেষের অপর নাম অঙ্গার আত্তীকরণ।
কার্বন ডাই অক্সাইড এর বিজারণঃ এই দশায় জৈব রাসায়নিক বস্তু হিসাবে শর্করা উৎপন্ন হয়। বায়ুর কার্বন ডাই অক্সাইড বিজারিত হয়ে শর্করা উৎপন্ন করে।
NADPH এর জারণঃ আলোক দশায় উৎপন্ন বিজারিত NADP পুনরায় আলোক দশায় ব্যবহৃত হওয়ার জন্য জারিত NADP তে পরিণত হয় NADPH+H+ → NADP+
রাইবিউলুজ বিস ফসফেটের সঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইডের সংযুক্তির দ্বারা এই দশা শুরু হয় আর শেষ হয় পুনরায় রাইবিউলুজ বিস ফসফেটের উৎপত্তি দ্বারা। অর্থাৎ যেখান থেকে শুরু আবার সেখানেই শেষ। বার বার একই বিক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলে চক্রাকারে।
[আরো পড়ুন – ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন এবং সালোকসংশ্লেষের আলোকদশা]
এই দশায় অঙ্গার আত্তীকরণ এর ঘটনা প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন ব্ল্যাকম্যান(1905)। তাই এই পর্যায়কে ব্ল্যাকম্যান বিক্রিয়া বলে। কেলভিন ও বেনসন (1956) তেজস্ক্রিয় কার্বন দ্বারা এই দশার বিক্রিয়া গুলিকে বিশদ ভাবে ব্যাখ্যা করেন। তাই এদের নাম আনুসারে এই চক্রের নাম কেলভিন ও বেনসন চক্র।
কেলভিন চক্রের প্রাথমিক এনজাইমটি হল RuBisCo এর পুরো নাম হল রাইবিউলুজ বিস ফসফেট কার্বঅক্সিলেজ অক্সিজিনেজ (Ribulose-1,5-bisphosphate carboxylase/oxygenase) ।
চক্রটি শুরু হয় পাঁচ কার্বন যুক্ত রাইবোলোজ বিস ফসফেট সঙ্গে এক কার্বন যুক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের সংযুক্তির দ্বারা। বিভিন্ন যৌগ সংশ্লেষের মধ্যে দিয়ে শর্করা এবং রাইবিউলুজ বিস ফসফেট পুনরায় উৎপন্ন হয়, তাই একে চক্র বলে।
নবম শ্রেণির অন্য বিভাগগুলি – গণিত | জীবনবিজ্ঞান | ভৌতবিজ্ঞান
কেলভিন চক্রের বিভিন্ন ধাপ
-
-
- RuBisCo উৎসেচকের সাহায্যে বাতাসের এক কার্বন যুক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড অণু, 5 কার্বন বিশিষ্ট রাইবিউলুজ বিস ফসফেট (RUBP) অণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি অস্থায়ী যৌগ ‘অরবিটল বিস ফসফেট’ তৈরি করে।
- এই এক অণু অস্থায়ী যৌগ ‘অরবিটল বিস ফসফেট’ থেকে কেলভিন চক্রের প্রথম স্থায়ী জৈব যৌগ তিন কার্বন যুক্ত দুই অণু ফসফোগ্লিসারিক আসিড (PGA) উৎপন্ন হয়।
- 2 অণু ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড থেকে 2 অণু তিন কার্বন যুক্ত ফসফোগ্লিসার্যালডিহাইড (PGALD) উৎপন্ন হয়।
- এই ফসফোগ্লিসার্যালডিহাইড থেকে 6 কার্বন বিশিষ্ট এক অণু শর্করা (C6H12O6) উৎপন্ন হয়। এরপর কয়েকটি বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় RUBP উৎপন্ন হয়।
6 অণু RUBP এর সঙ্গে 6 অণু CO2 যুক্ত হয়ে 12 অণু PGALD উৎপন্ন হয় । 12 অণু PGALD র দু অণু থেকে 1 অণু শর্করা আর বাকি 10 অণু PGALD থেকে 6 অণু RUBP তৈরি হয় এবং এই বিক্রিয়া চক্রকারে চলতে থাকে।সংক্ষিপ্ত বিক্রিয়া পথঃ
অধ্যায় সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX_LSc_3c
-