শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: বিজ্ঞান । অধ্যায় – পদার্থের গঠন (তৃতীয় পর্ব)
পদার্থের গঠন অধ্যায়ের আলোচনার আজ তৃতীয় পর্ব।
এর আগের দুটি পর্বে আমরা অণু ও পরমাণুর ধারণা এবং পদার্থের কঠিন ও তরল অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমরা গ্যাসীয় এবং প্লাজমা অবস্থা নিয়ে আলোচনা করবো।
গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে?
যে সব পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই, যখন যে পাত্রে রাখা হয় তখন সেই পাত্রের আকার ও আয়তন গ্রহণ করে তাদের গ্যাসীয় পদার্থ বলা হয়। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ।
কঠিন ও তরল পদার্থের মত আমরা গ্যাসীয় পদার্থ সাধারণভাবে খালি চোখে দেখতে পাই না। গ্যাস সাধারণত বর্ণহীন হয়। শুধুমাত্র যে সব গ্যাস রঙিন তাদের খালি চোখে দেখা সম্ভব। যেমন- নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2) গ্যাসের বর্ণ বাদামী।
গ্যাসের অনুগুলির মধ্যে আকর্ষণ বল কম থাকার কারণে এর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে না এমন কয়েকটি গ্যাসকে কোন পাত্রে আবদ্ধ অবস্থায় রাখলে গ্যাসগুলি পরস্পরের সাথে মিশে যায় ও একটি সমসত্ত্ব মিশ্রণ তৈরি করে। গ্যাসের এই ধর্মকে ব্যাপন বলা হয়।
এই ব্যাপন ক্রিয়ার কারণেই ঘরের একপ্রান্তে কোন সুগন্ধি বস্তু রাখলে বা ধূপ জ্বালালে কিছুক্ষণ বাদে সারা ঘরে সেই গন্ধ পাওয়া যায়।
পদার্থের গ্যাসীয় অবস্থার বৈশিষ্ট্য
a) গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোন আকার ও আয়তন নেই। যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের সমগ্র স্থান দখল করে।
b) গ্যাসীয় পদার্থের অনুগুলির মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল খুব কম হয়।
c) অনুগুলির মধ্যে পারস্পারিক আকর্ষণ বল কম হওয়ার কারণে গ্যাসের অনুগুলির প্রসারণশীলতা খুব বেশী হয় এবং অনুগুলি মুক্তভাবে যে কোন দিকে চলাচল করতে পারে।
d) গ্যাসীয় পদার্থের অনুগুলির কম্পন, আবর্তন ও স্থানান্তর গতি সবচেয়ে বেশী হয়।
e) গ্যাসীয় পদার্থের ঘনত্ব খুব কম হয়। ফলে গ্যাসের অনুগুলির মধ্যে কঠিন ও তরল পদার্থের অণুর তুলনায় অনেক বেশী ফাঁক থাকে।
f) নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোন গ্যাসের আয়তন চাপের উপর নির্ভর করে। চাপ বৃদ্ধি পেলে আয়তন হ্রাস পায়। আবার চাপ হ্রাস করলে আয়তন বৃদ্ধি পায়।
g) নির্দিষ্ট চাপে কোন গ্যাসের আয়তন গ্যাসটির উষ্ণতার উপর নির্ভর করে। উষ্ণতা বাড়ালে গ্যাস ক্রমশ প্রসারিত হয় অর্থাৎ আয়তন বৃদ্ধি পায়, আর উষ্ণতা হ্রাস পেলে গ্যাসের আয়তন হ্রাস পায়।
পদার্থের এই অবস্থান্তর তাপের প্রভাবে ঘটে। তাপ প্রয়োগ করলে পদার্থের মধ্যে থাকা অনুগুলির কম্পন ও গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ক্রমাগত তাপ প্রয়োগ করলে এক সময় অনুগুলির গতিশক্তি এত বেড়ে যায় যে তাদের মধ্যে থাকা আকর্ষণ বল আর অনুগুলিকে ওই অবস্থায় ধরে রাখতে পারে না। তখন পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।
তাই এই একই কারণে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে মেরুতে জমে থাকা বরফ গলে যাচ্ছে।
গলনাঙ্ক কাকে বলে?
এই কারণে কঠিন পদার্থকে তাপ প্রয়োগ করলে তা একসময় গলে গিয়ে তরলে পরিণত হয়। এই পরিবর্তনকে গলন বা melting বলা হয়। যে উষ্ণতায় কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হতে শুরু করে তাকে গলনাঙ্ক বা melting point বলে।
স্ফুটনাঙ্ক কাকে বলে?
একইভাবে তরল পদার্থকে ক্রমাগত তাপ দিতে থাকলে এক সময় তার মধ্যের অনুগুলির গতিশক্তি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে তরল ফুটতে শুরু করে ও বাষ্পে পরিণত হয়। তরলের এই অবস্থা পরিবর্তনকে স্ফুটন বা Boiling বলে।
যে উষ্ণতায় তরল বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে তাকে স্ফুটনাঙ্ক বা Boiling point বলে।
উদাহরণ হিসাবে আমরা জলের কথা ধরতে পারি। কঠিন অবস্থায় জল বরফে পরিণত হয়। বরফের গলনাঙ্ক হল 0˚C অর্থাৎ 32˚F। এই উষ্ণতায় বরফ গলতে শুরু করে ও জলে পরিণত হয়। জলকে তাপ প্রয়োগ করলে 100˚C অর্থাৎ 212˚F এ গিয়ে জল ফুটতে শুরু করে ও জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয়।
ঊর্ধ্বপাতন কি?
আবার এমন কিছু পদার্থ আছে যাদের খোলা অবস্থায় তাপ দিলে কঠিন থেকে সরাসরি গ্যাসীয় অবস্থায় পরিবর্তিত হয়, তরল অবস্থায় আসে না। কঠিন অবস্থা থেকে সরাসরি বাষ্পীভূত হবার এই ঘটনাকে ঊর্ধ্বপাতন বা Sublimation বলা হয়।
কর্পূর, ন্যাপথলিন, ড্রাই আইস অর্থাৎ কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইড, আয়োডিন প্রভৃতি পদার্থের ঊর্ধ্বপাতন ঘটতে দেখা যায়।
প্লাজমা কাকে বলে?
গ্যাসীয় পদার্থকে ক্রমাগত তাপ দিতে থাকলে গ্যাসের অণু একসময় পরমাণুতে ভেঙে যায়। আরও তাপ দিলে একসময় দেখা যায় যে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল ইলেকট্রনগুলিকে আর ধরে রাখতে পারে না। ইলেকট্রনগুলি তখন নিউক্লিয়াস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথকভাবে অবস্থান করতে থাকে।
অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান
গ্যাসীয় পদার্থের যে প্রচণ্ড উত্তপ্ত অবস্থায় পরমাণুর ইলেকট্রন ও নিউক্লিয়াস পৃথক ভাবে অবস্থান করে ও গতিশীল থাকে, তাকে প্লাজমা বলে।
প্লাজমা অবস্থার উদাহরণ
পদার্থের এই প্লাজমা অবস্থা আমরা আমাদের চারপাশে স্বাভাবিকভাবে অনেক সময় দেখতে পাই। বিদ্যুৎ চমকানো, ফ্লুরোসেন্ট বাতি, নিয়ন বাতি, ইলেকট্রিক স্পার্ক, প্লাজমা টিভি প্রভৃতিতে আমরা প্লাজমা অবস্থা দেখতে পাই। সূর্য এবং অন্যান্য নক্ষত্রের মধ্যে এই প্লাজমা অবস্থা সৃষ্টি হয়ে রয়েছে।
পদার্থের প্লাজমা অবস্থার বৈশিষ্ট্য
a) প্লাজমা হল Ionized অর্থাৎ আয়নিত গ্যাস।
b) প্রচুর মুক্ত ইলেকট্রন থাকে বলে এটি বিদ্যুৎ পরিবহণ করতে পারে।
c) গ্যাসের মত প্লাজমার নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই।
d) উচ্চ তাপমাত্রা বা বিশাল বিভব প্রভেদের মধ্যে যে কোন একটি উপায়ে গ্যাস প্লাজমায় পরিণত হতে পারে।
e) প্লাজমা চৌম্বক ক্ষেত্র এবং বৈদ্যুতিক প্রবাহ তৈরি করতে পারে।
পর্ব সমাপ্ত।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখিকা পরিচিতিঃ
বিজ্ঞান স্নাতক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতা নন্দিতা বসুর পেশা শিক্ষকতা।তিনি বই পড়তে বড় ভালোবাসেন। কাজের ফাঁকে, অবসরে, বাসে ট্রামে তো বটেই, শোনা যায় তিনি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও বই পড়তে পারেন।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলো না।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
VIII_2.2_3rd part