শেষ একমাস ধরে একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছে টিপু।
কবে শেষ হবে, কবে শেষ হবে, আজ ছিল সেই দিন। মানে ব্যাপারটা আমার – আপনার কাছে তেমন কিছু একটা না হলেও, টিপুর কাছে আজ একটা খুব উল্লেখযোগ্য দিন। আজ পরীক্ষা শেষ হয়েছে টিপুর।
ভাবছেন পরীক্ষা নিয়ে টিপু টেনশন করছিল?
আরে ওসব কিছু না, পড়াশোনায় টিপু বেশ ভালোর দিকেই। ও যে ভালো রেজাল্ট করবে তা ও একপ্রকার নিশ্চিত। আসলে ব্যাপারটা হয়েছে কি, টিপু একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলবে বলে ঠিক করেছে। কিন্তু ঠিক করলেই তো হল না!
টিপু তো তার মর্জির মালিক নয়।প্রচুর আন্দোলন এবং অনশন, মা-বাবার সামনে ধন্যা দিয়ে আর শেষ দুটো ইউনিট টেস্টে অঙ্কে 40 এ 40 পেয়ে সে এই অধিকার অর্জন করেছে। তাও মাত্র আগামি দুই মাসের জন্য, কারণ আগামি বছর টিপু মাধ্যমিক দেবে, তাই … টিপুর দুঃখের কথা আর না হয় নাই বললাম।
এইখানে একটা কথা বলে রাখি, টিপুর খুব বাগান করার শখ। আর তাই টিপু ঠিক করেছে বাগান করার নানান পদ্ধতি নিয়ে ও একটা চ্যানেল খুলবে। আর আজ থেকেই শুরু করবে তার চ্যানেলের জন্য ভিডিও বানানো।আর বাগান করার ভিডিও তো একদিনের কাজ নয়।
একদম প্রথম থেকে মানে সেই বীজ পোঁতা থেকে গাছে ফুল ফোটা অবধি পুরোটাই তুলে ধরতে হবে সবার সামনে। আজকেই প্রথম shooting। টিপু জাস্ট ভাবতে পারছে না।
স্কুল থেকে ফিরে, ব্যাগ রেখে, জামা – কাপড় বদলে, কোন রকমে দুই – একটা খাবার খেয়ে ও ছাদের দিকে দৌড়ালো। মাকে বলে কয়েকটা গাঁদা ফুলের চারা জোগাড় করে রেখেছিল, সেই গুলো দিয়েই আজকের প্রথম শুটিং।
দুই – তিন বার আমতা – আমতা করে, বার তিনেক আগডুম বাগডুম বকে ভিডিওগুলো যখন শেষ করলো, তখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে গেছে। এবার এডিট করার পালা। মোবাইল নিয়ে নীচে নেমে, বীরের মতো কম্পিউটারের দিকে এগিয়ে গেল সে। আজ তাকে কেউ কিছু বলার নেই, ভাবা যায়!
[আরো পড়ুন – বিনামূল্যে কিভাবে বিদেশি ভাষা শেখা যায় (দিনুদার কেরামতি)]
মোবাইল থেকে ফাইল গুলো কম্পিউটারে চটপট ট্রান্সফার করে নিল টিপু।
ও প্রথমে ভেবেছিল কাইনমাস্টার দিয়ে মোবাইলেই এডিট করবে, কিন্তু ঐ appটা দিয়ে এডিট করলে একটা watermark আসে। তাই ও ভেবেছে কোন একটা software ডাউনলোড করে এডিট করবে।
কিন্তু ইন্টারনেট খুলে তো মাথা খারাপ হবার জোগাড়।
সফটওয়ারের অন্ত নেই, কে টাকা চাইছে, কারুরটা এতটাই জটিল যে দেখেই টিপু ঘাবড়ে যায়। ভাবে, এত কষ্ট করে মা – বাবার পারমিশন জোগাড় করলো, আর একটুখানি এডিটিং না করতে পারার জন্য কিনা এতো ভালো আইডিয়া মাঠে মারা যাবে!
খানিকক্ষণ এদিক – সেদিক করে, সেই কাজটা সে করেই ফেললো। ভাবছেন কোন কাজ?
দিনুদাকে ফোন করা, কারণ দিনুদা ছাড়া টিপু যে অচল।
দিনুদাকে একবারেই ফোনে পেয়ে গেল টিপু। ফোন ধরে দিনুদা বললো-
দিনু – কি টিপু মাস্টার কি খবর? পরীক্ষা কেমন হল?
টিপু – পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু এখন একটা খুব সমস্যায় আছি দিনুদা। কিছুতেই ম্যানেজ করতে পারছি না।
দিনু – কেন কি হল আবার?
টিপু – তোমাকে বলেছিলাম না, যে আমি বাগান করা নিয়ে একটা ইউটিউবে একটা চ্যানেল খুলবো। রোজ হাতে – পায়ে ধরে কিছুদিনের জন্য মা – বাবার অনুমতি জোগাড় করেছি। একটা দারুণ ভিডিও shot করেছি, কিন্তু এডিট করতে পারছি না।
দিনু – বাবা, অনেক কাজ করেছিস তো! এবার একটা কাজ কর, Windows Movie Maker খোল। Search এ গিয়ে খুঁজে দেখ।
টিপু – এটা কি?
দিনু – Windows Movie Maker একটা freeware মানে একটা software যা বিনামুল্যে ব্যবহার করা যায়। এই softwareটা সব windows কম্পিউটারেই থাকে। এর সাহায্যে ছবিকে – ভিডিও করা যায়, আর ভিডিও কেও আরও ভালো ভাবে এডিট করা যায়। তবে একটা কথা মনে রাখিস, Adobe Premire বা ঐ ধরনের দামি software দিয়ে যা করা যায় তা কিন্তু কোনভাবেই এই Movie Maker দিয়ে করা সম্ভব নয়। আমি তোকে বলে দিচ্ছি কিভাবে ব্যবহার করতে হবে। তুই ঘাঁটলে আরও ভালো ভাবে বুঝতে পারবি।
প্রথমে যে ভিডিও বা ফটোগুলো দিয়ে কাজ করবি, তাদের আলাদা করে রাখ। এবার, ঐ ফাইলগুলো movie maker এর dashboard এ drag করে নিয়ে আয়। এবারে দেখ ছবি গুলো যেখানে আছে, ওটাকে storyboard বলা হয়। প্রয়োজনমত ফাইলকে সাজিয়ে নে। এক কাজ কর, প্রথমে দুই – তিনটে ছবি দিয়ে আগে প্র্যাকটিস করে নে।
টিপু – দাঁড়াও, তিনটে ছবি নিলাম, এরপর ওদের storyboard এ সাজিয়ে নিলাম। এবার কি করবো?
দিনুদা- দেখ উপরে tools বলে একটা মেনু আছে। ওখানে বিভিন্ন effects আছে। ওর মধ্যে থেকে কয়েকটা দরকার মতো select করে নে। দুটো ছবির মাঝের animationকে transitions বলা হয়। এর জন্যও effect দিতে পারিস।
টিপু – দিলাম। বেশ সহজ তো!
দিনুদা – এবার তুই এর সাথে কোন audio ফাইল add করে দিতে পারিস। দেখতে – শুনতে ভালো লাগবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, কাজ হয়ে গেলে শুধু ফাইল সেভ করলেই কিন্তু ভিডিও হবে না!
টিপু – তাহলে?
দিনুদা – দেখ ওখানে save movie বলে একটা option আছে, ওর মধ্যে নানান option দেওয়া আছে। তোর যেমন দরকার তেমন বেছে নিতে পারিস।
টিপু – আচ্ছা, তুমি তো ছবি দিয়ে কিভাবে ভিডিও বানাতে হয় তা দেখালে। কিন্তু আমি তো ভিডিও এডিট করবো, কিভাবে করবো?
দিনুদা – একই রকম ভাবে হবে, শুধু ওখানে ছবির বদলে ভিডিও ক্লিপ select করে নিতে হবে। ব্যাস হয়ে গেল।
টিপু – ওহ, তাহলে তো আর কোনও সমস্যা রইল না!
দিনুদা – তাহলে আর কি, এবার তোমার থুড়ি তোমার চ্যানেলের জয় – যাত্রা শুরু হোক!
দিনুদা সিরিজের অন্যান্য লেখাগুলি পড়ুন।
টিপু ফোন রেখে তার কাজে মেতে গেল।