কেরিয়ার বিভাগ – ফুড টেক্নোলজি (Food Technology)
খাবার! এই একটা শব্দ প্রাণী তথা জীবকুলের বেঁচে থাকার সাথে জড়িত।
বন্য জীব জন্তুরা নিজেরা প্রকৃতি থেতে নিজেদের মত খাবার সংগ্রহ করে নেয়। আমাদের অর্থাৎ মানুষের খাবারের মূল উৎস প্রকৃতি হলেও আমরা কিন্তু প্রকৃতি থেকে সরাসরি খাবার সংগ্রহ করে খাই না। যেমন আমরা যে রুটি বা ভাত খাই, তার গম বা চাল কিন্তু আমরা ক্ষেত থেকে সরাসরি নিয়ে আসি না। কোন এক ব্যাক্তি বা সংস্থা সেগুলি ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে, সেগুলি সঠিক ভাবে বাছাই করে, তাদেরকে সংরক্ষণ করে বাজারে নিয়ে আসে। আমরা বাজার থেকে তা সংগ্রহ করি এবং তা পরে রান্না করে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করি।
এই যে ক্ষেত থেকে আমাদের খাবারের থালায় পৌঁছানোর আগে অবধি যে ধাপ গুলি পেরোতে হচ্ছে এগুলি ফুড টেক্নোলজির অঙ্গ।
ফুড টেক্নোলজি কি?
বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে খাদ্যের পুষ্টিগুণ বজায় রেখে তা সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করে উপভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতি হল ফুড টেক্নোলজি।
উদাহরণ হিসাবে কয়েকটা খাবার আমরা দেখে নিই।
দুধঃ আমরা যারা শহর বা শহরতলীতে থাকি তাদের জন্য দুধের প্রধান উৎস হল প্যাকেটজাত দুধ। এবারে ভাবো, একটি কারখানায় দুধ তৈরি হচ্ছে, এরপর তা প্যাকেটে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং সবশেষে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সঠিক ভাবে ঐ প্যাকেটগুলি দোকানে পৌঁছে যাচ্ছে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি ফুড টেক্নোলজির নিয়ম মেনে হচ্ছে।
ফ্রোজেন ফুডঃ বিদেশে খুবই জনপ্রিয় এই প্যাকেটজাত খাবার। এই ধরণের খাবারগুলি আগে থেকেই তৈরি থাকে এবং তা নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষিত থাকে। খাবার আগে তা গরম করে নিলেই খাবার উপযুক্ত হয়ে যায়। ভেবে দেখ, এই খাবার তৈরির ক্ষেত্রে কি কি ধাপ থাকতে পারে, প্রথমে উপাদানগুলি বাছাই করা, এরপর তা প্রসেস করা (রান্না), তারপর তা সঠিক ভাবে প্যাকেট করা এবং দোকানে সঠিক তাপমাত্রায় সেগুলি উপভোক্তার জন্য সংরক্ষণ করা। এগুলি সবই হচ্ছে ফুড টেক্নোলজির নিয়ম মেনে।
এক কথায় বলতে গেলে যে কোন প্রসেসেড ফুড (যেমন বিস্কিট, ম্যাগি ইত্যাদি) এবং প্যাকেটজাত খাবার (যেমন প্যাকেটজাত দুধ) তৈরি এবং বন্টনের ক্ষেত্রেই ফুড টেক্নোলজি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও খাবারের Quality Control, নতুন খাবার তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ফুড টেক্নোলজির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে।
ফুড টেক্নোলজির এই বিষয়টির মধ্যে পড়ে,
Food Biochemistry
Microbiology
Fundamental of Food Processing,
Technology of Dairy and Seafood
Nutrition
Food Packaging Technology
Food Quality Control
Food Toxicology
Food Analysis
[আরো পড়ুন – প্রবন্ধ বিভাগ | প্রযুক্তি বিভাগ | বিজ্ঞানের ইতিহাস বিভাগ]
কারা পড়বে ফুড টেক্নোলজি?
যাদের পুষ্টিবিজ্ঞান এবং রসায়ন নিয়ে আগ্রহ আছে তারা ফুড টেক্নোলজি সম্পর্কিত পেশায় আসতে পারো।
উচ্চ মাধ্যমিক পড়া শেষ করে ফুড টেক্নোলজি নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশুনা করা যেতে পারে। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান থাকাটা জরুরী।
কিভাবে পড়বে ফুড টেক্নোলজি?
যারা ফুড টেক্নোলজি নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক তারা আন্ডার গ্রাজুয়েট কোর্স থেকে শুরু করে পোস্ট গ্রাজুয়েট, পিএইচডি ইত্যাদি সব ধরনের কোর্স করতে পারেন।
আন্ডার গ্রাজুয়েট কোর্সের পরে B.Tech বা MSc করা যেতে পারে।
সময়সীমাঃ
কি ধরণের কোর্স করা হচ্ছে তার উপরে সময়সীমা নির্ভর করে।
সাধারণত ডিপ্লোমা করলে উচ্চমাধ্যমিক বা (10+2) এর পর 2 বছরের কোর্স করতে হয়।
স্নাতক স্তরে BSc করলে 3 বছর এবং B Tech করলে 4 বছর।
আর স্নাতকোত্তর ক্ষেত্রে M Tech এবং MSc দুটি ক্ষেত্রেই কোর্সের সময়সীমা 2 বছর।
পশ্চিমবঙ্গের ফুড টেক্নোলজির কিছু জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান হল,
Jadavpur University
IIT – Kharagpur
Techno India – Salt Lake
Guru Nanak Institute of Technology
Haldia Institute of Technology
Maulana Abul Kalam Azad University of Technology
Acharya Prafulla Chandra Ray Polytechnic
ভারতের জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে,
IIT – Guwahati
NIT – Rourkela
MIT ADT University
Amity University Noida
Indian Institute of Food Processing Technology
আরো পড়ুন – হোটেল ম্যানেজমেন্ট (কেরিয়ার আলোচনা)
ভবিষ্যতের কাজের সুযোগ
আগে একটা সময় ছিল যখন বাড়ীতে প্রসেসেড ফুড খাবার একেবারেই চল ছিল না। বাড়ীতে রান্না করে বা ক্ষেত থেকে সরাসরি এনে রান্না করা হত। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের সময়ের চাহিদা বেড়েছে। ফলে আমাদের হেঁশেলে প্রসেসেড ফুড ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েছে এবং আগামী দিনেও এর চাহিদা বাড়বেই। এছাড়াও কাজের সুযোগ ফুড টেকনো্লজিতে যথেষ্ট।
কারণ খাদ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে এবং অবিরত স্বাস্থ্যকর খাবারের যোগান দিতে বর্তমানে পৃথিবীর যেকোনো জায়গার ফুড ইন্ডাস্ট্রিগুলি বদ্ধ পরিকর। এর জন্য অন্য যেকোনো বিষয়ের মত এই বিষয়েও দক্ষ কর্মচারীর বিশেষ প্রয়োজন। এর জন্য এই ফুড টেকনোলজি বা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের বিশেষ দরকার এবং চাহিদা বর্তমান চাকরির বাজারে বেশ ভালোই আছে।
বেসরকারি ক্ষেত্র ছাড়াও, বিএসটিআই, বিসিএসআরআই, অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ইত্যাদি সরকারী জায়গাতেও টেকনো্লজি পড়ে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট কাজের সুযোগ আছে।
শেষের কথা
ভারতবর্ষে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয় সেই পরিমাণ খাদ্য সঠিক ভাবে বণ্টন হয় না। অর্থাৎ, সঠিক ভাবে খাবার সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়। এই বিষয়ে একমাত্র সমাধান সঠিক পরিকল্পনা এবং যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। এই ব্যাপারে ফুড টেকনোলজির দক্ষ কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।