আচ্ছা, আমাদের মাথার ওপর কতটা চাপ থাকে?
না না, আমি পড়াশোনা-র চাপ বলছি না। দৈনন্দিন জীবনে বা চাকরির ক্ষেত্রে যে চাপ হয়, আমি সেটাও বলছি না। আমাদের মাথার ওপর যে 10 কিলোমিটার উঁচু ঘন বায়ুস্তম্ভ বর্তমান আমি সেই বায়ুমণ্ডলের চাপের কথা বলছি।
যারা বিজ্ঞান পড়েছেন তারা বলবেন এক অ্যাটমোস্ফিয়ার।
ঠিক, কিন্তু এর মানে কি? আমরা তো দোকান বাজারে নিত্যকার জীবনে এই অ্যাটমোস্ফিয়ার এককটি ব্যবহার করিনা।
কেউ তো বলে না যে “বাবা! পড়াশোনার চাপ কি বেড়েছে!! প্রায় 20 অ্যাটমোস্ফিয়ার চাপ হয়ে গিয়েছে!” তাহলে বুঝবো কিকরে?
ধরুন আপনার মাথার ওপর কেউ 250 কিলো ওজন রেখে দিলো। মানে দুটো বাচ্চা হাতির সমান। ওইটুকুনি মাথা, তাতে প্রতি একক ক্ষেত্রফলে এই বিশাল ভার (ভর নয়, ভার=ভর × অভিকর্ষজ ত্বরণ) ওই বায়ুমণ্ডলের ভারের সাথে সমান।
আচ্ছা! তাহলে মারিয়ানা খাতের গভীরে চাপ কত?
ওখানে তো শুধু বায়ুস্তম্ভ চাপ দিচ্ছে না, জলস্তম্ভও চাপ দিচ্ছে। ঠিক, শুধু তাই নয়, জলস্তম্ভের চাপ এতো বেশী যে ওখানে বায়ুস্তম্ভের চাপ মোট চাপ বার করতে গিয়ে যোগ করা বা না করা একই ব্যাপার।
কত সেখানে চাপ? মোটামুটি 1070 বায়ুমণ্ডলের চাপ। মানে আপনার মাথার ওপর 2140 তো বাচ্চা হাতি, বা 45 বড়ো আফ্রিকান হাতি।কিন্তু যদি চাপটা 6800 বায়ুমণ্ডলীয় হয়? মানে মোটামুটি 300 টা হাতি, আপনার মাথার সমান ক্ষেত্রফলে দাঁড়িয়ে আছে একের পিঠে এক এক করে, বা 15টা নীল তিমি?
ভাবতে মাথা ঝিম ঝিম করছে? চাপ পড়ছে ভীষণ? একটি বস্তুর উপর কিন্তু চাপ পড়ছে না। তা হল প্রিন্স রুপার্টের ড্রপ।
প্রিন্স রুপার্টের ড্রপ (Prince Rupert’s Drop)
প্রিন্স রুপার্টের ড্রপ কিন্তু প্রিন্স রুপার্টের তৈরী নয়, এটিকে তিনি ব্রিটেনে এনেছিলেন মাত্র। এটি একটি গলিত কাঁচের ফোঁটা যেটিকে খুব দ্রুত ঠান্ডা করা হয়েছে।
কি দেখে একে চেনা যায়?
শীতের দেশে যেমন কোথাও জলের ফোঁটা পড়তে গিয়ে জমে বরফ হয়ে যায়, বা তেলের ফোঁটার যে চিহ্ন আমরা ব্যবহার করি, এই ড্রপের মাথাটাও সেরকম হয়। কিন্তু এর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর একটা বিশাল লেজ থাকে। এই লেজেই যত জারিজুরির ইতি।
জারিজুরিটা ঠিক কি? আপনি যদি এর মাথা তাক করে একটি গুলি করেন, বুলেট তুবড়ে নষ্ট হয়ে যাবে কাঁচের ফোঁটাটি ফাটবে না। এর কারণ residual stress। ওই ড্রপটিকে যখন ঠান্ডা করা হয়েছিল আচমকা, ওর মধ্যে এক বিশাল (মোটামুটি 100000 পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চির সমান) stress তৈরী হয়। এই stress 15000 নিউটন বল সহ্য করতে পারে, যা একটি বুলেট, হাইড্রোলিক প্রেস আর যা যা ঘাতবৃদ্ধির উপায় আছে সবাইকে ঠেকিয়ে দেয়।
[আরো পড়ুন – পাই-এর ইতিহাস]
কিন্তু এতে এর একটা জায়গা মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ে। সকল শক্তিশালীরই যেমন দুর্বলতা থাকে, এরও আছে, এর লেজ। এর যত বল সব উপরিতলে, যে অংশ সদ্য ঠান্ডা হয়েছে। অভ্যন্তরে কিন্তু একটা মারাত্মক tension তৈরী হয়ে বসে আছে। মুখে হাসি, ভেতরে ভীষণ কষ্ট, সেইরকম।
এই stress আর tension এর মধ্যে এক চূড়ান্ত অসমান সাম্য বর্তমান, যা এর কোরের স্থিতিশক্তিকে বাড়িয়ে ও উপরিস্থলের স্থিতিশক্তিকে কমিয়ে রাখে। এর ফলে এর মাথার ওপর বল প্রয়োগ করলে যে ভাঙ্গন তৈরী হয় সেটা পৃষ্ঠতল বরাবরই অগ্রসীন হয়, ফলে এটি ফাটে না। কিন্তু লেজটি হালকা চাপড়ে ভেঙে দিলে সেই ভাঙ্গন পুরো ড্রপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আর কাঁচের ড্রপটি অসংখ্য টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
এই সময় ওই স্প্লিন্টারগুলোর বেগ কত হয় জানেন?
6840 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা! মানে জেট প্লেনের থেকে সাত গুণ বেশি জোরে, 0.197 রেমিংটন বুলেটের থেকে দেড় গুণ আর রকেটের বেগের নয় ভাগের দু ভাগ।
আমাদের ফেসবুক পেজ লিইক করার আবেদন রইল
এই প্রিন্স রুপার্টের ড্রপ নিয়ে প্রফেসর শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখর এবং মুনায়ার চৌধুরী (Munawar Chaudhri) তাদের বিখ্যাত গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছিলেন। প্রিন্স রুপার্টের ড্রপ নিয়ে আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
সুতরাং, পরের বার যদি কোনো কিছুকে কঠিন মনে হয়, মনে রাখবেন, এ কঠিন সে কঠিন নয়, এর থেকেও বেশি কঠিন কিছুর কথা আপনি জানেন!
এই লেখাটি ভালো লাগলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা