mukhostho-bidhya
Editorial (সম্পাদকীয়)

মুখস্থ-বিদ্যার দিন শেষ



“মুখস্থ করিয়া পাশ করাই তো চৌর্যবৃত্তি! যে ছেলে পরীক্ষাশালায় বই লইয়া যায় তাকে খেদাইয়া দেওয়া হয়; আর যে ছেলে তার চেয়েও লুকাইয়া লয়, অর্থাৎ চাদরের মধ্যে না লইয়া মগজের মধ্যে লইয়া যায়, সেই বা কম কী করিল?” ~ শিক্ষার বাহন

উপরের লাইনগুলি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে।

এবার নিচের লাইনগুলো একবার দেখুন, দেখুন তো চেনা চেনা লাগছে কিনা?

পড়া মুখস্থ হচ্ছে না।

পড়া মনে রাখতে পারছি না, তাই পরীক্ষায় নম্বর পাচ্ছি না।


[আরো পড়ুন – পড়ছি কিন্তু, বুঝছি কই?]

মুখস্থ – বিদ্যা

একটা বাচ্চা যখন থেকে তার পড়াশোনা শুরু করে (বা করানো শুরু হয়), একেবারে সেই দিন থেকেই তার এই ‘মুখস্থ’ শব্দটার সাথে পরিচিতি হয়ে যায়। প্রথমে অ, আ, ক, খ অথবা A, B, C, D ইত্যাদি দিয়ে তার মুখস্থ বিদ্যায় হাতে-খড়ি হয়।

এর পর সময়ের পাক – চক্রে সে বুঝতে শেখে যে তার পড়াশোনা ভালো হচ্ছে কি হচ্ছে না একমাত্র নিদান হল তার পরীক্ষার নম্বর।

আর পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে গেলে তাকে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। আর এই প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় পান – থেকে চুন খসলেই, ঘ্যাঁচ! অর্থাৎ নম্বর কাটা যাবে।

না না, নম্বর কাটা যাওয়া কিভাবে সহ্য করা যায়।

অতএব প্রশ্ন উত্তর অভ্যাস করো। মানে এত অভ্যাস কারো যাতে পড়া তোমার মুখস্থ হয়ে যায়।

বেশ হয়ে গেল! সেই ছেলেবেলায় শেখা মুখস্থ বিদ্যা এবার বড়বেলায়ও সমান কার্যকর।

বিশ্বাস হচ্ছে না? উদাহরণ চান? নিচে দেখুন।

প্রশ্নের উত্তর ঠিক মত লেখা হচ্ছে না – মুখস্ত করো।

ইতিহাস কিছু বুঝতে পারছি না – মুখস্থ করো।

নিউটনের সূত্র মাথায় ঢুকছে না – মুখস্থ করো।

অঙ্ক করতে পারছি না – মুখস্থ করো।

অর্থাৎ, সব সমস্যার একটাই সমাধান মুখস্থ করা।


[আরো পড়ুন – পড়াশোনার উন্নতিতে বই পড়ার গুরুত্ব]

মুখস্থ-বিদ্যা কি সত্যিই কার্যকরী?

অভিভাবকেরা একবার ভাবুন, যখন মোবাইল ফোন সকলের কাছে আসেনি, তখন কারুর ফোন নম্বর মনে রাখার জন্য আমরা তা লিখে নিতাম বা মুখস্থ রাখার চেষ্টা করতাম।

নতুন নম্বর লিখে না রাখলে কিন্তু কিছুক্ষণ বা কিছুদিন বাদে তা ভুলে যেতাম।

পড়ার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার প্রযোজ্য।

আমরা বার বার একই জিনিস পুনরাবৃত্তি করে কোন তথ্য বা কাজ কে কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনে রাখতে পারি। কিন্তু এই তথ্য চিরকালীন হয় না। কিছুদিন অভ্যাস না থাকলেই সেই তথ্য আপনাকে বিদায় জানাতে বাধ্য হয়। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার প্রযোজ্য।

পড়া না বুঝে শুধু মুখস্থ করে গেলে তা কেবলমাত্র কিছুদিনের জন্য মাথায় থাকে, পরবর্তী সময়ে তা আর কোন কাজে লাগে না।

subscribe-jump-magazine-india

শিক্ষার পদ্ধতি

আমাদের শিক্ষার পদ্ধতি হল ধাপে ধাপে শিক্ষা দেওয়া। অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণিতে যা শিখেছি, তা অষ্টম শ্রেণির পরে আর কাজে লাগবে না তা কিন্তু একেবারেই নয়। বরং ঐ অষ্টম শ্রেণির পড়ার উপরেই নবম দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রম তৈরি হবে। তাই মুখস্থ করলাম আর ভুলে গেলাম, এটা করলে আর যাই হোক জীবনে সফল হওয়া সম্ভব নয়।

নতুন শিক্ষানীতি

এতদিনে সকলেই নিশ্চয় জেনেছেন যে, আমাদের দেশে নতুন শিক্ষানীতি ঘোষিত হয়েছে। এতে রিপোর্ট কার্ড অর্থাৎ রেজাল্টের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে  –

 “The progress card will be a holistic, 360-degree, multidimensional report that reflects in great detail the progress and the uniqueness of each learner in the cognitive, effective, and psychomotor domains,” ~ NEP 2020

এর তর্জমা করলে বোঝা যায় যে, আগে যেমন পরীক্ষায় কি লিখে এলাম তার ভিত্তিতেই পরীক্ষায় নম্বর পাওয়া যেত নতুন শিক্ষা নীতি কার্যকর হলে ব্যাপারটি আর সেই রকম থাকবে না। এবার পরীক্ষার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী কতটা শিখছে তার উপরেই প্রধান জোর দেওয়া হবে।

এর থেকে একটা ব্যাপার ভীষণভাবে পরিষ্কার, ছাত্রছাত্রীদের আর কেবল দুলে দুলে মুখস্থ করলে চলবে না। পাঠ্য বিষয়গুলি শিখতেই হবে।

NEP Source – www.thequint.com

এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



এছাড়া,পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহন করতে যুক্ত হতে পারেন ‘লেখা-পড়া-শোনা’ ফেসবুক গ্রূপে। এই গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন এখানে।

lekha-pora-shona-facebook-group