ইতিহাস– দশম শ্রেণি – নদীর বিদ্রোহ
নদীর বিদ্রোহ গল্প অনুযায়ী নদের চাঁদের চরিত্রের আলোচনা।
[এই প্রশ্ন উত্তর পর্বটি দশম শ্রেণীর বাংলা বিভাগের নদীর বিদ্রোহ আলোচনার অন্তর্গত।]
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বাস্তববাদী লেখক হিসাবেই মূলত পরিচিত। সাধারণত প্রাত্যহিক জীবনের গল্পই তার লেখায় ফুটে ওঠে। তাঁর ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের নায়ক হল নদের চাঁদ। তিনি ত্রিশ বছর বয়সী একজন ষ্টেশনমাস্টার। নদীর প্রতি তার ভালোবাসা, তার অনুভূতি এবং উপলব্ধি হল গল্পের মূল বিষয়। তাকে ঘিরেই গল্পের ঘটনা অগ্রগতি লাভ করেছে এবং পরিণতি লাভ করেছে।
নদীর প্রতি নদের চাঁদের টান প্রবল। ছোটবেলা থেকেই নদীর সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। তার দেশের ক্ষীণস্রোতা নদীটিকে না দেখলে যেমন তার দিন চলত না তেমনই কর্মক্ষেত্রে গিয়েও যে নদীটিকে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন তাকে না দেখেও তার দিন চলত না। পাঁচদিনের বৃষ্টিতে নদের চাঁদ নদীতে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করতে পারেন তার মত বয়সে নদীর জন্য আকুলতা মানায় না, তার কাছে যা স্বাভাবিক অন্য আর সকলের কাছে অস্বাভাবিক। কিন্তু তবুও তিনি নিজেকে বোঝাতে পারেন না। নদীর প্রতি তার অন্তরের টান আজন্মকালের।
গল্প থেকেই পাঠক জানতে পারে ছোটবেলায় দেশের ক্ষীনস্রোতা নদীটিকে শুকিয়ে যেতে দেখে তার চোখে যেমন জল এসেছে, তেমনই নদীর উত্তাল রুপকে দেখে তিনি ভীত হয়েছেন। নদীর উপর নির্মিত ব্রিজে বসে নদীর উত্তাল জলরাশিকে দেখে আমোদ উপভোগ করে, নদী যেন তার চিরকালের বন্ধু। সেই বন্ধুর সাথে খেলা করার জন্যই সে তার স্ত্রীকে লেখা চিঠি জলে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে দেয়। জলের ধারায় চিঠির পাতা হারিয়ে যাওয়া দেখে সে আনন্দিত হয়।
স্ত্রীর সাথে দীর্ঘ বিরহ নদের চাঁদকে ব্যাথিত করলেও তার প্রকাশ গল্পে সেভাবে দেখা যায় না, কিন্তু নদীর প্রতি তার আত্মিক টান সহজেই অনুভব করতে পারে পাঠক। নদীর প্রতি টান থাকলেও কর্তব্যকর্মে তিনি অবহেলা করেন না। তাই প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে রওনা করিয়ে দিয়েই তিনি নদীকে দেখতে যান।
নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের ধারকস্তম্ভের গায়ে বসে নদীকে দেখতে দেখতে ভালোলাগার এক জগতে হারিয়ে যান তিনি। বেশ কিছুক্ষন কাটিয়ে দেন নদীর রূপদর্শনে, প্রকৃতির ভয়ংকরতাও তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়, কিন্তু হটাৎই সচেতন হয়ে ওঠেন রেলগাড়ির শব্দে। কল্পনার জগত থেকে বাস্তবের জগতে নেমে আসেন। আকাশের ভয়াল রূপ প্রত্যক্ষ করে নদের চাঁদ বাড়ি ফিরে আশার জন্য উদ্যোগী হয়।
নদীর তীব্র জলধারার দিকে তাকিয়ে মনে করে নদী আপন বেগে সকল কিছুই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। কোন বাধাই সে মানবে না। একসময় নতুন রং করা ব্রিজটার জন্য যে নদের চাঁদ গর্ব অনুভব করত, তারই মনে হয়েছিল – ‘কি প্রয়োজন ছিল ব্রিজের’। নদীর সাথে প্রায় একান্তপ্রাণ নদের চাঁদ পিছন থেকে ধেয়ে আশা রেলগাড়ির শব্দ শুনতেই পেল না আর তাই বোধ হয় তার প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতে হল নিজের জীবন দিয়ে। –
“৭ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি নদের চাঁদকে পিষিয়া দিয়া চলিয়া গেল…”
এই লেখাটির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই লেখা, অডিও, ভিডিও বা অন্য ভাবে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
JumpMagazine.in এর নিয়মিত আপডেট পাবার জন্য –
- সাবস্ক্রাইব করো – YouTube চ্যানেল
- লাইক করো – facebook পেজ
- সাবস্ক্রাইব করো – টেলিগ্রাম চ্যানেল
- সাবস্ক্রাইব করো – সাপ্তাহিক ইমেইল আপডেট
- Facebook Group – লেখা – পড়া – শোনা
X_Ben_Noder-Chader-Choritro