Class-11

উৎসেচকের কার্যপদ্ধতি

Biologyএকাদশ শ্রেনি – সজীব কোশের রাসায়নিক গঠন


উৎসেচকের কার্যপদ্ধতি বোঝার আগে আমরা একটি বাস্তব উদাহরণ বুঝে নিই।

ধরো, তোমার বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে ২০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সেখানে তুমি যদি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাও তাহলে তোমার সময় ও শ্রম দুটোরই অপচয় কম হবে। এক্ষেত্রে সাইকেল না চালিয়ে গেলেও তুমি স্কুলে ঠিকই পৌঁছতে তবে সাইকেল করে যাওয়ায় তোমার কাজটা আরও সুষ্ঠু ভাবে হবে।

সেরকম ভাবেই কোনো জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়া উৎসেচকের সাহায্য ছাড়াও হওয়া সম্ভব কিন্তু উৎসেচকের উপস্থিতিতে বিক্রিয়া সুষ্ঠ ভাবে হয় ও বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায়।

উৎসেচক যেসব পদার্থের ওপর ক্রিয়া করে তাদের বিক্রিয়ক বা সাবস্ট্রেট বলে। উৎসেচক বা এনজাইমের একটি নির্দিষ্ট স্থানে সাবস্ট্রেট যুক্ত হয়ে এনজাইম-সাবস্ট্রেট কমপ্লেক্স গঠন করে। উৎসেচকের যে নির্দিষ্ট স্থানে সাবস্ট্রেট যুক্ত হয় তাকে সক্রিয় স্থান বা Active site বলে। এরপর এনজাইম-সাবস্ট্রেট কমপ্লেক্স Transition state বা অন্তরবর্তী পর্যায় অতিক্রম করে সাবস্ট্রেটটি প্রডাক্টে বা বিক্রিয়াজাত পদার্থে পরিণত হয় ও উৎসেচকটি প্রডাক্ট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।

এবার আমরা জেনে নিই যে, কি কি বিষয় উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতাকে কে প্রভাবিত করে-

1) বিক্রিয়াজাত পদার্থ (P)-এর ঘনত্ব

দুটি বিক্রিয়ক মিলে জৈব অনুঘটক অর্থাৎ উৎসেচকের প্রভাবে বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরিমাণ বাড়তে থাকে। একটা সময় ওই বিক্রিয়াজাত পদার্থের ঘনত্ব আর নতুন বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। একে আমরা নেগেটিভ ফিডব্যাক বলতে পারি।

2) বিক্রিয়কের ঘনত্ব

বিক্রিয়কের ঘনত্ব উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতাকে প্রভাবিত করে। বিক্রিয়কের ঘনত্ব বাড়তে থাকলে একটা নির্দিষ্ট মান পর্যন্ত উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা বাড়ে। বিক্রিয়কের যে মোলার ঘনত্বে এই বিক্রিয়ার হার সর্বাধিক হয় তাকে Vmax বলে। যে মোলার ঘনত্বে উৎসেচকের ক্রিয়া Vmax হয় তাকে Km বা মাইকেলিস মেনটেন ধ্রুবক (Michaelis Menten Constant) বলে।

3) প্রতিরোধক

যদি সাবস্ট্রেট ছাড়া অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ উৎসেচকের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে সেক্ষেত্রে উৎসেচকের  ক্রিয়াশীলতা কমে যায় এই ধরণের রাসায়নিক যৌগকে প্রতিরোধক বা Inhibitors বলে।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry  | Biology | Computer

প্রতিরোধকের কার্য প্রণালী

এদের গঠন প্রায় সাবস্ট্রেট গঠনের অনুরূপ, সেই জন্য যদি উৎসেচকের সাবস্ট্রেট সংযুক্ত হওয়ার সক্রিয় স্থানে ওই প্রতিরোধক যুক্ত হয়ে গেলে সাবস্ট্রেট আর সংযুক্ত হতে পারে না সুতরাং উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা কমে যায়। যেমন- সাক্সিনিক ডিহাইড্রোজিনেজ উৎসেচক,  সাক্সিনিক অ্যাসিডকে ফিউমেরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে। কিন্তু ম্যালিক অ্যাসিডের গঠন সাক্সিনিক অ্যাসিডের মতো হওয়ায় যদি উৎসেচকের সক্রিয় স্থানে সাবস্ট্রেট অর্থাৎ সাক্সিনিক অ্যাসিডের জায়গায় ম্যালিক অ্যাসিড যুক্ত হয়ে যায় তবে উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা কমে যায়।

উৎসেচকের কার্যপদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন মডেল

তালা চাবি মতবাদ (Lock and Key Hypothesis)

1884 সালে বিজ্ঞানি এমিল ফিশার উৎসেচকের কার্য পদ্ধতি সংক্রান্ত তালা চাবি মতবাদ প্রকাশ করেন। তাঁর মতে উৎসেচক এবং সাবস্ট্রেটের সম্পর্ক অনেকটা তালা চাবির মতো। যেরকম একটি তালা একটি নির্দিষ্ট চাবির সঙ্গেই খাপ খায় এবং সেই চাবি দ্বারাই তালাটি খোলা বন্ধ করা যায় অপর কোনো চাবি দ্বারা হয়না। তেমনই উৎসেচক এবং সাবস্ট্রেটের ক্ষেত্রে উৎসেচক তালার মতো ও সাবস্ট্রেট চাবির মতো আচরণ করে। এক্ষেত্রে উৎসেচকের গঠনে উপস্থিত ত্রিমাত্রিক সক্রিয় স্থানের (Active site) পরিপূরক গঠন বিশিষ্ট সাবস্ট্রেট আবদ্ধ হয়ে এনজাইম-সাবস্ট্রেট কমপ্লেক্স গঠন করে বিক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রনে অংশ গ্রহণ করে। অপর কোনো ভিন্ন আকৃতি বিশিষ্ট বিক্রিয়ক এখানে আবদ্ধ হতে পারেনা।

ইন্ডিউসড ফিট মতবাদ

বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল. ই. কোশল্যান্ড উৎসেচকের কার্যপদ্ধতি সংক্রান্ত এই মডেলটির প্রস্তাব করেন। তাঁর মতে উৎসেচকের যে স্থানে সাবস্ট্রেট যুক্ত হয় অর্থাৎ সক্রিয় স্থানটি গঠনগতভাবে নমনীয় হয়। সাবস্ট্রেট যুক্ত হওয়ার পর Transition state এ এই সক্রিয় স্থানটির আকৃতি প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে। তাঁর মতে উৎসেচকের সক্রিয় স্থানে দুটি বিশেষ অংশ থাকে। যথা- বাট্রেসিং গ্রূপ যা সাবস্ট্রেটকে আবদ্ধ রাখে ও ক্যাটালাইটিক গ্রূপ যা সাবস্ট্রেটের বিভিন্ন বন্ধনকে ভেঙে অথবা নতুন বন্ধন গঠন করে সাবস্ট্রেটকে প্রডাক্টে পরিণত করে।

অ্যালোস্টেরিক রেগুলেশন

এই মতবাদ অনুসারে উৎসেচকের আণবিক গঠনে দুটি বিশেষ স্থান থাকে যার একটিকে সক্রিয় স্থান বলে যেখানে সাবস্ট্রেট যুক্ত হয় এবং অপর স্থানটিকে অ্যালোস্টেরিক স্থান বলে যেখানে বিভিন্ন রকমের ইফেক্টর অণু (যেমন – ইনডিউসার, ইনহিবিটর, কো ফ্যাক্টর) যুক্ত হয়ে উৎসেচকের ক্রিয়া নিয়িন্ত্রন করে।

অ্যালোস্টেরিক রেগুলেশন কাকে বলে?

যে প্রক্রিয়ায় উৎসেচকের অ্যালোস্টেরিক স্থানে ইফেক্টর অণু সংযুক্তির ফলে উৎসেচকের সক্রিয় স্থানের আকৃতি পরিবর্তিত হয় ফলে উৎসেচকের সক্রিয় স্থানের প্রকৃতি সাবস্ট্রেট সংযুক্তির অনুকূল না প্রতিকূল তা নির্ধারিত হয়ে  উৎসেচকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি অথবা হ্রাস পায় তাকে অ্যালোস্টেরিক রেগুলেশন বলে এবং এই ধর্মকে অ্যালোস্টেরিজম বলে।

অ্যালোস্টেরিজম দুই প্রকার। যথা- ধনাত্মক অ্যালোস্টেরিজম ও ঋণাত্মক অ্যালোস্টেরিজম।

  • ধনাত্মক অ্যালোস্টেরিজম –উৎসেচকের অ্যালোস্টেরিক স্থানে ইফেক্টর অণু সংযুক্তির ফলে উৎসেচকের সক্রিয় স্থানের আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে সাবস্ট্রেট সংযুক্তির পক্ষে অনুকূল হলে উৎসেচকের ক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাকে ধনাত্মক অ্যালোস্টেরিজম বলে।
  • ঋণাত্মক অ্যালোস্টেরিজম–উৎসেচকের অ্যালোস্টেরিক স্থানে ইফেক্টর অণু সংযুক্তির ফলে উৎসেচকের সক্রিয় স্থানের আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে সাবস্ট্রেট সংযুক্তির পক্ষে প্রতিকূল হলে উৎসেচকের ক্রিয়ার হার হ্রাস পায়। এই ঘটনাকে ঋণাত্মক অ্যালোস্টেরিজম বলে।

একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

এবার আমরা জেনে নিই যে, কি কি বিষয় উৎসেচকের ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে-

1) উৎপন্ন পদার্থ (P)-এর ঘনত্ব

যখন দুটি বিক্রিয়ক মিলে জৈব অনুঘটক অর্থাৎ উৎসেচকের প্রভাবে কোনো বস্তু উৎপন্ন করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপন্ন পদার্থের পরিমাণ বাড়তে থাকে। একটা সময় ওই উৎপন্ন পদার্থ আর নতুন করে পদার্থ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাঁধা দেয়। একে আমরা নেগেটিভ ফিডব্যাক বলতে পারি।

2) বিক্রিয়কের ঘনত্ব

বিক্রিয়কের ঘনত্ব উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতাকে প্রভাবিত করে। বিক্রিয়কের ঘনত্ব বাড়তে থাকলে একটা নির্দিষ্ট মান পর্যন্ত উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা বাড়ে। বিক্রিয়কের যে মোলার ঘনত্বে এই বিক্রিয়ার হার সর্বাধিক হয় তাকে Vmax বলে। যে মোলার ঘনত্বে উৎসেচকের ক্রিয়া Vmax হয় তাকে KM বা মাইক্রেলিস মেনটেন ধ্রুবক (Michaelis Menten Constant) বলে।

3) প্রতিরোধক

যদি সাবস্ট্রেট ছাড়া অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ উৎসেচকের সাথে যুক্ত হতে পারে সেক্ষেত্রে উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা কমে যায় এই ধরণের রাসায়নিক যৌগকে প্রতিরোধক বা Inhivitors বলে।

এটি আবার দুরকম – i) প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিরোধক ও ii) অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিরোধক।

i) প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিরোধক – এদের গঠন প্রায় সাবস্ট্রেট গঠনের অনুরূপ, সেই জন্য যদি উৎসেচকের সাবস্ট্রেট সংযুক্ত হওয়ার স্থানে ওই প্রতিরোধক যুক্ত হয়ে গেলে সাবস্ট্রেট আর সংযুক্ত হতে পারে না সুতরাং উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা কমে যায়। যেমন- সাক্সিনিক ডিহাইড্রোজিনেজ উৎসেচক সাক্সিনিক অ্যাসিডকে ফিউমেরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে। কিন্তু ম্যালিক অ্যাসিডের গঠন সাক্সিনিক অ্যাসিডের মতো হওয়া যদি উৎসেচকের যেস্থানে সাবস্ট্রেট অর্থাৎ সাক্সিনিক অ্যাসিড যুক্ত হয় সেই স্থানে ম্যালিক অ্যাসিড যুক্ত হয়ে যায় তবে উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা কমে যায়।

ii) অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিরোধক – এই প্রকার প্রতিরোধক উৎসেচকের গায়ে যুক্ত হয়ে থাকে। যে সমস্ত ধাতব আয়ন উৎসেচকের বিক্রিয়ার স্থানে সালফাহাইড্রিল বর্গের সাথে বিক্রিয়া করে। সেগুলিকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিরোধক বলা হয়। যেমন- ট্রায়োফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ উৎসেচকের সালফাহাইড্রিল বর্গের সঙ্গে আয়ডো অ্যাসিটামাইটের বিক্রিয়া।

4) তাপমাত্রা বৃদ্ধি

উৎসেচক খুব কম তাপমাত্রায় 0˚C বা তার কম তাপমাত্রায় নিষ্ক্রিয় থাকে, আবার বেশি তাপমাত্রা যেমন 50˚C বা তার বেশি তাপমাত্রায় উৎসেচকের গঠন নষ্ট হয়ে যায়। কারণ প্রোটিন উচ্চ তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায় আর উৎসেচকের প্রধান অংশ প্রোটিন দ্বারা তৈরি। উৎসেচকের কার্যকারিতা 5˚C থেকে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। দেখা যায় যে, প্রতি 10˚C উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উৎসেচকের ক্রিয়ার হার প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়, একে বলা হয় Q10 বা তাপমাত্রার কো-এফিসিয়েন্ট (Temperature Co-efficient) বলা হয়।

5) আবিষ্টক

যে সমস্ত জৈব যৌগ উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা বাড়ায় তারা হল আবিষ্টক।

পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –