পদার্থবিদ্যা – একাদশ শ্রেণি – ক্যালোরিমিতি (অধ্যায়- পদার্থের ধর্মসমূহ)
তাপবিজ্ঞানের যে শাখায় এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে সঞ্চালিত তাপের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ক্যালোরিমিতি বলা হয়।
সহজভাবে বললে বলা যায় যে, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ উষ্ণতা বৃদ্ধি করার জন্য কোনো বস্তুকে কতটা তাপ দিতে হবে বা উষ্ণতা হ্রাস করার জন্য বস্তু থেকে কতটা তাপ নিয়ে নিতে হবে, বিভিন্ন উষ্ণতার দুটি বস্তুর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করলে বস্তু দুটির মধ্যে কী পরিমাণ তাপের আদান প্রদান হবে এবং যখন বস্তু দুটি তাপীয় সাম্যবস্থায় পৌঁছবে তখন বস্তু দুটির সাধারণ তাপমাত্রা কী হবে- ক্যালোরিমিতির সাহায্যে সেই সব কিছুই নির্ণয় করা সম্ভব।
ক্যালোরিমিতির মূলনীতি ও তার ব্যাখ্যা
ভিন্ন উষ্ণতায় থাকা দুটি বস্তুকে যদি পরস্পরের সংস্পর্শে আনা হয়, তবে গরম বস্তুটি তাপ বর্জন করার ফলে তার উষ্ণতা কমতে থাকে এবং ঠাণ্ডা বস্তুটি তাপ গ্রহণ করার ফলে তার উষ্ণতা বাড়তে থাকে। এই তাপ সঞ্চালনের প্রক্রিয়াটি ততক্ষণ চলতে থাকে, যতক্ষণ না দুটি বস্তুর উষ্ণতা এক হয়। এই একই উষ্ণতায় পৌছবার অবস্থাকে তাপীয় সাম্যবস্থা বলা হয়ে থাকে।
আমরা জানি যে তাপ এক ধরনের শক্তি। তাপ সঞ্চালনের সময় এই তাপশক্তিরই আদান প্রদান ঘটে এক বস্তু থেকে আরেক বস্তুতে। শক্তির সংরক্ষণ সূত্র অনুসারে, শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না।
একাদশ শ্রেনি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল
সুতরাং, তাপ সঞ্চালনের সময় তাপশক্তি যদি অন্য কোনো শক্তিতে রূপান্তরিত না হয় বা (অন্য কোনো শক্তি যদি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত না হয়)
তবে একটি বস্তু দ্বারা বর্জিত তাপ = অপর বস্তু দ্বারা গৃহীত তাপ – এটিই ক্যালোরিমিতির মূলনীতি।
ভিন্ন ভিন্ন উষ্ণতায় থাকা দুইয়ের বেশি বস্তুর ক্ষেত্রেও ক্যালোরিমিতির এই নীতি প্রযোজ্য হয়। ক্যালোরিমিতির মূলনীতিকে তাই এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়-
গরম বস্তুগুলি দ্বারা বর্জিত তাপ = ঠাণ্ডা বস্তুগুলি দ্বারা গৃহীত তাপ
ক্যালোরিমিটার
ক্যালোরিমিতির পরীক্ষাতে গৃহীত বা বর্জিত তাপ পরিমাপ করার জন্য ক্যালোরিমিটার ব্যবহার করা হয় এটি একটি চোঙাকৃতি ধাতব পাত্র যা সাধারণত তামার তৈরী। এটি আংশিকভাবে উপযুক্ত তরল পদার্থ (ক্যালোরিমিতিক পদার্থ) দ্বারা পূর্ণ থাকে। একটি তামার আলোড়ক থাকে যার সাহায্যে তরলকে ভালোভাবে নাড়ানো হয় এবং একটি থার্মোমিটার পাত্রের তরলের মধ্যে ডোবানো থাকে যা দিয়ে তরলের উষ্ণতা মাপা হয়।
একাদশ শ্রেনি থেকে → বাংলা | ইংরাজি
ক্যালোরিমিটারের পরীক্ষাতে কোনো নির্দিষ্ট ভর এবং উষ্ণতার গরম বস্তুকে ক্যালোরিমিটারের তরলে ফেলা হয়। কিছু সময় পর পুরো ব্যবস্থাটি একটি তাপীয় সাম্যবস্থায় পৌঁছে যায়। তাপীয় সাম্যাবস্থায় পৌঁছানোর সময় ক্যালোরিমিতির মূল নীতি অনুযায়ী, গরম বস্তু দ্বারা বর্জিত তাপ = ঠাণ্ডা বস্তু দ্বারা গৃহীত তাপ এই নীতি মানতে হলে নিম্নোক্ত তিনটি শর্ত পূরণ করা দরকার।
১। বস্তুটি তরলে দ্রবীভূত না হয়।
২। বাইরে থেকে কোনো তাপ ক্যালোরিমিটারে প্রবেশ না করে বা ক্যালরিমিটার থেকে কোনো তাপ বাইরে বেরিয়ে না যায়।
৩। ক্যালরিমিটার তরল এবং উষ্ণ বস্তুটির মধ্যে কোনো তাপশোষক বা তাপমোচক ভৌত বা রাসায়নিক বিক্রিয়া না ঘটে।
ক্যালরিমিটারের সাথে পরিপার্শ্বের তাপের আদান প্রদান মূলত তিনটি প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।
১। পরিবহনের দরুন তাপক্ষয় কমানোর জন্য ক্যালোরিমিটারকে কুপরিবাহী পদার্থের সূচি মুখের উপর বসানো হয় এবং ক্যালোরিমিটারের মুখে কুপরিবাহী ঢাকনা রাখা হয়।
২। বিকিরণের জন্য তাপক্ষয় কমাবার জন্য ক্যালোরিমিটারের বাইরের তল ভালোভাবে পালিশ করা হয়, কখনো আবার নিকেলের প্রলেপ দেওয়া হয়।
৩। পরিচলনের জন্য তাপক্ষয় কমানোর জন্য ক্যালোরিমিটারকে আবদ্ধ পাত্রের মধ্যে রাখা হয়। ফলে পাত্র ও ক্যালোরিমিটারের মধ্যে স্থির বায়ু থাকায় পরিচলন পদ্ধতিতে তাপক্ষয় অনেকটা কম হয়। অনেক সময় ক্যালোরিমিটার ও পাত্রের মধ্যে কুপরিবাহী পদার্থ যেমন শুকনো তুলো, পশম ইত্যাদি রাখা হয়।
ক্যালোরিমিতিক পদার্থ
জল
ক্যালোরিমিতির পরীক্ষায় জলের ব্যবহার খুবই প্রচলিত কারণ জল সহজলভ্য। কিন্তু জল ব্যবহারে ক্ষেত্রেও কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমন-
১। জলের আপেক্ষিক তাপ অন্য তরলের চেয়ে অনেক বেশী। ফলে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ গ্রহণে অন্যান্য তরলের তুলনায় জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি কম হয়। উষ্ণতা বৃদ্ধি কম হলে পাঠ নেবার সময় ভুল হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
২। জলের স্ফুটনাঙ্ক 1000c এর থেকে বেশি উতপ্ত কোনো পরীক্ষাধীন বস্তুকে জলে ফেললে কিছু পরিমাণ জল সঙ্গে সঙ্গেই বাষ্পীভূত হয়ে যেতে পারে।
তেল
সুবিধা-
১। তেলের আপেক্ষিক তাপ জলের চেয়ে অনেক কম। তাই একই পরিমাণ তাপ প্রয়োগে তেলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিও অনেক বেশী হয়।
২। তেলের ঘনত্ব কম। যদি ক্যালরিমিটার সম আয়তন জলের জায়গায় তেল নেওয়া হয় তখন তেলের ভর তুলনায় কম হয়, নির্দিষ্ট পরিমাণের তাপের জন্য তেলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বেশি হয়।
অসুবিধা- তেলের সুনির্দিষ্ট আপেক্ষিক তাপ না থাকার জন্য একই তেলের বিভিন্ন নমুনার জন্য পরীক্ষা লব্ধ ফলের মানের তারতম্য হতে পারে।
একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer
অ্যানিলিন
এর আপেক্ষিক তাপ কম (0.62), স্ফুটনাঙ্ক বেশি (183.90c) এবং অ্যানিলিন বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
তাই বর্তমানে ক্যালরিমিতিক পদার্থ হিসাবে অ্যানিলিন শ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে।
পর্ব সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতি
প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয় এবং IIT খড়গপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী স্বধীতি মাঝি। পদার্থবিদ্যা চর্চার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গান গাওয়া এবং বই পড়ায় সমান উৎসাহী স্বধীতি।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
XI_P_7.9a