নবম শ্রেণী – জীবনবিজ্ঞান | তৃতীয় অধ্যায় – জৈবনিক প্রক্রিয়া (সালোকসংশ্লেষ)
বেঁচে থাকার জন্য অন্যতম উপাদান হল খাবার। যে সকল প্রাণীরা খাবার তৈরি করতে পারে না (যেমন মানুষ), তাদের খাবারের অন্য অন্য উৎসের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। আর প্রথমিকভাবে এই খাবার আসে উদ্ভিদ থেকেই। আর উদ্ভিদ যে প্রক্রিয়ায় খাবার তৈরি করে, তাকে বলা হয় সালোকসংশ্লেষ।
সালোকসংশ্লেষের ইংরাজী হল photosynthesis। এই photosynthesis শব্দটি, দুটি শব্দের সমষ্টি ‘photos’ এবং ‘synthesis’। ‘photos’ শব্দটি একটি গ্রীক শব্দ যার অর্থ হল আলো আর ‘synsthesis’ শব্দের অর্থ হল সংশ্লেষ। আর বাংলায় সালোকসংশ্লেষের (সালোক অর্থাৎ স + আলোক), অর্থ হল আলোক সহযোগে সংশ্লেষ।
Photosynthesis শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী বার্নেস।
চিত্র সৌজন্য [CC BY-SA 3.0], via Wikimedia Commons
সালোকসংশ্লেষ কাকে বলে? (সালোকসংশ্লেষের সংজ্ঞা)
যে শারীরবৃত্তীয় জৈবনিক প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিল রঞ্জক যুক্ত জীব, মাটি থেকে জল এবং বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে সূর্যালোক ও ক্লোরোফিলের সহয়তায় শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে, সেই জৈবনিক প্রক্রিয়াকে সালোকসংশ্লেষ বলে।
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উপজাত পদার্থ হল অক্সিজেন ও জল।
সালোকসংশ্লেষ বিক্রিয়া
ভেবে দেখো, উপরোক্ত সংজ্ঞায় জীব কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে, অথচ সাধারণত আমরা মনে করি উদ্ভিদই সালোকসংশ্লেষ করতে পারে। এই ধারণা কিন্তু ঠিক নয়, কারণ প্রধানত ক্লোরোফিলযুক্ত উদ্ভিদেই সাধারণত সালোকসংশ্লেষ হলেও কিছু কিছু প্রাণী যেমন – ক্রাইসামিবা, ইউগ্লিনা প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও সালোকসংশ্লেষ করতে পারে।
সালোকসংশ্লেষকে অঙ্গার আত্তীকরণ বলে কেন?
‘অঙ্গার’ কথার অর্থ হল ‘কার্বন’ আর আত্তীকরণ শব্দের অর্থ হল নিজস্ব সাতন্ত্রতা হারিয়ে সম্পূর্ণভাবে অন্য কিছুর অংগীভূত হওয়া। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বাতাসের কার্বনডাই অক্সাইডের কার্বন (C), সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শর্করায়( C6H12O6) অংগীভূত হয় অর্থাৎ শর্করার অংশে পরিণত হয়। তাই এই প্রক্রিয়াকে অঙ্গার আত্তীকরণ বলে।
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াকে একটি জারণ – বিজারণ প্রক্রিয়া বলা হয় কেন?
এই বিক্রিয়ায় CO2 অর্থাৎ কার্বন ডাই অক্সাইড, শর্করা অর্থাৎ (C6H12O6)-এ পরিণত হয়। CO2 এর সাথে H এর সংযোগ ঘটছে অর্থাৎ বিজারণ হচ্ছে। আবার H2O বা জল থেকে হাইড্রোজেনের অপসরণ ঘটছে (H2O → O2) অর্থাৎ জারণ ঘটছে। তাই সালোকসংশ্লেষ একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া।
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া উদ্ভিদের কি কি স্থানে সংঘটিত হয়?
সালোকসংশ্লেষ সাধারণ সবুজ উদ্ভিদের পাতার মেসোফিল কলায় সংঘটিত হয়। বিষমপৃষ্ঠ পাতার প্যালিসেড ও স্পঞ্জী প্যারেনকাইমা কোশে এবং সমাঙ্গ পাতার স্পঞ্জী প্যারেনকাইমা কোশের ক্লোরোপ্লাস্ট সংঘটিত হয়।
পাতাকে সালোকসংশ্লেষের প্রধান স্থান বলা হয় কেন?
- পাতায় ক্লোরোফিলের উপস্থিতিই পাতাকে সালোকসংশ্লেষের প্রধান স্থান করে তুলেছে।
- পাতার ফলক অনেক চওড়া হওয়ায় সালোকসংশ্লেষের জন্য অনেকটা জায়গা পাওয়া যায়।
- এছাড়া পাতার সজ্জাক্রম এমন হয়, যে গাছের শাখার সঙ্গে পাতার অবস্থান হয় সমকোণে। যার ফলে প্রত্যেকটি পাতা সমভাবে সূর্যালোক পায়।
পাতা ছাড়া উদ্ভিদের অন্যান্য অঙ্গ যা সালোকসংশ্লেষ করতে পারে, যেমন –
- সদ্যোজাত উদ্ভিদের সবুজ কাণ্ড
- লাউ, কুমড়ো ইত্যাদির সবুজ কাণ্ড
- ফুলের সবুজ বৃতি, ফুলের সবুজ কুঁড়ি, বৃন্ত ইত্যাদি
- গুলঞ্চর আত্তীকরণমূল
- অর্কিডের বায়বীয়মূল।
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার উপাদানগুলি কি কি?
সালোকসংশ্লেষের উপাদানগুলি হল জল, কার্বন ডাই অক্সাইড, সূর্যালোক ও ক্লোরোফিল।
জলের উৎস – উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মাটি থেকে মূলরোম দ্বারা শোষিত কৈশিক জলই হল সালোকসংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় জলের উৎস।
কার্বন ডাই অক্সাইডের উৎস –
স্থলজ উদ্ভিদ তার পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে।
জলজ উদ্ভিদ জলে নিমজ্জিত অবস্থায় জলে দ্রবীভূত কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে।
অর্ধ নিম্মজিত উদ্ভিদ বায়বীয় অংশের দ্বারা কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে।
নবম শ্রেণির অন্যান্য বিভাগগুলি দেখ-
- নবম শ্রেণি – বাংলা
- নবম শ্রেণি – ইতিহাস
- নবম শ্রেণি – ভূগোল
- নবম শ্রেণি – ভৌতবিজ্ঞান
- নবম শ্রেণি – জীবনবিজ্ঞান
- নবম শ্রেণি – গণিত
আলোক – সূর্যালোকের বেগুনী – নীল তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো (প্রায় 450-475nm) এবং লাল- কমলা তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো (প্রায় 650-675nm) সালোকসংশ্লেষে ব্যবহৃত হয় ।
ক্লোরোফিল ও অন্যান্য রঙ্গক পদার্থ – পাতার মেসোফিল কলায় অবস্থিত ক্লোরোপ্লাস্টে থাকে মুখ্য রঙ্গক ক্লোরোফিল। এছাড়া পাতায় সূর্যালোক শোষণে কমলা বর্ণের ক্যারোটিন, হলুদ বর্ণের জ্যান্থোফিল এবং লাল বর্ণের ফাইকোএরিথ্রিন এং নীল বর্ণের ফাইকোসায়ানিন সাহায্য করে। এদের সাহায্যকারী রঙ্গক বলা হয়।
এই লেখার দ্বিতীয় পর্বে পড়ুন ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন এবং সালোকসংশ্লেষের আলোকদশা।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
IX-LSc-3a