কেরিয়ার বিভাগ – কম্পিউটার সায়েন্স
বর্তমান যুগে কম্পিউটার এর ব্যবহার বা উপযোগিতা নতুন করে বলবার কিছু নেই।
কম্পিউটারের ব্যবহার বর্তমানে শিক্ষার প্রায় সর্বক্ষেত্রে এবং চাকরি বা পেশাগত ক্ষেত্রেও এক রকম অনিবার্য বা অপরিহার্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রযুক্তির নানা দিকে দেখা যাচ্ছে মানুষের পরিবর্তে কম সময়ে এবং বেশি পরিমাণে নিখুঁত কাজের জন্য মানুষ AI বা আর্টিফিসিয়াল ইনটালিজেন্স-এর ওপর বেশী করে নির্ভরশীল হচ্ছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতাকে বাড়ছে। কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়টি বর্তমান ছাত্র ছাত্রীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় একটি বিষয়। এই বিষয়টি বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রীই পড়তে আসে তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে, এছাড়া কিছু মানুষ না বুঝেও আসে। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষাজীবনে এবং পরবর্তী কর্মজীবনে একেকজনের অভিজ্ঞতা একেক Bরকমের হয়।
এই পর্বে আমরা ছাত্রছাত্রীদের সামনে Computer Science বিষয়টির একটি সম্যক ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
কারা পড়বে কম্পিউটার সায়েন্স?
প্রথমত, কম্পিউটারের প্রযুক্তিগত দিকগুলি নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তারা অবশ্যই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। তবে গাণিতিক দক্ষতা থাকাটা আবশ্যক। এছাড়াও সৃজনশীল চিন্তাভাবনা ও লজিক যারা বোঝে তাদের জন্য কম্পিউটার সায়েন্স একটি ভালো বিষয়।
মনে করা হচ্ছে যে আগামী দিনে মানুষের কম্পিউটার নির্ভরতা বহু গুণে বাড়বে, ফলে কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজের চাহিদাও যে পাল্লা দিয়ে বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রোগ্রামিং – কম্পিউটার সায়েন্সের প্রধান অংশ
কম্পিউটার সায়েন্স পড়াশোনার অন্যতম অংশ জুড়ে থাকে এই ‘প্রোগ্রামিং’। কিন্তু এই বিষয়টি সম্পর্কে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর কোন ধারণা থাকে না। জানলে আশ্চর্য হবেন যে অনেকেই শুধুমাত্র কম্পিউটারে কাজ করতে ভালো লাগে বা গেম খেলতে ভালো লাগে বলে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করেছে!
আমরা কম্পিউটার বা মোবাইলে (মোবাইল ফোন-ও কিন্তু একপ্রকার কম্পিউটার) যা দেখি বা কাজ করি তা তৈরি হয় কম্পিউটারের নিজস্ব ভাষা এবং কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। অর্থাৎ আমরা যখন সামান্য 2 + 2 যোগ করে তার রেজাল্ট 4 দেখছি, সেখানে কম্পিউটারকে এই সামান্য রেজাল্ট দেখানোর জন্য অনেকগুলি নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই নিয়মগুলিকে বলা হয় কোড, আর অসংখ্য কোড দিয়ে তৈরি হয় প্রোগ্রামিং।
সুতরাং শুধুমাত্র কম্পিউটার ভালো লাগে বলে কম্পিউটার সায়েন্স পড়লে, পরে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। বরং, কম্পিউটার কিভাবে কাজ করছে, সেই বিষয়ে কৌতূহল থাকলে পরবর্তী কালে শিখতে ভালো লাগবে।
কিভাবে পড়বে কম্পিউটার সায়েন্স?
সাধারণত তিনটি উপায়ে কম্পিউটার সায়েন্স পড়া যেতে পারে।।
- ডিগ্রি
- ডিপ্লোমা
- সার্টিফিকেশান
A. ডিগ্রি কোর্সে কম্পিউটার সায়েন্স
যোগ্যতা
স্নাতক স্তরে বি টেক বা বি এস সি তে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ার জন্য 10+2 পাশ করা আবশ্যক এবং সর্বমোট 50% নম্বর থাকা প্রয়োজন। অতি আবশ্যক বিষয়গুলির মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের গণিত, ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রি থাকা আবশ্যক, যদিও একাদশ – দ্বাদশে কম্পিউটার সায়েন্স থাকলে অবশ্যই কিছুটা বাড়তি সুবিধা মেলে।
প্রবেশিকা
B. Tech পড়ার জন্য ভারত জুড়ে Joint Entrance Examination পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর র্যাঙ্কের ভিত্তিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। Joint Entrance Examination এর দুটি ভাগ আছে, প্রথমটি হল JEE-Main এবং দ্বিতীয়টি হল JEE – Advance।
ভারতের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান IIT গুলিতে সুযোগ পাবার জন্য Main এবং Advance দুটি পরীক্ষাতেই ভালো র্যাঙ্কের প্রয়োজন। এটা ছাড়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও আলাদা করে প্রবেশিকা নেওয়া হয়; যেমন পশ্চিমবঙ্গে WB-JEE প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়। B.Sc পড়ার ক্ষেত্রে দ্বাদশ শ্রেণির প্রাপ্ত নম্বর নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে কলেজ ভিত্তিক প্রবেশিকা নেওয়া হয়।
স্নাতক স্তরের মূল কোর্স বা ডিগ্রি কোর্সগুলি হল
- B.E. or B. Tech in Computer Science- 4 বছর
- B.Sc. in Computer Science-3 বছর
প্রসঙ্গত, প্রযুক্তি প্রতিদিন উন্নত হচ্ছে, আর তাই বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিগুলিও কম্পিউটার সায়েন্সকে নিয়ে নানান নতুন ধরণের কোর্স নিয়ে আসছেন।
ডিগ্রি কোর্সের সময়সীমা
- B.Tech – 4 বছর
- BSc – 3 বছর
ভারতের উল্লেখযোগ্য কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট গুলি হল
- Indian Institute Of Technology
- National Institute Of Technology
- Vellore Institute Of Technology
- Indian Institute Of Technology (Banaras Hindu University)
- Birla Institute Of Technology
- Indian Institute Of Engineering Science And Technology, Shibpur
- College Of Engineering, Pune
- Amrita School Of Engineering
- Kalinga Institue Of Industrial Technology
- S. Ramaiah Institute Of Technology-Bangalore
Source – https://www.nirfindia.org/engg
পশ্চিমবঙ্গের কিছু উল্লেখযোগ্য ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট গুলি হল
- IIT Kharagpur
- Jadavpur University
- NIT Durgapur
- IIEST Shibpur
- JGEC- Jalpaiguri Government College
- Institute Of Engineering & Management-Kolkata
- Bengal Institute Of Technology
- AOT, West Bengal
- Coochbehar Government Engineering College, West Bengal
- KGEC-Kalyani Government
- Techno India (University)
B. ডিপ্লোমা কোর্স
যোগ্যতা
কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করতে হলে অন্ততপক্ষে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া জরুরী। পশ্চিমবঙ্গে West Bengal State Council of Technical and Vocational Education and Skill Development দপ্তর দ্বারা পরিচালিত এবং অনুমোদিত কলেজগুলিতে কম্পিউটার সায়েন্স সম্পর্কিত ডিপ্লোমা কোর্সগুলি করার জন্য JEXPO পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। JEXPO-তে পাওয়া র্যাঙ্কের ভিত্তিতে বিভিন্ন ডিপ্লোমা কলেজে 3 বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। তবে ডিপ্লোমা পড়ার জন্য বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলিতে ভালো নম্বর এবং দখল থাকা প্রয়োজন।
পশ্চিমবঙ্গের কিছু কলেজ যেগুলিতে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা পড়ানো হয় সেগুলির একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিচে দেওয়া হল।
- Ghani Khan Choudhury Institute of Engineering & Technology (Govt. Sponsored)
- Annex College of Management Studies (ACMS)
- Acharya Prafulla Chandra Roy Polytechnic (Govt. Sponsored)
- Central Calcutta Polytechnic (Govt. Sponsored)
- Brainware University, Kolkata
- Techno India Polytechnic, Salt Lake
- Budge Budge Institute of Technology, Kolkata
C. সার্টিফিকেশান কোর্স
মূলত প্রফেশানালদের বা যাদের কম্পিউটার সায়েন্স সম্পর্কে বেসিক ধারণা আছে তাদের জন্য যে বিভিন্ন কম্পিউটার সায়েন্স সংক্রান্ত বিভিন্ন সার্টিফিকেশান কোর্সগুলি করানো হয়। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কোর্স হল-
- ISACA (Certified Information Systems Auditor)
- ISACA (Certified Information Security)
- Certification on Data Science
- Certification on Cloud Computing
- Certification on Machine Learning
প্রসঙ্গত আজকের ডিজিটাল যুগে বিভিন্ন নামি বিদেশী এবং দেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অনলাইনে ডিপ্লোমা এবং সার্টিফিকেশন কোর্স করানো হচ্ছে। বিশেষত যারা এখন কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজের সাথে যুক্ত তারা তাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই কোর্সগুলি করতে পারেন।
কম্পিউটার সায়েন্সে কি কি বিষয় পড়তে হয়
কম্পিউটার সায়েন্স কোর্সগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের কম্পিউটার সংক্রান্ত অনেকগুলি বিষয়ের সাথে পরিচয় করানো হয়। এর মধ্যে কয়েকটি প্রারম্ভিক বিষয় হল।
- Basic Fundamental Topics of Computer Science and Technology
- Engineering Mathematics
- Applied Physics
- Applied Chemistry
- Computer Fundamentals & Applications
- Communication Skills
- Fundamental of Electrical and Electronics
- Programming in C
- Data Structure
- Operating System
- Networking
- Object Oriented Programming in C++
- Database Management System
- Web designing
- Computer Networks
শেষকথা
কাল যা অবাস্তব বলে মনে হত, প্রযুক্তির কল্যাণে আজ তার অনেক কিছুই বাস্তব। প্রতিদিন প্রযুক্তির উন্নতি ঘটছে এবং তার সাথে মানব সভ্যতা কম্পিউটার নির্ভর হয়ে উঠছে। এর ফলে, কম্পিউটারে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে ভারতের খ্যাতি জগৎ জোড়া, তাই ভারতের বহু মানুষ কম্পিউটার সংক্রান্ত পেশার সাথে যুক্ত। তবে সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি আরো বুদ্ধিমান (Artificial Intelligence) হয়ে উঠছে, সাধারণ কাজ যেগুলি আগে মানুষ করতো তা আজ কম্পিউটার নিজেই করে নিচ্ছে। ফলে এই কাজগুলির জন্য কর্মীর প্রয়োজনীয়তা কমছে।
তাই যদি কোন ছাত্র বা ছাত্রী শুধুমাত্র ভবিষ্যতে কাজের সুযোগ খুব ভালো পাওয়া যাবে , এই ভেবে কম্পিউটার সায়েন্স পড়তে আসে সেক্ষেত্রে হয়তো সে ভুল করবে।
আবার, যদি কোন ছাত্র বা ছাত্রী কম্পিউটার বিষয়টিকে ভালোবেসে, নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে সেক্ষেত্রে আজীবনকাল তার কাজের অভাব হবে না।
তাই আমাদের পরামর্শ, তোমরা যারা এই কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়টিকে ভবিষ্যতের পেশা হিসাবে নির্বাচন করতে চাও, তারা বিষয়টিকে ভালবাসলে তবেই এগিও শুধুমাত্র কাজের সুযোগের কথা ভেবে এই বিষয়ে পড়া শুরু করো না।
পর্ব সমাপ্ত। আরো পড়ো → কিভাবে নার্সিং পড়তে হবে?
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – সাপ্তাহিক ইমেইল আপডেট
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা