samudrik-obokkhep
Class-11

সামুদ্রিক অবক্ষেপ | সিন্ধুকর্দ

ভূগোলএকাদশ শ্রেণি – অধ্যায় – সামুদ্রিক অবক্ষেপ


সিন্ধুকর্দ

গভীর সমুদ্রের তলদেশে মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহবাশেষ থেকে উৎপন্ন তরল বা পিচ্ছিল কাদার মত যে বস্তু থাকে তাকেই বলা হয় সিন্ধুকর্দ বা উজ। এই সিন্ধুকর্দ পিল্যাজিক জৈব সঞ্চয়ের অবক্ষেপের অংশবিশেষ। সিন্ধুকর্দে চুনজাতীয় ও সিলিকা জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত অবস্থায় থাকে।

এই বৈশিষ্টের ভিত্তিতেই সিন্ধুকর্দকে দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
( ক) চুনজাতীয় সিন্ধুকর্দ (খ) সিলিকা জাতীয় সিন্ধুকর্দ।

সিন্ধুকর্দের শ্রেণীবিভাগ

সিন্ধুকর্দকে চুনজাতীয় ও সিলিকা জাতীয় পদার্থের ওপর নির্ভর করে চুনজাতীয় সিন্ধুকর্দ ও সিলিকা জাতীয় সিন্ধুকর্দ এই দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।

(ক) চুনজাতীয় সিন্ধুকর্দ

সমুদ্রের তলদেশে প্রায় 2000-4000 মিটারের বেশী গভীরতায় এই চুনজাতীয় সিন্ধুকর্দ দেখা যায়। এই চুনজাতীয় সিন্ধুকর্দকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে 1) টেরোপড 2)গ্লোবিজারিনা।

1) টেরোপড

এই ধরনের চুনজাতীয় সিন্ধুকর্দে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের পরিমাণ প্রায় ৪০% থাকে এবং এরা টেরোপড নামক শামুক ঝিনুকের দেহাবশেষ থেকে তৈরি হয়।

টেরোপডের বৈশিষ্ট্য

i) টেরোপড উষ্ণ সমুদ্রের জলে বেশী সৃষ্টি হয়।
ii) সাধারনত ক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ন সমুদ্রের প্রায় 1000 – 2000 মিটার গভীরতায় প্রবাল অধ্যুষিত অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
iii) টেরোপড সিন্ধুকর্দে চুনের পরিমাণ সব থেকে বেশী থাকে।
iv) টেরোপডদের খোলকগুলি অত্যন্ত পাতলা ও শঙ্কু আকৃতির প্রকৃতির হয়।
v) আটলান্টিক মহাসাগরের চ্যালেন্জার ও ডলফিন উচ্চভূমিতে এরা বেশী পরিমাণে সঞ্চিত হয়েছে।


একাদশ শ্রেণি থেকে → বাংলা | ইংরাজি

2) গ্লোবিজারিনা

এই ধরনের চুনজাতীয় সিন্ধুকর্দে ক্যালসিয়াম পরিমাণ প্রায় 65%এবং এই সিন্ধুকর্দ ফোরামিনিফেরা নামক জীবের খোলস দিয়ে গঠিত হলেও গ্লোবিজারিনার পরিমাণ বেশী থাকার দরুন এই সিন্ধুকর্দের নাম হয়েছে গ্লোবিজারিনা সিন্ধুকর্দ।

গ্লোবিজারিনার বৈশিষ্ট্য

i) সমুদ্রের প্রায় 4000 – 8000 মিটারের গভীরতায় এদের বেশী দেখা যায়।
ii) এদের ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে মহাসাগরে প্রাধান্য বেশি হয়ে থাকে।
iii) এই ধরনের সিন্ধুকর্দে কাদা সূক্ষ বালি মিশ্রিত অবস্থায় থাকে।
iv) এই ধরনের সিন্ধুকর্দের রং উপকূলের কাছে ধূসর নীল হলেও উপকূল থেকে দূরে সাদা হয়ে থাকে।
v) এই সিন্ধুকর্দে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের পরিমাণ দুই- তৃতীয়াংশ।

(খ) সিলিকা জাতীয় সিন্ধুকর্দ

এই ধরনের সিন্ধুকর্দে সিলিকার পরিমাণ বেশি থাকে। অ্যামিবিয়া প্রোটোজয়া প্রাণী বা রেডিওল্যারিয়ান শ্রেণির প্রাণীর দেহে সিলিকা বেশি থাকায় তা থেকেই এই সিলিকা জাতীয় সিন্ধুকর্দ সৃষ্টি হয়েছে।এই সিন্ধুকর্দে ক্যালশিয়ামের পরিমাণ খুব কম পরিমাণে থাকে।এবং এদের দেহ জলে দ্রবীভূত হয় না বলে এরা ভাসমান অবস্থায় সমুদ্রের খুব গভীরে গিয়ে সঞ্চিত হয়।, এই ধরণের সিন্ধুকর্দকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে:- 1) রেডিওল্যারিয়ান সিন্ধুকর্দ। 2) ডায়াটম সিন্ধুকর্দ।

1) রেডিওল্যারিয়ান সিন্ধুকর্দ

রেডিওল্যারিয়ান সামুদ্রিক প্রাণীর দেহবাশেষ থেকে এই ধরনের সিন্ধুকর্দ সৃষ্টি হয়।

রেডিওল্যারিয়ান সিন্ধুকর্দের বৈশিষ্ট্য

i) এতে সিলিকার প্রাধান্য বেশি থাকে এবং ক্যালসিয়ামের পরিমাণ খুবই কম পরিমাণে থাকে।
ii)ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রের তলদেশে প্রায় 4000 – 10000 মিটারের মধ্যে এদের দেখা যায়।
iii) প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে এদের বেশী লক্ষ্য করা যায়।

2) ডায়াটম সিন্ধুকর্দ

শীতল সমুদ্রের তলদেশে যেসমস্ত উদ্ভিদের জন্ম হয় তাদের দেহবাশেষ থেকে ডায়াটম সিন্ধুকর্দ সৃষ্টি হয়।এই ধরনের সিন্ধুকর্দে সিলিকার সাথে সাথে কর্দম খনিজ বেশ কিছু পরিমাণ থাকে।

ডায়াটম সিন্ধুকর্দের বৈশিষ্ট্য

i) এই ধরনের সিন্ধুকর্দ 1000 -4000 মিটার সমুদ্রের তলদেশে অবস্থান করে।
ii) এরা স্থলভাগের কাছাকাছি নীল বর্ণের হয় এবং গভীর সমুদ্রে রং পরিবর্তন করে পীতবর্ণের হয়।
iii) উভয় মেরু অঞ্চলের মহাসাগরে এদের বেশি দেখা যায়।

সামুদ্রিক অবক্ষেপের কারণ

সমুদ্র তলদেশে সঞ্চিত সকল ধরনের পদার্থ বা পলল রাশিকেই সামুদ্রিক অবক্ষেপ বলে। এই অবক্ষেপের ব্যাপারে আমরা বিশদে জানতে পারি ১৮৭২-এ স্যর জন মারের চ্যালেঞ্জার আভিযান থেকে।

সমুদ্রের তলদেশে এই পলল রূপে জমে থাকা অবক্ষেপ সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন কারণে-

১)স্থলজ পদার্থ

আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয়, হিমবাহ, নদী, বায়ু প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাসমূহ নদী, হিমবাহও সমূদ্রতরঙ্গ দ্বারা বাহিত হয়ে সমুদ্র উপকূলে অবক্ষেপ রূপে সঞ্চিত হয়।বড়ো ভারী শিলাখন্ডগুলি ঊপকূলের কাছে এবং সূক্ষ্ম পলিরাশিগুলি দূরে গভীর সমুদ্রে সঞ্চিত হয়।


একাদশ শ্রেণি থেকে → অর্থনীতি | ভূগোল

২)আগ্নেয়গিরিজাত পদার্থ

উপকূলের আগ্নেয়গিরি এবং সমুদ্রগর্ভে নিমগ্ন আগ্নেয়গিরি থেকে উৎক্ষিপ্ত ছাই, ভস্ম, লাভা প্রভৃতি পদার্থ সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয়ে অবক্ষেপের সৃষ্টি করে।

৩) জৈব অবক্ষেপ

সমুদ্রের জলে থাকা বিভিন্ন প্রাণীও উদ্ভিদের দেহাবশেষের যান্ত্রিক আবহবিকার প্রক্রিয়ায় বিশরণ ঘটে এবং পরে তার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে সমুদ্র তলদেশে সঞ্চিত হয়। এই ধরনের অবক্ষেপের মধ্যে ক্যলসীয়, সিলিকীয় ও চুনজাতীয় প্রাণীর আধিক্য বেশী থাকে। এই ধরনের অবক্ষেপ নেরিটিক অবক্ষেপ নামে পরিচিত যা সাধারণত অগভীর সমুদ্রে দেখা যায়।
এছাড়া গভীর সমুদ্রে আর এক ধরনের তরল কাদাজাতীয় জৈব অবক্ষেপ দেখা যায়। যা পেলাজিক অবক্ষেপ নামে পরিচিত।

৪)অজৈব অবক্ষেপ

উষ্ণতার পরিবর্তন বা কার্বন -ডাই-অক্সাইডের অপসারণ বা অন্যান্য বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডল বা সমুদ্রের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে।এইভাবে নানারকম অজৈব পদার্থ উৎসস্থল থেকে দূরে সমুদ্রে অধঃক্ষিপ্ত হয়। সমুদ্র জলে অদ্রাব্য পদার্থগুলি আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড, পাইরাইট প্রভৃতি পদার্থ সমুদ্রজলে দ্রবীভূত না হয়ে সমুদ্রের তলদেশে থিতিয়ে পড়ে। এগুলি আবার পরে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে সূক্ষ্ম কাদার ন্যায় খনিজ গঠন করে যা অবক্ষেপ রূপে সমুদ্রে সঞ্চিত থাকে।


একাদশ শ্রেণি থেকে → Physics | Chemistry | Biology | Computer

৫) অপার্থিব পদার্থের সঞ্চয়

অপার্থিব পদার্থ হল মহাকাশ থেকে আগত ধূমকেতু ইত্যাদির ধূলিকণা। এই ধূলিকণাগুলি আকারে আণুবীক্ষণিক এবং কালো বা বাদামি রঙের হয়।এই অপার্থিব ধূলিকণাগুলিকে মহাজাগতিক গুলিকা বলে। এতে ম্যগনেটাইট বা আয়রন অক্সাইড প্রচুর পরিমাণে থাকে। এগুলি সমুদ্রের তলদেশে অবক্ষেপ রূপে জমা হয়।

পর্ব সমাপ্ত।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী মোনালিসা মাইতি। পড়াশোনার পাশাপাশি বই পড়তে এবং গান গাইতে ভালোবাসেন মোনালিসা ।

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –

XI_geo_8a