poscimbonger-mrittika
WB-Class-9

পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা

ভূগোলনবম শ্রেণি – পশ্চিমবঙ্গ (সপ্তম পর্ব)।

গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কে এই পর্বে আমাদের আলোচনার বিষয় পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা।

পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা

ভূ-ত্বকের ওপরের শিলাচূর্ণ, বিয়োজিত জৈব পদার্থ, জীবাণু, বায়ু, জলীয় দ্রবণ, প্রভৃতি দ্বারা গঠিত সূক্ষ পদার্থের হালকা স্তরকে বলা হয় মাটি।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মৃত্তিকা লক্ষ্য করা যায় ভ্রূ-প্রকৃতি ও জলবায়ুর তারতম্যের জন্য। এর মধ্যে পলিমাটি, ল্যাটেরাইট মাটি ও লবনাক্ত মাটি উল্লেখযোগ্য।

ক) পলি মৃত্তিকা

সাধারণভাবে নদীবাহিত পলি, কাদা ও বালি সঞ্চিত হয়ে যে মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়, তাকে পলি মৃত্তিকা বলে। উপকূলভাগে সমুদ্রবাহিত পলি থেকে এই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।

পলি মৃত্তিকা প্রধানত দুই প্রকারের হয়- প্রাচীন পলিমাটি, নবীন পলিমাটি। এছাড়াও তরাই অঞ্চলের পলি মাটি ও রাঢ় অঞ্চলের মাটি ও দেখা যায়।

• প্রাচীন পলি মাটি

ল্যাটেরাইট সূক্ষকণা বৃষ্টির জলে ধুয়ে গিয়ে এই মাটি সৃষ্টি হয়।

প্রাচীন পলি মাটির বৈশিষ্ট্য

• আংশিকভাবে কাঁকুরে মাটিতে রূপান্তরিত হওয়ায় এর রং অনেকটা লালচে।
• এই মাটির জলধারণের ক্ষমতা আছে ।তাই জলসেচের ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়।
• এই মাটিতে ধান উৎপন্ন হয়।

উদাহরণ

মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমাংশে বীরভূম জেলার উত্তর প্রান্তে এবং বর্ধমান, বাঁকুড়া, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলার পূর্বদিকে এই ধরনের মাটি দেখা যায়।

• নবীন পলি মাটি

নদী ও সমুদ্রবাহিত পলি দ্বারা এই মাটি সৃষ্টি হয়েছে।

নবীন পলি মাটির বৈশিষ্ট্য

• এই মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকে বলে তাকে বেলে মাটি বলে।
• কাদার ভাগ বেশি থাকলে একে এঁটেল মাটি বলে।
• বালি আর কাদার ভাগ দুই সমান থাকলে দোঁআশ মাটি বলে।
• দোঁআশ মাটির উর্বরতা সবথেকে বেশি।

উদাহরণ গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চল সহ পশ্চিমবঙ্গের সমভূমির নদী উপত্যকায় এই মাটি দেখা যায়। তাই এই অঞ্চলে প্রায় সবরকমের ফসল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।


পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা সম্পর্কিত আলোচনা দেখে নাও এই লিঙ্ক থেকে↓


• তরাই অঞ্চলের মাটি

দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণ অংশে তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে বালি ,কাঁকড় ও পলি মিশ্রিত তরাই মাটি দেখা যায়।এই মাটি বেশ উর্বর।

তরাই অঞ্চলের মাটির বৈশিষ্ট্য

• এই মাটিতে জৈব পদার্থ বেশী থাকে।
• এই মাটি চা ও আনারস উৎপাদনে বিখ্যাত।

• রাঢ় অঞ্চলের কাঁকড়যুক্ত পলিমাটি

রাঢ় অঞ্চলের পলিমাটি ও ল্যাটেরাইট মাটির মিশ্রণে কাঁকড়যুক্ত পলিমাটির সৃষ্টি হয়েছে। এই মাটি তেমন উর্বর মাটি নয়।

খ) ল্যাটেরাইট মাটি

ল্যাটিন ভাষায় ল্যাটার শব্দের অর্থ হল ইট।ইটের মতো শক্ত আর লাল বলে এই মাটির নাম ল্যাটেরাইট।ল্যাটেরাইট মাটিও দুই প্রকারের।

1) প্রস্তরময় ল্যাটেরাইট মাটি

লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের সোদক দ্বারা এই মাটি সৃষ্টি হয়েছে। এই মৃত্তিকা অত্যন্ত অনুর্বর। ফলে এই মাটিতে কৃষিকাজ হয় না বললেই চলে।পুরুলিয়া, বাকুঁড়া, বীরভূম, বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলার অংশবিশেষ এই মাটি দেখা যায়।

2) পলিমিশ্রিত ল্যাটেরাইট মাটি

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম প্রান্তে সামান্য ঢেউ খেলানো সমভূমিতে ছোটনাগপুরের মালভূমির ল্যাটেরাইটের সঙ্গে নদীর পলি মিশে এই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের, বাকুঁড়া, পুরুলিয়া, ও বীরভূম জেলার পশ্চিমাংশে এই মাটি দেখা যায়।প্রস্তরময় ল্যাটেরাইটের চেয়ে এই মাটির উর্বরতা শক্তি কিছুটা বেশী। ফলে সেচ ও সারের সাহায্যে ধান, গম, আখ প্রভৃতির চাষ করা হয়।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – ভৌত বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – জীবন বিজ্ঞান | নবম শ্রেণি – গণিত ]

গ) লবনাক্ত মাটি

সমুদ্র উপকূলে জোয়ারের ফলে এই মাটি সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবন এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি উপকূলে এধরনের মাটি দেখা যায়। সুন্দরবনের মাটিতে লবণ ও কাদা বেশি থাকে, অন্যদিকে কাঁথি উপকূলে বালির পরিমাণ বেশি।এই মাটি কৃষিকাজের অনুপযুক্ত, তবে এতে নারকেল ও সুপারি ভালো জন্মায়। লবণের পরিমাণ কমানো গেলে ধান, তুলা প্রভৃতিরও চাষ করা যায়।


[আরো পড়ুন – নবম শ্রেণি – বাংলা | নবম শ্রেণি – ইতিহাস | নবম শ্রেণি – ভূগোল]

(ঘ) অন্যান্য মাটি

• দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির পার্বত্য অঞ্চলে ধূসর বাদামি রঙের মাটি ও পডসল জাতীয় মাটি দেখা যায়। এই মাটি চা চাষের পক্ষে খুবই উপযুক্ত।
• মালভূমি অঞ্চল ও রাঢ় অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভভাবে লাল মাটি দেখা যায়।
• মালদহ জেলা ও উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার কিছু কিছু স্থানে জলা ভূমি অঞ্চলে এইমাটি দেখা যায়।

সপ্তম পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব → পশ্চিমবঙ্গের কৃষিকাজ


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


লেখিকা পরিচিতি

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী মোনালিসা মাইতি। পড়াশোনার পাশাপাশি বই পড়তে এবং গান গাইতে ভালোবাসেন মোনালিসা।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –