manusher-karjaboli-poribesher-obonomom
WB-Class-8

মানুষের কার্যাবলী ও পরিবেশের অবনমন

শ্রেণিঃ অষ্টম | বিষয়: ভূগোল । অধ্যায় – মানুষের কার্যাবলী ও পরিবেশের অবনমন

আগের পর্বে আমরা জেনেছি জলবায়ু অঞ্চল সম্পর্কে। এই পর্বে আমরা মানুষের কার্যাবলী ও পরিবেশের অবনমন সম্পর্কে আলোচনা করবো।

মানুষের জীবিকা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম নানা ধরণের। এই কাজগুলির মধ্যে কোনটা প্রকৃতির সাথে সরাসরি যুক্ত, কোনটা প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল, আবার কোনো কাজের ধরণ সেবামূলক এই তিন ধরণের কাজগুলি পরিবেশ ও প্রকৃতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করে, কখনো সেই প্রভাব সুদূরবিস্তারী, আবার কখনো প্রকৃতি নিজে থেকেই সেই ক্ষতিপূরণ করে দেয়।

সভ্যতার একদম প্রথম পর্যায় থেকেই মানুষ নানা ধরণের কাজকর্ম করে চলেছে। আদিম যুগে মানুষ ছিল যাযাবর, গুহাবাসী। ফলমূল সংগ্রহ, পশুশিকার করে মানুষের সময় কাটত। তখন জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ছিল।

আগুনের ব্যবহার

সময়ের সাথে এবং মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ আগুনের ব্যবহার শিখল, চাষ করতে জানল, আর প্রকৃতিকে ধীরে ধীরে নিজের প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে লাগল। নতুন দেশ আবিষ্কার, চাকা আবিষ্কার সভ্যতাকে গতি দান করে, মানুষ নিজের বুদ্ধির সাথে প্রকৃতির সাহায্য নিয়ে সভ্যতার পথে অগ্রসর হল।

এই সময় পর্যন্ত পরিবেশের যা ক্ষতি হত তা নিজে থেকেই তা নিজে থেকেই পূরণ হয়ে যেত। প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনো অংশের ক্ষতি বা পরিবর্তন হলে তা নিজে থেকেই পূরণ হয়ে যায়, একে হোমিওস্ট্যাটিক ব্যবস্থা বলে।

সভ্যতার বিবর্তন ও পরিবেশের ওপর প্রভাব

শিল্পবিপ্লবের ফলে সভ্যতার দ্রুত উন্নতি শুরু হয়। জনসঙ্খ্যার দ্রুত উন্নতি, শিল্প, চিকিৎসা, বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতি হতে লাগল। প্রযুক্তি নির্ভর জীবনযাত্রার ফলে পরিবেশের উপর যেসব প্রভাবগুলি দেখা গেলো, সেগুলি হল –

• জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের বসবাস, কৃষি আর শিল্পের প্রয়োজনে অরণ্য ধ্বংস করে গড়ে উঠতে থাকল রাস্তাঘাট, কলকারখানা, শহর ইত্যাদি। অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ঘাটতি দেখা যায়।

নির্বিচারে বৃক্ষছেদন

• নানা ধরণের শিল্পক্ষেত্রে নির্বিচারে ব্যবহার হতে থাকল প্রাকৃতিক, খনিজ ও শক্তি সম্পদ (জল, মাটি, অরণ্য, কয়লা, খনিজ তেল, লোহা, তামা ইত্যাদি)।

প্রযুক্তির ব্যবহার আরও উন্নত করার জন্য, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সামরিক অস্ত্র তৈরি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাবে পরিবেশের বিপুল ও দ্রুত পরিবর্তন হয়। যা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সমস্ত জীবকূলের ওপর প্রভাব পরছে, প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

• ক্রমশ সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অনিয়মিতভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন শুরু হয়।

পরিবেশের অবনমন

পরিবেশের অবনমন বলতে বোঝায়, যেসব প্রাকৃতিক উপাদানগুলি বাস্তুতন্ত্র ও জীবকুলের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে, ক্রমাগত অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে, সেই উপাদানগুলির গুণগত মান হ্রাস পাওয়া।


অষ্টম শ্রেণির অন্য বিভাগ – বাংলা | ইংরেজি | গণিত | বিজ্ঞান | ভূগোল

এই গুণমানের হ্রাসের ফলে জল, বায়ু, মৃত্তিকা প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদ তথা জীবজগত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবপ্রজাতি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়। পরিবেশের একটি নির্দিষ্ট সহন ক্ষমতা আছে।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পরিবেশের গুণমান হ্রাস পেয়ে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয় যে তার ভারসাম্য ও কার্যকারী ক্ষমতা ভেঙে পরে।

যেমন – অতিরিক্ত পরিমাণে অরণ্য বিনাশের ফলে ভূমিক্ষয়, বন্যা, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, মরুভুমির প্রসারের মাধ্যমে পরিবেশের সামগ্রিক অবনমন ঘটে।

পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশের অবনমন

পরিবেশ দূষণ আর অবনমন এই দুটি বিষয়ই পরিবেশের গুণমান হ্রাসের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এই বিষয়দুটি সামান্য আলাদা। দূষণ হল প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কাজের ফলে সৃষ্ট পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের দূষিত হওয়া। আর পরিবেশের সামগ্রিক গুণমানের হ্রাস হল পরিবেশের অবনমন। প্রকৃতপক্ষে পরিবেশ দূষণ পরিবেশের অবনমনকে ত্বরান্বিত করে।

যেমন – ভৌমজলে আর্সেনিক মিশলে জল দূষিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলে ভৌমজলের গুণমান হ্রাস পাবে। যার ফলে ভবিষ্যতে পানীয় জলের সংকট, ভূমি অবক্ষয় প্রভৃতি সমস্যা ব্যাপকভাবে দেখা দেবে। এছাড়াও কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলের ব্যাপক ক্ষতি করে।

পরিবেশ দূষণ

পরিবেশ অবনমনের প্রকারভেদ

প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট এই দুইভাবে পরিবেশের অবনমন ঘটে।

প্রাকৃতিক

ঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, সুনামি, ধ্বস, প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে। যার প্রভাবে মানুষ, উদ্ভিদ, প্রাণী এমনকি আণুবীক্ষণিক জীবের স্বাভাবিক জীবনচক্র ব্যাহত হয়, ভূপৃষ্ঠের গঠন পরিবর্তিত হয়, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ধ্বংস হয়, জীবনহানি ঘটে। জীববৈচিত্র্য আংশিক বা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়।

মনুষ্যসৃষ্ট

আধুনিক কৃষি, শিল্প প্রযুক্তি, পরিবহন, উন্নয়নমূলক কার্যকলাপ পরিবেশের স্বাভাবিক চক্রকে ব্যাহত করে। শিল্প বর্জ্য, অবৈজ্ঞানিক কৃষি উৎপাদন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নদীর গতিপথে অনিয়ন্ত্রিত জলাধার নির্মাণ, পুকুর ভরাট করে বহুতল নির্মাণ, বৃক্ষচ্ছেদন প্রভৃতি মনুষ্যসৃষ্ট ঘটনা পরিবেশের নানান সমস্যার সৃষ্টি করে আর অবনমন ঘটায়। ধস, বন্যা, ভূমিকম্প, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও আজ মানুষের কার্যকলাপের ফলে ঘটছে।

ভূমিকম্পের প্রভাবে ধ্বংসস্তূপ

তবে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে সৃষ্ট অবনমনগুলির মানুষের জীবনে প্রভাবে ফেলে ঠিকই কিন্তু প্রকৃতি পুনরায় সেই ক্ষতিকে অনেকটাই পূরণ করে ফেলতে পারে। অপরদিকে মানুষের বিভিন্ন কাজের বিরূপ প্রভাবে ঘটে যাওয়া পরিবেশের অবনমন আজ অপূরণীয় অবস্থায় চলে গেছে।

বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তাদের প্রভাব

আধুনিক কৃষিপদ্ধতি

কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্যএই আধুনিক পদ্ধতির কিছু প্রভাব দেখা যায়।
• উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক সার, কীটনাশক মাটি ও জলদূষণ ঘটায়।
• এই দূষিত জল মাটির মধ্যে প্রবেশ করে পুকুর, নদী, জলাশয়ে মেশে, ফলে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।
• অবৈজ্ঞানিক কৃষিপদ্ধতি জমির উর্বরতা হ্রাস করে।

নগরায়ন

মানুষের বসবাসের জন্য প্রায় পৃথিবীর সব দেশেই উন্নত ও আধুনিক জীবনযাত্রার নগরায়ন চলছে, তবে এর ফলে কিছু বিরূপ প্রভাব ঘটছে।
• ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কমে যায়।
• বায়ু ও শব্দদূষণের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়।

বায়ুদূষণ

• অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন এলাকায় জল জমার সমস্যা সৃষ্টি করে।
• তৃতীয় বিশ্বের বড় শহরগুলো মূলত অপরিকল্পিত পুরনো শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, ফলে যানজট, জলনিকাশি, বসতি সমস্যা প্রকটভাবে দেখা যায়।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

বিদ্যুৎ সরবারহ ও উৎপাদন আধুনিক জীবনের অঙ্গ। তবীর প্রভাবে পরিবেশের কিছু ক্ষতি হয়ে চলেছে।
• তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য, ছাই আসেপাশের এলাকার জমিতে জমা হয়। উর্বরতা হ্রাস করে।
• ছাই বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়।

বহুমুখী নদী পরিকল্পনা

জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি বহুমুখী নদী পরিকল্পনার প্রভাবে পরিবেশের বেশকিছু অবনমন ঘটেছে।

বন্যর প্রভাব

• জলাধার নির্মাণের ফলে নদীর ধারণ অববাহিকার অবনমন ঘটে।
• বিস্তীর্ণ এলাকার স্বাভাবিক উদ্ভিদের বিনাশ ঘটে।
• জলাধার তৈরির সময় প্রচুর মানুষ উদ্বাস্তু হয়। জমিতে অতিরিক্ত পলি সঞ্চয়ের ফলে চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরিবেশ অবনমনের ফলাফল

মানুষের কাজের ফলে পরিবেশে নানান বিপর্যয় ও অবনমন ঘটে। ভূমিকম্প, জীববৈচিত্র্য হ্রাস, জলদূষণ ও জলাভাব, বায়ুদূষণ, খরা, বন্যা, প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন, রাসায়নিক দুর্ঘটনা, মুদ্রাস্ফীতি, চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য হ্রাস প্রভৃতি নানান বিপর্যয় ঘটে থাকে।

1984 সালে ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনার ইউনিয়ন কার্বাইডের রাসায়নিক ও কীটনাশক কারখানা ট্যাঙ্ক ফুটো হয়ে বেরিয়ে এসেছিল বিষাক্ত MIC গ্যাস। মারা গিয়েছিল প্রায় 4000 মানুষ ও অসংখ্য পশুপাখি। প্রায় 2 লক্ষের বেশি লোক কোন না কোনোভাবে এই গ্যাসের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

1986 সালের ইউক্রেনের চেরনোবিল এবং 2011 সালে জাপানে ফুকুসিমার পরমাণু দুর্ঘটনা আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষতিকর পরিণতির ভয়াবহ নিদর্শন।

পরিবেশের অবনমন নিয়ন্ত্রণের উপায়

পরিবেশের অবনমের গতি বন্ধ করার জন্যে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত মানুষকে সচেতন করে চলেছেন, কিছু ব্যবস্থাপনার উল্লেখ করে –
• শিক্ষার অভাব ও দারিদ্রতা দূর করে পরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়াতে হবে।
• উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব শক্তি যেমন – সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি বেশি ব্যবহার করতে হবে।
• সম্পদের পুনঃব্যবহার করতে হবে এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য দ্রব্যের ক্রয় প্রবণতা বাড়াতে হবে।
• জনসংখ্যা আর সম্পদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।

বৃক্ষরোপণ

• যেকোন সরকারি পরিকল্পনা গ্রহণের আগে তার পরিবেশগত প্রভাব চিহ্নিত করে, পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হলে পরিবেশের ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব।
জীবমণ্ডলের বৈচিত্র্য যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে সজাগ হতে হবে। বিভিন্ন প্রাণী, উদ্ভিদের নিজস্ব পরিবেশে বাঁচার সুযোগ মানুষকেই করে দিতে হবে।
• সর্বোপরি দেশের সরকারকে পরিবেশ বিষয়ে গুরত্ব দিতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কঠোর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণা

স্থিতিশীল উন্নয়ন হল একধরণের উন্নয়নের পদ্ধতি যার উদ্দেশ্য হল বর্তমানে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও উন্নয়নের সাথে সাথে ভবিষ্যতের মানব সমাজের উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত রাখা। উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ উভয়ই সভ্যতার অগ্রগতির জন্যে প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা পরিবেশ অবনমন কমানোর জন্যে এই বিশেষ ধরণের পদ্ধতি অবলম্বন করার কথা বলেছেন, যা সামগ্রিকভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করবে।

পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী অধ্যায় – ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহ ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক

লেখিকা পরিচিতিঃ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্রী শ্রীপর্ণা পাল। পড়াশোনার পাশাপাশি, গান গাইতে এবং ভ্রমণে শ্রীপর্ণা সমান উৎসাহী।



এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –

VIII_Geo_7a