Ojana-rosmir-voutik-hat
Histroy of Science (বিজ্ঞানের ইতিহাস)

পরমাণু ভাঙ্গণ : অজানা রশ্মির ভৌতিক হাত!

সালটা ১৮৯৫, একদল জার্মান বিজ্ঞানী ঠিক করলেন যে তারা বিজ্ঞানের ঘরে ডাকাতি করবেন, কোনো ষড়যন্ত্র ছাড়াই। না, কোনো পরামর্শও করেননি তারা।

ভাবছেন কিসের ডাকাতি?

উত্তর হল শতাব্দী প্রাচীন জ্ঞানের। আবদ্ধ হয়ে থাকা জ্ঞানের যা বাস্তবের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখছে না। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি, তিনি উইলিয়াম রন্টজেন। (যদিও বহু বিদেশী বিজ্ঞানীর হাত থাকবে এই ডাকাতিতে, কিন্তু তাদের সবার কর্মক্ষেত্র বা পটভূমি জার্মানি)। এদের ডাকাতির প্রথম লক্ষ্য ছিল নিউটনের তত্ত্ব। যা আমরা আজ ক্ল্যাসিকাল মেকানিক্স নামে চিনি। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা একটি অসাধারণ ঘটনার কথা পড়বো যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব এনেছিল।


[আরো পড়ুন – পাই-এর ইতিহাস]

প্রথম নোবেলজয়ীর গল্প

১৮৯৫ এর ৮ই নভেম্বর, শুক্রবার দুপুরে উইলহেম রন্টজেন (Wilhelm Röntgen) তার ল্যাবরেটরিতে বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড (বা বেরিয়াম টেট্রাসায়ানিডোপ্লাটিনেট) নামক জটিল যৌগের উপর ক্যাথোড রশ্মির প্রতিপ্রভা (ফ্লুরোসেন্স) পরীক্ষা করছিলেন। এর আগে যারা এই পরীক্ষাটি করেছিলেন, লেনার্ড টিউব নিয়ে করেছিলেন। রন্টজেনের ইচ্ছে ছিল, স্বয়ং ক্রুকস সাহেবের টিউবে এই পরীক্ষাটি সম্পাদিত করা।

biggani-rontjen
[সৌজন্যে – উইকিপেডিয়া]
তাই তিনি পরিমার্জিত ক্রুকস হিটর্ফ টিউব নিয়ে পরীক্ষাটি করতে লাগলেন। প্রথমেই তিনি টিউবটিকে রুমকর্ফ যন্ত্রের সাথে যুক্ত করলেন যার থেকে উচ্চ বিভব সম্পন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এরপর তিনি সেই পুরো সিস্টেমটিকে কালো কার্ডবোর্ড দিয়ে মুড়ে নিলেন। ঠিকঠাক ভাবে আলোকনিরুদ্ধ হয়েছে কিনা বুঝতে তিনি ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিয়ে রুমকর্ফ চালিয়ে দিলেন। যখন তিনি নিশ্চিত হলেন যে ওই কালো কার্ডবোর্ড ভেদ করে কোনো আলো আসছে না, ঠিক তখনি ঘটলো এক ভৌতিক ঘটনা।

দূরে অন্য টেবিলে রাখা সেই বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইডে মাখানো একটি কাঁচের প্লেট রাখা ছিল, তিনি অনুভব করলেন ওখানে বোধহয় তিনি হালকা আলোর ঝলকানি দেখেছেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি আরো বার দুই তিনেক পরীক্ষাটি করলেন, প্রত্যেকবার একই ফলাফল পেলেন।

সেই সপ্তাহান্তে তিনি ওই ল্যাবরেটরি থেকে এক পাও নড়লেন না। শুক্রবার বিকেল গড়িয়ে রবিবার হয়ে গেল, তিনি নিরন্তর চেষ্টা করতে লাগলেন এর কারণ খুঁজে বের করার জন্য। ধীরে ধীরে তিনি নিশ্চিত হলেন তিনি এক নতুন অজানা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রশ্মি আবিষ্কার করে ফেলেছেন। তিনি সেই রশ্মিটির চরিত্রায়ন করার চেষ্টা চালাতে লাগলেন। তার কালো কার্ডবোর্ডে মোড়া টিউব ও সেই প্লেটের মাঝে একের পর এক সামগ্রী রেখে দেখতে লাগলেন কোন কোন বস্তু রশ্মিটির গতিপথ প্রতিহত করে, কত বিভবে সেটি উৎপন্ন হয়, আর কত বিভবে সেটি অদৃশ্য হয়ে যায়, টিউবের কোন প্রেশার ওই রশ্মির কারণ হয়, একে একে তিনি নোট করতে লাগলেন।


[আরো পড়ুন – JUMP ম্যাগাজিনের প্রবন্ধ বিভাগ।]

তিনি লেড এর একটি টুকরো যখন ওই রশ্মির সামনে রাখতে গেলেন, ঠিক তখনি… নিজের হাতের কঙ্কাল ছবি দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন তিনি।

সাহস পেলেন না সপ্তাহ দুই নিজের পর্যবেক্ষণ কোথাও প্রকাশ করার। দুই সপ্তাহ পর নিজের স্ত্রীর হাতের ছবি তিনি তুলে নিশ্চিত হলেন যে তার পর্যবেক্ষণ সঠিক। নিজের হাতের ছবি দেখে তার স্ত্রীর মন্তব্য ছিল, “আমি আমার মৃত্যু দেখে নিয়েছি”. জনগণের সামনে তিনি নিজের পর্যবেক্ষণ সামনে আনলেন ২৮শে নভেম্বর ১৮৯৫। নাম দিলেন রন্টজেনরশ্মি বা “রঞ্জনরশ্মি”, যাকে আমরা X-ray বলে চিনেছি।

First xray
[সৌজন্যে – উইকিপেডিয়া]

১৯০১ সালের পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরস্কার প্রাপক তিনি-ই. তিনিই স্থাপিত করে গেলেন রেডিয়েশনের প্রথম স্তম্ভ।


এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্যভাবে কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই লেখাটি থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।



Join JUMP Magazine Telegram


JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য –