টমাস নেউকোমান ছিলেন প্রকৃতই ইঞ্জিনিয়ার। জল পাম্প করে কি করে উঁচুতে ওঠাতে হয় এবং সেই কাজে কিভাবে জলীয় বাষ্পকে কাজে লাগানো যেতে পারে সেটা তিনিই আবিষ্কার করেন।
তাহলে ছোটবেলা থেকে আমরা কেন পড়ি যে জেমস ওয়াট বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কর্তা?
তার কারণ আজ আমরা বাষ্পীয় ইঞ্জিনকে যে কাজে ব্যবহার হতে দেখি তার উদ্ভাবক ও পরিকল্পনাকারী হলেন জেমস ওয়াট।
১৭৩৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৯শে জানুয়ারী স্কটল্যান্ডের গ্রীনক শহরে এক জাহাজ ব্যবসায়ীর পরিবারে জেমস জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ছিলেন উচ্চশিক্ষিতা, ঠাকুমা গণিতের শিক্ষিকা। তাদের হাত ধরেই এই বাল্যপ্রতিভা নিজের বাড়িতে তার প্রাথমিকে পঠনপাঠন শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই গণিত ও হাতের কাজে তার দক্ষতা ছিল অসামান্য। মাত্র উনিশ বছর বয়সে তিনি নিজের যন্ত্রপাতি নির্মাণের কারখানা খুলে বসেন গ্লাসগো শহরে। কিন্তু তার এই প্রচেষ্টা গিল্ড থেকে মেনে নেওয়া হয়নি। এই সময় জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ম্যাকফারলেন তার যন্ত্রপাতি দেখে প্রভাবিত হয়ে, ওয়াটের তৈরী যন্ত্র তার নিজস্ব ল্যাবরেটরি ও অবসারভেটরিতে ব্যবহার করতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে ওয়াটের যন্ত্রপাতির খ্যাতি বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়লো এবং তিনি গ্লাসগো ইউনিভার্সিটিতে নিজের ওয়ার্কশপ খুলে ফেললেন।
১৭৫৯ সাল নাগাদ ওয়াটের নজর পড়লো মোটিভ পাওয়ারের দিকে, যাকে আমরা অটোমেশন বলে আজ চিনি।
সেই সময় উপরোক্ত নেউকোমানের আয়টমোস্ফিয়ারিক ইঞ্জিন ছিল বহুল প্রচলিত একটি অটোমেটিক যন্ত্র। জলকে ফুটিয়ে বাষ্প তৈরী করে সেটির আয়তন প্রসারিত করা হতো এবং সেই প্রসারণ, পাম্পের ওঠানামার জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু সমস্যা ছিল যে ঠান্ডা জলকে গরম করতে গিয়ে এই যন্ত্র বারবার ঠান্ডা হয়ে যেত ফলে সেটিকে বারবার গরম করতে বহু শক্তি অপচয় হতো। তাই সবাই এই যন্ত্র ব্যবহার করতে পারছিলেন না। জেমস ওয়াট সেই সময় তাপ ও তাপজনিত গতির উপর পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছিলেন। ইউনিভার্সিটির নিউকোমান যন্ত্রটি এইসময় খারাপ হওয়ায় ওয়াটের ডাক পড়লো সেটি সারাই করার জন্য। ওয়াট দেখলেন, সারাইয়ের পরেও তার মোট আউটপুট খুবই কম, কারণ ওই ঠান্ডা জলকে গরম করা! তখন তিনি কনডেন্সার আবিষ্কার করে সেটিকে ওই যন্ত্রটার সাথে লাগিয়ে দিলেন। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে তার কাজ সম্পন্ন হলো আর জগৎ পেলো প্রথম তাপগতিযন্ত্র।
[আরো পড়ুন – হঠাৎ করে আবিষ্কার হওয়া কিছু যুগান্তকারী আবিষ্কার]
It is not worth my while to manufacture in three countries only; but I can find it very worthwhile to make it for the whole world.~ James Watt
জেমস ওয়াট কেবলমাত্র একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারই ছিলেন না, তিনি ছিলেন রসায়নবিদও।
প্রথম জেরক্স মেশিন, কাপড় ব্লিচ করার পদ্ধতি ও রাসায়নিক: ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড ও ক্লোরাইড লবন থেকে সস্তায় ক্লোরিন গ্যাস বার করে সেটি জলে গুললে যে ব্লিচ হয়, তিনিই তার উদ্ভাবক। এছাড়া তিনি সোহো ফাউন্ডরী ও জেমস ওয়াট কোম্পানি নাম দুটি সংস্থান প্রতিষ্ঠা করেন।
[আরো পড়ুন – অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্র নাথ বোস]
জেমস ওয়াট সম্বন্ধে একটি কেটলির গল্প খুব শোনা যায়।
তিনি নাকি কেটলির থেকে বেরোনো ধোয়া ও তার সাহায্যে ঢাকনির নাচন দেখে বাষ্পশক্তির কথা কল্পনা করেন। ব্যাপারটি আংশিক সত্য। তিনি যখন তাপগতিবিদ্যা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন, তখন তিনি নিজে এরকম একটি পরীক্ষা নির্মাণ করেন।
বাকি গল্পটি মিথ মাত্র। কিন্তু যেটা মিথ নয় তা হল, আজ আমরা যে শিল্পবিপ্লবের কথা পরে থাকি ইতিহাসের পাতায় পাতায়, যে শিল্পের ফসল আমরা পাচ্ছি যানবাহন, এ সি মেশিন, পাম্প, মোটর ইত্যাদির মাধ্যমে, সেই শিল্পবিপ্লবের জনক এই গ্রীনক শহরের জেমস ওয়াট।
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –
-
- ফলো করো – WhatsApp চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা