“আমরা ব্যাচে কুড়ি জন একসাথে পড়ি। স্যার, একটা প্রশ্ন-উত্তরের বই থেকে প্রশ্ন দাগ দিয়ে দেন, আমরা সেগুলো মুখস্থ করি। পরের দিন স্যার পড়া ধরেন অথবা লিখতে দেন”
এটি একজন নবম শ্রেণির ছাত্রীর ভৌতবিজ্ঞান কোচিং ক্লাসের বিবরণ।
শিক্ষা জগতের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে আমরা নিয়মিত বহু ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা বলি। তাদের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে উঠে আসে পড়াশোনার নানান অজানা তথ্য। তারই এক ভয়াবহ উদাহরণ উপরের এই ছাত্রীর বর্ণনা।
আমরা লক্ষ্য করেছি, বুঝে পড়া সঠিক ভাবে অভ্যাস করাই একজন ভালো ছাত্র বা ছাত্রীর সাথে একজন পিছিয়ে পড়া ছাত্র বা ছাত্রীর তফাৎ তৈরি করে।
এটা আজকের একটা বাস্তব সত্য যে স্কুলের পড়াশোনার বাইরে প্রায় সবাই আলাদা করে কোচিং নেয়। বিজ্ঞান, অঙ্ক এবং ইংরাজির ক্ষেত্রে প্রায় সবাই কোচিং নেয়। কিন্তু তাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্ট হয় না কেন?
আসুন, একটু তলিয়ে ভাবা যাক।
প্রায় সব অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় ভালো নম্বর চায়। আমরা জানি তিন ঘণ্টা সময়ে পরীক্ষায় কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এই প্রশ্ন গুলি লেখার ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীরা নম্বর পায়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষায় কি ধরণের প্রশ্ন আসবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই শিক্ষক / শিক্ষিকাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে প্রশ্ন- উত্তর তৈরি করার দিকে, ফলে পড়া বোঝার ব্যাপারটা অধরা থেকে যায়। ফলে পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষায় নম্বর পেলেও পড়া বোঝায় ফাঁক থেকে যায়।
[আরো পড়ুন – পড়া কেন বুঝতে হবে?]
তাতে সমস্যা কোথায়?
পাঠক মনে রাখবেন, আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, প্রতিটা শ্রেণির পড়ার সাথে তার আগের পড়া সম্পর্কিত উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, অষ্টম শ্রেণির গণিতে পাঠ্য ‘শতকরার’ ধারণা স্পষ্ট না হলে নবম শ্রেণির ‘লাভক্ষতির’ ধারণা আয়ত্ত্ব করা কঠিন।
অভিভাবকেরা একটা উদাহরণ নিজেরাই দেখতে পারেন। বাড়িতে ছাত্র অথবা ছাত্রীকে তার আগের শ্রেণির কোন পড়া জানতে চান; দেখবেন সে ঠোঁট উলটে বলছে ‘আগের ক্লাসের পড়া তো মনে নেই’। অর্থাৎ, কোন নবম শ্রেণির ছাত্র / ছাত্রীকে অষ্টম শ্রেণির কোন বিষয়ের ধারণা জানতে চান, দেখবেন সে সমস্যায় পড়ছে।
এতে ওর ভবিষ্যতে কি প্রভাব আসতে পারে।
চাকরির বাজার যে ভালো নয়, সেকথা এখন বাচ্চারাও জানে। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে গেলে যে শুরু থেকে ভালো করা জরুরী তা আপনিও জানেন।
একবার ভাবুন, আপনি বাড়ি তৈরি করছেন, কিন্তু আপনি বাজে সিমেন্ট, রড ইত্যাদি ব্যবহার করছেন।
আপনি একতলা বাড়ি বানালেন। কোন সমস্যা হল না।
এইবার দুইতলা করলেন, কোন সমস্যা হল না। আপনি এই ভাবে একটু একটু করে আপনার বাড়ি বাড়াতে শুরু করলেন। একদিন দেখলেন আপনার বাড়িতে চিড় ধরেছে, প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
এটা কেন হল বলুন তো? কারণ আপনি কাঠামো ভালো জিনিস দিয়ে বানান নি।
ঠিক একই ভাবে, আপনি যদি আপনার সন্তানের ভালো ভবিষ্যৎ চান, তাহলে ওর পড়াশোনার প্রতি যত্নশীল হন। ওকে পড়া বুঝতে সাহায্য করুন, মুখস্থ করতে নয়।
EDULEARN-এর তরফে 764 ছাত্রছাত্রীর উপর একটি পড়াশোনার সমীক্ষা করা হয়েছিল, যাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।
আমরা আগামী কয়েকটি সপ্তাহে গণিত ও বিজ্ঞান মুখস্থের বিপদ নিয়ে আলোচনা করবো, লেখাগুলো পড়ার অগ্রিম আমন্ত্রণ রইল।
এই লেখাটি যথাযথ মনে হলে, সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা